ভালো থাকা না থাকা ২৪

ধীরে ধীরে রাত্রির শ্বাস গাঢ় হয়ে আসছে। মাথার ওপরে পৃথিবীর ছাদ রঙ বদলে যাচ্ছে একটানা, হালকা ছায়া থেকে গভীর, আরও গভীর, আরও গভীরতর। কুমারী হাওয়ায় শরীরের প্রত্যেক খাঁজে লেখা হয়ে যাচ্ছে অলৌকিক কবিতা। নেপথ্যে প্রগাঢ় নিবেশে মান্না ভাসছে – “ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে…”।

হাতে গোনা দিন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কখন যে বৈশাখী উদ্বেলিত মেঘের দল শান্ত হৈমন্তিক রোমান্স পেরিয়ে পৌষের নীল শীতআদরের দরজায় ডেকে যায়, কখন যে সময় ফুরিয়ে যায় কেউই তার হিসেব রাখতে পারে না।

শেষ বাস্তুসাপও মাটির ত্রিশ হাত নীচে আশ্রয় নিয়েছে কুণ্ডলী পাকিয়ে। তার খসখসে আপাত প্রেমবোধশূন্য ত্বক আস্তে আস্তে মোটা হয়ে পরম প্রেমে জড়িয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আসন্ন অন্ধকার শীতের কামড় থেকে। পৃথিবীর শেষ বাস্তুসাপের দু চোখের মাঝখানে বয়ে যায় ছোটনাগপুর মালভূমির স্বচ্ছ একলা ঝোরা।

মাটির ওপরে হেমন্ত কুয়াশার দিকে এক মুঠো তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিয়ে হেঁটে যায় আজন্ম বালক, যার মস্তিষ্কে আজও পর্যন্ত কোনো ক্ষমতা দখলের গল্প কড়া নাড়েনি। প্রাচীন সিন্ধুর ছলছল ঢেউ তাকে ডেকে বলে, “এ দিল তুম বিন কাঁহি লাগতা নেহি, হাম ক্যায়া করেঁ…”।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “ভালো থাকা না থাকা ২৪

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।