একজন মাতাল ও তার পিছনের গল্প

মায়ের ঔষধ কেনার টাকা দিয়ে আমি
মাদক কিনে নেশা করি।
নেশা ঠিক না ফুর্তি করি।
মগজে একবার নেশার সুতোয় টান পড়লে
ভুলে যাই
কে মা, কে বউ আর কে বাজারের পতিতা।
তখন আমার শুধু টাকা চাই,মাদক কেনার টাকা চাই।
আমার তখন নেশা করতে হবে এটাই জরুরি।

এই বাজারের সব অলি গলি আমার চেনা
কোথায় কি হয়, কি আছে সবই আমার জানা।
আমায় ঠেকায় কোন শালা।
এই বাজারের মতিন মাস্তানের আমিই বড় চ্যালা।

সাতদিন হল বাড়ি যাই না,
মা চোখে দেখতে পায় না,
চলতেও পারে না ঠিকঠাক – বয়স হয়েছে ঢেড়।
কদিন আগেই কোন এক বড়বাবু দয়া করে এই টাকাটা
দিয়েছিল ঔষধ কেনার জন্যে।
এতকিছু ভাবনার সময় নেই আমার হাতে
মগজে যে নেশা ধুন্ধুমার, এক নাগাড়ে চাপাতি মারে।

মদ, গাঁজা, আফিম, বাবা এসব না হলে
আমার একটা দিনও চলে না।
এসবের গন্ধ পেলে ভুলে যাই আঁতুড় ঘরের গন্ধ
ভুলে যাই ক্যাকর ক্যাকর বাঁশের চাটায়ের ঝুলনা
মায়ের হাতে বেড়ে ওঠা সেই শৈশব।

আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা মায়ের আঁচল
ভুলে যাই আমি।
ভুলে যাই শৈশবের মুতের গন্ধমাখা মায়ের
ভিজানো কাপড়।
ভুলে যাই উঠানে ছড়ানো কাঁচা ধানের গন্ধ
চাঁলনে ভাজা ধানের খই মুড়ি।
ভুলে যাই ধাপর ধাপর ঢেঁকিঘর, আর তার শব্দ।
যার প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে রাখা তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে
রাতের ঘুম।

অথচ, এসব আমার এখন ভালো লাগে না,
আমার শুধু ভালো লাগে মাদক, কারণ আমি মাতাল
মাতালদের এতকিছু ভাবলে চলে না।
মগজে একবার নেশার সুতোয় টান পড়লেই
আমি সবকিছু ভুলে যাই
ভুলে যাই সবকিছু।

3 thoughts on “একজন মাতাল ও তার পিছনের গল্প

  1. কঠিন এক বাস্তব অনুভূতির শাব্দিক প্রকাশ। নিয়মিত লিখুন কবি পথিক সুজন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।