ভালো থাকা না থাকা ১১

তোমার আর আমার ফিরে আসার ঠিক মাঝখানে বয়ে চলেছে এক লাজুক প্রান্তিক রেল স্টেশন। মাছ আর মৌমাছি খেলা করে একান্ত প্রবাল প্রাচীরে। মাঝেমাঝে লাল নীল সবুজ হাওয়া মস্তিষ্কের ব্যালান্স খুলে ফেলে মেলোড্রামা করে তুমুল আবেগে। তুমি ফেরো, আমি ফিরি, আর সব চলে যায় দূরের বিস্তীর্ণ রেলের বারান্দায়।

মাতাল রাত্রি নামে ফিসফিস ইস্পাতি চাকার ঘূর্ণনে। দেখতে দেখতে তুমি আর আমি, আমি আর তুমি হয়ে যাই ক্যামোফ্লেজড পাশাপাশি ছুটে যাওয়া গানমেটাল রেলের লাইন। আমাদের তুরন্ত্ গতির অজস্র ফাঁকফোকর ভর্তি করেছে সংখ্যাহীন পাথরের টুকরো। মাঝেমধ্যে ছুটে চলার নীলিম অবসরে কোনো কোনো পাথর ঠোকাঠুকি খেলে। আগুন ছিটকে আসে ডাইনে বাঁয়ে, সমান্তরাল ইগোর ট্র্যাকে। লাইনের দুধারের মরে যাওয়া খড় রং শুকনো ঘাস ওঁত পেতে থাকে। কখনো টুকরো আগুন ছিটকে এলেই মৃত ঘাসের পুঞ্জ সেটা চুরি করে। বুকের ক্রোমোস্ফিয়ারে গোপন লকারে যত্নে রেখে দেয় সেই আগুন।

মানুষ খোঁজে, অনন্ত পেরিয়ে যাওয়া ফাঁসিদেওয়ার মাঠ পেরিয়ে, কালীয়দমনের বিল পেরিয়ে, রূপগঞ্জের গ্রাম্য হাট পেরিয়ে, বুড়ো বটের হাজার শেকড়ের আজুবাজু অলিগলি পেরিয়ে খুঁজতে থাকে প্রাচীন অগম আগুনের পাখি। রেল লাইনের আমি তুমি মুচকি হাসি সেই উদগ্র কামনার ভাষা মর্সকোডে পড়ে ফেলে। আগুন লুকিয়ে থাকে, আমি তুমি ছুটে যাই মানুষ হাঁটে আলুথালু। গোপন বিজন বনে আশ্চর্য এক পাখি ডেকে যায় এক টানা, টুই…টুই…টুই…!

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

16 thoughts on “ভালো থাকা না থাকা ১১

  1. তুমি ফেরো, আমি ফিরি, আর সব চলে যায় দূরের বিস্তীর্ণ রেলের বারান্দায়। দারুণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. আগুন লুকিয়ে থাকে, আমি তুমি ছুটে যাই মানুষ হাঁটে আলুথালু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. মাঝেমধ্যে ছুটে চলার নীলিম অবসরে কোনো কোনো পাথর ঠোকাঠুকি খেলে। আগুন ছিটকে আসে ডাইনে বাঁয়ে, সমান্তরাল ইগোর ট্র্যাকে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif আজকের পর্বটি স্পেশাল মনে হলো। 

  4. গোপন বিজন বনে আশ্চর্য এক পাখি ডেকে যায় এক টানা, টুই…টুই…টুই…!

    ======কবিকে, সতত শুভকামনা, মুগ্ধতা রেখে গেলাম।

  5. বুকের ক্রোমোস্ফিয়ারে গোপন লকারে যত্নে রেখে দেয় সেই আগুন।

    * অসাধারণ শব্দচয়ন… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।