পৃথিবীতে আরও কয়েকজন রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করলে আমরা আরও বেশি সমৃদ্ধ হতে পারতাম। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষেরা পৃথিবীর গর্ব ও অহংকার। এই ঘুণেধরা সমাজজীবনে তাঁরা এখনও নিঃসন্দেহে জ্ঞানবিকাশের ক্ষেত্রে ও মনুষত্ব্যের জাগরণে বাতিঘর। তাঁদের সারাজীবনের চিন্তাভাবনা ও কর্মপ্রচেষ্টা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। তাঁদের সাহিত্য মানবজীবনের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি।
রবীন্দ্র-সাহিত্য বাংলাসাহিত্যপ্রেমী-মানুষের কাছে এখনও আকর্ষণের বিষয়। মানুষের বিবেক এখনও জাগ্রত বলেই রবীন্দ্র-দর্শন মানবসমাজে এখনও টিকে আছে এবং তা মানবজীবনে ক্রিয়াশীল। শুধু একশ্রেণীর অর্বাচীনের কাছে রবীন্দ্রনাথের মতো মহামানবেরা এখনও উপেক্ষিত।
রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষেরা পৃথিবীতে দুর্লভ। আর তাঁরা নিঃসন্দেহে ক্ষণজন্মাপুরুষ। এই পৃথিবীতে তাঁদের মতো মানুষের আজ বড়ই প্রয়োজন। সুরুচির ভাবনাবিস্তারে তাঁরা ছিলেন পথিকৃৎ। পৃথিবীতে এখন বহুরকমের আত্মস্বীকৃত-পণ্ডিত রয়েছে। আর রয়েছে কতরকমের লেখক! কিন্তু একজন রবীন্দ্রনাথ নাই। আর এখনকার ভুঁইফোঁড় লেখকদের ভিড়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথ হারিয়ে যাননি। আবোলতাবোল পাগলগুলো সাহিত্যের নামে আধখেঁচড়া-বাণী-প্রচারে ব্যস্ত। আর এরা সাহিত্য না বুঝেই সাহিত্যরচনায় নিয়োজিত। এরা মনে করে: কিছুসংখ্যক মানুষকে হাসাতে পারলেই কিংবা আর-কিছু পাগলকে তাদের পাগলামি-দ্বারা বশ করতে পারলেই সে লেখক হয়ে গেল! লেখক হওয়া বুঝি এতো সহজ? আর লেখক তো গাছে ধরে—তাই না? এখন একশ্রেণীর লেখক আছে—মানুষ তাদের কথায় হাসতে না চাইলেও তারা জোর করে কিংবা কাতুকুতু দিয়ে হলেও মানুষকে হাসাতে চেষ্টা করছে। তবুও তাকে লেখক হতে হবে!
রবীন্দ্রনাথরা সাহিত্যাকাশে বিশাল মহীরুহ। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের জন্য তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। একজন রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্যের আসরে মশগুল ছিলেন না। তিনি বাংলাভাষার উন্নয়নে একজন ভাষাবিজ্ঞানীর ন্যায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আর তাঁর ছিল সর্বতোমুখী-প্রতিভা। সাহিত্যে, সঙ্গীতে, চিত্রাঙ্কনে আর ভাষাভাবনায় তিনি ছিলেন সমানভাবে পারদর্শী। তাই, তাঁদের সাহিত্যকর্মসমূহ আজও আমাদের পাথেয়। বাংলাসাহিত্য রবীন্দ্রনাথের মতো সর্বতোমুখী-প্রতিভার কাছে চিরঋণী। মনে রাখবেন: রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষেরা পৃথিবীতে সহজে জন্মগ্রহণ করেন না।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৮/০৮/২০১৬