বছরে শুধু একদিন একটু মা-মা করলেই হবে?

বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব-মা-দিবস’। আমার মনে হয়: শহরের কিছুসংখ্যক মানুষ শুধু এই দিনটির কথা শুনেছে। আর বাকীরা এখনও এই বিষয়ে অজ্ঞ। আর গ্রামেগঞ্জের কথা তো বাদই দিলাম—সেখানে মা-দিবস উদযাপিত হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। বিশ্ব-মা-দিবসের উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে মহৎ।

আমরা আজকাল মায়ের এমনই অধম সন্তানসন্ততি হয়েছি যে, আমাদের এখন দিবস গুনে-গুনে একদিন মাকে ভালোবাসতে হবে! নাকি এই একদিনের মতো সারাবছর মাকে ভালোবাসতে হবে? আশা করি বুদ্ধিমান মাত্রই তা অনায়াসে বুঝতে পারবেন।

প্রতিবছর মে-মাসের দ্বিতীয় রবিবার সারাবিশ্বে ‘বিশ্ব-মা-দিবস’ পালিত হয়। এর ঢেউ আজ বাংলাদেশেও কিছুটা হলেও লেগেছে। তাইতো এখন দেখা যায়, মাকে ভুলে বিদেশে কিংবা দেশের ভিতরেই যারা দূরে-দূরে আছে, তারা একদিন হলেও মাকে একটুখানি স্মরণ করতে পারে! তাদের মূল্যবান সময় থেকে মায়ের জন্য একটুখানি বরাদ্দ করে তারা দেশ ও জাতির কাছে কীর্তিমান হয়ে আছে!

‘মা’ শব্দটির অনেক প্রতিশব্দ আছে। যেমন, মাতা, মাতঃ, মাতৃকা, জননী, জনী, প্রসূতি, জনয়িত্রী, জনিকা, জন্মদাত্রী, গর্ভধারিণী ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘গর্ভধারিণী শব্দটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। আর আসলেই মা হচ্ছেন গর্ভধারিণী। তাঁর গর্ভেই বেড়ে উঠেছে দুনিয়ার সমস্ত মানবশিশু।
আমরা যদি মাকে গর্ভধারিণী ভেবে থাকি—তাহলে, এখনই মায়ের মূল্য উপলব্ধি করতে হবে। আর সঙ্গে-সঙ্গে, এক্ষুনি মাকে দিতে হবে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা। মাকে ভালোবাসতে পারলে আমরা নিজেরাই আরও সমৃদ্ধ হতে পারবো।

যারা খেয়ালের বশে, স্বার্থের লোভে, লাভের আশায় মাকে ছেড়ে কাছে কিংবা দূরে কিংবা বিদেশে পড়ে রয়েছেন—তারা ফিরে আসুন ভ্রান্ত-গোলোকধাঁধা থেকে। আর এর থেকে আপনাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। মাকে একবার গর্ভধারিণী ভাবতে শিখুন। আপনি খুঁজে পাবেন আপনার শিকড়ের সন্ধান। আপনি খুঁজে পাবেন আপনার সঠিক অস্তিত্ব।

মায়ের সঙ্গে আমাদের কারও ‘হাই’ কিংবা ‘হ্যালো’ বলার সম্পর্ক নয়। মায়ের সঙ্গে নাড়ীর সম্পর্ক। তাই, বছরে একদিন মাকে উদ্দেশ্য করে একটুখানি ‘হাই’-‘হ্যালো’ বলাটা বাদ দিন। সারাবছরের জন্য মাকে ভালোবাসুন। আর মাকে কাছে রাখুন। আর মায়ের সঙ্গে থাকুন।

আপনি কার কথায় কীসের আশায় কেন নিজের মাকে—গর্ভধারিণীকে ভুলে আছেন? আপনি এখনই ফিরে আসুন মায়ের কাছে। বৃদ্ধবয়সে আপনার মা রয়েছেন কোনো এক বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা পরের আশ্রয়ে! আর আপনি কিনা সাহেব হয়ে সমাজের বুকে খুব একটা ভাব নিয়ে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন! আপনার বোধোদয় হবে কবে? আর কত ঝরবে মায়ের চোখের জল? তাই, লোকদেখানোর জন্য একদিন মাকে ভালো-না-বেসে সারাজীবনের জন্য তাঁকে ভালোবাসুন। আর একবার ভাবুন তো: বছরে শুধু একদিন একটু মা-মা করলেই হবে? আর মা কি শুধু একদিনের জন্য?

(মা-দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে।)

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১১/০৫/২০১৬

সাইয়িদ রফিকুল হক সম্পর্কে

সাইয়িদ রফিকুল হক ( Syeed Rafiqul Haque) তিনি একজন সাহিত্যসেবী, গ্রন্থপ্রেমিক ও রাজনীতি-সচেতন মানুষ। বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাংলাসাহিত্য তাঁর কাছে সবসময় প্রিয়, এবং এই তিনটি তাঁর কাছে চিরদিন পবিত্র শব্দ। তিনি বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি। তাঁর লেখালেখিতেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার ছাপ সুস্পষ্ট। আর তিনি সবসময় ঘৃণা করেন রাজাকার, ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীচক্রকে। ধর্মবিশ্বাসে তিনি ত্বরীকতপন্থী সুন্নীমুসলমান। আর জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি একজন পুরাপুরি আস্তিক। তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। একজন খাঁটি বাঙালি ও বাংলাদেশী। সাহিত্যচর্চা: তিনি নামে-বেনামে ও ছদ্মনামে লেখালেখি করছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। মূলত তিনি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। তিনি স্কুলজীবন থেকে আপনমনে সাহিত্যচর্চা করছেন। তখন লেখাপ্রকাশের তেমন-একটা সুযোগ না থাকায় তিনি তাঁর লেখাসমূহ প্রকাশ করতে পারেননি। বর্তমানে ‘শব্দনীড় ব্লগ’সহ বিভিন্ন ব্লগে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর লেখার মূল বিষয়: মানুষ, মানবতা আর দেশ-জাতি-সমকাল। আত্মপ্রচারবিমুখ এক কবি তিনি। স্কুলজীবন থেকে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করে অদ্যাবধি কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ইত্যাদি রচনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। পনেরো বছর বয়সে কবিতা লেখার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তিনি লিখেছেন অনেক। কিন্তু প্রকাশ করেছেন খুব কম। ইতঃপূর্বে কয়েকটি সাহিত্যপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর লেখাসমূহ আধুনিক-ব্লগগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে। এজন্য তিনি ব্লগগুলোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বাস্তববাদী লেখক। আর তাঁর লেখায় কোনো কৃত্রিমতা নাই। তাঁর প্রায় সমস্ত লেখাই দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত। তাঁর লেখার বিষয়: কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ইত্যাদি। তিনি ‘মানবজীবনের গল্প’ রচনায় যথেষ্ট পারদর্শী। এ পর্যন্ত তাঁর রচিত গল্পের সংখ্যা ৩২টি। আর উপন্যাসের সংখ্যা ১৮টি। ছড়াসাহিত্যেও তিনি সমভাবে পারদর্শী। শিক্ষা: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ নাই। তাঁর কাছে সার্টিফিকেট-সর্বস্ব সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কঠোর সাধনায় অর্জিত প্রকৃত জ্ঞানের মূল্য অনেক বেশি। তিনি নিজেকে সবসময় একজন স্বশিক্ষিত মনে করেন। তবে প্রচলিত প্রথার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক উচ্চতর গবেষণাকর্মে নিয়োজিত। জন্মস্থান: বাংলাদেশ। তাঁর জীবনের লক্ষ্য: লেখালেখির মাধ্যমে আমৃত্যু দেশ, মানুষ আর মানবতার পক্ষে কাজ করা।

5 thoughts on “বছরে শুধু একদিন একটু মা-মা করলেই হবে?

  1. গর্ভধারিণী শব্দটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। আর আসলেই মা হচ্ছেন গর্ভধারিণী। তাঁর গর্ভেই বেড়ে উঠেছে দুনিয়ার সমস্ত মানবশিশু।

    আমরা যদি মাকে গর্ভধারিণী ভেবে থাকি—তাহলে, এখনই মায়ের মূল্য উপলব্ধি করতে হবে। আর সঙ্গে-সঙ্গে, এক্ষুণি মাকে দিতে হবে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা। মাকে ভালোবাসতে পারলে আমরা নিজেরাই আরও সমৃদ্ধ হতে পারবো। ___ সময়ের আবাহন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ সুহৃদ। আর সঙ্গে রইলো একরাশ শুভেচ্ছা।

    2. স্বাগতম মি. সাইয়িদ রফিকুল হক।

    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বন্ধু। আর সঙ্গে রইলো শুভকামনা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।