ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিশালাকার বন্যপ্রাণী হাতির পিঠে চড়ে দোকানদারের কাছে চাঁদা দাবি করছে। হাতির পেছনে কৌতূহলী এলাকাবাসী।
আমাদের দেশে অনেক নামীদামী ব্যবসায়ী আছে। অনেকে আছেন দেশের পণ্য বাজারজাত করে বিদেশে রপ্তানি করেন। কেউ আবার বিদেশি পণ্য দেশে এনে বিক্রি করেন। কেউ কাওরানবাজার থেকে পণ্য কিনে নারায়ণগঞ্জ এনে বিক্রি করেন। কারোর পুঁজি বেশি, কারোর কম। তবুও তাদের ব্যবসায়িই বলে। একজন ঝালমুড়িওয়ালাও নিজেকে ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন। ফুটপাতের একজন চটপটি বিক্রেতাও নিজেকে ব্যবসায়ী বলে দাবি করে।
এরকম অনেক ব্যবসা আছে, ব্যবসায়ীও আছে। যেমন– বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মুরগি ব্যবসায়ী, গরু-ছাগল ব্যবসায়ী, কাঁচামাল ব্যবসায়ী, ভূষি মাল ব্যবসায়ী, কাপড় ব্যবসায়ী, রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী, জুতা ব্যবসায়ী, জুট ব্যবসায়ী, তুলা ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, সুদি ব্যবসায়ী, সহ আরও অনেক ব্যবসায়ি আছে, ব্যবসাও আছে। এসবের মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ী হলো ভিক্ষুক দিয়ে ভিক্ষা ব্যবসা। এর মধ্যে ইদানীংকালে যোগ হয়েছে বিশেষ ধরণের এক ব্যবসা নাম হলো, ‘হাতি’ দিয়ে ভিক্ষা বা হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি ব্যবসা।
রাস্তাঘাটে দেশের আনাচে-কানাচে অনেক ধরণের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। এসব চাঁদাবাজি ব্যবসার কাতারেই পড়ে। সড়ক মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পণ্য সরবরাহ করা পরিবহণ থেকে বড়সড় ক্যাডার মাস্তানদের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়, শোনাও যায়। কিন্তু হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি, এটা কেমন চাঁদাবাজি? এটা ক্ষুদ্র চাঁদাবাজি বলে মনে হয়!
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ১০ নং ওয়ার্ডে কয়েকদিন পরপর দেখা যায়, হাতি দিয়ে করা হচ্ছে চাঁদাবাজি। দেখা যায় গোদনাইল এলাকার বিভিন্ন দোকানে হাতি নিয়ে ভয় দেখিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে ১০/২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
হাতির মাহুত দোকানের সামনে গিয়ে হাতে থাকা চাবুকের মত থাকা বস্তুটি দিয়ে টোকা দেয়। এরপর হাতি চাবুকের আঘাত টের পেয়ে দোকানের সামনে শুঁড় বাড়িয়ে দেয়। এখন দোকানদার বুঝতে পারে হাতি কী চাইছে! টাকা না দেওয়া পর্যন্ত হাতি দোকানের সামনে থেকে আর নড়ছে না।
যতক্ষণ পর্যন্ত দোকানদার টাকা না দিচ্ছেন, ততক্ষণ হাতি দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকবে। এরপর দোকানদার হাতিকে দেখে ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়। দোকানদার দশ টাকা বিশ টাকা হাতির শুঁড়ে ধরিয়ে দিলে, হাতি সাথে সাথে পিঠের উপর থাকা মাহুতের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। মাহুত তার সাথে থাকা ব্যাগে ভরে রাখছে। এভাবে দোকানদার সহ রাস্তায় পথচারীদের কাছ থেকেও আদায় করা হয়।
শুধু দোকান আর পথচারিই নয়! রাস্তার মধ্যে চলন্ত মোটরসাইকেল, অটো ভ্যান কিংবা বড় বড় যানবাহন থামিয়েও টাকা আদায় করতে দেখা যায়। তবে বর্তমানে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিশপত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে ভিক্ষার দামও বেড়েছে। সাথে দান খয়রাতের দাম আর মান দুটোই বেড়েছে। তাই বর্তমানে পাঁচ টাকা আর দুই টাকা হাতি নিচ্ছে না। দিতে হলে হাতিকে নিচে দশ টাকা বা এরও বেশি দিতে হবে। দিচ্ছেও অনেকে।
ছবিটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল লক্ষ্মীনারায়ণ বাজার থেকে তোলা।
কেউ আবার শখের বশে হাতিকে রুটি কলা সহ নানারকম খাবারও দিয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো, রুটি কলা যা-ই হোক, প্যাকেট ছাড়া যা হবে; সবই হাতি খেয়ে ফেলবে। প্যাকেট হলে হাতি মাহুতের কাছে পৌঁছে দিবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এসব হাতি হলো একসময়ের সার্কাস খেলায় নিয়োজিত থাকা হাতি। বর্তমানে দেশের কোথাও সার্কাসের আসর বসে না বিধায়, সার্কাস মালিকরা এসব হাতি ভাড়া দিয়ে থাকে। ছোটবড় হাতির সাইস বুঝে প্রতিদিন ৩০০০(তিন হাজার) টাকা থেকে ৪০০০(চার হাজার) টাকা ভাড়া দেওয়া হয়। সময় থাকে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। হাতির খাওয়া-দাওয়া সব মাহুতের উপর বর্তায়। তবে সবাই ইচ্ছে করে এসব হাতির পিঠে চড়তে পারবে না।
হাতির পিঠে চড়তে হলে সেসব নিয়ম জানা থাকতে হবে। না হয়, হাতির পিঠ থেকে ছিটকে পড়ে হাত-পা ভাঙতে হবে। এসব মাহুত হচ্ছে সার্কাসে নিয়োজিত থাকা হাতি দিয়ে খেলা দেখানো খেলোয়াড়। এই বঙ্গদেশ থেকে যাত্রাপালা, বৈঠকি গান, মঞ্চনাটক, থিয়েটার, পুতুলনাচ, সার্কাস খেলার বিলুপ্তি হওয়ার পরই, এসবের সাথে যুক্ত থাকা মানুষগুলোর এখন দুর্দিন চলছে।
youtube.com/watch?v=cCXAAwlq1gU
এই নিয়ে গত কয়েকদিন আগে ইউটিউবে আমার নিজের চ্যানেলে একটা ভিডিওচিত্র আপলোড করা হয়েছে। তা এখন এই পোস্টে দেখানো হলো।
তাই তাঁরা পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে অনেক জনে অনেকরকম ধান্ধায় জরিয়ে পড়েছে। ঘোড়ার খেলোয়াড়রা ঘোড়ার গাড়ি, হাতির খেলোয়াড়রা হাতিকে ব্যবহার করে নানারকম ফন্দিফিকির করে দিনাতিপাত করছে। খবর নিয়ে জানা যায়, এঁরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা রোজগার করে থাকে। একেক দিন একেক জায়গায় হাতি নিয়ে এঁদের আনাগোনা চলছে।
তবে এরকমভাবে হাতি দিয়ে টাকা আদায়ে কেউ কেউ অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করছে। কেউ আবার বিরক্তও হচ্ছে। কেউ বলছে, হাতি দিয়ে ভিক্ষা। কেউ বলছে হাতি দিয়ে ডাকাতি। কেউ বলছে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি। আসলে এটা কী? ভিক্ষা নাকি চাঁদাবাজি? যদি ভিক্ষাই হয়ে থাকে, তবে এই বিশালাকার বন্যপ্রাণী হাতি দিয়ে ভয় দেখিয়ে কেন? আর যদি চাঁদাবাজি হয়ে থাকে, তবে প্রশাসন এটা দেখে না কেন?