ট্যাগ আর্কাইভঃ শান্ত চৌধুরী’র চিঠি

চিঠি বিরহ (২)

প্রিয়তা
কেমন আছো ? আজো কি সেই আগের মতো লালগোলাপ খোপায় গাঁথ। তোমার রেশমী কোমল চুল গুলো ছেড়ে পায়চারী করো। সকালের সোনা রোদে ছুটে যাও বকুল তলায়। আমাকে তোমার মনে পড়ে কি প্রিয়তা?

তোমার দেয়া সেই রুমালটায় আজো তোমার গায়ের গন্ধ শুকে যাই। মনে হয় তুমি আমাকে জড়িয়ে আছো বটবৃক্ষের মতো। তোমার দেয়া স্মৃতি গুলো বার বার আমার মাঝে তোমাকে বিচরণ করে। মনে পড়ে সেই কবে কার ভরা বর্ষার ডাকাতীয়ার জলে নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছি তোমার বুকে শুয়ে। মৌনতা ভেঙ্গেছে তোমার কোমল আদর মাখা আহ্বানে, তোমার সুরে সুরে মিলিয়ে ছিল ডাহুকের পাল, আমি অপলক তোমার পানে চেয়ে চেয়ে কাটিয়েছি দিয়েছি সময়।

তুমি এখন হয়তো আর আমার কথা মনে করোনা ? অনেক সুখে হয়তো মানব কীট আমাকেই ভুলে গেছো। স্বামী, সন্তান সুখের সংসার অনেক ভালোই আছো। আমি সেই আগের মতো বকুল তলায় যাই, পাখিদের সাথে কথা বলি, রাতের প্রদীপ জোনাকি ভিড়ে মাঝে মাঝে জেগে থাকি, চাঁদের মৃদু জোছনায় তোমাকে খুঁজি। বুকের মাঝে একটুকরো ভালোবাসার রঙে তোমার ছবি আঁকি। অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিটি প্রহর হউক তোমার প্রজাপতির রঙীন পাখার মতো। আমি তোমার ভালোবাসার সুখে ! দুঃখের সাগরে ভেসে যাই অনবরত। তুমি ভালো থেকো, অনেক সুখে থেকো, আমি তোমার সুখেই হারাবো দুঃখ পালে। তোমার ভালোবাসার জনম ভিখারি।

চিঠি বিরহ ( চিঠি )

প্রিয় মৌমিতা,
কদিন হলো তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। কেমন আছো তুমি? স্বামী সুখের সংসার আর নতুন পরিবেশ, সব মিলিয়ে ভালোই আছো? তোমার বাড়ির উঠোনের বকুল গাছটি আজো আছে? নাকি আমার মত অবহেলা অনাদরে মিলিয়ে গেছে? বকুলের ঘ্রাণ আজো আমায় আন্দোলিত করে, তোমায় খুঁজে যাই বকুলের ঘ্রাণে, মনে হয় তোমার শরীরী ঘ্রাণ, কতরাত ভোর হয়েছে বকুলের ছায়ায়। ছায়া ঘেরা শিরিষ গাছের ডালে কি বনমালীর দল কিচিরমিচির ডাকে? নাকি ওরাও তোমার মতো অভিমানে দূরের কোন যাত্রী হয়েছে। অথচ ওরাই ছিলো সময় অসময়ে। অন্ধকারে জোনাক গুলো কি এখন দল বেদে আসে উঠোনে, নাকি সোডিয়ামের উছল আলোয় হারিয়ে গেছে ? কতরাত ওরা আমাদের সঙ্গী ছিল তার হিসেব নেই। প্রভাতের সোনালী স্নিগ্ধ শিতল উষালগ্নে তোমার সাথে দেখা হতো শিউলি তলায়, প্রাণের তৃষ্ণার জলে ডুবে যেতাম অনাবিল উচ্ছ্বাসে। অজর বৃষ্টিজলে কদমের পাপড়ী ভাসিয়ে পুকুর জলে, ডাহুকের মতো ভিজেছি কাকভেজা। অথচ কদিন হলো, তুমি নিমিশেই সব ভুলেছো। যে তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবেনা বলে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছো, সবি ছিলো আমার সাথে ছলনা, আমি তোমাকে ছাড়া নিঃশব্দ বেঁচে আছি। রঙহীন স্বপ্নের ধূসরে মিলিয়ে গেছি। জীবনের বিবর্ণ সময়ের স্রোতে।

সময় অসময়ে জীবন নগর স্টেশন থেমে নেই, দুঃখের স্মৃতিভ্রম সৌজন্য শেষ প্রান্তিকযাত্রী আমি অনাদি কালের সাক্ষী।

চিঠি বিরহ ১

প্রিয় মৌমিতা,
এক গুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা যেনো। কেমন আছো তুমি? অনবরত আমাকে ভুলে। অনেক সুখের নদীজলে সাঁতার কাটছো বুঝি। তোমার সুখ গুলো আমার কাছে হিরের টুকরোর মতো। তুমি আরাম আয়েশ করো, সুখ সুধায় হারাও, আমি তাই কামনা করি।

মৌমিতা, যে দিন তোমার শেষ চিঠি পেলাম সে দিন থেকে আমি যেন কেমন হয়ে গেছি। লাল গোলাপ দেখলেই ও স্থানে আর দাঁড়াতে পারি না, তোমাকে খুঁজতে থাকি, গোলাপের পাঁপড়িতে। রজনীগন্ধার সুভাস নাকে এলেই তোমার বাড়ীর উঠানে পায়চারি করি। যুগ যুগ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষার প্রথম পরশে ফিরে যাই। বৃষ্টির শীতল জলে কাক ভিজে জড়িয়ে হেঁটেছি মেঘনা নদীর তীরে, সেই হারানো দিন গুলোতে ফিরে যাই। তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাসনি?

অভিনয় করে গেছো আমার সাথে, নাটক, সিরিয়ালের নায়িকার মতো। সত্যিই তুমি সব পার, তুমি তো আমার নায়িকা। তোমার জন্য বকুল তলার ঘুঘু পাখি গুলো অপেক্ষা করে প্রতিদিন, সকাল-সন্ধ্যা সাঁঝ বেলায়। আমার বিরহের সাথী হয় পাখি গুলো। তুমি চলে গেলেও ওরা আমার বিরহের গল্প শুনে রোজ রোজ। সেই হিজলের লাল ফুল গুলো মলিন হয়ে ঝরে পড়ে বিরহের বিকেলে। আমি চেনা পথের পথিক ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকি তোমাকে দেখবো বলে, আর তুমি আমার কথা ভুলে দূরের কোন পথে হাট।

আমি তোমাকেই ভালোবেসে নিঃসঙ্গ একাকী দুঃখের প্রবল স্রোতে ভেসে ভেসে তোমাকেই খুঁজি। আর তুমি? সুখে থাকো তুমি প্রিয়া। যদি তোমার কখনও সময় হয় এক পলক চোখ বুলিয়ে যেও। তোমাকে দেখার সাধ অপূর্ণ। তোমাকে দেখবো অপলক দু’নয়নে, প্রজাপতি যেমন ফুলের পাঁপড়িতে অভিরাম চোখ বুলিয়ে যায়, আকাশ যেমন মাটির সাথে মিতালি করে, আমি তোমায় ভালোবেসে।


ক্লিক : শান্ত চৌধুরী। সূর্যের প্রস্থান।