ট্যাগ আর্কাইভঃ শান্ত চৌধুরী’র কবিতা

নগর জীবন

ইট কংক্রিট এই নগরে
কোথায়ও ছায়া নেই!
প্রাচীরের দেয়ালে
উর্বরতা নেই!

পিচঢালা পথে
সবুজের হাতছানি নেই!

সূর্যোদয়ে
পাখির কিচির-মিচির নেই!
পূর্বালী বাতাশ নেই!

শূন্যের দিকে চেয়ে চেয়ে
কত দিন কেটে যায়
রাতের চন্দ্রালোকে

মেঘের আড়ালে চাঁদ
নক্ষত্রের লুকাচুরি
হিসাবের খাতা খুলে।

যাপিত জীবন
কেটে যায়
নিয়তির নিয়মে।

সময়ের যত লেনদেন

মেঘদল জমে থাকা আকাশ
শুভ্র কুয়াশা ভেজা শিশির।
সবুজ ঘাসের এক চিলতে
অভিমানি বুক চাঁদের নিয়ন আলো খোঁজে।

জোনাকীরা ছুটে চলে অজানা
গন্তব্যে রঙ, রঙিনের ঘোর কেটে
উৎসবে ডুবে শহর।
সাইবেরিয়া থেকে আগত
একদল পরিযায়ী উড়ে যায়
মুখোরিত শব্দের উল্লাসে।

সময়ের যত লেনদেন, যত
হিসেব-নিকেশ
দ্রুত বদলে যায় সুর্যাস্তের মতো
অন্ধকারে।

নক্ষত্র ও আমি

আমি নক্ষত্রের মতো চেয়ে থাকি
দূরের মায়াবী ক্যানভাসে
নীল আকাশ, নীল জল ছুঁয়ে
যখন অন্ধকার নামে।

নীলাকাশ সিমাহীন
নীলজল অন্তহীন সমুদ্রে
সু উচ্চ পাহাড়ের বৌন উৎসব
নদীজল প্রমত্তা ছুটে যায়।

জলতরঙ্গ, নীলাকাশ সঙ্গম
অনিকেত সবুজ ছুঁয়ে
মহাকালের উৎসব।

জন্ম-জন্মান্তরের সূর্যাস্তে
নতুনের আগমনী বার্তা
দূরের পথে সংলাপ আর
মুখোরিত জীবনের গান।

এই শহরে

ইট কংক্রিটের এই শহরে
মধ্য ঝাঁঝাল রোদেলা দুপুর।
ব্যস্ত নগরীর কোলাহলে মিশে
পায়ে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত পথিক।

পিছু ফিরে বার বার ক্লান্তিতে
নির্জন নিস্তব্ধ আশ্রয়ের খোঁজে।
অনবরত কলরবে গাড়ির হর্ণ
যান্ত্রিক নগরীর বিবর্ণতা।

পাখিদের সুরের মিষ্টতা নেই
গাঢ় সবুজ যেন দু’চোখে ধাঁ-ধা।
দেয়াল ঘেরা কংক্রিটের প্রাচীর
মানুষ গুলোও কেহ কার না।

অথই মধ্য যুগে ডুবে আছে
মানবতা আজ ঝরা পাতা।
দু’একটা কাকের নিরব কান্না
প্রভাতের নগরীর যাত্রা।

অবিরত পলকহীন নগরীর ইট,
পাথর, কংক্রিট হয়ে উঠে ছায়া মানব।

আমার একটা শহর ছিলো

একটা শহর ছিলো,
গুমোট অন্ধকারে ডুবে থাকতো।
হুতুম প্যাঁচার মতো
রাত্রি’র নিরবচ্ছিন্ন ছায়া হয়ে।

শিমুলের সবুজ পাতার ফাঁকে
জোনাকির আনাগোনা,
সুরের পাখি কুকিলের বসন্ত গান।
দূরের ল্যাম্প পোস্টের মিটিমিটি আলোর রশ্মি,
উজানে মাঝির দাঁড়টান
ডুবে যেতো হাজার বছরের ক্ষত।

শহরে উৎসবে দু’একটা মোমবাতি ক্ষণস্থায়ী (অবসরে) নিজের মতো করে ডুবে যেতো নির্জন বিলাসিতায়। রাত জাগা কাকের বিচরণ, ভাঙ্গা কণ্ঠে আত্মচিৎকার মিলিয়ে যায় গভীর হতাশায়।

অহংকার, আহমিকা জ্বলন্ত শিখার মতো প্রহার করে বিজলির দ্যুতি। কাঠবিড়ালি গাছের ডালে ছুটাছুটি করে প্রকৃতির নিয়মে। অন্ধকার আচ্ছন্ন পথ, শহরের অলি-গলি, সমুদ্রের মতো বিশালতায় নোঙর করে।

রাজপ্রসাদ, বিশ্ববিদ্যালয়, সভা সেমিনার কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া ডুবে গেছে অন্ধকারে।
এ যেনো এক অন্ধকার রাজ্য।
উৎসবের মতো কোলাহলে ডুবে যাওয়া শহর।

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে …
আবিরের রঙে হারায় ধূসর বিকেল।
অনবরত পাখিদের কলরব
নীড়ে ফিরে যাওয়ার স্লোগান।

শেষ বিকেলের সূর্যটা
লাল আগুনের লেলিহান দিয়ে
শাসাতে চায় ধরাকে।

মেঘনার স্রোতশীল নদীর
জলে, বালিহাঁস খেলে যায়।
দু’একটা কাঠবিড়ালির ছুটাছুটি
এগাছের ডাল ছেড়ে ওগাছে।
মাঝিমাল্লারা আপন নিবাসে
ফিরে যাওয়ায় মত্ত।
কিছু জেলে ছোট ডিঙ্গি নাওয়ে
ভেসে ইলিশের জাল
ফেলে অপেক্ষার প্রহরে।

গায়ের বঁধু ব্যস্ত হয়ে পরে
রান্নাবান্না শেষ করে
সন্ধ্যা রাতের প্রদীপ জ্বেলে।
জোনাক গুলো নিভু নিভু আঁধারে
আলো জ্বেলে হারিয়ে যায়
রাতের আঁধারে।

যখন সন্ধ্যা নামে
নীড়ে ফিরে যাওয়ার ছুটাছুটি
অনবরত অনন্ত আদি।

চিঠি বিরহ (২)

প্রিয়তা
কেমন আছো ? আজো কি সেই আগের মতো লালগোলাপ খোপায় গাঁথ। তোমার রেশমী কোমল চুল গুলো ছেড়ে পায়চারী করো। সকালের সোনা রোদে ছুটে যাও বকুল তলায়। আমাকে তোমার মনে পড়ে কি প্রিয়তা?

তোমার দেয়া সেই রুমালটায় আজো তোমার গায়ের গন্ধ শুকে যাই। মনে হয় তুমি আমাকে জড়িয়ে আছো বটবৃক্ষের মতো। তোমার দেয়া স্মৃতি গুলো বার বার আমার মাঝে তোমাকে বিচরণ করে। মনে পড়ে সেই কবে কার ভরা বর্ষার ডাকাতীয়ার জলে নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছি তোমার বুকে শুয়ে। মৌনতা ভেঙ্গেছে তোমার কোমল আদর মাখা আহ্বানে, তোমার সুরে সুরে মিলিয়ে ছিল ডাহুকের পাল, আমি অপলক তোমার পানে চেয়ে চেয়ে কাটিয়েছি দিয়েছি সময়।

তুমি এখন হয়তো আর আমার কথা মনে করোনা ? অনেক সুখে হয়তো মানব কীট আমাকেই ভুলে গেছো। স্বামী, সন্তান সুখের সংসার অনেক ভালোই আছো। আমি সেই আগের মতো বকুল তলায় যাই, পাখিদের সাথে কথা বলি, রাতের প্রদীপ জোনাকি ভিড়ে মাঝে মাঝে জেগে থাকি, চাঁদের মৃদু জোছনায় তোমাকে খুঁজি। বুকের মাঝে একটুকরো ভালোবাসার রঙে তোমার ছবি আঁকি। অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিটি প্রহর হউক তোমার প্রজাপতির রঙীন পাখার মতো। আমি তোমার ভালোবাসার সুখে ! দুঃখের সাগরে ভেসে যাই অনবরত। তুমি ভালো থেকো, অনেক সুখে থেকো, আমি তোমার সুখেই হারাবো দুঃখ পালে। তোমার ভালোবাসার জনম ভিখারি।

চিঠি বিরহ ( চিঠি )

প্রিয় মৌমিতা,
কদিন হলো তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। কেমন আছো তুমি? স্বামী সুখের সংসার আর নতুন পরিবেশ, সব মিলিয়ে ভালোই আছো? তোমার বাড়ির উঠোনের বকুল গাছটি আজো আছে? নাকি আমার মত অবহেলা অনাদরে মিলিয়ে গেছে? বকুলের ঘ্রাণ আজো আমায় আন্দোলিত করে, তোমায় খুঁজে যাই বকুলের ঘ্রাণে, মনে হয় তোমার শরীরী ঘ্রাণ, কতরাত ভোর হয়েছে বকুলের ছায়ায়। ছায়া ঘেরা শিরিষ গাছের ডালে কি বনমালীর দল কিচিরমিচির ডাকে? নাকি ওরাও তোমার মতো অভিমানে দূরের কোন যাত্রী হয়েছে। অথচ ওরাই ছিলো সময় অসময়ে। অন্ধকারে জোনাক গুলো কি এখন দল বেদে আসে উঠোনে, নাকি সোডিয়ামের উছল আলোয় হারিয়ে গেছে ? কতরাত ওরা আমাদের সঙ্গী ছিল তার হিসেব নেই। প্রভাতের সোনালী স্নিগ্ধ শিতল উষালগ্নে তোমার সাথে দেখা হতো শিউলি তলায়, প্রাণের তৃষ্ণার জলে ডুবে যেতাম অনাবিল উচ্ছ্বাসে। অজর বৃষ্টিজলে কদমের পাপড়ী ভাসিয়ে পুকুর জলে, ডাহুকের মতো ভিজেছি কাকভেজা। অথচ কদিন হলো, তুমি নিমিশেই সব ভুলেছো। যে তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবেনা বলে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছো, সবি ছিলো আমার সাথে ছলনা, আমি তোমাকে ছাড়া নিঃশব্দ বেঁচে আছি। রঙহীন স্বপ্নের ধূসরে মিলিয়ে গেছি। জীবনের বিবর্ণ সময়ের স্রোতে।

সময় অসময়ে জীবন নগর স্টেশন থেমে নেই, দুঃখের স্মৃতিভ্রম সৌজন্য শেষ প্রান্তিকযাত্রী আমি অনাদি কালের সাক্ষী।

কাছাকাছি (গান)

যদি এই পথচলা থেমে যায়
তবে যেনো আমি আছি
তোমারই কাছাকাছি।
অজানা কোন ফুলের
পাপড়ীতে মিশে
তোমারই পাশাপশি।

হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।
আমি তোমার স্পর্শে
তোমার ছাঁয়ায়।
তুমি ডুবে যাও আপরূপ
তোমার কায়ায়।

আনমনে কোন এক বিকেলে
উদ্দেশ্যহীন অভিযান।
তোমার স্পর্শে ভুলে যাবো
সব অভিমান।
হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।

বৃষ্টির শহর (গান)

বৃষ্টি নামুক শহর জুড়ে
বৃষ্টি নামুক তোমায় ছুঁয়ে
বৃষ্টি নামুক অঝর ধারায়
তোমার পায়ে নূপুর হয়ে।

টুপুর টাপুর বৃষ্টি ঝরুক
তোমার শরীর ছুঁয়ে যাক
রেশমী কালো তোমার চুলে
বৃষ্টির জলে ভিজে যাক।

বৃষ্টি ধারায় ভিজিয়ে যাক
নাগরিক কোলাহল
পিচঢালা পথে নেমে আসুক
নিরবতা আর নিস্তব্ধতা।

বৃষ্টি নামুক শহর জুড়ে
বৃষ্টি নামুক তোমায় ছুঁয়ে
শীতল বৃষ্টি জলের ছোঁয়ায়
তোমার দেহ ডুবে থাক।

মনের স্টেশন (গান)

মনের নেই কোন স্টেশন
ছুটে চলে যখন তখন
ফেরারী মন ফেরারী সময়
ধূসর সময়ে হারিয়ে যায়।

নিস্তব্ধ নিরানন্দ নীলাকাশ
কিছু প্রজাপতি উড়ে উড়ে যায়
মুগ্ধতা ছড়িয়ে বাগান বিলাস
মনের নাটাই ঘুড়ি উড়ায়।

মানেনা মন বাধা-ব্যবধান
ছুটে চলে নিরবধি আপন স্টেশন
ফেরারী সময় ফেরারী মন
দূরে বহু দূরে ছেড়ে কোলাহল।

সময়ের যত লেনদেন

মেঘদল জমে থাকা আকাশ
শুভ্র কুয়াশা ভেজা শিশির।
সবুজ ঘাসের এক চিলতে
অভিমানি বুক চাঁদের নিয়ন আলো খোঁজে।

জোনাকীরা ছুটে চলে অজানা
গন্তব্যে রঙ, রঙিনের ঘোর কেটে
উৎসবে ডুবে শহর।
সাইবেরিয়া থেকে আগত
একদল পরিযায়ী উড়ে যায়
মুখোরিত শব্দের উল্লাসে।

সময়ের যত লেনদেন, যত
হিসেব-নিকেশ
দ্রুত বদলে যায় সুর্যাস্তের মতো
অন্ধকারে।

লেনদেন
লেনদেন

তোমাকে দেখার সাধ অপূর্ণ

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ,
আমি তোমাকে দেখেছি সেদিন তোমার উঠানে,
এলো চুলে, তোমার মায়াবী চোখের হরিণি মায়া।
তুমি অবরুদ্ধ, তোমার ছল দৃষ্টিসীমায়,
তোমার বোবা চাহনি!
আমি কত বার তোমাকে ডেকেছি !!

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ,
তুমি বিকেলে সন্ধ্যা তারা ফুলের মতো সুবাসিত আলোড়ন,
তুমি প্রজাপতির ডানার মতো উজ্জ্বল, তুমি রাজসভা।

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ,
তুমি সপ্তরঙা ইঁদ্রধনু অখিল, সপ্তডিঙ্গা,
রূপালী জোছনা, তোমাকে ছুঁয়ে যাই অনন্তের ভাবনায়।

ভালোবেসে দেখো একবার

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
সমুদ্র জলের মতো – তোমাকে
ভালোবাসবো সীমাহীন।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
পাহাড় যেমন আকাশ ছুঁয়ে যায়
তেমন করে বুকে আগলে রাখবো।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
আকাশের মতো বিশলতায় – তোমাকে
ঢেকে দিবো অজস্র কোলাহলে।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
চাদনী রাতের মতো – আলোকিত
করে দিবো তোমাকে।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
রঙিন স্বপ্নের মতো – তোমাকে
সাজাবো আপন নিবাসে।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
প্রাচীরের দেয়ালের মতো – তোমায়
বুকে জড়িয়ে রাখবো অনন্ত আবহে।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
তোমাকে আমার সমস্ত সত্তা দিয়ে দিবো
যেমন সূর্যের মতো দিনের আলো।

আমাকে ভালোবেসে দেখো -একবার
আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে রাখবো হৃদয় কুটিরে।

তোমাকে দেখার সাধ অপূর্ণ

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ,আমি তোমাকে দেখেছি সেদিন তোমার উঠানে, এলো চুলে, তোমার মায়াবী চোখের হরিণি মায়া। তুমি অবরুদ্ধ, তোমার ছল দৃষ্টিসীমায়, তোমার বোবা চাহনি! আমি কত বার তোমাকে ডেকেছি !!

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ, তুমি বিকেলে সন্ধ্যা তারা ফুলের মতো সুবাসিত আলোড়ন, তুমি প্রজাপতির ডানার মতো উজ্জ্বল, তুমি রাজসভা।

যত তোমাকে দেখি তোমাকে দেখার সাধ আমার অপূর্ণ, তুমি সপ্তরঙা ইঁদ্রধনু অখিল, সপ্তডিঙ্গা,
রূপালী জোছনা, তোমাকে ছুঁয়ে যাই অনন্তের ভাবনায়।