থেমিস কে ছিলেন?
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি মতে– ইনি ছিলেন প্রাকৃতিক নিয়মকানুন নিয়ন্ত্রণকারিণী দেবী। ইনি ইউরেনাসের ঔরসে গেইয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বংশের বিচারে ইনি ১২ জন টাইটানের একজন। ভবিষ্যৎ-বাণী করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন গেইয়ার কাছ থেকে। পরে এই ক্ষমতা ফিবিকে প্রদান করেছিলেন। দেবরাজ জিউসের ঔরসে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন হোরায়ে (ঋতু নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী) এবং মোইরায়ে (ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী। রোমান পুরাণে এর নাম জাস্টিয়া (Justitia)।
ইউরোনোমে এই থেমিস এবং ইউরিমেডোন-কে বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।
আদি রোমানরা গ্রিক মিথ এর কথিত দেবী জাস্টিসিয়াকে বিচারের প্রতীক হিসেবে মনে করতো।
প্রাচীন রোমে বিচার বা সামাজিক ব্যবস্থা কেমন ছিলো সেটা মনে করতে গ্লাডিয়েটর মুভির কথা মনে করে দেখা যেতে পারে।যেখানে দাসদের আটকে রেখে হিংস্র পশুর সাথে যুদ্ধ করতে দেওয়া হতো, আর সেই জঘন্য দৃশ্য দেখে মজা নিতো সম্রাট ও সাধারণ জনগন।
৫০০০ বছর আগে বর্বর রোমানরা কি কল্পকাহিনী বিশ্বাস করতো, সেটাকে একেবারে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগাতে বসাতে চাইছে আধুনিকতার নামে, কি বিস্ময়কর!
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনও অনেক সেকেলে অন্ধকারে আছে। আড়াইশ’ বছর আগে ব্রিটিশ জলদস্যুরা যে কুসঙ্কারাচ্ছন্ন আইন শিখিয়ে দিয়ে গেছে সেটাই এখন মুর্খের মত ফলো করে যাচ্ছে উকিল-জাস্টিসরা।
প্রধান বিচারক মাথায় উলের টুপি পড়ে মা-ভেড়া সেজে থাকে, দাবি করে- সে মা ভেড়া তার সামনে সবাই সমান। এখনও উকিলরা জাস্টিসদের দেখলে ব্রিটিশ নিয়মে ‘মাই লর্ড’ ‘মাই লর্ড’ (আমার প্রভু, আমার প্রভু) করে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এতটাই অন্ধ অনুকরণপ্রিয় যে, ব্রিটেনে তীব্র শীত পরার কারণে উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট, গাউন পরে থাকে। আর বাংলাদেশে সেই অণুকরণে গরমকালে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে শত শত লোকের মধ্যে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট-গাউন পরে থাকে। দরদর করে ঘামতে থাকে, কিন্তু ব্রিটেনের অন্ধ অনুকরণ বলে কথা!!
দুঃখের কথা- ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৫ বছর হয়ে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৫ বছর, কিন্তু এখনও বিচারবিভাগ সেই ব্রিটিশ ভাষা থেকে বের হতে পারলো না। এখনও সুপ্রীম কোর্টে বাংলা ভাষা সম্পূর্ণ অচল।
কথাগুলো এ কারণে বললাম- সবাই যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা যেন আরো উল্টো পথে হাটছে। এতদিন ২৫০ বছর আগের ব্রিটিশ জলদস্যুদের ফলো করতো, আর এখন আরো পিছিয়ে গিয়ে ৫০০০ বছর আগে রোমান বর্বরদের কাল্পনিক বিষয় ঘেটে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগায় বসাচ্ছে।
উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল একরকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন করা হলো, কারা করল, কীভাবে—আমি জানি না। ইতিমধ্যেই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে আমি এই খবরটা দিয়েছি এবং খুব শিগগিরই আমি ওনার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব। আলোচনা করব এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।
আশা করা যায় মূর্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তার অবসান হবে।