মেমসাহেবা

মেমসাহেবা

অন্ধকারটা ছায়া থাকতেই কখন যেন স্যাঁত করে ঢুকে পড়লো। এ কয়দিনের ঠিকানা বিছানা ছেড়ে আলোর দিকে হাত বাড়ানোর ইচ্ছেটাই উধাও, এমনকি সিগারেটের প্যাকেটও…

কোথায় যেন রবিঠাকুর বাজছে, ‘মোর হৃদয়ের গোপণ বিজন ঘরে’। অন্ধকার জাঁকিয়ে বসেছে সব থাবা নিশ্চিন্তে মেলে।

কাল রাতে ফের স্বপ্নে এসেছিলে তুমি। তোমার পিঠ বেয়ে মেলে দেওয়া চুল, পাগল করে দেওয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় চোখ আর গাঢ় ঠোঁট নিয়ে একইরকম।

কাক শালিখেরা কি বাড়ি ফিরে গেছে? তাদের নিশ্চিন্ত কোটরের সুপ্তিকথনে? ওদেরও নিশ্চিন্তি আছে …

স্বপ্নের তোমার সেই ছোট্ট ঘরছাঁও, একা বসে বিড়বিড় কোনো এক অধরা কবিতার খোঁজে। অনেকদূরে অবচেতনে সাঁওতালী নাচের মাদল।

আমার দিকে কি তাকিয়েছিলে একবারও, আনমনে? নাকি প্রগাঢ় সখ্যতায় পাশে কেউ আছে তাও ভুলে থাকা যায়!

মাঠের মধ্যিখানে সারাদিন সারারাত একমনে পড়ে থাকা একাকী রেললাইন। শরীরের যত্ন নিও বললেই ভালো থাকা যায়!

আমার মোরাম বিছানো লাল কাঁকুড়ে পথ রাত্রির সন্ধিক্ষণে এখন কালো। আমার সিগারেটের শেষ ধোঁয়া পাক খেয়ে উড়ে গেছে সীমাহারা গহ্বর সন্ধানে।

নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে, মুখের সঙ্গে মুখ। হঠাৎই কখন যেন গড়ে তোলা তোমার প্রাত্যহিক কবিতা আশ্রয়, যশআকাঙ্খা মিথ্যে হয়ে যায়।

কোথায় যেন রবিঠাকুর আপনমনে বেজেই চলেছেন ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুণাধারায় এসো’। একক রোগশয্যায় করুণার প্রত্যাশা না করেই পাখিরা ঘুমিয়ে পড়ে।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

8 thoughts on “মেমসাহেবা

  1. আমার মোরাম বিছানো লাল কাঁকুড়ে পথ রাত্রির সন্ধিক্ষণে এখন কালো। আমার সিগারেটের শেষ ধোঁয়া পাক খেয়ে উড়ে গেছে সীমাহারা গহ্বর সন্ধানে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    অনেক ভালো লাগলো , শুভকামনা থাকলো কবিhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. চমৎকার প্রিয় কবি সৌমিত্র। বরাবরের মতো অসাধারণ বলবো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রিয় ভাই। ভালো থেকো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  3. সৌমিত্র দা,

    হাহাহা এটাই মনে হয় সেদিনের ভালোবাসার ইন্দ্রজালের মতো তাই না ? অনেক ভালোলাগা লেখায় । 

    1. হুম। আপনি ঠিকই বুঝে ফেলেছেন কবি খন্দকার ভাই। :) ধন্যবাদ।

  4. অনবদ্য লেখনীতে একরাশ মুগ্ধতা রেখে যাই প্রিয় দাদা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।