থার্ড আই এর সকল পোস্ট

সাম্যবাদী করোনার চরিত্রের অধঃপতন

১.
বলা হয়ে থাকে, করোনা ভাইরাস সাম্যবাদী। ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান চোখে দেখে। চরিত্রের বিবেচনায় করোনা ভাইরাসকে তাই সমাজতান্ত্রিক বলেও চিহ্নিত করা যায় বৈকি! একথা সত্যি বটে ভাইরাস আক্রান্তের বেলায় ধনী গরীব মানছেন। এক্ষেত্রে শ্রেণি নিরপেক্ষ বলা যেতেই পারে। কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়।

২.
করোনা ভাইরাস বিষয়ে জনসচেতনতামূলক সরকারি-বেসরকারি প্রচার-প্রচারণাগুলো আমরা সবাই দেখছি। সব জায়গাই বলেছে, ঘরে থাকুন। বেশি করে প্রোটিন-জাতীয় খাবার আর ফল-মূল ও শাক-সবজি খান। মানে এগুলো খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। শরীরের প্রতিরোধের কাছে ধরাশায়ী হবে এই আলোচিত ভাইরাস।

প্রোটিনের উৎস মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-বাদাম। দামী খাবার। উচ্চবিত্তের খাবার। ধরে নিচ্ছি, নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও মোটামুটি প্রোটিনের ব্যবস্থা করতে পারলো। কিন্তু গরীবের উপায় কী? গরীবদের শুধু ডাল। ডালে প্রোটিন আছে। তা বটে! মোটা চালের ভাত আর ডাল। ডালই শেষ আশ্রয়।

গরীবের টাকা নেই। সিস্টেম মতো সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষা নেই; ভালো চাকরী নেই; বড় চাকরী নেই, বড় বেতন নেই। ভালো বাসস্থান নেই এবং ডাল ছাড়া পুষ্টিকর খাবার নেই; রোগ-বালাইয়ের শেষ নেই; বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাতো যাবেই। তাইতো? তাহলে করোনাও ধনীর প্রতিরোধে অসহায়। আর গরীব প্রতিরোধের ঢালস্বরূপ ডালের আর ক্ষমতাই কতটা? গরীব ধরাশায়ী।

৩.
রাষ্ট্রের বড় মাথা। বড় ভাবনা। রাষ্টযন্ত্র দখল করে আছে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সংসদের ভিতর কতজন বণিক শ্রেণীর জানা আছে তো? তাই বড় মাথায় বড় বড় বণিকের কথা থাকে। তাদের জন্য প্রণোদনা আসে। ডুবে যাওয়া লঞ্চকে টেনে তুলতে যায় উদ্ধারকারী জাহাজ। আর লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপতিদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ।
এসব প্রণোদনার অর্থ আসে কোত্থেকে? বাণিজ্যের পেছনে ঢেলে দেয়া হয় রাষ্ট্রের কোষাগারে থাকা কৃষক-কামার-কুমার-তাঁতি-জেলের অর্থ। এভাবেই বণিকেরা লাভ গুলো গচ্ছিত রাখে নিজেদের একাউন্টে। আর লোকসানের ভারটুকু চাপিয়ে দেয় জনতার কাঁধে।

এভাবে চক্করে পরে গরীব হয় প্রতারিত। করোনা মহামারির এই দিনে গরীব শ্রেণী নাভিশ্বাস উঠে মরছে। কিন্তু রাষ্ট্রের মগজ ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা লুটপাটে মেতে উঠেছে।

৪.
এই দুর্দিনে কীভাবে চলে কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুর-তাঁতি-জেলে-কুমার-দেহপসারিনী-গৃহপরিচারিকাদের সংসার? উবার-পাঠাও চালিয়ে, টিউশনি করে, কাপড় আয়রন করার দোকান দিয়ে, পার্ট-টাইম সেলসম্যান এর কাজ করে যারা চলতো, কী করে চলছে তাদের?

বিদায় ঢাকা: করোনায় কাজ হারিয়ে ঢাকা থেকে অনেকেই পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন, শিবচরের কবির নামে একজন ছোট ব্যবসায়ী রাজধানী থেকে বিদায় যাত্রা করেছেন এ মিনি ভ্যানে করে। ছবিটি পোস্তগোলা থেকে তোলা : (নূর হোসেন পিপুল)

মানুষ ঢাকা ছাড়ছে, ছাড়ছে অন্য শহরও। খবরের কাগজ আর ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ভাসছে মাল-বোঝাই ট্রাকের ছবি ও খবর। বহু মধ্যবিত্তের জীবনও প্রকাশ করতে না পাড়ার বোবা কান্নায় নীরব হাহাকার। একেবারে গরীবের তো মাথা ঢাকলে পা উদাম। কাজ নেই। আয়-রোজগার নেই। সঞ্চয়ও কারো শেষ, কারো বা তলানিতে।

৫.
প্রতিদিন এক ভদ্রমহিলাকে দেখি করোনার নানা তথ্য নিয়ে আসে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত নারী-পুরুষের অনুপাত জানিয়ে দেয়। বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানও রসিয়ে রসিয়ে বলেন যেন কত সুখকর কাহিনী বলে যাচ্ছেন। আমার তো মাঝে মাঝে এক বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রীর মতো বলতে ইচ্ছা করে -রাবিশ। আপনারা কি ভাবেন? যা খুশি ভাবুন। কিন্তু আক্রান্তদের শ্রেণি-পরিচয় জানতে পান কি?

আমরা খবর পাই আক্রান্তদের অধিকাংশই অভিজাত শ্রেণির বাসিন্দা। বেদনাক্রান্ত হয়ে শুনতে পাই চীন থেকে এয়ার এম্বুলেন্সে ডজন খানিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনেও বাঁচানোই যাচ্ছে না অভিজাতদের। বাস প্রমাণ হয়ে গেল করোনা ধনীদের শত্রু, আর বলা হয়- গরীব খেটে খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাই তারা তেমন আক্রান্ত হয় না, মরে না।
ব্যাস হয়ে গেল! কথা কি এখানে শেষ?

অভিজাতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সামর্থ্য বেশি। কিন্তু গরীবের মধ্যেও যারা একেবারে গরীব, অজপাড়াগাঁ, দুর্গম চর বা হাওরাঞ্চলে যারা থাকে অথবা মফস্বলে ও উপজেলা অঞ্চলে যে গরীব জনগোষ্ঠী আছে, চিকিৎসার সামান্যতম সুযোগ না থাকায় তারা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাই করাতে পারছে না, বেহুদা মরে যাচ্ছে বেখবরে তার তদন্ত বা পরিসংখ্যান হাসিমুখে বর্ণনা করে কি কোন অভিজাত সংবাদ পাঠক?
সোজা হিসাব তাদের পরীক্ষাই হয় না, তাই তারা আক্রান্তও হয় না।

৬.
সরকারি কর্তাদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা এসেছে। সরকারি প্রাণ চলে গেলে পরিবার পাবে অর্ধ কোটি টাকা। আর করোনা হলে দিবে এক মিলিয়ন। দামী প্রাণ ওদের। সরকারতো ওদেরই, লাগে টাকা দেবে করদাতাগণ।
হায়! বেসরকারি প্রাণ। আহা! আধমরা হয়ে কেবল বেঁচে থাকা। মুড়ি -মুড়কির চেয়েও সস্তা। ধনতন্ত্রের উৎসবের অকাতরে বলি হয় এইসব প্রাণ।

৭.
উন্নয়ন বহু যুগ উপর থেকে নিচে চুঁইয়েছে, এবার নিচ থেকে উপরে যাবার বন্দোবস্ত করে দেখুন। গাছের শেকড় থেকে যেভাবে কাণ্ড ও পাতায় যায় প্রাণ রস, সেইভাবে উন্নয়নকেও চালনা করুন। এই আহ্বান জানিয়ে লেখাটি শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানি এভাবে হয় না কিছুই। অধিকার কেউকে দেয় না, আদায় করে নিতে।

কোথায় সেই প্রচেষ্টা?

ভাগ্য

‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)

শুরুর কথা‎
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার ‎তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে ‎কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা ‎এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে ‎বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে‎
‎ সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,‎
‎ মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও ‎পূর্বনির্ধারিত, ‎
‎ ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই। ‎
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ‎ঘটছে তা হল‎
‎১.‎ ‎দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে ‎আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা ‎খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।‎
‎২.‎ সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ ‎করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট ‎করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের ‎‎যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই ‎অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?‎
‎৩.‎ বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ ‎করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের ‎তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন- ‎
‎ ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট ‎করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ ‎আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না ‎এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।‎
‎ কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা ‎মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ‎ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ‎ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে। ‎
‎৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি ‎হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন ‎তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য ‎মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।‎
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার ‎বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎‎বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা ‎করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং ‎তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে। ‎
‎ ‎
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে ‎উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে ‎সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
‎১.‎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য। ‎
‎২.‎ উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে ‎আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে ‎জানিয়ে দেয়া,‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে ‎‎যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা ‎রাখা,‎
গ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।‎
ঘ.‎ জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা। ‎
‎৩.‎ কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।‎
‎৪.‎ তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।‎
‎৫.‎ তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।‎
‎৬.‎ মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা ‎অনুযায়ী হবে।‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য ‎
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন ‎প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১ ‎
‎ ‎اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.‏
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে ‎পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)‎
তথ্য – ২‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে ‎অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে ‎যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।‎
‎ (আন’আম : ১৬৫) ‎
তথ্য – ৩‎
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا ‏الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.‏
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে,‎‏ ‏‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে ‎‎দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো ‎পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো ‎অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে ‎সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ‎আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং ‎নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার ‎বা শাস্তি দেয়া’। ‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে ‎‎দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া ‎এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ ‎করতে হবেÑ
ক.‎ সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
‎কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি ‎নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই ‎জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ ‎‎কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ ‎বিবেক-বিরুদ্ধ।‎

খ.‎ উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া‎
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-‎উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় ‎করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে ‎‎সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে ‎পারবে না।‎

গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার ‎জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া‎
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে ‎অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ‎ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর ‎লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে ‎হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা ‎পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে ‎হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।‎
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা ‎
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো ‎তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় ‎বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ ‎সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎‎কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো ‎যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই ‎শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। ‎
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা ‎অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, ‎‎যেমন‎
‎ জন্মের স্থান, কাল, বংশ;‎
‎ লিঙ্গ,‎
‎ শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,‎
‎ মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।‎
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে ‎‎(ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের ‎‎(মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ‎না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট ‎করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার ‎বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ ‎কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি ‎দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল ‎‎রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার ‎বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ‎ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।‎

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক ‎বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-‎সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ‎

ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা ‎নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া

তথ্য- ১ ‎
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ‎ ‎تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ ‏وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.‏
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর ‎‎কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি ‎‎খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা ‎নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো।‎ ‎ (বাকারা : ২৫৬)‎
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও ‎‎কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
তথ্য – ২ ‎‏ ‏
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.‏
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই? ‎
‎(বালাদ : ১০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে ‎সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।‎
তথ্য – ৩‎
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى ‏وَالْفُرْقَانِ.‏
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির ‎জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও ‎মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। ‎ ‎ (বাকারা : ১৮৫) ‎
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির ‎জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে ‎মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ‎ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
‎ অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও ‎বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে ‎দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি ‎উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক.‎ আল-কুরআন,‎
খ.‎ সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ.‎ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি‎
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের ‎‎মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ‎ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ‎মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট ‎করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ‎‎বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার ‎তাগিদ দিয়েছেন।‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) ‎প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা ‎‎যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা‎
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত ‎জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা ‎তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-‎বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-‎কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

তথ্য – ১ ‎
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.‏
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) ‎জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)‎
তথ্য – ২ ‎
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.‏
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) ‎নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত ‎করে রেখেছেন। (জাসিয়া‎‏ ‏‎: ১৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩‎
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‏وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.‏
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই ‎আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ ‎‎থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের ‎জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? ‎ ‎ (লোকমান : ২০) ‎
‎ আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের ‎আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
‎‎ মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের ‎জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন, ‎
‎‎ ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে ‎‎রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা ‎তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,‎
‎ ‎ ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ‎জন্যে ব্যবহার করতে পারে।‎
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা ‎সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ ‎‎স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ

‎ ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১ ‎
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.‏
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ‎ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯) ‎
তথ্য – ২‎
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ ‏النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.‏
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি ‎কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে ‎নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ‎অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।‎

‎ সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন‎
তথ্য – ১ ‎
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.‏
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে ‎তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা ‎অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।‎
‎ (দাহার:৩)‎
তথ্য – ২ ‎
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.‏
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা ‎নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। ‎ ‎ (দাহার : ২৯) ‎
তথ্য – ৩ ‎
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.‏
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)‎
তথ্য – ৪ ‎
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.‏
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)‎‏ ‏
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন ‎নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত ‎হয়।‎
তথ্য – ৫ ‎
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.‏
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া ‎হয়নি।‎ ‎ (বাইয়েনা : ৫)‎
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ‎ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ‎ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। ‎
তথ্য – ৬ ‎
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.‏
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে ‎পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ ‎অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।‎
তথ্য – ৭ ‎
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.‏
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি ‎পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)‎
তথ্য – ৮‎
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.‏
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ‎ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ‎ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা ‎সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে ‎‎(স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে ‎মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার ‎অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০) ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে ‎চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত ‎নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ‎ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো ‎অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা ‎এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে ‎‎সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।‎

ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা‎
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ ‎বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং ‎একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে ‎‎সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ‎জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) ‎একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি ‎জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের ‎মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ‎ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা ‎কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন। ‎
‎ আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় ‎বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা ‎যায় উপরের আয়াতখানি হতে। ‎
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?‎
বিবেক-বুদ্ধি‎
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে ‎‎যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে ‎পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% ‎যুক্তিসঙ্গতও।‎
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত ‎সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ‎ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা ‎যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ ‎‎দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।‎

আল-কুরআন ‎
তথ্য – ১ ‎
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.‏
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন ‎‎(নিজ কর্মের দোষেই আসে)। ‎ ‎ (শুরা : ৩০) ‎
তথ্য – ২ ‎
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.‏
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।‎
‎ (রুম : ৪১) ‎
তথ্য – ৩ ‎
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.‏
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ ‎‏)‏অকল্যাণ‏(‏‎ তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই ‎‎(কর্মদোষেই) হয়। ‎ ‏ ‏‎ (নিসা : ৭৯)‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .‏
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই ‎নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে ‎আনে)। (ইউনুস : ৪৪) ‎
তথ্য – ৫ ‎
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.‏
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ ‎পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না ‎করে। (রাদ : ১১) ‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, ‎কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে ‎‎দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।‎

সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট ‎এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও ‎উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
‎ ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,‎
‎ মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎
‎ ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,‎
‎ মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত ‎
‎ দেয়া হবে।‎
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে ‎‎কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার ‎উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, ‎বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন ‎নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে ‎এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা‎
‎ মানুষ দায়ী নয়।‎
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ‎ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং ‎
‎ সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত ‎হয়। ‎

‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা ‎অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার ‎সরল অর্থ ‎
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ ‎সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১ ‎
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.‏
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎‏ ‏‎(ফোরকান : ২) ‎
তথ্য – ২ ‎
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন ‎‎(জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩ ‎
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।‎
‎ (কামার:৪৯) ‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً‎ ‎‏.‏
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল ‎জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)‎

তথ্য – ৫ ‎
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.‏
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) ‎অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। ‎ ‎ (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ ‏مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ ‏الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.‏
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত ‎মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে ‎দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের ‎সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। ‎সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস
তথ্য – ১‎
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ‏وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ ‏وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.‏
‏ (رواه مسلم)‏
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন ‎আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‎‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির ‎উপর। (মুসলিম)‎
তথ্য – ২‎
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا ‏خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ ‏الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى ‏وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.‏
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) ‎লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী ‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর ‎‎(তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার ‎বিষয়টিও। ‎ ‎ (মুসলিম)‎
‎ ‎
তথ্য – ৪‎
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি ‎একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে ‎‎থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার ‎‎চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর ‎বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।‎
‎ (আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

তথ্য – ৫‎
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ ‏الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ ‏لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ‎বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) ‎তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে ‎পাবে। (বুখারী)‎
‎ ‎
‎ তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ‎ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে। ‎

কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- ‎সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা‎

প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ‎ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ‎মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের ‎
‎‎ কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,‎
‎‎ মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং ‎
‎‎ একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,‎
এক কথায় মানুষের সকল বিষ।

‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,‎

‎ কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,‎

‎ বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,‎

‎ আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের ‎শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব ‎সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।‎

‎ আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ‎কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের ‎মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ

‎ দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ ‎কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ‎ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।‎

‎  সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা ‎লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে ‎‎থাকবে।‎

‎ কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন‎

‎ সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট ‎করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ ‎আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি। ‎

‎ সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ‎ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি ‎অর্থবোধক হয় না। ‎

বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎

আরবী কদর ‎‏(تقدير)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(قدر)‏‎ শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে ‎পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-‎

‎ ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং

‎ কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, ‎নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।‎

কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে ‎তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য ‎কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার ‎উপর।‎

বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ যদি ‎পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা ‎পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, ‎‎বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং‎

‎২.‎ মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ‎ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,‎

মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ‎তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা ‎অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে ‎সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ ‎‎গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, ‎একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,‎

‎২.‎ আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।‎

তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ

সফল হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল ‎হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

‎ তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা ‎কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ‎‎(ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও ‎হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক ‎হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ

‎১.‎ কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, ‎নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা ‎বা গুরুত্ব থাকে,‎

‎২.‎ কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,‎

‎৩.‎ আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি ‎‎দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর ‎মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,‎

‎৪.‎ সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ ‎পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব ‎‎থাকবে।‎

সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর‎‏(تقدير) ‏‎ শব্দ ধারণকারী ‎বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ‎ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে ‎আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন। ‎

তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে ‎পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো ‎কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে

আল-কুরআন

وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.‏

অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎

তথ্য-২‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে ‎দিয়েছেন)। ‎‏ ‏‎(আল’আলা‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎৩) ‎

ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে ‎‎রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে ‎জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার ‎জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ‎

তথ্য-৩‎

إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏

অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)‎

তথ্য-৪‎

إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.‏

অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের ‎প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)‎

তথ্য-৫‎

وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ. ‏

অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ ‏قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا ‏أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.‏

অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ‎ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; ‎সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে ‎আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও ‎পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন ‎লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। ‎

‎(মুসলিম)‎

তথ্য-২‎

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ ‏الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ. ‏

অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। ‎সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর ‎প্রাকৃতিক আইন)। ‎

‎(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎

وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏

অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক ‎আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। ‎

‏ ‏‎(মুসলিম) ‎

তথ্য – ৪‎

وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏

অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন ‎রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ‎ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা ‎করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, ‎‎তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত। ‎‏ ‏

‏ ‏‎(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ‎ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ‎ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর। ‎

তথ্য – ৫‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ ‏أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى

অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি ‎জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল ‎করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে ‎রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না ‎যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য ‎‎পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ ‎হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে ‎সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ ‎করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট ‎সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে ‎তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-‎ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।‎

তথ্য – ৬‎

عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ ‏عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا ‏وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)‏

অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে ‎শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, ‎তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় ‎পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ‎ভরা পেটে। ‎‏ ‏‎ (তিরমিযি)‎

ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে ‎তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের ‎উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন ‎কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন ‎অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি ‎শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য ‎চাওয়া।‎

তথ্য – ৩‎

ক.‎ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ‎‎কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম) ‎

খ.‎ হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ ‎‎রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ‎ওঠে।‎ ‎ (মুসলিম)‎

গ.‎ উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর ‎সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‎‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে ‎রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। ‎আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু ‎একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‎‘সেটি হল বার্ধক্য।’‏ ‏‎(আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে‎‏ ‏মাজাহ)‎

ঘ.‎ যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি ‎আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির ‎চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে ‎পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে ‎অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল ‎‎(সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল ‎‎(সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।‎‏ ‏

‏ ‏‎(মুয়াত্তা) ‎

সম্মিলিত ব্যাখ্যা ‎

‎রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া‎‏ ‏বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় ‎সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ ‎আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি ‎‎রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত ‎করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে ‎‎রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ‎ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় ‎হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নিুর্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ‎ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে ‎হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ‎‎ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন। ‎

তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, ‎বুঝা বা বের করার উপায়

মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, ‎পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-‎বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি ‎প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের ‎করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। ‎তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা ‎প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ

তথ্য -১‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর ‎পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)‎

তথ্য -২‎

وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .‏

অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই ‎নাই? ‎‏ ‏‎(বালাদ‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎১০) ‎

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে ‎রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার ‎উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎

‎ আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি ‎মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন ‎তিনভাবে, যথাÑ

ক.‎ কিতাবের মাধ্যমে ‎

কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের ‎সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও ‎‎দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর ‎কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো ‎জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্ত‎‎রের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর ‎একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ‎ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় ‎হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না ‎তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ ‎হচ্ছে আল-কুরআন।‎

খ.‎ নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে ‎

সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ‎বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত ‎সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।‎

গ.‎ মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে

‎যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি ‎উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি ‎খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, ‎কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।‎

মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে ‎পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না

‎কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু ‎মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে ‎‎কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ‎ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। ‎চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ‎ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার ‎কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না ‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.‏

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)‎

ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। ‎এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে ‎এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, ‎কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত। ‎

তথ্য-২‎

وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.‏

অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের ‎কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন ‎না)। ‎‏ ‏‎(শুরা-৩০)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় ‎মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল ‎হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ‎ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল ‎বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন ‎না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়া সম্ভব। ‎

ব্লগ অনুসন্ধান
Search
সহযোগিতা
ফকির আবদুল মালেক
৮৩
Home Banner
সকল পোস্ট
নির্বাচিত পোস্ট
নোটিশ বোর্ড
অনুসারিত ব্লগ
ফকির আবদুল মালেক ব্লগ
নতুন ব্লগ লিখুন
পোস্টটি যিনি লিখেছেন
তাহান তাহান
অনুসরণ করুন
Understanding the Glorious Quran

মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার বিচার হবে কী করে?
‌পাহাড় এখন বারুদের স্তূপ
শুরু হলো গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম
ট্রাম্প এর আমলে কেমন থাকবে বাংলাদেশ?
ট্রাম্প আসার পর ব্যবসা না বাড়ায় হতাশ এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট
from: dw.com
‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
‎তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)

শুরুর কথা‎
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার ‎তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে ‎কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা ‎এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে ‎বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে‎
‎ সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,‎
‎ মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও ‎পূর্বনির্ধারিত, ‎
‎ ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই। ‎
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ‎ঘটছে তা হল‎
‎১.‎ ‎দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে ‎আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা ‎খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।‎
‎২.‎ সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ ‎করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট ‎করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের ‎‎যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই ‎অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?‎
‎৩.‎ বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ ‎করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের ‎তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন- ‎
‎ ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট ‎করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ ‎আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না ‎এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।‎
‎ কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা ‎মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ‎ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ‎ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে। ‎
‎৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি ‎হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন ‎তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য ‎মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।‎
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার ‎বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎‎বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা ‎করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং ‎তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে। ‎
‎ ‎
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে ‎উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে ‎সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
‎১.‎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য। ‎
‎২.‎ উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে ‎আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে ‎জানিয়ে দেয়া,‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে ‎‎যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা ‎রাখা,‎
গ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।‎
ঘ.‎ জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা। ‎
‎৩.‎ কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।‎
‎৪.‎ তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।‎
‎৫.‎ তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।‎
‎৬.‎ মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা ‎অনুযায়ী হবে।‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য ‎
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন ‎প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১ ‎
‎ ‎اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.‏
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে ‎পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)‎
তথ্য – ২‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে ‎অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে ‎যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।‎
‎ (আন’আম : ১৬৫) ‎
তথ্য – ৩‎
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا ‏الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.‏
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে,‎‏ ‏‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে ‎‎দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো ‎পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো ‎অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে ‎সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ‎আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং ‎নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার ‎বা শাস্তি দেয়া’। ‎
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে ‎‎দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া ‎এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ ‎করতে হবেÑ
ক.‎ সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
‎কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি ‎নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই ‎জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ ‎‎কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ ‎বিবেক-বিরুদ্ধ।‎

খ.‎ উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া‎
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-‎উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় ‎করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে ‎‎সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে ‎পারবে না।‎

গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার ‎জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া‎
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে ‎অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ‎ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর ‎লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে ‎হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা ‎পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ ‎মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে ‎হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।‎
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা ‎
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো ‎তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় ‎বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ ‎সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎‎কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো ‎যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই ‎শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। ‎
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা ‎অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, ‎‎যেমন‎
‎ জন্মের স্থান, কাল, বংশ;‎
‎ লিঙ্গ,‎
‎ শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,‎
‎ মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।‎
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে ‎‎(ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের ‎‎(মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ‎না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট ‎করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার ‎বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ ‎কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি ‎দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল ‎‎রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার ‎বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ‎ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।‎

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক ‎বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-‎সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ‎

ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা ‎নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া

তথ্য- ১ ‎
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ‎ ‎تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ ‏وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.‏
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর ‎‎কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি ‎‎খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা ‎নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো।‎ ‎ (বাকারা : ২৫৬)‎
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও ‎‎কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
তথ্য – ২ ‎‏ ‏
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.‏
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই? ‎
‎(বালাদ : ১০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে ‎সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।‎
তথ্য – ৩‎
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى ‏وَالْفُرْقَانِ.‏
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির ‎জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও ‎মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। ‎ ‎ (বাকারা : ১৮৫) ‎
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির ‎জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে ‎মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ‎ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎
‎ অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও ‎বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে ‎দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি ‎উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক.‎ আল-কুরআন,‎
খ.‎ সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ.‎ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি‎
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের ‎‎মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ‎ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ‎মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট ‎করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ‎‎বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার ‎তাগিদ দিয়েছেন।‎
খ.‎ করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) ‎প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা ‎‎যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা‎
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত ‎জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা ‎তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-‎বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-‎কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

তথ্য – ১ ‎
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.‏
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) ‎জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)‎
তথ্য – ২ ‎
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.‏
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) ‎নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত ‎করে রেখেছেন। (জাসিয়া‎‏ ‏‎: ১৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩‎
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‏وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.‏
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই ‎আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ ‎‎থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের ‎জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? ‎ ‎ (লোকমান : ২০) ‎
‎ আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের ‎আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
‎‎ মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের ‎জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন, ‎
‎‎ ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে ‎‎রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা ‎তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,‎
‎ ‎ ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ‎জন্যে ব্যবহার করতে পারে।‎
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন ‎করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা ‎সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা ‎করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ ‎‎স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ

‎ ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১ ‎
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.‏
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ‎ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯) ‎
তথ্য – ২‎
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ ‏النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.‏
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি ‎কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে ‎নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ‎অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।‎

‎ সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন‎
তথ্য – ১ ‎
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.‏
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে ‎তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা ‎অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।‎
‎ (দাহার:৩)‎
তথ্য – ২ ‎
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.‏
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা ‎নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। ‎ ‎ (দাহার : ২৯) ‎
তথ্য – ৩ ‎
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.‏
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)‎
তথ্য – ৪ ‎
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.‏
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)‎‏ ‏
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন ‎নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত ‎হয়।‎
তথ্য – ৫ ‎
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.‏
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া ‎হয়নি।‎ ‎ (বাইয়েনা : ৫)‎
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ‎ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ‎ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। ‎
তথ্য – ৬ ‎
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.‏
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)‎
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে ‎পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ ‎অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।‎
তথ্য – ৭ ‎
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.‏
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি ‎পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)‎
তথ্য – ৮‎
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. ‏فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.‏
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ‎ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ‎ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা ‎সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে ‎‎(স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে ‎মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার ‎অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০) ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে ‎চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত ‎নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ‎ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো ‎অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা ‎এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে ‎‎সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।‎

ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে ‎‎থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা‎
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ ‎বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-‎
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ ‏دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.‏
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং ‎একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে ‎‎সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ‎জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) ‎একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি ‎জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের ‎মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ‎ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা ‎কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন। ‎
‎ আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় ‎বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা ‎যায় উপরের আয়াতখানি হতে। ‎
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?‎
বিবেক-বুদ্ধি‎
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে ‎‎যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে ‎পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% ‎যুক্তিসঙ্গতও।‎
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত ‎সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ‎ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা ‎যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ ‎‎দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।‎

আল-কুরআন ‎
তথ্য – ১ ‎
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.‏
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন ‎‎(নিজ কর্মের দোষেই আসে)। ‎ ‎ (শুরা : ৩০) ‎
তথ্য – ২ ‎
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.‏
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।‎
‎ (রুম : ৪১) ‎
তথ্য – ৩ ‎
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.‏
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ ‎‏)‏অকল্যাণ‏(‏‎ তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই ‎‎(কর্মদোষেই) হয়। ‎ ‏ ‏‎ (নিসা : ৭৯)‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .‏
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই ‎নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে ‎আনে)। (ইউনুস : ৪৪) ‎
তথ্য – ৫ ‎
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.‏
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ ‎পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না ‎করে। (রাদ : ১১) ‎
‎ আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো ‎অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, ‎কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে ‎‎দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।‎

সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট ‎এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও ‎উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
‎ ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,‎
‎ মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ‎
‎ ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,‎
‎ মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত ‎
‎ দেয়া হবে।‎
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে ‎‎কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার ‎উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, ‎বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন ‎নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে ‎এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা‎
‎ মানুষ দায়ী নয়।‎
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ‎ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং ‎
‎ সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত ‎হয়। ‎

‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা ‎অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার ‎সরল অর্থ ‎
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ ‎সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১ ‎
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.‏
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎‏ ‏‎(ফোরকান : ২) ‎
তথ্য – ২ ‎
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন ‎‎(জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)‎
‎ ‎
তথ্য – ৩ ‎
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।‎
‎ (কামার:৪৯) ‎
তথ্য – ৪‎
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً‎ ‎‏.‏
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল ‎জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)‎

তথ্য – ৫ ‎
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.‏
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) ‎অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। ‎ ‎ (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ ‏مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ ‏الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.‏
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত ‎মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে ‎দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের ‎সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। ‎সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস
তথ্য – ১‎
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ‏وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ ‏وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.‏
‏ (رواه مسلم)‏
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন ‎আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‎‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির ‎উপর। (মুসলিম)‎
তথ্য – ২‎
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا ‏خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ ‏الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى ‏وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.‏
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) ‎লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী ‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর ‎‎(তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার ‎বিষয়টিও। ‎ ‎ (মুসলিম)‎
‎ ‎
তথ্য – ৪‎
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি ‎একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে ‎‎থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার ‎‎চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর ‎বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।‎
‎ (আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

তথ্য – ৫‎
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ ‏الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ ‏لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ‎বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) ‎তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে ‎পাবে। (বুখারী)‎
‎ ‎
‎ তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ‎ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে। ‎

কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- ‎সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা‎

প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ‎ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ‎মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের ‎
‎‎ কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,‎
‎‎ মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং ‎
‎‎ একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,‎
এক কথায় মানুষের সকল বিষ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫৬
৩১২৬ বার পঠিত১১ ২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৩৯ ০
তাহান বলেছেন: (মূল পোষ্ট সম্পূর্ন ডকুমেন্টের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাকী অংশ মন্তব্য আকারে নিম্নে দেওয়া হল)

‎ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,‎

‎ কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,‎

‎ বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,‎

‎ আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের ‎শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব ‎সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।‎

‎ আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ‎কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের ‎মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ

‎ দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ ‎কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ‎ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।‎

‎  সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা ‎লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে ‎‎থাকবে।‎

‎ কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন‎

‎ সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট ‎করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ ‎আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি। ‎

‎ সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ‎ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি ‎অর্থবোধক হয় না। ‎

বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎

আরবী কদর ‎‏(تقدير)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(قدر)‏‎ শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে ‎পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-‎

‎ ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং

‎ কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, ‎নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।‎

কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে ‎তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য ‎কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার ‎উপর।‎

বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ যদি ‎পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা ‎পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, ‎‎বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং‎

‎২.‎ মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ‎ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,‎

মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ‎তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা ‎অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে ‎সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ ‎‎গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, ‎একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,‎

‎২.‎ আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।‎

তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ

সফল হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল ‎হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি ‎

নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।‎

‎ তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা ‎কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর ‎‏(تقدير)‏‎ শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ‎‎(ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও ‎হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক ‎হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ

‎১.‎ কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, ‎নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা ‎বা গুরুত্ব থাকে,‎

‎২.‎ কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,‎

‎৩.‎ আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি ‎‎দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর ‎মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,‎

‎৪.‎ সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ ‎পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব ‎‎থাকবে।‎

সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর ‎‏(قدر)‏‎ বা তাকদীর‎‏(تقدير) ‏‎ শব্দ ধারণকারী ‎বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ‎ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে ‎আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন। ‎

তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে ‎পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো ‎কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে

আল-কুরআন

وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.‏

অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট ‎করেছেন। ‎

তথ্য-২‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে ‎দিয়েছেন)। ‎‏ ‏‎(আল’আলা‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎৩) ‎

ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে ‎‎রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে ‎জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার ‎জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ‎

তথ্য-৩‎

إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.‏

অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)‎

তথ্য-৪‎

إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.‏

অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের ‎প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)‎

তথ্য-৫‎

وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ. ‏

অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী ‎অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭) ‎

তথ্য-৬‎

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ ‏قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا ‏أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.‏

অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ‎ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; ‎সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে ‎আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও ‎পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন ‎লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। ‎

‎(মুসলিম)‎

তথ্য-২‎

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ ‏الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ. ‏

অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ ‎তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে ‎বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। ‎সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর ‎প্রাকৃতিক আইন)। ‎

‎(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)‎

তথ্য – ৩‎

وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى ‏الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.‏

অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক ‎আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। ‎

‏ ‏‎(মুসলিম) ‎

তথ্য – ৪‎

وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً ‏نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ ‏شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.‏

অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন ‎রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ‎ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা ‎করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, ‎‎তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত। ‎‏ ‏

‏ ‏‎(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ‎ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ‎ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর। ‎

তথ্য – ৫‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ ‏أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى

অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি ‎জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল ‎করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে ‎রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না ‎যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য ‎‎পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ ‎হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে ‎সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ ‎করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট ‎সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে ‎তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-‎ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।‎

তথ্য – ৬‎

عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ ‏عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا ‏وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)‏

অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে ‎শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, ‎তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় ‎পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ‎ভরা পেটে। ‎‏ ‏‎ (তিরমিযি)‎

ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং ‎আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে ‎তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের ‎উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন ‎কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন ‎অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি ‎শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য ‎চাওয়া।‎

তথ্য – ৩‎

ক.‎ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ‎‎কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম) ‎

খ.‎ হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ ‎‎রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ‎ওঠে।‎ ‎ (মুসলিম)‎

গ.‎ উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর ‎সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‎‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে ‎রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। ‎আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু ‎একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‎‘সেটি হল বার্ধক্য।’‏ ‏‎(আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে‎‏ ‏মাজাহ)‎

ঘ.‎ যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি ‎আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির ‎চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে ‎পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে ‎অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল ‎‎(সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল ‎‎(সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।‎‏ ‏

‏ ‏‎(মুয়াত্তা) ‎

সম্মিলিত ব্যাখ্যা ‎

‎রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া‎‏ ‏বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় ‎সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ ‎আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি ‎‎রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত ‎করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে ‎‎রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ‎ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় ‎হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নির্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ‎ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে ‎হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের ‎প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ‎‎ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন। ‎

তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, ‎বুঝা বা বের করার উপায়

মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, ‎পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-‎বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি ‎প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের ‎করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। ‎তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা ‎প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ

তথ্য -১‎

وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.‏

অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর ‎পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)‎

তথ্য -২‎

وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .‏

অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই ‎নাই? ‎‏ ‏‎(বালাদ‎‏ ‏‎:‎‏ ‏‎১০) ‎

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে ‎রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার ‎উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎

‎ আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি ‎মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন ‎তিনভাবে, যথাÑ

ক.‎ কিতাবের মাধ্যমে ‎

কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের ‎সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও ‎‎দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর ‎কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো ‎জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্ত‎‎রের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর ‎একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ‎ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় ‎হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না ‎তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ ‎হচ্ছে আল-কুরআন।‎

খ.‎ নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে ‎

সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ‎বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত ‎সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।‎

গ.‎ মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে

‎যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি ‎উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি ‎খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, ‎কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।‎

মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে ‎পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না

‎কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু ‎মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে ‎‎কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী ‎প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ‎ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। ‎চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ‎ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার ‎কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না ‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.‏

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)‎

ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। ‎এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে ‎এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, ‎কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত। ‎

তথ্য-২‎

وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.‏

অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের ‎কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন ‎না)। ‎‏ ‏‎(শুরা-৩০)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় ‎মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল ‎হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ‎ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল ‎বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন ‎না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়া সম্ভব। ‎

তথ্য-৩‎

وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ.‏

অর্থ: কোন বয়স্ক ব্যক্তির আয়ু দীর্ঘায়িত হোক বা কারোর আয়ু হ্রাস পাক তা ‎একটি কিতাবে লিখিত থাকেই। (ফাতের : ১১)‎

ব্যাখ্যা: এ আয়াত থেকে সহজেই জানা ও বুঝা যায় মানুষের আয়ু প্রাকৃতিক ‎নিয়ম অনুযায়ী বাড়ে বা কমে। আর কী কী বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) মিলিত হলে আয়ু ‎বাড়বে বা কমবে, তা আল্লাহ একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। তবে এই বৃদ্ধির ‎একটি শেষ সীমা আছে যার পর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কারো আয়ু আর বড়ে ‎না। এ কথাটিই বলা হয়েছে সূরা মুনাফিকুনের ১০ ও ১১ নং আয়াতে এবং ‎আরো অনেক জায়গায় এভাবে-‎

وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمْ الْمَوْتُ فَيَقُولَ ‏رَبِّ لَوْل أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنْ ‏الصَّالِحِينَ.وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا.‏

সরল অর্থ: এবং আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার ‎আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় (যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন) বলবে- হে আমার ‎রব, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান-সদ্কা ‎করতাম এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু ব্যক্তির (মৃত্যুর) ‎নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেন না। ‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে ‎তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী আয়ুর একটি শেষ সীমা আছে। ঐ শেষ ‎সীমায় কেউ পৌঁছে গেলে তিনি আয়ু আর বাড়ান না তথা তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক ‎আইন অনুযায়ী আয়ু আর বাড়ে না। তখন তার মৃত্যু অবধারিত হয়। ‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَنَامُ وَلَا يَنْبَغِي لَهُ أَنْ ‏يَنَامَ يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُهُ يُرْفَعُ إِلَيْهِ عَمَلُ اللَّيْلِ قَبْلَ عَمَلِ ‏النَّهَارِ وَعَمَلُ النَّهَارِ قَبْلَ عَمَلِ اللَّيْلِ حِجَابُهُ النُّورُ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي ‏بَكْرٍ النَّارُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ ‏مِنْ خَلْقِهِ. رواه مسلم

অর্থ: হজরত আবু মুসা আশ’আরী (রা.) বলেন, এক দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ‎পাঁচটি কথা নিয়ে আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ ‘১. আল্লাহ তা‘আলা ‎কখনো ঘুমান না, ২. ঘুমানো তাঁর পে সাজেও না, ৩. তিনি দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-‎নিচু করেন, ৪. বান্দাদের রাত্রের আমল দিনের আমলের পূর্বে এবং দিনের ‎আমল রাত্রের আমলের পূর্বে তাঁর নিকটে পৌঁছান হয় এবং ৫. তাঁর (তিনি ও ‎তাঁর সৃষ্টির মধ্যে) পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। যদি তিনি এই পর্দা সরিয়ে দিতেন ‎তা হলে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টির যে পর্যন্ত পৌঁছাত সমস্তকেই জ্বালিয়ে দিত’।‎‏ ‏

‎ (মুসলিম)‎

ব্যাখ্যা: ‘আল্লাহ দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-নিচু করেন’ কথাটির অর্থ হচ্ছে তাঁর সৃষ্ট ‎তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল সেটি তিনি পরিবর্তন ‎করেন। ‎

তথ্য – ২‎

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏قَالَ يَدُ اللهِ مَلْأى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا ‏أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ وَكَانَ ‏عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ. رواه البخارى

অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন Ñ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন Ñ ‘আল্লাহ ‎তায়ালার হাত (ভাণ্ডার) সদা পূর্ণ, রাতদিন অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারী দানও ‎তা কমাতে পারে না। যখন হতে তিনি আসমানÑজমিন সৃষ্টি করেছেন, তখন ‎‎থেকে কত না দান করে আসছেন অথচ সে দান তাঁর হাতে যা আছে তার কিছুই ‎কমাতে পারে নাই। (সৃষ্টির পূর্বে) তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই ‎রয়েছে দাঁড়ি-পাল্লা। তিনি তা উঁচু বা নিচু করে থাকেন। ‎

ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীসখানির ন্যায় এ হাদীসখানি থেকেও জানা ও বুঝা যায় ‎আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল তা কম বেশী করেন বা ‎করতে পারেন।‎

‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় ‎মানুষের ভুলের জন্যে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে যে ‎খারাপ ফলাফল হওয়ার কথা তা আল্লাহর মাধ্যমে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।‎

প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর অনুযায়ী, কৃতকর্মের স্বাভাবিক ‎ফলাফলকে আল্লাহ যে সকল কারণে পরিবর্তন করেন

কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে মানুষের কৃতকাজের প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে স্বাভাবিক ‎ফলাফল হওয়ার কথা তা শুধু মহান আল্লাহ পরিবর্তন করতে পারেন। মানুষের ‎নিজের পে স্বাধীনভাবে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ যে সব কারণে ‎ঐ ফলাফল পরিবর্তন করেন তা হচ্ছে Ñ

‎১.‎ নিজ ইচ্ছায় মানুষকে তি বা বিপদ থেকে বাঁচানো

এ কথাটি আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা ‎নং ৩৯) সূরা শুরার ৩০ নং আয়াতের মাধ্যমে।‎

‎২.‎ তাঁর কাছে করা মানুষের দোয়া

তাঁর নিকট করা দোয়ার কারণে আল্লাহ যে মানুষের কর্মের ফল বা ‎পরিণতি পরিবর্তন করেন তা কুরআন ও হাদীসের নিুের তথ্য থেকে ‎জানা যায় Ñ

আল-কুরআন

وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ. اُجِيْبُ دَعْوَةَ ‏الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.‏

অর্থ: আমার বান্দা যদি তোমার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ‎করে তবে বলে দাও আমি তাদের অতি নিকটে। কবুল করে নেই ‎প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা যদি আমার নিকট প্রার্থনা করা হয়।‎

‎ ‎ ‎ (বাকারা-১৮৬)‎

ব্যাখ্যা: এখান থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় যথার্থভাবে ‎করা দোয়ার কারণে আল্লাহ মানুষের কর্মফল বা পরিণতি ‎পরিবর্তন করেন। প্রতিটি কাজে মানুষের ভুল-ত্র“টি থাকাটাই ‎‎স্বাভাবিক। তাই কৃতকাজের ভুল-ত্র“টি মা করে আল্লাহ যাতে ‎ভাল ফলাফল দেন সে জন্যে আমাদের সকলের তাঁর নিকট ‎কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা উচিত।‎

আল-হাদীস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ ‏الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ.‏

অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‎‎তোমরা ভয়াবহ বিপদ, দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বর, মন্দ ফায়সালা ‎এবং শত্র“র আক্রমণ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।‎‏ ‏‎ ‎

‏ ‏‎(বুখারী)‎

ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানিতে রাসূল (সা.) সকল ধরনের বিপদ থেকে ‎রা পাওয়ার জন্যে অর্থাৎ কর্মপদ্ধতির দুর্বলতার জন্যে আল্লাহ ‎নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইনে (তাকদীর) যে বিপদ-আপদ আসার ‎কথা তা থেকে রা পাওয়ার জন্যে, আল্লাহর নিকট দোয়া করতে ‎বলেছেন। দোয়ার মাধ্যমে বিপদ-আপদ তথা পরিণতি পরিবর্তন ‎হয় বলেই রাসূল (সা.) দোয়া করতে বলেছেন।‎

‎যে উপায়ে আল্লাহ কর্মের ফলাফল বা পরিণতি পরিবর্তন করেন‎

সভ্যতার বর্তমান স্তরে এসে তথা রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর ‎জ্ঞান মানুষের আয়ত্তে আসার পর, মহান আল্লাহর তাকদীর তথা প্রাকৃতিক ‎আইন পরিবর্তন করার উপায়টি বুঝা সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আমরা ‎‎দেখছি বিজ্ঞানীরা একটি পরিচালনাপদ্ধতি স্থির করে সে পদ্ধতি অনুসরণ করে ‎মানুষবিহীন রকেট মহাশূন্যে পাঠান। রকেট সে পরিচালনা পদ্ধতি অনুযায়ী ‎চলতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নিকট একটি রিমোট কন্ট্রোল থাকে ‎যার সাহায্যে তারা পৃথিবীতে বসেই ঐ পরিচালনা পদ্ধতি পরিবর্তন করতে ‎পারেন এবং বাস্তবে দরকার হলে তা করেনও।‎

মহান আল্লাহও প্রাকৃতিক আইন তৈরী করে মানুষসহ মহাবিশ্বের সকল কিছুকে ‎ঐ আইন অনুযায়ী চলা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনবোধে ‎রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর মাধ্যমে ঐ আইন পাল্টানোর মতা ‎নিজের কাছে রেখেছেন এবং প্রয়োজন মতো তা করেনও। মহান আল্লাহ তাঁর ‎রিমোট কন্ট্রোল মেশিনটির কথা নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেনÑ

بَلْ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلٌّ لَهُ قَانِتُونَ. بَدِيعُ ‏السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ.‏

অর্থ: প্রকৃত ব্যাপার হল আকাশ ও পৃথিবীর সকল জিনিসই আল্লাহর মালিকানার ‎বস্তু। সবই তাঁর (অতাৎণিক বা তাৎণিক) আদেশানুগত (ইচ্ছানুগত)। তিনি ‎মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যখন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন ‎‘হও’। আর অমনি তা হয়ে যায়।‎‏ ‏‎(বাকারা‎‏ : ‏‎১১৬,‎‏ ‏‎১১৭)‎

ব্যাখ্যা: এখানে প্রথম আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে মহাবিশ্বের সকল কিছু ‎আল্লাহর অতাৎণিক বা তাৎণিক ইচ্ছার অনুগত। অতাৎণিক ইচ্ছাটি হচ্ছে ‎তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর। দ্বিতীয় আয়াতখানিতে ‎আল্লাহ তাঁর তাৎণিক ইচ্ছা প্রয়োগ করার উপায়টি জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা ‎হচ্ছে ‘হও’ বলা। অর্থাৎ আল্লাহ ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ‎তাঁর তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন যেমন পরিবর্তন করতে পারেন তেমনই তিনি ‎তা দ্বারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে বা ঘটাতেও পারেন।‎

আল্লাহ তাঁর ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোন কাজ বা ‎বিষয়ের ফলাফল, পরিণতি বা গুণাগুণ পাল্টিয়ে দেয়ার একটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ‎আল-কুরআনের নিুোক্ত তথ্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ

قُلْنَا ينَارُ‎ ‎كُوْنِى بَرْدًا وَّسَلمًا عَلَى اِبْرَاهِيْم.‏

অর্থ: আমি বললামÑ‘হে আগুন, শান্তিদায়ক ঠাণ্ডা ‘হও’ ইব্রাহীমের জন্যে।’

‎ ‎‏ ‏‎(আম্বিয়া:৬৯)‎

ব্যাখ্যা: আগুনের জন্যে নির্দিষ্ট তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন হচ্ছে পুড়িয়ে ‎‎ফেলা বা পুড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আগুনের সে তাকদীরকে তার দ্বারা পরিবর্তন ‎হওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও উপায় আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে ‎দিয়েছেন।‎

নমরুদ যখন পুড়িয়ে মারার জন্যে ইব্রাহীম (আ.) কে আগুনের মধ্যে নিপে ‎করল তখন তাঁর ‘হও’ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঐ ‎আগুনকে ইব্রাহীম (আ.) এর জন্যে আরামদায়ক ঠাণ্ডায় পরিবর্তন হতে নির্দেশ ‎দিলেন। আর সাথে সাথে ঐ বিশেষ স্থানের আগুন দাহ্য মতা হারিয়ে ‎আরামদায়ক ঠাণ্ডায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। এখান থেকে বুঝা যায় সকল বিষয়ের ‎তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন আল্লাহ ‘হও’ ‎‏(كُنْ)‏‎ নামক রিমোট কন্ট্রোলের ‎‎(জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে ‎করেন।‎

মানুষ ও মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি, মহান আল্লাহ একটি ‎কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ লিখা অনুযায়ীই হবে- ‎কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্যের অসতর্ক ও প্রকৃত ব্যাখ্যা

প্রথমে চলুন কুরআন ও হাদীসের ঐ ধরনের বক্তব্যগুলোর কয়েকটি জেনে নেয়া ‎যাক Ñ

আল-কুরআন

তথ্য- ১‎

مَا‎ ‎اَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِى الْاَرْضِ وَلاَ‎ ‎فِىْ اَنْفُسِكُمْ اِلاَّ فِىْ كِتَابٍ ‏مِّنْ قَبْلِ اَنْ نَبْرَاَهَاطاِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ . لِّكَيْ لاَ تَأْسَوْا عَلَى ‏مَا فَاتَكُمْ وَلاَ تَفْرَحُوْا بِمَاآتَكُمْطوَاللهُ لاَيُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ.‏

অর্থ: পৃথিবীতে বা তোমাদের উপর আসা কোন বিপদ এমন নাই যা সৃষ্টির পূর্বে ‎একটি কিতাবে লিখা নাই। আল্লাহর পে এটি অতীব সহজ। তোমাদের এ ‎তথ্য জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে‏ ‏Ñ তিগ্রস্ত হলে তোমরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হও ‎এবং আল্লাহ কোন কিছু তোমাদের দান করলে গর্বিত না হও। আল্লাহ কোন ‎অহংকারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। ‎ ‏ ‏‎(হাদিদ-২২,২৩) ‎

তথ্য- ২‎

قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ‏الْمُؤْمِنُوْنَ.‏

অর্র্থ: (তাদের) বল, (ভাল-মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না শুধু সেগুলো ব্যতীত যা ‎আল্লাহ আমাদের জন্যে লিখে রেখেছেন। তিনি আমাদের সহায়। আর ‎মু’মিনদের কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।‎‏ ‏‎(তওবা-৫১)‎

ন: তথ্য- ৩‎

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ إِلاَّ بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاً.‏

অর্র্থ: কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মৃত্যুবরণ করে না। (আর তা) নির্দিষ্ট ‎কিতাবে লিখা রয়েছে। ‎ ‏ ‏‎ ‎‏ ‏‎(আল-ইমরান-১৪৫)‎

তথ্য- ৪‎

وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلاَ تَضَعُ إِلاَّ بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ ‏يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرٌ.‏

অর্র্থ: কোন স্ত্রীজাতীয় প্রাণী এমন গর্ভধারণ করে না এবং এমন কোন সন্তান ‎প্রসবও করে না, যা আল্লাহর জানা নেই। কোন দীর্ঘজীবীর আয়ু দীর্ঘায়িত হোক ‎বা কারো আয়ু হ্রাস পাক তা একটি লিপিতে লিখিত থাকেই। আল্লাহর জন্যে ‎এটি খুবই সহজ। ‎‏ ‏‎(ফাতের-১১)‎

তথ্য- ৫‎

يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَا قُتِلْنَا هَاهُنَا قُلْ لَوْ كُنْتُمْ فِي ‏بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمْ الْقَتْلُ إِلَى مَضَاجِعِهِمْ ج

অর্র্থ: তারা বলে আমরা যদি কিছু কলা-কৌশল খাটাতে পারতাম তাহলে এখানে ‎খুন হতাম না। তুমি বলে দাও, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও ‎যাদের মৃত্যু লিখা ছিল তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে আপনা থেকেই ‎‎পৌঁছে যেত। ‎‏ ‏‎(আল-ইমরান- ১৫৪)‎

আল-হাদীস

তথ্য- ১‎

عَنْ عَبْدِاللهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ (رض) قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهِ ‏عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ فِي ‏بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ‏ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعٍ بِرِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ ‏سَعِيدٌ فَوَاللهِ إِنَّ أَحَدَكُمْ أَوِ الرَّجُلَ يَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا ‏يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ بَاعٍ أَوْ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ ‏بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‏حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذِرَاعٍ أَوْ ذِرَاعَيْنِ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ ‏الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا. رواه البخارى

অর্র্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, বিশ্বাসী ও ‎বিশ্বস্ত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে ‎চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্রবিন্দুরূপে জমা থাক। তারপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘আলাক’ ‎এবং এরপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘মুদগাহ’ রূপে থাক। তারপর আল্লাহ তা’আলা ‎একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং তাঁকে রিযিক, মউত, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য ‎‎- এ চারটি ব্যাপার (লিপিবদ্ধ করার জন্যে) নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি আরও ‎বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ (অথবা বলেছেন কোন ব্যক্তি) ‎জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে, এমন কি তার এবং জাহান্নামের মাঝে ‎‎কেবলমাত্র এক হাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় লিখাটি তার ‎ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে ‎‎দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি বেহেশ্তীদের আমল ‎করতে থাকে, এমন কি তার ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা ‎‎দু’গজের ব্যবধান থাকে, এমন সময় ঐ লিখাটি তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ‎আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ ‎করে। ‎ ‎ ‎‏ ‏‎(বুখারী ও মুসলিম) ‎

তথ্য- ২‎

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ ‏عَزَّ وَجَلَّ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ يَا رَبِّ عَلَقَةٌ يَا ‏رَبِّ مُضْغَةٌ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهُ قَالَ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى شَقِيٌّ أَمْ ‏سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالْأَجَلُ فَيُكْتَبُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ.رواه البخارى

অর্র্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ‎বলেন- আল্লাহ তা’আলা রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিয়োজিত ‎করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রভু! এটি ‘ফোঁটা’। হে প্রভু! এটি ‘আলাক’। হে ‎প্রভু! এটি ‘মুদগাহ’। আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর সৃষ্টি পরিপূর্ণ করতে চান, তখন ‎‎ফেরেশতা বলেন, হে প্রভু! এটি নর হবে, না নারী? এটি হতভাগ্য হবে, না ‎ভাগ্যবান? তার জীবিকা কী পরিমাণ হবে? তার আয়ুষ্কাল কী হবে? তখন ‎‎(আল্লাহ তা’আলা যা নির্দেশ দেন) তার মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ঐ রূপই ‎লিপিবদ্ধ করা হয়।‎

তথ্য- ৩‎

অর্র্থ: হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন রাসূলে করীম (সা.) ‎‎দু’হাতে দুটি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান এই দু’টি ‎কিতাব কী? আমরা বললামঃ জী না, কিন্তু আপনি যদি আমাদের বলে দেন। ‎তখন হুজুর আপন ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি আল্লাহ ‎রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব, এতে সমস্ত বেহেশতীর নাম, ‎তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এবং এতে কখনো বেশীও ‎হবে না এবং কমও না। অতঃপর তাঁর বাম হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে ‎বললেনঃ এটাও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব। এতে ‎‎দোজখীদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এদের ‎‎শেষ ব্যক্তির নামের পরও সর্বমোট একুন করা হয়েছে। সুতরাং এতেও কখনো ‎‎বেশী এবং কম করা যাবে না। ‎

তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি ব্যাপার এরূপ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েই থাকে, ‎তবে আমলের কী দরকার হুজুর? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেনঃ তোমরা সত্য ‎পথে থেকে ঠিকভাবে কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের তথা সকল ‎কাজে নির্ধারিত ১০০% সঠিক ফলাফলের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা কর। কেননা, ‎‎বেহেশতী ব্যক্তির অন্তিম কাজ বেহেশতীদের কাজই হবে, (পূর্বে) সে যে আমল ‎করে থাকুক না কেন। এইরূপে দোজখী ব্যক্তির অন্তিম আমল দোজখীদের ‎আমলই হবে (পূর্বে) সে যে আমলই করে থাকুক না কেন।’ অতঃপর তিনি ‎নিজের দুই হাতে ইশারা করলেন এবং কিতাব দুটিকে (নিজের পিছনের দিকে) ‎‎ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের পরোয়ারদেগার আপন বান্দাদের সকল বিষয় ‎‎(যথাযথভাবে) শেষ করেছেন। একদল বেহেশতে যাবে। একদল দোজখে ‎যাবে। ‎ ‎ (তিরমিজী)‎

তথ্য- ৪‎

অর্র্থ: আলী (রা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা.) এর সঙ্গে ‎উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে ছিল একটি লাঠি, যা দিয়ে তিনি মাটি ‎খুঁড়ছিলেন। তিনি তখন বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার ‎ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। লোকদের ভিতর থেকে এক ‎ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তা হলে (এর উপর) নির্ভর করব ‎না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমল কর। কেননা, প্রচেষ্টাকৃত কাজে সফল হওয়া ‎সকলের জন্যে সহজ করা হয়েছে। এর পর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ

فَاَمَّا مَنْ اَعْطَى وَاتَّقى.‏‎ (বুখারী)‎

আলোচ্য বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা ‎

আলোচ্য কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকে যে তথ্য ‎মুসলমান সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হচ্ছে-‎

‎১.‎ আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকে লিখে রেখেছেন Ñ

‎ প্রত্যেক মানুষের সকল কাজের একটিমাত্র ফল, ‎

‎ সকলের মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ,‎

‎ প্রত্যেকের জন্যে বেহেশত বা দোযখের কোন একটি ঠিকানা।‎

‎২.‎ ঐ লিখন মানুষের চেষ্টা-সাধনা দ্বারা একটুও পরিবর্তন হয় না।‎

পূর্বে উল্লিখিত (৩০ ও ৩১ নং পৃষ্ঠা) ‘তাকদীর’ শব্দ ধারণকারী কুরআন ও ‎হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা যে সকল কারণে ইসলামে গ্রহণযোগ্য ‎হতে পারে না, আলোচ্য বক্তব্যসমূহের উল্লিখিত ব্যাখ্যাও সেই একই কারণে ‎ইসলামে কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।‎

বক্তব্যসমূহের প্রকৃত বা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা

বক্তব্যসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা করা ও বুঝার জন্যে, যে বিষয়গুলো মনে রাখতে ‎হবে তা হচ্ছে Ñ

ক. পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের মাধ্যমে আমরা ‎‎জেনেছি কোন একটি কাজের চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতির পথে অসংখ্য ‎পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় বা উপাদান (ঋধপঃড়ৎ) আছে। যেমন Ñ‎

‎১.‎ মানুষের ইচ্ছা ও তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎২.‎ কর্মপ্রচেষ্টা ও পদ্ধতি এবং তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎৩.‎ ধৈর্য, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ ইত্যাদি ও তার বিভিন্ন ধরন,‎

‎৪.‎ মানুষের দ্বারা আল্লাহর নিকট করা দোয়া ও তার বিভিন্ন ধরন এবং

‎৫.‎ আল্লাহর নির্ধারিত করে রাখা ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা ‎অসংখ্য বিষয়।‎

খ.‎ ঐ অসংখ্য পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয়ের একটি পরিবর্তন হয়ে গেলে ‎একটি কাজের ফল বা পরিণতি পরিবর্তন হয়ে যায়।‎

গ.‎ অসংখ্য পরিবর্তনশীল বিষয় পরিবর্তিত (চবৎসঁঃধঃরড়হ ঈড়সনরহধঃরড়হ) ‎হয়ে একটি কাজের ভাল বা মন্দ অসংখ্য ফল বা পরিণতি হতে পারে।‎

ঘ.‎ প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ কোড (উঘঅ ঈড়ফব) ভিন্ন এবং ঐ উঘঅ এর ‎ভিত্তিতে প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে কিছু বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও ‎বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন পায়। প্রতিটি মানুষের ঐ উঘঅ ঈড়ফব এবং ‎জন্মগতভাবে পাওয়া বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের কথা ‎আল্লাহর জানা আছে।‎

ঙ.‎ আল্লাহ আলোচ্য বক্তব্যসমূহে কোথাও বলেননি তিনি উল্লিখিত কিতাবে ‎প্রত্যেক কাজ বা বিষয়ের একটিমাত্র ফল বা পরিণতি লিখে রেখেছেন।‎

তাই পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির সকল তথ্যের সাথে ‎সংগতি রেখে আলোচ্য বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে তা ‎হচ্ছে Ñ

‎ উঘঅ এর ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া ‎শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের সঙ্গে,‎

‎ কার্য সম্পাদনের পথে উপস্থিত থাকা সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) ‎বিষয় বা বস্তু ব্যবহার করে যত ধরনের ভাল বা মন্দ ফলাফল হওয়া ‎সম্ভব, একজন মানুষের প্রতিটি কাজের সে সকল ধরনের ফলাফল,‎

‎ বেঁচে থাকা বা মৃত্যু হওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য সকল পরিবর্তনশীল ‎‎(ঠধৎরধনষব) বিষয় ব্যবহৃত হয়ে প্রতিটি মানুষের মৃত্যু ঘটার সম্ভবপর ‎সকল উপায়, সময় ও স্থান,‎

‎ আমল, ওজর, অনুশোচনা, উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা, তওবা ইত্যাদি সকল ‎পরিবর্তনশীল বিষয়ের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে ‎একজন মানুষ যে সকল অবস্থায় বেহেশ্ত এবং যে সকল অবস্থায় ‎‎দোযখ পাবে তার সকল অবস্থা,‎

মহান আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। আর যেহেতু ‎আল্লাহ সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় নির্ভুলভাবে বিবেচনা করে এবং ‎তিনকালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) জ্ঞানসহকারে তা লিখেছেন তাই ঐ ‎লিখায় একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাপারে যতগুলো অবস্থান বা ‎ফলাফল লিখা আছে তার বাইরে কোন অবস্থান বা ফলাফল ঘটবে না বা মানুষ ‎ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ে সকল পরিবর্তনশীল জিনিস ব্যবহার ‎করে ব্যক্তি মানুষ যে অবস্থায় বা ফলাফলেই পৌঁছাক না কেন, ঐ কিতাবে তা ‎লিখা পাওয়া যাবে বা লিখা আছে। আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ‎এরকম হলে তা পূর্বে আলোচনাকৃত আল-কুরআনের সকল বক্তব্যের সাথে ‎সামঞ্জস্যশীল হয়। কারণ তা হলে-‎

‎১.‎ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টা প্রয়োগের সুযোগ ও মূল্য ‎‎থাকবে। তাই মানুষ কর্মফলের জন্যে দায়ী থাকবে।‎

‎১.‎ তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী সকল বিষয় ‎সম্পাদন হওয়ার কারণে তা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ীই হবে।‎

‎২.‎ মহান আল্লাহর মহাবিশ্বের সকল কিছুর নিখুঁত জ্ঞান থাকার ফলেই তা ‎লিখে রাখা সম্ভব হয়েছে স্বীকার করে তৌহীদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ‎একটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া হবে।‎

তাই আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের এ ব্যাখ্যাটিই শুধু ইসলামে গ্রহণযোগ্য ‎হবে। আল্লাহ যে একটি কাজের ১০০% সঠিক ফলাফলটিসহ, সঠিক ও ভুল ‎উভয় দিকের সম্ভবপর সকল ফলাফল ঐ কিতাবে লিখে রেখেছেন তার প্রমাণ ‎পাওয়া যায় কুরআন ও হাদীসের নিম্নোক্ত তথ্য থেকে‎

আল-কুরআন‏.‏

অর্র্থ: কোন বিষয় সম্বন্ধে কখনও এরকম বল না যে আমি আগামীকাল সে ‎কাজটি করব। (তুমি কিছুই করতে পার না) যদি আল্লাহ তা না চান। ভুলবশত ‎এরূপ বলা হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তোমার রবের স্মরণ করবে আর বলবেÑআশা ‎আছে আমার রব ঐ ব্যাপারে (১০০%) সঠিক পথটির নিকটবর্তী পথের দিকে ‎আমাকে পথ দেখাবেন। (কাহাফঃ ২৩, ২৪)‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে রাসূল (সা.) কে একটি কাজের ১০০% সঠিক পথটির ‎কাছাকাছি থাকা অবস্থানের জন্যে পথ দেখাতে তাঁর নিকট আশা তথা দোয়া ‎করতে বলেছেন। এখান থেকে বুঝা যায় কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য ‎বক্তব্যসমূহে উল্লেখ থাকা কিতাবে, সঠিক ও ভুল উভয় দিকের সকল ‎পরিবর্তনশীল জিনিস (ঋধপঃড়ৎ) গ্রাহ্যে এনে, একটি বিষয় বা কাজের সম্ভবপর ‎সকল ধরনের ভাল বা খারাপ ফলাফল আল্লাহ্ লিখে রেখেছেন।‎

আল-হাদীস‏.‏

অর্থ: আমল কর এবং নিজের সাধ্য মত সর্বাধিক সংখ্যক সঠিক কাজ করার ‎‎চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থেক। জেনে রেখ, কোন ব্যক্তিকে শুধু তার ‎আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।‎

সাহাবায়ে কিরামগণ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ‎আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি উত্তর দিলেন-‎

অর্থ: না, আমিও না, যদি না আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত ‎করেন। ‎ ‎ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)‎

ব্যাখ্যা: আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত বাস্তব যে কথাটি রাসূল (সা.) হাদীসখানির ‎‎শেষে উল্লেখ করেছেন, সে কথাটি দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করলে পুরো হাদীসখানা ‎বুঝতে সহজ হবে। ‎

হাদীসখানির শেষে রাসূল (সা.) বলেছেন, নিখুঁতভাবে সকল আমলে ‎সালেহ পালন করে পৃথিবীর কেউই এমনকি তিনিও জান্নাতে যেতে পারবেন না। ‎কারণ, সকলের জীবনেই কোন না কোন আমল করার ব্যাপারে কিছু না কিছু খুঁত ‎‎থাকবেই। আর ঐ খুঁত আল্লাহ মাফ করে দিলেই শুধু জান্নাত পাওয়া সম্ভব হবে। ‎

তাই হাদীসটির প্রথমে রাসূল (সা.) বলেছেন, যত বেশি সংখ্যক আমল ‎ঈমানের দাবি অনুযায়ী পালন করা সম্ভব তা যথাযথভাবে করার চেষ্টা অবশ্যই ‎করতে হবে। আর যখন কোন আমল, বাধ্য হয়ে ছাড়তে হবে তখন সত্যের ‎কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ কোন আমল ছাড়ার জন্যে গুনাহ না হওয়ার যে ‎সীমারেখা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তার কাছাকাছি তথা প্রায় সমান বা ‎মাঝামাছি গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ তা ‎ছাড়তে। কারণ ঐ রকম কাছাকাছি থাকলে আল্লাহ রহমত করে তাদের গুনাহ ‎‎দুনিয়া বা আখিরাতে কোন না কোনভাবে মাফ করে দিবেন।‎

‎ ‎

‘জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয় তিনটি পূর্ব নির্ধারিত’

বহুলপ্রচারিত‏ ‏কথাটির সঠিক পর্যালোচনা‎

মুসলিম সমাজে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয়গুলো পূর্বনির্ধারিত কথাটি ব্যাপকভাবে ‎চালু আছে এবং প্রায় সবাই তা বিশ্বাসও করে। তাই চলুন এবার এ বিষয়টি ‎পর্যালোচনা করা যাক ‎

‎যে বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ যে বিষয়ে মানুষের ইচ্ছা ও কর্ম প্রচেষ্টার কোন ‎ভূমিকা নেই সেটি সঠিকভাবে করতে পারা বা না পারার দরুন পুরস্কার বা শাস্তি ‎‎দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। এটি সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজ বোধগম্য ‎একটি কথা। তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী‎

‎‎ বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত হয় তবে তার কোনটি সঠিকভাবে পালন ‎করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।‎

‎‎ বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত না হয়ে থাকে তবে তার প্রত্যেকটি

সঠিকভাবে পালন করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া‎

যুক্তিসঙ্গত হবে।‎

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী দেখা যায়‎

‎‎ জন্মের স্থানের ভিত্তিতে মানুষের পুরস্কার বা শাস্তির বিধান নেই। অর্থাৎ ‎মুসলিমের ঘরে বা মক্কা শরীফে জন্ম হলে যেমন পুরস্কার নেই, ‎‎তেমনই পতিতার ঘরে বা হিন্দুস্থানে জন্ম হলে কোন শাস্তি নেই। ‎

‎‎ আত্মহত্যা করলে ইসলামে কঠিন শাস্তির বিধান আছে। ‎

‎‎ হিন্দু মেয়ে মুসলিম না বানিয়ে বিয়ে করলে শাস্তির বিধান আছে। ‎

এর কারণ হল-‎

‎  জন্মের স্থান ও সময় পূর্বনির্ধারিত। মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার এ ‎ব্যাপারে কোন ভূমিকা নেই। ‎

‎  মুত্যুর কারণ ও সময় পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার‎

‎ সেখানে ভূমিকা আছে। ‎

‎  বিবাহ পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার এখানেও ভূমিকা ‎আছে। ‎

‎শেষ কথা‎

তাকদীর সম্পর্কিত কুরআন-হাদীসে উপস্থিত থাকা আপাত বিপরীতধর্মী বক্তব্য ‎নিয়ে নিষ্ঠাবান মুসলিমদের মনে মনে যে দ্বন্দ্বে পড়তে হয় বা দুষ্ট লোকদের ‎টিটকারীমূলক বক্তব্য নিয়ে যে দুরবস্থায় পড়তে হয়, আশা করি তা নিরসনে ‎পুস্তিকাটি সহায়ক হবে। এর ফলস্বরূপ আশা করা যায় মুসলিম জাতি তাকদীর ‎তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইনের সাথে তাদের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টার ‎‎যে সম্পর্ক, সেটি ভাল করে বুঝে নিয়ে জীবনের সকল দিকে কর্মপ্রচেষ্টা ‎যথাযথভাবে বাড়িয়ে দিবে। আর এর চূড়ান্ত ফলস্বরূপ পূর্বের ন্যায় তারা আবার ‎পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বা বিজয়ী হতে পারবে ইনশাআল্লাহ্।‎

ভুল-ত্র“টি ঈমানদারীর সাথে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রেখে এবং সঠিক হলে ‎ঈমানদারীর সাথে তা গ্রহণ করে শুধরিয়ে নেয়ার ওয়াদা রেখে এবং আপনাদের ‎‎দোয়া চেয়ে শেষ করছি। আল্লাহ্ হাফেজ! ‎

সমাপ্ত

অটোফেজি ও রোজাঃ একটি পর্যালোচনা

সাওম আরবি শব্দ সাওম অর্থ বিরত রাখা, বারন করা বা ফিরিয়া রাখা, সাওম এর বহু বচন সিয়াম, রোযা ফারসি শব্দ, পবিত্র কুরআনে সাওম ও সিয়াম বলে উল্লেখ রয়েছে। আমাদের দেশে ফারসি শব্দ রোযা ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

রোযার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ। ‘তাকওয়া’ অর্জনই হলো সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য।

তাকাওয়া আরবি শব্দ। এর অর্থ বাঁচা, মুক্তি ভয়ভীতি সতর্কতা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষার আল্লাহর ভয়ে-ভীতি হয়ে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত পথে সতর্কতার সহিত জীবন যাপন করা। রমজানের রোযা পালনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের পশু প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিকতা বা আত্মিক উন্নতি সাধন করা।

শরীরিক উপকারের জন্য রোযা পালনের কথা কুরআান হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়। যদিও বর্তমানে রোযা প্রসঙ্গে আলোচনায় অটোফেজি প্রসঙ্গ চলে আসছে। প্রথমে সিয়াম নিয়ে কুরআন আর হাদিছ থেকে কিছু আয়াত ও আলোচনা একত্রিত করছি, পরে অটোফেজি নিয়ে আলোচনায় আসব।

সূরা বাকারাহ’র ১৮৩তম আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (183)

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার।” (২: ১৮৩)

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি রোযা রেখে ও মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারল না তার পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী)।

সিয়াম সাধনা হলো সত্যিকার অর্থে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের সাধনা। এ সন্তুষ্টি অর্জন করা তখনই সম্ভব যখন তার দেহ ও আত্মা হবে তাওকওয়ার রঙে রঙিন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, রোযা আমারই জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।

আল্লামা আবু ওবায়েদের ব্যাখ্যায় বলেন,
রোযাকে বিশেষভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার কারণ, অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানোর সম্ভাবনা থাকে কিন্তু রোযাতে তা থাকে না, রোযা শুধু আল্লাহর জন্যই হয়।

ইমাম গাজ্জালী (রা.) বলেন, আখলাকে ইলাহী তথা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে হলে প্রয়োজন মানুষের পশু প্রবৃত্তিকে পরিতথ্যাগ করে তাকওয়া তথা আহারে-ব্যবহারে চাল-চলনে কথাবার্তায় সতর্কতার সহিত জীবনযাপন করা।

রাসূল (সা.) বলেছেন, রোযা জান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ যতক্ষণ না সে ঢাল বিনষ্ট করে ফেলে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে বিনষ্ট হয় ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বলেন, মিথ্যা এবং পরনিন্দা দ্বারা, সিয়াম বিনষ্ট হয়।
(বোখারী, তিরমিযি)

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাশব প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে, যারা সত্যিকারের ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করেন; তাদের জন্য সুসংবাদ হলো: সকল নেক কাজই দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত সওয়াব বৃদ্ধি করা হয়। আর রোযা এর থেকে স্বতন্ত্র। এর প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দেবেন, তা হবে নিশ্চয়ই অফুরন্ত। (মুসলিম)

রোজা বা সিয়াম সাধনা আল্লাহর অন্যতম বিধান যা শুধু ইসলামের বিধান নয়, পূর্ববর্তী ধর্মগুলোতেও রোযার বিধান ছিল।
যারা একমাস ধরে দিনের বেলায় সব ধরনের খাদ্য-দ্রব্য ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে দূরে থাকে, তারা অন্যের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের লোভ-লালসাকে দমন করতে সক্ষমতা লাভ করে। রোজা মানুষকে উদার হতে শেখায়। যারা একমাস ধরে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করে তারা ক্ষুধার্তদের কষ্ট বুঝতে পারে এবং তাদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে ও সহানুভূতিশীল হয়। রোজা গুনাহ বা পাপ বর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বেশীরভাগ পাপ পেটপূজা ও ইন্দ্রিয় পরায়ণতা থেকেই জন্ম নেয়। রোজা এই দুই প্রবৃত্তিকে দমনে রেখে সমাজে দুর্নীতি ও পাপ হ্রাস করে এবং খোদাভীরুতা বা পরহেজগারিতা বাড়ায়।

কুরআন-হাদিসের এসব আলোচনা থেকে বুঝা যায়, রোযার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া, পরহেজগারী অবলম্বন করা, পাপ বর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

রমজানে কুরআন নাযিল হয়েছে, এ মাসে শবে কদরের রাত্রি রয়েছে ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা করা যেতে পারে। আমি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনায় যেতে চাইছি।

সুরা বাকারার ১৮৪নং আয়াতটি উদ্ধৃতি করলাম।

أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (184)
“রোজা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য ফরজ। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় ওই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে। রোজা যাদের জন্য কষ্টদায়ক যেমন অতি বৃদ্ধদের জন্য, তারা অবশ্যই একজন অভাবগ্রস্তকে অন্নদান করবে।”
যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশি সৎ কাজ করে, তা তার জন্য বেশী কল্যাণকর হয়। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোজা রাখাই তোমাদের জন্য বেশী কল্যাণকর। (২: ১৮৪)

এই আয়াতে একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যদি আমাদের উপলব্ধিতে আসে তবে আমরা বুঝতে পারব রোজা আমাদের জন্য কল্যাণকর।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমি নিয়ে এলো মানবজাতীর মানসপটে এক নতুন উপলব্ধি যার নাম অটোফেজি।

প্রাণীকোষ কীভাবে নিজের উপাদানকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে, এই গবেষণার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রথম দিনে সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ওহশোমির নাম ঘোষণা করলো। পুরস্কার হিসেবে তিনি ৮ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার বা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ডলার পাবেন।

নোবেল কমিটির মতে, ইয়োশিনোরির গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ক্যান্সার থেকে শুরু করে পারকিনসন্স পর্যন্ত রোগগুলোর ক্ষেত্রে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা বুঝতে তার গবেষণাটি সহায়তা করে।
সূত্র : বিবিসি

Autophagy কি? এবার তা বলি।

Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। Auto অর্থ নিজে নিজে, এবং Phagy অর্থ খাওয়া। সুতরাং, অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া।

না, মেডিক্যাল সাইন্স নিজের গোস্ত নিজেকে খেতে বলে না। শরীরের কোষগুলো বাহির থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকে অটোফেজি বলা হয়।আরেকটু সহজভাবে বলি।
আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে। সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়।

শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মত অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই।

মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর আমাদের মত অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে। কোষগুলোর আমাদের মত আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।

জাস্ট এ জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের ওশিনরি ওসুমি (Yoshinori Ohsumi) ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারটা নিয়ে গেল।

স্পষ্টত মুসলমানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘সিয়াম’। খ্রিস্টানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘ফাস্টিং’। হিন্দু বা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘উপবাস’। বিপ্লবীরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘অনশন’। আর, মেডিক্যাল সাইন্স রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’।

সিয়াম বা ফাস্টিং, উপবাস, অনসন যে নামে বা পদ্ধতিতে পালন করা হোক না কেন অটোফেজি মানুষের উপলব্ধি আসার পর আধুনিক মানুষ রোজাকে অধিকতর কল্যাণকর হিসাবে বুঝতে পারছে।

অনুগল্প নিয়ে কিছু কথা

ব্যস্ততা কেড়ে নিচ্ছে আধুনিক মানুষের সময়। এত বেগ, এত কম আবেগ কম দেখা গেছে এর আগে। হাতে হাতে চলে এসেছে স্মার্ট ফোন, ঘরে ঘরে কম্পিউটারে ইন্টারনেটে কাজ করার সুযোগ। অতি কথন শুনার বা বলার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে গেছে। মানুষ এখন omg দিয়ে oh my god বুঝে নেয়, লোকেরা এখন hru ব্যবহার করে।
কিন্তু থেমে থাকেনি সাহিত্য চর্চা। এখানেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মহাকাব্যের যুগ আর নেই। কবিতায় অতিকথন এখন প্রসংশিত নয়। বৃহৎ পরিসরে পুরো ইতিহাস ঘেটে কল্পনার মাধূর্যতা মাখিয়ে বড় বড় মহাকাব্যিক কাহিনী এখন আর বর্ণিত হতে দেখা যায় না। উপন্যাসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ছোট গল্প এসেছিল রবীন্দ্র যুগে বরং বলা চলে তার হাত ধরেই।

কিন্তু পাঠকের হাতে সময় কম। তারা এখন ছোট গল্প পড়ার অবসর পান না। লেখকরাও কম যান না তারা ছোট গল্পকে আরও ছোট করে নিয়েছে অনুগল্পে। ব্লগ, ফেসবুকে অনুগল্পের ব্যাপক চর্চা করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে এখন অনুগল্প লিখছেন।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনুগল্পের প্রধানতম লেখক হলেন বনফুল (১৮৯৯-১৯৭৯)। বর্তমান বিশ্বে অনুগল্প লিখে ‘ম্যান অব বুকার’ পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন লেখক লিডিয়া ডেভিস (জ. ১৯৪৭)। ডেভিসের গল্পের দৈর্ঘ্য এক লাইন থেকে শুরু করে দু-তিন পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তার গল্পকে আদর্শ অনুগল্প বা ফ্লাশফিকশন বলা যায়। ছোটগল্পের পাশাপাশি অনুগল্প লিখে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন আরেক মার্কিন কথাসাহিত্যিক রবার্ট ওলেন বার্টলার (জ. ১৯৪৫)। তবে বার্টলার এবং ডেভিসের অনেক আগে ছোটগল্পের পাশাপাশি অনুগল্প লিখে বিখ্যাত হয়েছেন জাপানের প্রথম নোবেলজয়ী লেখক Yasunari Kawabata (১৮৯৯-১৯৭২)। অনুগল্প লিখেছেন কাফকা, হেমিংওয়ে, আর্থার সি ক্লাক, রে ব্রাডবুরি, নগিব মাহফুজ, ডোলান্ড বার্থলেম, আমব্রুস বিয়ার্স, কেট শপা, শেখবের মতো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকরাও।

উল্লেখ্য যে, অনুগল্প সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে আমেরিকায়। সেখানে অনুগল্প এখন ছোটগল্প থেকে কিছুটা সরে এসে সাহিত্যের স্বতন্ত্র বিভাগ (genre) হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু হয়েছে।

অনুগল্পে অল্পকথনের ভেতর দিয়ে অনুভবের বিষয়টি উঠিয়ে আনা হয়। প্রখ্যাত ফরাসি কবি বোদলেয়ার (১৮২১-১৮৬৭)-এর মতো অনেক কবি ক্ষুদে গদ্য-কবিতা (prose poetry) লিখেছেন যেগুলোকে অনুগল্প হিসেবে চিহ্নিত করা চলে। অন্যদিকে হালের জনপ্রিয় মার্কিন কবি ও গল্পকার স্টুয়ার্ট ডাইবেক (জ. ১৯৪২)-এর অনেক অনুগল্প গদ্য-কবিতা হিসেবে কবিতার কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, কবিতা এবং ছোটগল্প দু’য়ের বৈশিষ্ট্যই অনুগল্পে বিদ্যমাণ।

কবিতার মতো অনুগল্পকে নানামাত্রিক অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। একটি কাব্যিক দ্যোতনা বা ভাবমুদ্রা এখানে থাকে। ভাষা হয় ঘন, রূপকাশ্রিত। ফলে মার্কিন কবি ও কথাসাহিত্যিক গ্রেস পালে (১৯২২-২০০৭) বলছেন, ‘অনুগল্প কবিতার মতোই ধীরে পড়া উচিত।’ অন্যদিকে অনুগল্প গল্পের মতোই সমাজ বাস্তবতার কোনো সুপ্ত চেতনাকে ইঙ্গিত করে। চরিত্র থাকে, কথোপকথন (ডায়লগ) থাকে। একটা চমৎকার সমাপ্তিও থাকে। কেবল বলাটা হয় দ্রুত- বিদ্যুৎ চমকের মতন ঝলক দিয়েই শেষ। এক মুহূর্তে বর্ণিত বাস্তবতার এক ঝলক দেখে নেয়া।

অনুগল্পের একটা বড় অংশ লেখা হয়েছে ‘কথারূপক বা ফেবল’ ও ‘উপরূপক বা প্যারাবল’ হিসেবে। মোটাদাগে ফেবলের সঙ্গে প্যারাবলের পার্থক্য হল, ফেবলে সরাসরি হিউম্যান বা মানবচরিত্র থাকে না, কিন্তু প্যারাবলে থাকে। ফেবলের চরিত্ররা হয় জীবজন্তু বা পশুপাখি। এই গল্পের চরিত্ররা হল খরগোশ, নেকড়ে ও প্রতিবেশি অঞ্চলের জীবজন্তুরা। লেখক মানবজগতের কোনো বিশেষ বিষয় বা দিক তুলে আনতে এ ধরনের গল্প লিখে থাকেন। সাধারণত এ ধরনের গল্প শিশুদের জন্য লেখা হয়ে থাকে। তবে বড়দের জন্যও কেউ কেউ ফেবল লিখে থাকেন। সমাজ বা রাষ্ট্রের কিছু বিষয় সমালোচনা করার জন্যে প্রতীকী উপস্থাপনের পথ বেছে নেন। ফেবলের সব সময় একটা নীতিবাক্য বা মোরাল থাকে।

অনুগল্পের সঙ্গে গল্পের মূল পার্থক্যটা হল, গল্প তৈরি হয় কতগুলো মুহূর্ত নিয়ে; এখানে কতগুলো ঘটনা কতগুলো দৃশ্যকে আশ্রয় করে প্রকাশ ঘটে। আর একটি সার্থক অনুগল্পে একটি বিশেষ মুহূর্ত একক দৃশ্যপটের ভেতর দিয়ে উপস্থাপিত হয়। কিছু পরিষ্কার করে বলা হবে না, কেবল একটা ইঙ্গিত দিয়েই ছেড়ে দেয়া হবে।

ব্লগগুলোতে অনুগল্পের পাঠক বেশি হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে কবিরা এই মাধ্যৃমটি বেছে নিতে পারেন এবং পাঠক নন্দিত ও ব্যাপক প্রশংসিত হতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ
বিশ্বসাহিত্যে অনুগল্প
মোজাফ্ফর হোসেন

ভালোলাগা তিনটি অসাধারণ অনুগল্প

নিমগাছ
বনফুল

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ। কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে। এমনি কাঁচাই….. কিংবা ভেজে বেগুন- সহযোগে। যকৃতের পক্ষে ভারী উপকার। কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক…। দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। বলেন- নিমের হাওয়া ভাল, থাক, কেটো না। কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না। আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে। শান দিয়ে বাধিয়েও দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা। হঠাৎ একদিন একটা নূতন ধরনের লোক এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙ্গলে না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু। বলে উঠলো, বাঃ কি সুন্দর পাতাগুলো…..কি রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কি বাহার….এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাঃ! খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল। কবিরাজ নয়, কবি। নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না। মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে। ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।

বার্লিন
ম্যারি বয়লি ও’রেইলি

(অনুবাদঃ মোজাফ্ফর হোসেন)

একটি ট্রেন হামাগুড়ি দিয়ে বার্লিন ছেড়ে আসছিল। ট্রেনের প্রতিটা বগি নারী ও শিশুতে গিজগিজ করছিল। সুস্থ-সবল দেহের পুরুষ মানুষ সেখানে ছিলো না বললেই চলে। একজন বয়স্ক মহিলা ও চুলে পাক ধরা সোলজার পাশাপাশি বসে ছিলেন। মহিলাটিকে বেশ রুগ্ন ও অসুস্থ দেখাচ্ছিল। তিনি গুনে চলেছেন- ‘এক, দুই, তিন’, ট্রেনের মতোই আপন ধ্যানে স্বল্প বিরতি দিয়ে। ট্রেনের একটানা ঝিক্ঝাক্ শব্দের ভেতরেও যাত্রীরা তার গণনা দিব্যি শুনতে পাচ্ছিল। দুটি মেয়ে বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছিল। বলাই বাহুল্য, তারা মহিলার গণনা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিল। মেয়ে দুটোকে উদ্দেশ্য করে একজন মুরব্বী গোছের লোক বিরক্তিসূচক গলা খ্যাঁকানি দিয়ে উঠলে কক্ষটিতে এক ধরনের হালকা নীরবতা এসে ভর করলো।
‘এক, দুই, তিন’- মহিলাটি শব্দ করে গুণলেন, যেন পৃথিবীতে সেই একমাত্র বাসিন্দা। মেয়ে দুটি আবারও খুকখুক করে হেসে উঠলো। বোঝা গেল তারা হাসিটা চেপে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়েছে। পাশে বসা বয়স্ক সোলজার সামনের দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ভারী গলায় বললেন- ‘শোনো মেয়েরা, আশা করি আমার কথাগুলো শোনার পর তোমরা আর হাসবে না। এই অসহায় মহিলাটি আমার স্ত্রী। কিছুক্ষণ আগেই আমরা যুদ্ধে আমাদের তিন সন্তানকে হারিয়েছি। যুদ্ধের সম্মুখভাগে অগ্রসরের আগে আমি তাদের মাকে একটা বিকারগ্রস্ত চিকিৎসাকেন্দ্রে রাখতে যাচ্ছি।’
কক্ষটিতে ভয়ঙ্কর নীরবতা এসে ভর করলো।

কথা
স্বপ্নময় চক্রবর্তী

আমি বনগাঁ লাইনের গোবরডাঙা শ্যামসুন্দর বিদ্যামন্দিরের মাস্টার। চারটে ছ’য়ের ডাউন বনগাঁ লোকালে উঠে বাড়ি ফিরি। একটা নির্দিষ্ট কামরা আছে আমাদের। মছলন্দপুর থেকে দুজন মাস্টারমশাই ওঠেন। ওই দুজনের জন্য জায়গা রাখি।
যে কামরায় উঠি, সেই কামরার জানালার ধারে মুখোমুখি সিটে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা বসেন। ভদ্রলোক বই পড়েন, ভদ্রমহিলাও বই পড়েন। ভদ্রলোকটি কী বই পড়েন আড়চোখে দেখেছি। রামকৃষ্ণ কথামৃত, ভারতের সাধক, চৈতন্যচরিতামৃত এইসব। ভদ্রলোকটির বয়েস ষাটের মতো, ভদ্রমহিলারও প্রায় ওরকম। ভদ্রলোকের মাথায় টাক, ভদ্রমহিলার মুখে শ্বেতির চিহ্ন। ওরা দুজনে একই কামরায়, একই ট্রেনে বহুদিন। ভদ্রমহিলাও পড়েন। নব কল্লোল, বুদ্ধদেব গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা। কোনোদিনই কথা বলতে দেখিনি ওদের। ভদ্রমহিলা হৃদয়পুর স্টেশনে নেমে যান। স্টেশনে ট্রেনটা ঢুকবার একটু আগে ভদ্রমহিলা সিট ছেড়ে উঠে রোজই বলেন- এসে গেলাম, আসি। আবার কাল কথা হবে কেমন?
ভদ্রলোক বই থেকে চোখ তুলে বলেন- হ্যাঁ, আবার কাল কথা হবে।

এই উদ্ভিদ-প্রাণীদের গণিত শেখালো–শিক্ষকটা কে

গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিড়েছেন কখনো?
ছিঁড়লেও নিশ্চয়ই গুণে দেখেন নি, কয়টা
পাপড়ি থাকে। ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫ কিংবা ৮৯ টা।
কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ফুলই এই নিয়ম
মেনে চলে। অদ্ভুত মনে হচ্ছে? আসুন আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আপনি সায়েন্স হোন আর আর্টস হোন, অঙ্কে দুর্বল হোন, আর সুপার ডুপার হোন খুব সহজেই হিসাবটা করতে পারেন।
.
০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭…… এই যে সংখ্যাগুলো, এদেরকে বলা হয় ফিবোনাচ্চি সংখ্যা। অর্থাৎ, আগের সংখ্যার সাথে পরের সংখ্যাটা যোগ করলেই আরেকটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যা পাওয়া যায়।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব ফুল এই নিয়ম মেনে চলে।
শুধু ফুল নয়, প্রকৃতির অনেক জায়গায় এ সংখ্যা পাবেন। ফলেও ফিবোনাচ্চি সংখ্যা দেখা যায়। আনারসের “চোখ” গুণে দেখুন। এক সারিতে ৮ টা কিংবা ১৩ টা থাকে।
.
নাম লিওনার্দো ফিবোনাচ্চি। জন্ম ইটালিতে। তিনি-ই সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারেই এই ধারার নাম হয়েছে, ফিবোনাচ্চির ধারা! ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে খরগোশের প্রজননে তিনি সর্বপ্রথম এই ধারার অস্তিত্ব দেখতে পান। অর্থাৎ দুটি খরগোশ থেকে যদি প্রজনন হয়, আর একটা খরগোশও না মরে, তাহলে যদি ১০ মাস পর ৫৫ টা খরগোশ হয় ১১ মাস পর হবে ৮৯ টা, ১২ মাস পর হবে ১৪৪ টা।
.
এখানেই শেষ না। পাশাপাশি দুটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যার যদি পরেরটাকে আগেরটা দিয়ে ভাগ করেন ১.৬১ হয়। অর্থাৎ ২৩৩ কে ১৪৪ দ্বারা কিংবা ৩৭৭ কে ২৩৩ দ্বারা ভাগ করলে ১.৬১ পাওয়া যাবে। একে বলে গোল্ডেন রেশিও। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গে এই গোল্ডেন নাম্বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যকে ১.৬১ দ্বারা গুণ করলে আরেকটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যের সমান হয়।
.
বর্তমানে মিউজিকে এর বহুল ব্যাবহার দেখা যায়। বড় বড় ব্যান্ড দলগুলো বিভিন্ন মিউজিকে ফিবোনাচ্চির ছন্দ ব্যাবহার করেছে। এ মিউজিকগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

.
চমক শেষ হয়নি।
পাখিরা যখন দলবেঁধে আকাশে ওড়ে, গণণা করে দেখবেন। প্রতি দলে হয় ১৩ টা নাহয় ২১ টা নাহয় ৩৪ টা…….অর্থাৎ ফিবোনাচ্চির সংখ্যানুযায়ী এরা দলে বিভক্ত থাকে। যদি শিকারীরা কোনো একটা পাখিকে মেরে ফেলে, এরা দল ভেঙ্গে আবার ফিবোনাচ্চি সংখ্যানুযায়ী দলবদ্ধ হয়।
সত্যি-ই এটি প্রকৃতির এক অদ্ভুত রহস্য!
এই উদ্ভিদ-প্রাণীদের গণিত শেখালো কে?

সংগূহিত

বাংলাদেশের অনন্য উদাহরণঃ উপমহাদেশে প্রথম

সর্বোচ্চ আদালতে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য স্থাপন উপমহাদেশে বাংলাদেশেই প্রথম। পাশের দেশ ভারতে পৌত্তলিকতার প্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও সেখানে নেই এই প্রতীক। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে এই মূর্তি নেই। একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালেও নেই এই দেবীর মূর্তি। এমনকি শ্রীলঙ্কা-মিয়ানমারেও নেই তথাকথিত ন্যায়বিচারের এই প্রতীক। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরানে ১৯৬৪ সালে কুখ্যাত শাহ প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের সামনে পাশ্চাত্যের অনুকরণে গ্রিক বিচারের দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করেছিল। একমাত্র এ উদাহরণটি বাদে এ পর্যন্ত মুসলিম দেশের শাসকরা যত মন্দই হোক না কেন আদালতের সামনে দেবীমূর্তি স্থাপন করতে সাহস পাননি।

সেরা কৌতুকঃ মূর্তি বনিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে

themise57e77c1 থেমিস কে ছিলেন?
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি মতে– ইনি ছিলেন প্রাকৃতিক নিয়মকানুন নিয়ন্ত্রণকারিণী দেবী। ইনি ইউরেনাসের ঔরসে গেইয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বংশের বিচারে ইনি ১২ জন টাইটানের একজন। ভবিষ্যৎ-বাণী করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন গেইয়ার কাছ থেকে। পরে এই ক্ষমতা ফিবিকে প্রদান করেছিলেন। দেবরাজ জিউসের ঔরসে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন হোরায়ে (ঋতু নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী) এবং মোইরায়ে (ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী। রোমান পুরাণে এর নাম জাস্টিয়া (Justitia)।

ইউরোনোমে এই থেমিস এবং ইউরিমেডোন-কে বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।

আদি রোমানরা গ্রিক মিথ এর কথিত দেবী জাস্টিসিয়াকে বিচারের প্রতীক হিসেবে মনে করতো।

প্রাচীন রোমে বিচার বা সামাজিক ব্যবস্থা কেমন ছিলো সেটা মনে করতে গ্লাডিয়েটর মুভির কথা মনে করে দেখা যেতে পারে।যেখানে দাসদের আটকে রেখে হিংস্র পশুর সাথে যুদ্ধ করতে দেওয়া হতো, আর সেই জঘন্য দৃশ্য দেখে মজা নিতো সম্রাট ও সাধারণ জনগন।
৫০০০ বছর আগে বর্বর রোমানরা কি কল্পকাহিনী বিশ্বাস করতো, সেটাকে একেবারে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগাতে বসাতে চাইছে আধুনিকতার নামে, কি বিস্ময়কর!

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনও অনেক সেকেলে অন্ধকারে আছে। আড়াইশ’ বছর আগে ব্রিটিশ জলদস্যুরা যে কুসঙ্কারাচ্ছন্ন আইন শিখিয়ে দিয়ে গেছে সেটাই এখন মুর্খের মত ফলো করে যাচ্ছে উকিল-জাস্টিসরা।

প্রধান বিচারক মাথায় উলের টুপি পড়ে মা-ভেড়া সেজে থাকে, দাবি করে- সে মা ভেড়া তার সামনে সবাই সমান। এখনও উকিলরা জাস্টিসদের দেখলে ব্রিটিশ নিয়মে ‘মাই লর্ড’ ‘মাই লর্ড’ (আমার প্রভু, আমার প্রভু) করে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এতটাই অন্ধ অনুকরণপ্রিয় যে, ব্রিটেনে তীব্র শীত পরার কারণে উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট, গাউন পরে থাকে। আর বাংলাদেশে সেই অণুকরণে গরমকালে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে শত শত লোকের মধ্যে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট-গাউন পরে থাকে। দরদর করে ঘামতে থাকে, কিন্তু ব্রিটেনের অন্ধ অনুকরণ বলে কথা!!

দুঃখের কথা- ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৫ বছর হয়ে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৫ বছর, কিন্তু এখনও বিচারবিভাগ সেই ব্রিটিশ ভাষা থেকে বের হতে পারলো না। এখনও সুপ্রীম কোর্টে বাংলা ভাষা সম্পূর্ণ অচল।

কথাগুলো এ কারণে বললাম- সবাই যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা যেন আরো উল্টো পথে হাটছে। এতদিন ২৫০ বছর আগের ব্রিটিশ জলদস্যুদের ফলো করতো, আর এখন আরো পিছিয়ে গিয়ে ৫০০০ বছর আগে রোমান বর্বরদের কাল্পনিক বিষয় ঘেটে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগায় বসাচ্ছে।

উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল একরকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন করা হলো, কারা করল, কীভাবে—আমি জানি না। ইতিমধ্যেই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে আমি এই খবরটা দিয়েছি এবং খুব শিগগিরই আমি ওনার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব। আলোচনা করব এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।

আশা করা যায় মূর্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তার অবসান হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ কিছু তথ্য কিছু প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সমঝোতা স্মারকটি নিয়ে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের কথা বার্তা বলছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে এটিকে ‘দেশ বিক্রির চুক্তি হিসেবে’ অভিহিত করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে এ নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না।

শেখ হাসিনার সফরের আগে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়েছিল, কারণ, বাংলাদেশে সাবমেরিন পৌঁছানোর পর যেভাবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং একের পর এক ভারতীয় কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর শুরু করেছিলেন, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। ফলে জনমনেও এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশা আছে।

এদিকে অন লাইনেে নানা সূত্র থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানো নিয়ে উঠেছিলো বিতর্ক। ভারত সরকার প্রথমে প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তরুণ বাবুল কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী। ভারতের মৃলধারার জনপ্রিয় বাঙালি গায়ক। ‘কহনা পেয়ার হ্যায়’ গানটির জন্যে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এতে ঠো’ট মিলিয়েছিলো বলিউড তারকা ঋতিক রওশন। অভিনেতা রাকেশ রওশনের সন্তান, সন্জয় খানের সাবেক জামাতা। গায়ক-রাজনীতিক বাবুল সুপ্রিয় পশ্চিমবঙ্গের সন্তান, সাবেক ব্যাংকার।মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী’র ‘তারকাদখল’ প্রকল্পমুক্ত সৌখিন রাজনীতিক। বিজেপির ‘তারকা-আহরণ’ প্রকল্পের বঙ্গবাহাদুর। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ ভক্ত। ।

গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। বাঙালিত্ব ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবেই ভারতের নীতিনির্ধারকেরা তাকে গুরুত্ব দিয়েছিলো। ভেবেছিলো, বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেত্রী তাতে বিগলিত হবেন। কিন্তু বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকেরা তাতে বিরাগভাজন হয়েছিলেন!

অবশেষে শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

একটি অন-লাইন পত্রিকা জানায় বাংলাদেশ- ভারতের সামরিক সমঝোতা স্মারকটি নিয়ে নানা কথাবার্তা হলেও এই সমঝোতা স্মারকে আসলে কি আছে- তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কোনো কথা বলেনি। ঢাকা ও নয়াদিল্লীর বিভিন্ন সূত্রে যোগাযোগ করে সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে ।
প্রাপ্ত তথ্যগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে দুই দেশের সামরিক খাতে ৬টি বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে :

(১) সামরিকখাতে ঋণ সহযোগিতা (লাইন অব ক্রেডিট)
(২) সামরিক সহযোগিতা
(৩)যৌথ প্রশিক্ষণ উদ্যোগ ও বিনিময়
(৪) প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা
(৫) প্রতিরক্ষা গবেষনা সহযোগিতা
(৬)উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা

(১) সামরিকখাতে ঋণ সহযোগিতার আওতায় ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহযোগিতা দেবে। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে যে কোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জামাদি কিনতে পারবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে।

সচেতন লোকেরা বলাবলি করছে,
৫০০ কোটি ডলার ইন্ডিয়া থেকে সুদে ধার নিয়ে ইন্ডিয়ার “গার্বেজ” কিনে আনা চুক্তির একটি শর্ত ?? একটি স্বাধীন দেশ কখন আর্মস কিনবে, কার কাছ থেকে কিনবে সেইটা ঠিক করের দেবে আরেকটি দেশ ??? গদি রক্ষার দালালী আর কারে কয় ?/

(২) সামরিক সহযোগিতায় বলা হয়েছে, নিজেদের দক্ষতা এবং কর্মপরিধি অনুসারে আন্তর্জাতিক আইন, নিজ নিজ দেশের জাতীয় আইন ও পরিস্থিতির আলোকে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

(৩) যৌথ প্রশিক্ষন উদ্যোগ ও বিনিময় সহযোগিতায় বলা হয়েছে,
ঢাকার সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, এর অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে এখনো অনসৃত হচ্ছে। সমঝোতা স্বারকের ফলে এগুলো নিয়মিত এবং দাপ্তরিক কার্যকমের আওতায় চলে আসবে।

(৪) প্রতিরক্ষা শিল্পখাতের সহযোগিতায় যৌথ উদ্যোগের (জয়েন্ট ভেঞ্চার) মাধ্যমে পরষ্পরকে প্রতিরক্ষা শিল্পখাতে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

(৫) প্রতিরক্ষা গবেষনা সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারত পরষ্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। প্রশিক্ষণ,তথ্য বিনিময় এবং সংশিল্ট বিজ্ঞানী প্রকোশলীদের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এই সহযোগিতা হতে পারে।

(৬) উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা হিসেবে বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পর্যায়ে বৈঠকঅনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিরক্ষা সচিব পর্যায়ে বৈঠক করে সামরিক ইস্যূ নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে মমতা ব্যানার্জির অনেক গুণ; এই মহুর্তে উনি পশ্চিম বংগের চীফ মিনিস্টার; কমপক্ষে ৬/৭টি মিনিস্ট্রি উনার অধীনে; তিনি তৃণমুল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা; এর আগে অনেক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন; চুরিধারীর অপবাদ নেই; কঠিন জীবন যাপন করেন; নিয়মিত ব্যায়াম করেন, সাধারণ কাপড় পরেন, সুন্দর বক্তৃতা দেন, ভালো খান; পাক-ভারতের রাজনীতিতে আদর্শ।

উনি হয়তো এখনো টের পাননি যে, উনি মিথ্যা কথা বলেছেন, “তিস্তায় পানি নেই”; উনি গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানিকে গংগায় নিয়ে গেছেন; সবাই জানে, মোদীও জানে। সবাই জানার পরও কিভাবে এত দায়িত্বশীল, এই আদর্শবাদী মহিলা মিথ্যা বললেন?

লিটলম্যাগ শব্দতরী প্রকাশের ভাবনা

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নে,ই, তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’

— প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

১৭৩১ সালে এডওয়ার্ড কেভ সম্পাদিত `Gentleman’s Magazine’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ম্যাগাজিন শব্দটি চালু হয়। Magazine অর্থ- বারুদশালা। বারুদ ঠাসার মতোই শব্দ-অক্ষরের মাল-মশলা মজুদের আধার হিসেবে ম্যাগাজিন শব্দের এই প্রতীকী ব্যবহারই পরবর্তীতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রই হচ্ছে প্রতিবাদী ও তথাকথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধী। আর তাই প্রথাবিরোধী মেধাবী সৃষ্টিশীলদের সাহিত্যচর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে এই লিটল ম্যাগাজিন।

‘দেশ’ পত্রিকার মে ১৯৫৩ সংখ্যায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসু লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লেখেন-

লিটল কেন? আকারে ছোট বলে? প্রচারে ক্ষুদ্র বলে? না কি বেশি দিন বাঁচে না বলে? সব কটাই সত্য, কিন্তু এগুলোই সব কথা নয়; ঐ ‘ছোট’ বিশেষণটাতে আরো অনেকখানি অর্থ পোরা আছে। প্রথমত, কথাটা একটা প্রতিবাদ: এক জোড়া মলাটের মধ্যে সব কিছুর আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বহুলতম প্রচারের ব্যাপকতম মাধ্যমিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। লিটল ম্যাগাজিন বললেই বোঝা গেলো যে জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না, নগদ মূল্যে বড়োবাজারে বিকোবে না কোনোদিন, কিন্তু- হয়তো কোনো একদিন এর একটি পুরোনো সংখ্যার জন্য গুণীসমাজে উৎসুকবার্তা জেগে উঠবে। সেটা সম্ভব হবে এই জন্যেই যে, এটি কখনো মন যোগাতে চায়নি, মনকে জাগাতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো নতুন সুরে কথা বলতে।

সাহিত্যের পত্রিকা- তার মানে সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ সাহিত্যের। যে সব পত্রিকা সাহিত্য বিষয়ক জ্ঞানের পরিবাহক, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব বা পাঠমূলক গবেষণায় লিপ্ত, দৃশ্যত কিছু মিল থাকলেও সাহিত্যপত্রের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তারা বিশেষজ্ঞের পত্রিকা, জ্ঞানের একটি বিশেষ বিভাগে আবদ্ধ, আপন সম্প্রদায়ের বাইরে তাদের আনাগোনার রাস্তা নেই। কিন্তু সাহিত্যপত্রের দরজা খোলা থাকে সকলেরই জন্য, কেননা সাহিত্য যেখানে সৃষ্টি করে সেখানে তার আহ্বানে কোনো গণ্ডি নেই, যদিও সে আহ্বান শুনতে পায় কখনোবা পনেরো জন কখনো পনেরো লক্ষ মানুষ। আজকের দিনে যাদের কণ্ঠ লোকের কানে পৌঁছাচ্ছে না, যারা পাঠকের পুরনো অভ্যাসের তলায় প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাদের এগিয়ে আনা, ব্যক্ত করে তোলাই সাহিত্যপত্রের কাজ।
——————

এই পোষ্টের কোন ভাবনাই আমার নিজের নয়। কিন্তু ব্লগে প্রকাশিত মানসম্মত লেখা নিয়ে একটি লিটলম্যাগ প্রকাশের ভাবনা আমার অনেক দিনের। শব্দতরী কি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আবার প্রকাশ করা যায়?

সত্যের সন্ধানে

আজকাল যেখানে-সেখানে শোনা যাইতেছে যে, সংসারে নানাপ্রকার জিনিস-পত্রাদি হইতে “বরকত” উঠিয়া গিয়াছে। কারণ লোকের আর পূর্বের মত ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাস নাই। পূর্বে লোকের ঈমান ছিল, ফলে তাহারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করিত। আর আজকাল মানুষের ঈমান নাই, তাই তাহাদের অভাব ঘোচে না। ঈমান নাই বলিয়াই ক্ষেতে আর সাবেক ফসল জন্মে না, ফলের গাছে ফল ধরে না, পুকুরে-নদীতে মাছ পড়ে না। ঈমান নাই বলিয়াই মানুষের উপর খোদার গজবরূপে কলেরা, বসন্ত, বন্যা-বাদল, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি নানা প্রকার বালা-মুছিবত নাজেল হয়। অথচ মানুষের হুঁশ হয় না। এইরূপ যে নানা প্রকার অভাব-অভিযোগের জন্য ঈমানের অভাবকেই দায়ী করা হয়, তাহা কতটুকু সত্য?

শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেই জানেন আর যাহারা জানেন না তাহারা অনুসন্ধান করিলেই জানিতে পারিবেন যে, আমাদের এই সোনার বাংলার চাষীগণ বিঘা প্রতি বার্ষিক যে পরিমাণ ধান্য জন্মাইতেছে তাহারা প্রায় সাত-আট গুণ পরিমাণ ধান্য জাপানের চাষীরা জন্মাইতেছে। হয়ত অনুসন্ধান করিলে ইহাও জানা যাইতে পারে যে, জাপানের এই চাষীরা অ-মুসলমান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, কাফের, যাহাদের ধর্মে ঈশ্বরের নামগন্ধও নাই। আমাদের মতে উহারা বে ঈমান বা অ-বিশ্বাসী। তবুও উহারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগে পূর্বের চেয়ে বেশী ফসল জন্মাইতেছে। আমাদের মতে উহারা বে-ঈমান হইলেও তাহাদের ক্ষেতের ফসল বাড়িয়াছে বৈ কমে নাই।

কিছুদিন পূর্বে রাশিয়া-প্রত্যাগত বাংলাদেশের জনৈক নামজাদা ডাক্তার সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলিয়াছিলেন যে, পূর্ব বাংলায় প্রতি বৎসর হাজার হাজার লোক কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারীর প্রকোপে প্রাণ হারায় এ কথা সেদেশের ডাক্তারেরা বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলেন না। কারণ তাহারা একথা ভাবিতেও পারিতেছিলেন না যে, বর্তমান যুগেও কোন দেশে কলেরা বা বসন্তে ভুগিয়া অগণিত মানুষ প্রাণ হারায়। তবে কি একমাত্র বাংলার অধিবাসীদেরই ঈমান নাই? আর একমাত্র ইহাদের উপরই কি খোদার গজব বর্ষিত হয়? রাশিয়ানরা অধিকাংশই সাম্যবাদী (Socialist)। তাঁহারা দেব-দেবী বা আল্লা-নবীর ধার ধারে না। তবুও যাবতীয় কাজে তাঁহারা বৈজ্ঞানিক প্রণালী প্রয়োগ করিয়াই সুখে-স্বচ্ছন্দে জীবন-যাপন করিতেছেন।

যাহারা ঈমানের অভাবকে নানাবিধ অভাব-অনটনের জন্য দায়ী করেন, তাঁহারা একটু ভাবিলেই দেখিতে পাইতেন যে, ধনী ও গরীবের আয়-ব্যয়ের ধাপগুলি কোন কালেই এক নহে। গরীব চায় শুধু ভাত ও কাপড়। কিন্তু ধনী চায় তৎসঙ্গে বিলাস-ব্যসন। মানুষ সাধারণত অনুকরণপ্রিয়! তাই ধনীর বিলাসিতা বহুল পরিমাণে ঢুকিয়াছে গরীবের ঘরে। যাহার পিতার সম্পত্তি ছিল পাঁচ ঘিা জমি এবং পরিবারে ছিল তিনজন লোক, তাহার সংসারের নানা প্রকার খরচ নির্বাহ করিয়াও হয়ত কিছু উদ্বৃত্ত থাকিত। আজও সে ঐ জমির আয় দ্বারা তিনজন লোকই প্রতিপালন করে, কিন্তু উদ্বৃত্ত যাহা কিছু থাকিত, তাহা ব্যয় করিতেছে সাবান, সুবাসিত তৈল, সিল্কের চাদর, ছাতা ও জুতায়। বিলাস ব্যসনে যে অতিরিক্ত খরচ সে করিতেছে, তাহার হিসাব রাখে না, ভাবে ‘বরকত’ গেল কোথায়? এ কথা সে ভাবিয়া দেখে না যে, অমিতব্যয়িতা এবং বিলাসিতাই তাহার অভাব-অনটনের কারণ। অযথা ঈমানের অভাবকে কারণ বলিয়া দায়ী করে।

আরজ আলী মাতুব্বরের “সত্যের সন্ধান” বইটি মুক্তচিন্তার জগতে এমনি মৌলিক এবং অনন্য একটি বই। এই পোষ্টে আমি নিজে এক বর্ণও লিখিনি, বইটি হতে কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছি মাত্র। আসুন দ্বিমত থাকলে মন্তব্যের ঘরে শেয়ার করি, একমত হলে নিজে কিছু সংযোজন করি।

সবমেরিন যুগে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সত্যি কি এগুচ্ছে? প্রশ্ন হচ্ছে কোনদিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। রজনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ইত্যকার নানাবিধ প্রশ্ন তোলা যায়। তবু আমরা কিছু দিকে এগুচ্ছি বই কি। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এটা এখন বাস্তবতা। উন্নয়নের নবযাত্রা এখন জয়যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। সাবমেরিন যুগে পদার্পন করেছে বাংলাদেশ।

সাবমেরিনের ইতিহাসঃ

ডুবোজাহাজ (ইংরেজি ভাষায়: Submarine) হচ্ছে পানির নিচে চলাচলে সক্ষম ও স্বাধীনভাবে বিচরণকারী নৌযানবিশেষ। সচরাচর ডুবোজাহাজ অনেক ক্রু অবস্থান করে থাকেন। ডুবোজাহাজকে প্রায়শঃই তার বিভিন্ন আকার-আকৃতি এবং জাহাজের সাথে তুলনা করে একে নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অনেক পূর্বকাল থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে ডুবোজাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ঊনবিংশ শতকে বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীতে এর ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ডুবোজাহাজ ব্যবহারের ব্যাপকতা বিস্তৃতভাবে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে অনেক বৃহৎ আকারের নৌবাহিনীতে এর অনেক সংগ্রহ রয়েছে। শত্রুবাহিনীর জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ আক্রমণ মোকাবেলায় এর ভূমিকা ব্যাপক। এছাড়াও, বিমানবাহী জাহাজ বহরকে রক্ষা করা, অবরোধ দূরীকরণ, প্রচলিত স্থল আক্রমণ ও বিশেষ বাহিনীকে গুপ্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণে ডুবোজাহাজর কার্যকারিতা অপরিসীম।

সাধারণভাবেও ডুবোজাহাজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তন্মধ্যে – সমুদ্র বিজ্ঞান, উদ্ধার তৎপরতা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম, পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষন সুবিধার জন্যও ডুবোজাহাজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ডুবোজাহাজকে ব্যবহারের লক্ষ্যে বিশেষায়িত কার্যক্রম হিসেবে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতাসহ সাগরতলে অবস্থিত ক্যাবল মেরামতেও সম্পৃক্ত করা হয়। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সাগরতলে নিমজ্জিত প্রত্নতত্ত্ব পরিদর্শনেও ডুবোজাহাজ ব্যবহৃত হয়।


নবযাত্রা ও জয়যাত্রাঃ

নৌবাহিনীর জন্য ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় দুইটি সাবমেরিন কেনার জন্য চীনের সঙ্গে ২০১৪ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর সাবমেরিন দুইটি চীনের দালিয়ান প্রদেশের লিয়াওয়ান শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সি ট্রায়ালের পর চীন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এবং নাবিকদের তত্ত্বাবধানে ২২ ডিসেম্বর সাবমেরিন দুইটি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সূত্র জানায়, সাবমেরিন দুইটির প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সুসজ্জিত সাবমেরিনগুলো শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। পূর্ণ ধারণ ক্ষমতা নিয়ে এগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসিত বক্তৃতাঃ

৯ মার্চ ২০১৭ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের নেভাল বার্থে আধুনিক দুই সাবমেরিন (ডুবো যুদ্ধজাহাজ) ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’র কমিশনিং-কালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। তবে কেউ আক্রমণ করলে যেন সমুচিত জবাব দিতে পারি, সেজন্য বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করছি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হয়েই থাকবে। আমাদের ভূখ- ব্যবহার করে কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকা- করতে দেব না। আমরা পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য আমরা এমন সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।”

শেখ হাসিনা তার রজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক আলাচিত, সমালোচিত। আমরা সেসব আলোচনায় যেতে চাই না, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশ। আর দুটি সাবমেরিন কমিশনিং এ যে বক্তৃতা দিয়েছেন শেখ হাসিনা তাতে তাকে একজন যুগপযুগি মহানায়ক হিসাবে দেখতে পাই।

‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক মাত্রা

চৈত্রসংক্রান্তি হিন্দুদের ‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে চৈত্র মাসের শেষ দিন এটি উদযাপন করে আসছে ।

বাংলা উইকিপিডিয়াতে প্রদত্ত তথ্য থেকে দেখা যায় হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, এ দিনে স্নান, ব্রত, উপাসনা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম পূণ্য জনক।

এ ছাড়া বাংলা পিডিয়াতে আরো বলা হয়েছে, “চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিব কেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি “চড়ক পূজা” নামে পরিচিত। চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিন এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে।”

“চড়কপূজা উপলক্ষ্যে, আগের দিন চড়ক গাছকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয় যা পূজারীদের কাছে “বুড়োশিব” নামে পরিচিত। পতিত ব্রাক্ষণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হল, কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির উপর লাফানো, শিবের বিয়ে, অগ্নি নৃত্য, চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি। এইসব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের উপর বিশ্বাস। এর অনুষ্ঠানাবলী প্রাচীন কৌম সমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা “চড়ক সংক্রান্তি” বা “চৈত্র সংক্রান্তির মেলা” নামে পরিচিত।”

প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঢাকার রমনা পার্কে ছায়ানট আয়োজিত প্রাদোষিক সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং একে ঘিরে আয়োজিত অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা মানুষকে নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করতে থাকে এবং নাগরিক আবহে সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হয়৤ ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়।[৫] সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীগন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে৤

১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, ঘোড়া, হাতি। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট লেখক, শিল্পীগণ-সহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেয়।

শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।

জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনট্যানজিবল (ইং: Intangible ) সাংস্কৃতিক ঐতিহ‌্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্ব মানচিত্রে একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ

বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে বুঝতে কেনিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বারাক ওবামার বক্তব্যই যথেষ্ট। সেখানে ওবামা বলেছেন, আইসিটিতে উন্নয়ন ঘটাতে হলে বাংলাদেশকে ফলো করো। কেনিয়া সরকারকে উদ্দেশ করে বলা ওবামার ওই বক্তব্য সারা বিশ্ব শুনেছে এবং বুঝেছে বাংলাদেশের অবস্থান।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে ১২ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। কিন্তু আজ ৬ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার মধ্যে এসেছে। ২০০৮ মোবাইল ব্যবহারকারী ছিল ৪ কোটি, বর্তমানে ১৩ কোটি। এসব রূপান্তর তো হয়েছে আমাদের চোখের সামনেই।

এদিকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, অর্থনীতির উন্নয়নসহ দেশ সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপে এমন তথ্য জানানো হয়।

আইআরআই বলছে, ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী। তাদের (জরিপে অংশগ্রহণকারীরা) নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। তারা আশা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ সক্ষমতা আরো বাড়বে।

আইআরআই এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ড্রেক লুইটেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে অর্থনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হলে সব ক্ষেত্রেই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্ব মানচিত্রে একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ।

আমাদের ‘বাংলাদেশ’ হাসছে, ভালো আছে

২৬ মার্চ জাতির পিতা প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বেতার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ আমি যখন আমার সোনার বাংলার দিকে তাকাই তখন দেখতে পাই যুদ্ধবিধ্বস্ত ধূসর পাণ্ডুর জমি, ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম, ক্ষুধার্ত শিশু, বিবস্ত্র নারী, আর হতাশাগ্রস্ত পুরুষ। ‘… ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘স্বাধীনতা অর্জন করলেও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সব সময় নির্ভর করতে হবে বিদেশি সাহায্যের ওপর। ‘ বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশ হলো একটা তলাবিহীন ঝুড়ি, এখানে যতই সাহায্য দেওয়া হোক, কোনো কাজে আসবে না। ‘ বাংলাদেশের গৌরবময় অভ্যুদয়ের পর বারবার ঘুরে-ফিরে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নটিই বড় হয়ে এসেছিল। ১৯৭২-৭৩ এ বিশ্বব্যাংকের প্রধান রবার্ট ম্যাকনামারা ‘বাংলাদেশ’ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সব সময়ই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই চলতে হবে। এভাবে চলতে থাকা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই অসম্ভব।’

মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডাগলাস মন্তব্য করেছিলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মডেল হবে এ দেশটি। ‘ এ সময় অনেকে ‘বাংলাদেশ’ কত দিন স্বাধীন থাকবে, তা নিয়ে গবেষণাও করেছেন। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডাস্ট ফাল্যান্ড এবং পারকিনন্স। বাংলাদেশকে তারা ‘উন্নয়নের পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন ‘বাংলাদেশে যদি উন্নয়ন সম্ভব হয় তাহলে বিশ্বের যে কোনো দেশেই উন্নয়ন সম্ভব। ‘

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ ছিল এক দুঃখিনী মা। অভাব-অনটনে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, বন্যায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুপথযাত্রী এক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ মানেই চোখের সামনে ভেসে উঠত এক কঙ্কালসার মানুষের মুখচ্ছবি।
৪৫ বছরে বাংলাদেশ এসব ভবিষ্যদ্বাণী এবং অর্থনৈতিক তত্ত্বকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যিনি ৭৪-এ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন, তিনি ২০১৩ এর নভেম্বরে বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা জার্নাল ‘THE LANCET’ এ বাংলাদেশ কি হচ্ছে (What’s happening in Bangladesh) শিরোনামে গবেষণা নিবন্ধ শুরু করেছেন এভাবে- ‘আত্মবিশ্বাসী মতামত প্রদানকারীরা যারা বাংলাদেশকে মাত্র কিছুদিন আগে দেখেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে, তারা কখনো চিন্তাও করেনি যে বাংলাদেশ ওই ঝুড়ি থেকে বেরিয়ে অগ্রগতির পথে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করবে। এ অগ্রযাত্রা বিস্ময় জাগানিয়া। ‘

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আমরা যদি ফিরে দেখি তাহলে দেখব, সামাজিক প্রায় সব সূচকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। অথচ ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন ‘দুঃখিনী বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। ‘৭১-এ বাংলাদেশের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৩৯ বছর ভারতের ছিল ৫০ বছর আজ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু ৬৯ বছর, ভারতের ৬৬ বছর। ৭১-এ বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ভারতের ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন বাংলাদেশের জন্মহার ২ দশমিক ২ শতাংশ, ভারতের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা যত প্রতিবেদন এবং গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে তার প্রায় সবই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক সূচকের অগ্রগতি সম্পর্কে অতীতে বিশ্বব্যাংক এবং ইদানীং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) যা বলেছিল, তা সব ভুল।

বাংলাদেশের মানুষ বন্ধ্যা জমিতে ফসল ফলিয়েছে, রুগ্ন নদীতে মাছ চাষ করেছে। দিন-রাত একাকার করে ছোট ছোট খামার করেছে। এ দেশের মানুষের হৃদয় থেকে ‘অসম্ভব’ শব্দটা তো মুছে গেছে একাত্তরেই। ৪৫ বছর পর কোনো চিত্রশিল্পী যদি বাংলাদেশের বিবর্তনের চিত্রকল্প অাঁকেন তাহলে দেখা যাবে, এ দুঃখী, পুষ্টিহীন কন্যাশিশু কিভাবে এক রূপবতী রত্নগর্ভা মায়ে পরিণত হয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে এগিয়ে যাওয়া আমাদের ‘বাংলাদেশ’ হাসছে, ভালো আছে। ‘বাংলাদেশ’ এখনো অনেক বিস্ময় লুকিয়ে রেখেছে এ বিশ্বকে দেওয়ার জন্য।

তথ্যসূত্রঃ
কেমন আছে আমার বাংলাদেশ
সৈয়দ বোরহান কবীর
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।