(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে একটি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ অষ্টম পর্ব।)
ক্ষমতার নেশা সবচেয়ে মারাত্মক। যার মধ্যে এ নেশা বাসা বাঁধবে, সে মঙ্গলের পথ ছেড়ে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেকোনো পথ গ্রহণ করতে একটুও দ্বিধাগ্রস্ত হবে না, হোক তা অমানবিক কিম্বা অসাংবিধানিক।
পৃথিবীর ইতিহাস বলে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, নিজের অপদার্থতা ও কুশাসনের ক্ষোভ আড়াল করার জন্য ক্ষমতার কারবারীদের প্রধান রাস্তা দুটি। যুদ্ধ এবং অকারণ ধর্মীয় উন্মাদনার বেড়াজালে মানুষকে জড়িয়ে মত্ত করে দেওয়া।
৬০ এর দশকে বা তার আগের কুশাসনের গলিত কুষ্ঠ তখন দগদগে ঘা হয়ে ফুটে উঠছে দু দেশেরই গায়ে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দানা বাঁধার চেষ্টা করছে নকশাল আন্দোলন সহ অন্যান্য ক্ষুব্ধ আন্দোলন। অন্ধ্রপ্রদেশে কিছুদিন আগে হয়ে গেছে তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহ। বাংলায় তেভাগা। এই পরিস্থিতিতে ক্ষীয়মাণ আয়ু নিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হওয়ার জন্য বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে চারু মজুমদার বেরিয়ে এলেন সিপিআইএম থেকে, গড়লেন এমএল। দলে দলে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা কম বয়সের বিপ্লবী নেশায় সেই দলে যোগ দিল। অথচ একটা এত বড় রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে কোনো জনভিত্তি ছাড়াই যে বিপ্লব সম্ভব নয়, তা সেই দলের শীর্ষ. নেতৃত্ব বলেন নি। যে চীন কিছুদিন আগেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল, তার চেয়ারম্যান কেন আমাদের চেয়ারম্যান হবেন তা বোঝেনি সাধারণ জনতা। অথবা চীন, চেয়ারম্যান, বুর্জোয়া, পাতিবুর্জোয়া, শ্রেনী শত্রু ইত্যাদি বহু নতুন শব্দে তখন তারা বিভ্রান্ত। শহুরে কিছু মানুষের কথায় তারা যে বিপ্লবে সামিল হবেনা তা জলের মত পরিষ্কার। অথচ সব জেনেশুনেও নকশালবাড়ী থেকে স্ফুলিঙ্গ তৈরী হলো অসময়ে।
মজার ব্যাপার ঘটাল অন্য কমিউনিস্ট দলগুলি। মুখে বিরোধিতার কথা বললেও তাদের মতাদর্শ থেকে সরে এসে অন্য দল গড়ে তুলে আগুনচুমু খাওয়া ছেলেমেয়েগুলোর সব তথ্য তারা তুলে দিতে শুরু করলো শাসক দলের হাতে।
একদিকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পরবর্তী অধ্যায়ের ক্ষমতা দখলের খামচা খামচি, অন্যদিকে কুশাসনের ফলে জনগনের দুর্বিষহ অবস্থা। ইন্দিরার দলগত ভিত্তি তখনো শক্ত নয়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দরকার ছিল একটা গণউন্মাদনার, যাতে সাময়িক ভাবে হলেও মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরানো যায়।
(আবার আগামীকাল)
পরিস্থিতি সামাল দিতে দরকার ছিল একটা গণউন্মাদনার, যাতে সাময়িক ভাবে হলেও মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরানো যায়।