বাসের সুপারভাইজার যখন ভাড়া চাইলো তখন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ম্যানিব্যাগটা ফেলে এসেছি। হায়, এখন উপায়? পাশে সিটে বসা ভদ্রলোক আমার মুখের ভাবখানা দেখে বিষয়টা বুঝতে পারলেন যে, আমি মহা ফাঁপড়ে পরে গেছি। তিনি নিজের পকেট থেকে চকচকে বিশ টাকা দিয়ে দিলে আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও একটু কেমন যেন লাগল।
নতুন বাজার থেকে যাচ্ছি গুলিস্তান। বাসে প্রচন্ড ভীড়। এতো লোক থাকার পরেও কেউ এগিয়ে না এলেও পাশের সিটে বসা এই চিকনা ধরণের লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল। বুকপকেটে মোবাইলটা রেখে ধপ্ করে বসে পড়লাম সিটে। কখন যে চোখদুটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে টের পাইনি। ঘুম ভাঙলো সুপারভাইজারের ডাকে। চোখ মেলে দেখি পাশে বসে থাকা চিকনা ভদ্রলোকটি আর নেই।বাস থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে চোখদুটো এবার কপালে উঠলো আমার! হায়, আমার মোবাইলও হাওয়া! সুপারভাইজারের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে আমার নাম্বাটিতে ফোন দিলাম। সুন্দর মেয়েলি কণ্ঠে কেউ একজন বলছে “দুঃখিত, এই মূহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার চেষ্টা করুন’।
আমি আর চেষ্টা করি না। কেননা, বুকে কষ্টের ঝড় উঠলে মেয়েদের সুন্দর কণ্ঠও বিষের মতো মনে হয়। বিশ টাকার বিনিময়ে আমার চৌদ্দ হাজার টাকার সেটটা চলে গেল। ঠা ঠা রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকি পিচঢালা পথে। একাকী, আনমনে। মোবাইলের বদলে রোদটা সঙ্গি করে।