সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

চিরকুট

3289

তোমার জানালায় এক ফালি মেঘ
শুয়ে থাকে এই হেমন্তের শেষ বিকেলে।
কোথাও কোথাও শীত নামে,
বৃষ্টি নামে, শিশির ঝরে পড়ে।

অথচ, তোমার চোখে আমার শতেক খানি
কবিতা নিবিড় ভালোবাসায় স্বপ্ন দেখে।
শীতল ছায়ায় ব্যাকুল চেয়ে থাকে ঝরে পড়া
সব শুষ্ক ফুলের দল।
হেমন্তের ঝরা পাতা বেজে যায়
মর্মর সুরে।

তোমার নীরব সন্ধ্যা আমি যতনে তুলে রেখেছি
আমার বুক পকেটে বেদনার নীল খামে।

দরজার চৌকাঠে রেখেছি “চিরকুট” লিখেছি,
অচেনা চার অক্ষর,
“ভালোবাসি”।

শীত আসার আগেই পড়ে নিও তুমি।

__________________________-
#কাব্যগ্রন্থ_ফেরিওয়ালা_থেকে
প্রকাশ কাল – ২০২১ বইমেলা

তুমি নেই বলেই ভুলতে চাই

index

সঠিক মনে নেই তোমায়
শেষ কবে স্বপ্নে দেখেছিলাম !
হঠাৎ,
কেমন উচ্ছিন্ন শব্দে জেগে উঠি;
ফাল্গুনের আগে মাঘের হিম শীতে
বিবর্ণ জড়ানো এক ঘরের কোণে।

রাত্রির শরীর বেয়ে জোছনা ঝরে
সময় বৃত্তের কাটি মেপে মেপে
পৃথিবীর উঠোন জুড়ে।
যা কেবল’ই ভাবায় ঘুমের ভিতর
গোলকধাঁধার মতন অনন্ত মাইল।

চারদিকে গাঢ় অন্ধকার নীরবে ঝরে
ভোরের নীলকণ্ঠ পাখির মতন
শিশির কণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে নরম ঘাসে।

অনেক রাত্রি হলে,রোজ ঘুম ভেঙে যায়;
নক্ষত্রের নিচে ধূসর বিষণ্ণ পৃথিবীটা
ভীষণ ফাঁকা মনে হয় তখন !

হলুদ রঙের আলোয় আকাশ ভরে গেলে
নদীর ধারে জলের গন্ধ মেখে
প্রকৃতির নিবিড় পলকে ইচ্ছে হয়,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।

পুরনো স্কুলঘর,
ভাঙা সাঁকোর নিচে নীরব স্রোতধারা,
আষাঢ়ের বিকেলে নরম ঘাসে হাঁটা,
কিংবা…
দখিনের ভাঙা বটগাছ,
একটি শেষ না হওয়া পৌষের রাত্রি
আজো আমায় পিছু ডাকে
নি:সূর্য নির্জন প্রাণে তুমি নেই বলে।
তুমি নেই বলেই রোজ স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে
হয়;
রোজ ঘুমায় বটে স্বপ্ন দেখার জন্য নয়।

তুমি নেই এই কথা ভুলে থাকার জন্য।

ব্যক্তিগত দিনলিপি – ০২

অনেক দিন হলো নতুন কিছু লিখতে পারি না।
কাজের ব্যস্ততা আর ক্লান্তিতে শরীর ও মন দুটোই বিবস্ত্র হয়ে গেছে। কোনো কিছু লিখতে গেলেই মাথা ধরে আসে। কোনো কিছু তেমন আর মাথায় নিয়ে আসতে পারি না। সারাদিন যে হৈচৈ এর ভিতর কাটে। এত এত কথাবার্তায় সময় যায় যে এত কথার ভিড়ে আমার কবিতার কথাগুলো হারিয়ে যায় দূর অজানায়।
কবে যে সময় মিলবে জানি না।

এ দিকে স্মার্ট ফোনটাও নিয়ে থাকতে পারি না।
নতুন একটা কিনবো এটাও পারছি না।

মাঝে মাঝে কাজের ভিতর থাকাকালীন অনেক কিছু মাথায় আসে, অনেক থিম ভাসে মনে অথচ, লিখতে পারি না তা সময়ই পাই না।
এই যে মধ্যবৃত্ত জীবন আমাদের শুধুই ব্যস্ততা ঘেরা।

কোথাও এতটুকুও সময় নেই।

তবুও স্বপ্ন দেখি, একদিন সময় হবে অনেক কিছু
লিখে রাখার। একদিন সময় হবে কবিতা লেখার।

কবিতা : অপ্রকাশিত লেখা

3277

সঠিক মনে নেই তোমায়
শেষ কবে স্বপ্নে দেখেছিলাম !
হঠাত্‍,
কেমন উচ্ছিন্ন শব্দে জেগে উঠি;
ফাল্গুনের আগে মাঘের হিম শীতে
বিবর্ণ জড়ানো এক ঘরের কোণে।

রাত্রির শরীর বেয়ে জোছনা ঝরে
সময় বৃত্তের কাটি মেপে মেপে
পৃথিবীর উঠোন জুড়ে।
যা কেবল’ই ভাবায় ঘুমের ভিতর
গোলকধাঁধার মতন অনন্ত মাইল।

চারদিকে গাঢ় অন্ধকার নীরবে ঝরে
ভোরের নীলকণ্ঠ পাখির মতন
শিশির কণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে নরম ঘাসে।

অনেক রাত্রি হলে, রোজ ঘুম ভেঙে যায়;
নক্ষত্রের নিচে ধূসর বিষণ্ণ পৃথিবীটা
ভীষণ ফাঁকা মনে হয় তখন !

হলুদ রঙের আলোয় আকাশ ভরে গেলে
নদীর ধারে জলের গন্ধ মেখে
প্রকৃতির নিবিড় পলকে ইচ্ছে হয়,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।

পুরনো স্কুলঘর,
ভাঙা সাঁকোর নিচে নীরব স্রোতধারা,
আষাঢ়ের বিকেলে নরম ঘাসে হাঁটা …

তুমি না হয় দূরেই থেকো

যূথিকা তোমায় ভেবে আর কবিতা লিখি না,
রাত্রির খোলস ছাড়িয়ে আর ভোর আঁকি না !

দিনান্তের রৌদ্র মাড়িয়ে বিকেলের
ভাঙা সাঁকোই
আর দাঁড়িয়ে থাকি না;
গৌধূলির শেষ প্রান্তের ছায়ায়
সূর্যাস্তের রেখায় তোমাকে দেখবো বলে।

যূথিকা তুমি বরং দূরেই থেকো
নীল নক্ষত্র হয়ে,
আমি না হয় দূর থেকেই দেখবো ক্লান্ত
পথিক হয়ে !

যূথিকা তোমায় ভুলতে চাই চিরতরে,
ভুলতে পারি না;
থেকো তুমি হৃদয় গহিনে শত জনম ধরে,
এর বেশি চাইবো না !

যূথিকা তুমি বরং নদী হয়েই থেকো;
আমি বরংচ কূল ঢেউয়ে ঢেউয়ে নিরবে ভেঙে যাবো।

চিরকুট

তোমার জানালায় এক ফালি মেঘ
শুয়ে থাকে এই হেমন্তের শেষ বিকেলে।
কোথাও কোথাও শীত নামে,
বৃষ্টি নামে, শিশির ঝরে পড়ে।

অথচ, তোমার চোখে আমার শতেক খানি
কবিতা নিবিড় ভালোবাসায় স্বপ্ন দেখে।
শীতল ছায়ায় ব্যাকুল চেয়ে থাকে ঝরে পড়া
সব শুষ্ক ফুলের দল।
হেমন্তের ঝরা পাতা বেজে যায়
মর্মর সুরে।

তোমার নীরব সন্ধ্যা আমি যতনে তুলে রেখেছি
আমার বুক পকেটে বেদনার নীল খামে।

দরজার চৌকাঠে রেখেছি “চিরকুট” লিখেছি,
অচেনা চার অক্ষর,
“ভালোবাসি”।

শীত আসার আগেই পড়ে নিও তুমি।

শিরোনামহীন কথিকা

তুমি যেতে চাইলে, আর চলে গেলে,
আমি বললাম থেকে যাও – আমার সাথে।
যেমন করে থাকে অন্তহীন আকাশে রক্তিম সূর্য।

অথচ,
তুমি কখনো বুঝতেও চাইলে না
কতটা পুড়ে আমার বুকের বাঁ পাশ তোমার বেদনায়।

অবসান

3277

অপেক্ষায় থেকে যে দুটি আঁখি
সতত ঝরায় অশ্রু জল
সেও জানে দিনের পর রাত আসে,রাতের পর দিন।

যে চলে যায় সে চলেই যায় সব রেখে
যে ফিরে আসে সে কোনো বাঁধাকেই উপেক্ষা করে না।

তুমিও ঠিকই ফিরে আসবে একদিন
সেদিন এই চোখের হয়ে যাবে চির অবসান।।

মেয়েটির কেউ রাখে না খোঁজ

Exif_JPEG_420

যে মেয়েটি রোজ রোজ জানালার গ্রীল ধরে
দাঁড়িয়ে থাকত দু চোখ মেলে
দূর মেঘের মিনারে,
প্রিয় কারুর আশায়।

যে মেয়েটি রোজ রোজ সন্ধ্যা নামার আগেই
গুছিয়ে নিতো এলো কেশি আস্তাবল,
গোধূলীর চিলেকোঠায়।
পূজার ডালা হাতে যে মেয়েটি রোজ জ্বালত
সন্ধ্যা প্রদীপ নীরব তুলসীবনে,
করত বসে আরতি।

যে মেয়েটির দূরন্ত উচ্ছ্বাস বইচির বাগান ঘেরা,
কলাবতী নলক নাকে,
ছোট্ট গাঁ’টি করত সারা।
যে মেয়েটি রোজ রোজ রাখত সবার খবর,
সবই মনে রাখত সে,
কখন কি লাগবে দরকার।

যে মেয়েটির রোজ রোজ বাড়ন্ত সময়,
ধুলোমাখা পথে,
বইয়ের ভাঁজে রাখত ফুটন্ত গোলাপ।
সে মেয়েটি ছিল সবার মধ্যমণি,
আদরের তুলতুলি,
খুশির রাঙা প্রভাত।
সে মেয়েটির এখন রোজ রোজ ছন্নছাড়া ভাব,
আওলা ঝাওলা কথায়,
বে ভুলি কাজের হিসেব রাখা।

সে মেয়েটি আজ কোথায় আছে,কেমন আছে,
হায় নিয়তি,সেই মেয়েটির
কেউ রাখে না আর খোঁজ!
মেয়েটি এখন ঘর পালিয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে,
দূরন্ত মেয়েটির নির্জীব প্রাণ,
অবহেলায় কাটে দিন।

মাঝরাতে কিংবা শেষরাতে

3150

মাঝরাতে কিংবা শেষরাতে
… শিশিরের শব্দে
ঘুম ভেঙে গেলে পৃথিবীর ‘পরে
… খোলা আকাশে
ফুটফুটে জোছনার হলুদ বিছানায়
… তোমাকে দেখি।

কার্তিক কিংবা অঘ্রাণ,ঢের যুগ আগে
… ঐ মেঠো চাঁদ,
শসাফুল কিংবা শিশিরের হিম জল,
… শস্যের ক্ষেতে
হলুদ পাতারা ঝরে পড়ে রোজ রোজ
… ফসলের ঘ্রাণে,
ঘুম আর ঘুমন্তের পারাপারে চেয়ে।

… এই নদী কিংবা
ঐ দূরের পাহাড়,অথবা উত্তাল সাগর,
… বাঁশপাতা কিংবা
আকাশের তারা শুধু তোমায় দেখে
… রোজ জেগে থাকে।

তবুও আমি

স্মৃতি ঝরা অতীত ধূসর মেঘে অন্তহীন মনে হয়,
অনুভূতির কোনো রং থাকে না!
লাল হলুদ কমলা সব রকম বা –নীল রঙের
অতীতগুলো ঝরে পড়ে কুয়াশার মত!

এক পলক শুধু এক পলক চেয়ে দ্যাখো ঐ সীমান্তে,
যেখানে স্বপ্নরা আজো বেঁচে আছে!
ভোরের হাওয়ায় অনুভবে বলে যায় আছি অপেক্ষায়!

ধূসর মেঘে রঙিন স্বপ্ন হাসে, শরৎ হেমন্ত শেষে শীতের
কার্নিশে পাতা ঝরা বিষণ্ণ সমুদ্র!
তুমি আমি সেই আছি,তবুও সময় বিপরীত আমাদের;
আয়নায় ঝুলন্ত চিত্রে একই মুখোশে
ভিন্ন অবয়ব!

রং চটা ঘরে ময়লা কার্পেট ঝেড়ে ঘুমাতে গেলে শুধুই
মনে হয় এই আমি সেই আমি নই!

অতঃপর…
চোখ মুছতে মুছতে ঘুম ভাঙলে নিজেকে চিনতে ভুল
হয় না! সব কিছু ভুলেই সেই আমি!

যে দিন পৃথিবী থেমে যাবে

30

একদিন ঝরাপাতারা থেমে যাবে
মাটির ছলনায়-গোধূলির সহচরে।
একদিন জীবনের পেয়ালায়
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরবে
কিশোরী কাঁকনের রাগিণী সুরে।

একদিন ঘুমিয়ে যাবো আমি
কেয়াফুল,শেফালীর দলে।
পলাতকা যূথিকার পায়ের শব্দে
হয়তো জাগবো আবার কখনো
আষাঢ়ের ভোরে কদম ফুলে।

একদিন ঝরে যাবে সব ফুল
শরতের ভোরে;শিশিরের মতন।
সেদিন,
নিঝুম ঘুমের ঘোরে হেঁটে যাবে তুমি
হেমন্তের হিম ঘাসের ‘পরে !

সেদিন,
থাকবো আমি সাঁজদীপ জ্বেলে
আলো আঁধারের বনপথ ধরে।
সেদিন এই পৃথিবীও থেমে যাবে;
থেমে যাবে কৃষ্ণাতিথির শশী !

দীপন্তি, তুমি চলে যাও

Exif_JPEG_420

কতকাল আঙুল ছঁইনি, ছুঁইনি নীল রঙা ফুল।
কতকাল দেখিনি,
ভোরের শিশিরে মুখের মিছিল
লাবণ্যে ছুঁয়ে থাকা ঝরা বকুল।

দীপন্তি,
তুমি এলে, বড় দেরি করে এলে
মেঘময় আকাশ মধ্যরাতে ডাক পাঠাবে
এখন তুমি যাও, চলে যাও।

বুকের শ্মশানে এখন অসম্ভব নির্জনতা
কাঁটার ঝোপঝাড়ে মাকড়সার জাল।
সেদিনের ক্ষতটা এখনো স্পষ্ট দেখা যায়
পূর্ণিমা চাঁদের মত জ্বল জ্বল করছে।

আমাদের বাইরে বাইরে দূরত্ব বেড়েছে অনেক
কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভাঙছে পরিত্যক্ত ঘরদালান।

মনের ভিতরে মন জমে আছে আঁধার বিস্মৃতি
ক্ষুরে ক্ষুরে খায় ঘুণ পোকা বুকের জলচকি
পড়ে আছে পরিত্যক্ত চশমা, নষ্ট ঘড়ি।

থাক সব পড়ে থাক, ধুলো জমে ঝাপসা হয়ে যাক
তোমায় দেখার চোখ। তবুও বলবো
এই আমি এখনো তুমি ছাড়া ভালো আছি “দীপন্তি”।

তুমি এলে, বড় দেরি করে এলে
এখন তুমি যাও, দূর বহু দূরে চলে যাও।

কতকাল আঙুল ছঁইনি, ছুঁইনি নীল রঙা ফুল।
কতকাল দেখিনি,
ভোরের শিশিরে মুখের মিছিল
লাবণ্যে ছুঁয়ে থাকা ঝরা বকুল।

ধূসর রঙের দিন

316

সে দিনটি ছিল ধূসর রঙের, যূথিকা!
সূর্য তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছিল,
যখন তোমাকে আমি বললাম, বিদায়–যূথিকা!

বৃত্তের পরে বৃত্ত বসিয়ে প্রথম আলোই ভোরের পানপাত্রে
যেই তুমি বিদায় চুমু দিয়েছিলে আমায়,
সেই থেকে বিবর্ণ ছায়া তাড়া করে অন্তরীক্ষে!

জানো যূথিকা,
একটি ঘটনা শুধু মাত্র একটি সম্ভাবনা;
নচেৎ ডাহা মিথ্যা কিছু,
অথবা-আছে জীবনের গল্প, কিছু মেঘলা প্রতিচ্ছবি!

ধুলো মাখা শ্লেট, রং তুলি ক্যানভাস অস্পষ্ট চিত্র;
কুড়িয়ে পাওয়া কাঁকন খুঁজে নির্জীব হাত সঙ্গত!
প্রসঙ্গতই সে দিনটি ছিল ধূসর রঙের, যূথিকা!