উদ্ভুতুরে

চায়ের কাপে গোঁত্তা খেয়ে
সকাল বেলায় শিববাবু
খালি গলায় গান ধরলেন
ভাত নয় আজ দাও সাবু!
সে কি কথা! গিন্নী বলেন
কেমনতর ভীমরতি!
সাধ করে কেউ সাবু খায়?
এ কেমন ছন্ন মতি!
ওঠো এবার বেলা হলো
বেরিয়ে পড় বাজারে,
পকেট ভরো নতুন নোটে
শ কিম্বা হাজারে।
ইলিশ নাকি শস্তা এখন
খাচ্ছে সবাই পাড়ার লোক,
আনছে খবর কাজের মাসি
আমায় নিয়ে হচ্ছে জোক।
ভুলেই গেছি বাপের বাড়ী
ভুলেই গেছি গোস্ত,
গলদা পাবদা বিস্মরণে
কেমন খেতে পোস্ত!
বছর গেলে দুখান শাড়ী
শস্তা অতি বিশ্রী,
পাড়ার লোকে যা কেনে তাই
পরলে লাগে সুশ্রী।
না আছে ক্রিম না পাউডার
আইলাইনার, নেলপালিশ,
লিপস্টিক সেন্ট শেষের দশা
পুজোর পরেই ডিও ভ্যানিশ।
এমন পাত্রে দিলেন বাবা
সংসারী নয় ভবঘুরে,
এরচেয়ে বেশ ভালোই ছিলাম
বিয়ের আগে কানপুরে।
কথা তো নয় গুলির দাপট
শিববাবু উদভ্রান্ত,
একটা কথায় এমন বন্যা
শিববাবু কি জানতো!
কাল রাত্রে ভুতের স্বপ্নে
সকালবেলায় পাতলা পেট,
এখন এসব কেলেঙ্কারি
কোথায় লাগে ওয়াটারগেট!
ফুঁসে উঠে শিব বল্লেন
পাঁচ কিস্তি ডিএ বাকী
চাইতে গেলেই লেলিয়ে দিচ্ছে
ডান্ডা হাতে গুন্ডা খাকি।
এই বাজারেও চালিয়ে দিচ্ছি
বাপের তোমার পূণ্য খুব,
যাওনা তোমার বাপের বাড়ী
গঙ্গায় দিয়ে আসছি ডুব।
পাড়ার লোকে যা করে তাই
দেখেই কর বায়না,
বয়সখানা কত হলো
দেখেছ কি আয়না?
ব্যস যেটুকু বাকী ছিল
গিন্নী সোজা মাটিতে
আঁচল চোখে বলেই দিলেন
যাবই বাপের বাটিতে।
এমন সময় উদয় হলো
বিরক্ত দুই ছেলে মেয়ে
রোজ সকালে ঝগড়া কর
কেন তোমরা গাল ফুলিয়ে?
পড়া আমাদের লাটে উঠলে
পরীক্ষাতে গোল্লা পাব,
তখন কি আর মনের সুখে
বাবার কেনা ইলিশ খাব?
ভুতকে কেন দেখছ বাবা
রোজ রাত্রে? ফালতু সব,
ভুত তো আমরা দিনেও দেখি
পড়াও লাটে, উধাও জব।
ধমক খেয়ে কত্তা গিন্নী
মুখ চাইতেই ব্যস্ত,
শিবু ছোটে থলে হাতে
গিন্নী কাজে ত্র্যস্ত।

_____________
সৌমিত্তর চক্করবরতি।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

3 thoughts on “উদ্ভুতুরে

  1. যাপিত জীবনের চালচিত্র। চলুক জীবন এভাবে না হয় ওভাবে। কি আর হবে !! :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।