‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক মাত্রা

চৈত্রসংক্রান্তি হিন্দুদের ‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে চৈত্র মাসের শেষ দিন এটি উদযাপন করে আসছে ।

বাংলা উইকিপিডিয়াতে প্রদত্ত তথ্য থেকে দেখা যায় হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, এ দিনে স্নান, ব্রত, উপাসনা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম পূণ্য জনক।

এ ছাড়া বাংলা পিডিয়াতে আরো বলা হয়েছে, “চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিব কেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি “চড়ক পূজা” নামে পরিচিত। চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিন এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে।”

“চড়কপূজা উপলক্ষ্যে, আগের দিন চড়ক গাছকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয় যা পূজারীদের কাছে “বুড়োশিব” নামে পরিচিত। পতিত ব্রাক্ষণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হল, কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির উপর লাফানো, শিবের বিয়ে, অগ্নি নৃত্য, চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি। এইসব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের উপর বিশ্বাস। এর অনুষ্ঠানাবলী প্রাচীন কৌম সমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা “চড়ক সংক্রান্তি” বা “চৈত্র সংক্রান্তির মেলা” নামে পরিচিত।”

প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঢাকার রমনা পার্কে ছায়ানট আয়োজিত প্রাদোষিক সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং একে ঘিরে আয়োজিত অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা মানুষকে নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করতে থাকে এবং নাগরিক আবহে সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হয়৤ ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়।[৫] সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীগন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে৤

১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, ঘোড়া, হাতি। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট লেখক, শিল্পীগণ-সহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেয়।

শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।

জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনট্যানজিবল (ইং: Intangible ) সাংস্কৃতিক ঐতিহ‌্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

20 thoughts on “‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক মাত্রা

  1. আপনার পরো লেখাটি কি বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া ?

    1. না। তথ্যসূত্র যোগ করতে ভুলে গেছি। যোগ করে দিব।

      1. # মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশিক স্বীকৃতি
        দৈনিক প্রথম আলো
        ০২ ডিসেম্বর ২০১৬
        #http://www.bbc.com/bengali/news-38157199
        # বাঙ্গালির বৈশাখ সংস্কৃতি
        আবুল কালাম আজাদ
        ১৪/০৪/২০১৬
        দৈনিক সংগ্রাম

  2. অনেক অজানা তথ্য জানা হলো। শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা জানাই।

    1. জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।

      একটি বিতর্ক চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে। আমি মনে করি এখানকার তথ্যগুলি কিছুটা বিতর্কের অবসান ঘটাতে সাহায্য করতে পারে।

  3. জানার কোন শেষ নাই … কিন্তু জানার চেষ্টা থাকা তাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. ধ ন্য বা দ।

      বোধকরি বঙ্গদেশের আশু ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই সত্যজিৎ রায় অনেকদিন আগেই সেলুলয়েডের ভাষায় বলে গেছেন –

      “লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে।
      জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।
      বিদ্যা লাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান!”

      এই দেশ সত্যজিৎ রায়ের কল্পনার ‘হীরক রাজার দেশ’কে ও ছাড়িয়ে গেছে। তাই ভুলে যান চিরচেনা সব নীতিবাক্য, ভাল মন্দের বিচারকলা। উপরের লাইন গুলো বেদবাক্য হিসেবে মেনে চলুন। অন্তত বাংলাদেশে আপনার সাফল্য ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।

    2. সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ উত্তর। আসলেই তাই …
      জানার কোন শেষ নাই … কিন্তু জানার চেষ্টা থাকা চাই। :)

  4. আমাদের দেশে এমন অনেক অনুষ্ঠান আছে যার আদি উতপত্তি আমাদের অনেকেরইhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif জানা নেই।

    1. আপনার বক্তব্য ১০০% সঠিক।

      আপনি পেলেন ১০০ তে ১০০।

  5. তাইলে ত মঙ্গল শোভাযাত্রা ও চৈত্র সংক্রান্তি দেখছি সাম্প্রদায়িক উৎসব।

    1. এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব থেকে এসেছে বটে তবে বাংলাদেশে এর রূপান্তর হয়েছে। এখানে ধর্মনিরপেক্ষ রূপ নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জাতীয় উৎসবে পরিনত হয়েছে।

      1. একটা সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসব কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব তা বুঝিয়ে দিলে ভাল হত। একদিকে বলছেন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসব আবার বলছেন ধর্মনিরপেক্ষ – আমার মোটা মাথায় কিছু ঢুকছে না। একই সাথে সাম্প্রদায়িক আবার নিরপেক্ষ কেমন যেন স্ববিরোধী লাগছে।

      2. হিন্দুদের চৈত্র সংক্রান্তির যে সকল আনুষ্ঠানিকতা আর বাংলাদের পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা এক নয়, এটাতো মানবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রাটিতে কোন ধর্মীয় উপাসনা ইত্যাদি জড়িত নয়। তাই একে আমি ধর্মনিরপেক্ষ বলেছি। ভুল হলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিন আর যদি মনে হয় পোষ্টটি আপত্তিকর তবে বলুন আমি পোষ্টটি মুছে দিব।

        ধন্যবাদ।

      3. আচার অনুষ্ঠানের নানা রূপান্তর ঘটে এটা সত্যি। মঙ্গল শোভা যাত্রার উৎস দেখিয়ে বর্তমান মঙ্গল শোভাযাত্রা যে হিন্দু ধর্মের আচারগুলি পরিহার করে আধুনিক চিত্রকলার সমন্বয় ঘটিয়ে একে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে এই পোষ্টে আমি তা দেখাতে চেয়েছি। আপনি সাম্প্রদায়িকতা খুজে পান এটা আপনার বিষয়, এটা আপনার মান মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

      4. আমার মনে হয় যা আমি চেয়েছি তা আমি পোষ্টে প্রকাশ করতে পেরেছি, তারপরও আপনার আপত্তি থাকলে আপনি জানাতে পারেন।

  6. সব কিছুই ঠিক আছে শুধু একটি কথা মাথার মধ্যে টোকা দিচ্ছে, ”হিন্দুরা বিশ্বাস করে” ”হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের”….
    আমার জানামতে হিন্দু ধর্ম বলতে কোন ধর্ম নাই…….অনেক কিছুই দেখছি অজানা,
    আমার ধারনা কথাটা হওয়া উচিৎ ছিলো “সনাতন ধর্মাবলম্বী” …হয়তো আমিই ভুল ?
    সনাতন ধর্ম এর একটি অংশ হিন্দু ইজম। হিন্দু ধর্ম বিষটি কতটা ঠিক তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
    শুভকামনা থাকলো।

    1. উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়ঃ

      হিন্দুধর্ম (সনাতনধর্ম) ভারতীয় উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক মতবাদ ।[হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম (सनातन धर्म) নামেও অভিহিত করেন। হিন্দুধর্মের সাধারণ “ধরনগুলির” মধ্যে লৌকিক ও বৈদিক হিন্দুধর্ম থেকে বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিবাদী ধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের এক প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়। যোগ, কর্মযোগ ধারণা, ও হিন্দু বিবাহের মতো বিষয়গুলিও হিন্দুধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

      হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের “প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস”বা “প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ”আখ্যা দেওয়া হয়।

      হিন্দুধর্মকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন ধর্মএবং ধর্মাবলম্বীরা একে সনাতন ধর্ম (“চিরন্তন নিয়ম বা চিরন্তন পথ” বলে আখ্যায়িত করে। পশ্চিমা পন্ডিতরা হিন্দুধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবং সংশ্লেষণ হিসেবে গন্য করেন যার মূলে একক কোন ব্যক্তির অবদান নেই এবং এর একাধিক উৎপত্তি উৎস রয়েছে। এটি সনাতনি বা চিরন্তন কর্তব্যের কথা যেমন সততা, অহিংসা, ধৈর্যশীলতা, সমবেদনা ও আত্মনিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি আরো অনেক কথা বলে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।