শেষ বেলার গান ৩

‘যখন ভাঙলো … ভাঙলো মিলনমেলা ভাঙলো …’। সেই কবে অদূর ভবিষ্যতের কোনো এক দিন বা রাত্রির হিসাব ধরে মানুষ আনন্দের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। একে একে গোনা হতে থাকে দিন, সপ্তাহ, মাস। আর অবশেষে সেই অমোঘ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে।

মঞ্চ তখন প্রস্তুত। তার আভরণ সব এসে পৌঁছে যাচ্ছে। শেষ টেনশনের ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে পরিচালকের হাতের আঙুল বেয়ে ঠোঁট থেকে ওপরের স্ট্রাসের কাঠামোর দিকে। প্রস্তুত কুশীলবেরা তাদের সংলাপের নিবিড় অনুশীলনের পরে। আলো শিল্পী, আবহ শিল্পী, প্রসাধন শিল্পী, মঞ্চ শিল্পী, পোষাক শিল্পীরা বেজায় ব্যস্ত হয়ে ডাউন রাইট থেকে আপ লেফট প্রতিমার চক্ষুদানে টেনে চলেছে তুলির আঁচড়। ড্রপসিন অপেক্ষায় ঝোলে আর কিছু পরেই মালাবদল।

এত ব্যস্ততা, এত শোরগোল, এত চিন্তার জমাট বুনন ছিঁড়ে এক সময়ে সব আলো নিভে যায়। কুশীলবেরা ফিরে গেছে নিজের চিলতে বাসে পরের অধ্যায়ের প্রস্তুতির জন্য। মানুষের আপাত মিলনমেলা ভেঙে যায়, তবু জারি থাকে খোঁজ।

খোঁজ জারি থাকে মানুষ আর নিহিত ভালোবাসার। খোঁজে কেটে যায় সম্পূর্ণ এক নষ্ট জীবন। অন্তরালে সূর্য ডাকে, “আয়…আয়…ও অবয়ব আয় তোকে ঔজ্জ্বল্য দিই, উত্তাপ দিই। আয় রে ছায়া তোকে দিই রোদ্দুর।” আঘাতের পরে আঘাতে বোধশূন্য ছায়াবয়ব সেই একচিলতে আশাতেই বাঁচে … হাঁটে … এগিয়ে চলে সামনের উন্মোচন উৎসবের সন্ধানে। ঠোঁটের কিনারে, মস্তিষ্কের সুপ্ত কোষে কে যেন গেয়ে চলে, “চলো মুসাফির বাঁধো গাঁঠরি রাস্তা বহোত দূর হ্যায়! চরৈবেতি … চরৈবেতি …”

বোধের তফাৎ হলেই বোধগম্যতা দূরে সরে যায়। শিক্ষায়, মননে, চিন্তায়, কল্পনায় মিল হলে সেটাই বাড়ী হয়ে ওঠে। বোধ বেঁচে ওঠে নিজের মত করে। ভালবাসে প্রবল আবেগে। গভীরে চলে যায়, সমস্ত শরীর মন একাকার করে চুমু খায় ভালবাসাজনকে বন্যার জলের তোড়ে। সেখানেই তৈরী হবে তার সম্পূর্ণ নিজস্ব বাড়ী, তার একান্ত নিজস্ব ঘর।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “শেষ বেলার গান ৩

  1. অশেষ শুভ কামনা প্রিয় কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। ভালো থাকা চাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।