ভালো থাকা না থাকা ৪

সন্ধ্যে ঝুপ করে নামতে না নামতেই তার গায়ে লাফিয়ে পড়ছে রাতের জাগুয়ার। তুড়ুক লাফানো কাঠবিড়ালী দু চর্কি পাক দিয়েই টুক করে চার দেওয়ালের কাঠামোর ভেতরে ঢুকে আয়েস করে জীবন মানে জী বাংলা দেখছে পঁচাত্তর হাজারী ডিভানে কাত হয়ে। আর রাস্তাটা এদিকে ওদিকে হেলতে দুলতে পাক বাংলা খাওয়া মাতালের মত টলোমলো টলোমলো পায়ে আকাশের পাঁশুটে আহ্লাদী বিড়ালগুলোর নরমানরম গরমাগরম লোমের বিছানা ছুঁয়ে ওপারে টুপ করে ডুব মেরেছে ফাঁকতালে।

অথচ এই রাস্তায় যেতে যেতে পেছনে ফিরে তাকায় না নাছোড় চল্লিশ। দিকভুলে যদি বা আলেঢালে চোখের বেহায়া পাতা আর সবেধন নীল না হোক কালো মণি তাকিয়েছে পেছনের ড্রপসিন পড়ে যাওয়া বেহাল মঞ্চের দিকে, ওমনি ধাঁ করে এপার ওপার সব ছায়া হয়েই মিলিয়ে যায়। পেছনের রাস্তা জুড়ে একে একে ফুটে ওঠে বুনো কুলের ঝোপ, ডালপালা মেলে গাভীন এয়োতির মত দুপুরের গল্প জুড়ে বসা ফলসা গাছ। ক্যাঁচকোচ শব্দ তুলে এগিয়ে যাওয়া হুররররহ্যাটহ্যাট বকা গাড়োয়ান সমেত দুই বলদের গাড়ি। গাড়ির পেছনে গাড়োয়ানের অজান্তে ঝুলতে ঝুলতে চলতে থাকে অনাবাদি শৈশব।

মৌরী লজেন্স, চাইইইইই কাচের চুড়িইইইইই, শিল কাটাওওওও, সিঁদ কাটা চোরের বারোয়ারী গল্প আর হাতে টানা রিকশা। দেখতে দেখতে কখন যেন সেখানেও সন্ধ্যে নেমে আসে। তফাৎ শুধু এখনকার মত একলা যাযাবরী নয়, সেই সন্ধ্যের মায়াপুরীর সারা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে হারিয়ে যাওয়া মায়ের আঁচলের গন্ধ।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

18 thoughts on “ভালো থাকা না থাকা ৪

  1. ভালো থাকা না থাকায় যাপিত জীবন কথপোকথন। শুভেচ্ছা কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. সন্ধ্যে ঝুপ করে নামতে না নামতেই তার গায়ে লাফিয়ে পড়ছে রাতের জাগুয়ার। প্রথম লাইনটাই অসাধারণ দিয়ে শুরু হয়েছে আজ। বাহ্ কবি সৌমিত্র দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

  3. আপনার লেখা পড়ে বাস্তব জীবনের অনেককিছুই  খুঁজে পাওয়া যায়।     

    অসাধারণ লিখেছেন শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। শুভেচ্ছা জানবেন।      

  4. শুভেচ্ছা কবি সৌমিত্র দা। ভালো থাকুন বেশী বেশী। :)

  5. "দেখতে দেখতে কখন যেন সেখানেও সন্ধ্যে নেমে আসে। তফাৎ শুধু এখনকার মত একলা যাযাবরী নয়, সেই সন্ধ্যের মায়াপুরীর সারা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে হারিয়ে যাওয়া মায়ের আঁচলের গন্ধ।"

     

    যাপিত জীবনের চিত্র ।মন ছুঁয়ে গেল দাদা    ।

  6. ডালপালা মেলে গাভীন এয়োতির মত দুপুরের গল্প জুড়ে বসা ফলসা গাছ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।