আজকাল যেখানে-সেখানে শোনা যাইতেছে যে, সংসারে নানাপ্রকার জিনিস-পত্রাদি হইতে “বরকত” উঠিয়া গিয়াছে। কারণ লোকের আর পূর্বের মত ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাস নাই। পূর্বে লোকের ঈমান ছিল, ফলে তাহারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করিত। আর আজকাল মানুষের ঈমান নাই, তাই তাহাদের অভাব ঘোচে না। ঈমান নাই বলিয়াই ক্ষেতে আর সাবেক ফসল জন্মে না, ফলের গাছে ফল ধরে না, পুকুরে-নদীতে মাছ পড়ে না। ঈমান নাই বলিয়াই মানুষের উপর খোদার গজবরূপে কলেরা, বসন্ত, বন্যা-বাদল, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি নানা প্রকার বালা-মুছিবত নাজেল হয়। অথচ মানুষের হুঁশ হয় না। এইরূপ যে নানা প্রকার অভাব-অভিযোগের জন্য ঈমানের অভাবকেই দায়ী করা হয়, তাহা কতটুকু সত্য?
শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেই জানেন আর যাহারা জানেন না তাহারা অনুসন্ধান করিলেই জানিতে পারিবেন যে, আমাদের এই সোনার বাংলার চাষীগণ বিঘা প্রতি বার্ষিক যে পরিমাণ ধান্য জন্মাইতেছে তাহারা প্রায় সাত-আট গুণ পরিমাণ ধান্য জাপানের চাষীরা জন্মাইতেছে। হয়ত অনুসন্ধান করিলে ইহাও জানা যাইতে পারে যে, জাপানের এই চাষীরা অ-মুসলমান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, কাফের, যাহাদের ধর্মে ঈশ্বরের নামগন্ধও নাই। আমাদের মতে উহারা বে ঈমান বা অ-বিশ্বাসী। তবুও উহারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগে পূর্বের চেয়ে বেশী ফসল জন্মাইতেছে। আমাদের মতে উহারা বে-ঈমান হইলেও তাহাদের ক্ষেতের ফসল বাড়িয়াছে বৈ কমে নাই।
কিছুদিন পূর্বে রাশিয়া-প্রত্যাগত বাংলাদেশের জনৈক নামজাদা ডাক্তার সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলিয়াছিলেন যে, পূর্ব বাংলায় প্রতি বৎসর হাজার হাজার লোক কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারীর প্রকোপে প্রাণ হারায় এ কথা সেদেশের ডাক্তারেরা বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলেন না। কারণ তাহারা একথা ভাবিতেও পারিতেছিলেন না যে, বর্তমান যুগেও কোন দেশে কলেরা বা বসন্তে ভুগিয়া অগণিত মানুষ প্রাণ হারায়। তবে কি একমাত্র বাংলার অধিবাসীদেরই ঈমান নাই? আর একমাত্র ইহাদের উপরই কি খোদার গজব বর্ষিত হয়? রাশিয়ানরা অধিকাংশই সাম্যবাদী (Socialist)। তাঁহারা দেব-দেবী বা আল্লা-নবীর ধার ধারে না। তবুও যাবতীয় কাজে তাঁহারা বৈজ্ঞানিক প্রণালী প্রয়োগ করিয়াই সুখে-স্বচ্ছন্দে জীবন-যাপন করিতেছেন।
যাহারা ঈমানের অভাবকে নানাবিধ অভাব-অনটনের জন্য দায়ী করেন, তাঁহারা একটু ভাবিলেই দেখিতে পাইতেন যে, ধনী ও গরীবের আয়-ব্যয়ের ধাপগুলি কোন কালেই এক নহে। গরীব চায় শুধু ভাত ও কাপড়। কিন্তু ধনী চায় তৎসঙ্গে বিলাস-ব্যসন। মানুষ সাধারণত অনুকরণপ্রিয়! তাই ধনীর বিলাসিতা বহুল পরিমাণে ঢুকিয়াছে গরীবের ঘরে। যাহার পিতার সম্পত্তি ছিল পাঁচ ঘিা জমি এবং পরিবারে ছিল তিনজন লোক, তাহার সংসারের নানা প্রকার খরচ নির্বাহ করিয়াও হয়ত কিছু উদ্বৃত্ত থাকিত। আজও সে ঐ জমির আয় দ্বারা তিনজন লোকই প্রতিপালন করে, কিন্তু উদ্বৃত্ত যাহা কিছু থাকিত, তাহা ব্যয় করিতেছে সাবান, সুবাসিত তৈল, সিল্কের চাদর, ছাতা ও জুতায়। বিলাস ব্যসনে যে অতিরিক্ত খরচ সে করিতেছে, তাহার হিসাব রাখে না, ভাবে ‘বরকত’ গেল কোথায়? এ কথা সে ভাবিয়া দেখে না যে, অমিতব্যয়িতা এবং বিলাসিতাই তাহার অভাব-অনটনের কারণ। অযথা ঈমানের অভাবকে কারণ বলিয়া দায়ী করে।
আরজ আলী মাতুব্বরের “সত্যের সন্ধান” বইটি মুক্তচিন্তার জগতে এমনি মৌলিক এবং অনন্য একটি বই। এই পোষ্টে আমি নিজে এক বর্ণও লিখিনি, বইটি হতে কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছি মাত্র। আসুন দ্বিমত থাকলে মন্তব্যের ঘরে শেয়ার করি, একমত হলে নিজে কিছু সংযোজন করি।
একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের অবতারনা করিয়াছেন, হোকনা কেন অন্যের লেখা।
ইমান, বিচার, বিশ্বাস ও বিবেক অনেক কমিয়া গিয়াছে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই তবে ইমানের সহিত কর্মের সমন্বয় রহিয়াছে যাহা ওনেকেই ভুলিয়া গিয়াছেন।
আমার নিজের পর্যবেক্ষনে দেখা যায় ইলিশ মাছের গন্ধ আগের মত নাই, কাঠাল বা অন্যান্য সুগন্ধি ফল বা ফুলের গন্ধ অনেক কমিয়া গিয়াছে।
ঈমানের সাথে কর্মের সমন্বয় ব্যাপারটা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
খুবই সাধারণ কথা বন্ধু!
আমার ঈমান আছে কিন্তু কর্মস্পৃহা নেই, তাহলে আমার জমিতে কী ফলন ভাল হবে?
সত্যিতো ব্যপারটা বেশ সহজ সরল। কিন্তু সহজ সরল বিষয়টি ভুলে অনেকেই অদৃষ্টের দোষ দিয়ে বেড়ায়।
কারন, অদৃষতের দোষ দেয়া খুবই সহজ তাই।
হ্যা এই বাংলা দেশের মানুষ উপভোগ করতে জানে না। উপভোগ করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয় যা আমাদের এই সোনার মানুষদের দিয়ে সম্ভব নয়, আমরা চাই অল্পেই সারা বিশ্ব দখল করতে। বিদেশে এমন অনেক দেখেছি যারা ২/৩টা চাকরি করে, সে মুসলিম দেশে এবং অমুসলিম দেশে সবজায়গায়ই। এবার ভেবে দেখুন। আমাদের মুল কথা হলো ঈমান এবং তার সাথে সঠিক কর্ম পরিকল্পনা এবং কর্ম দক্ষতা।
মুক্তচিন্তার জগতের ভাবনার প্রকাশকে আমি সর্বদা সম্মান করি।
এখানে পাঠক তার নিজস্বতা তুলে ধরেন। মৌলিকের চাইতে বিশ্লেষণ আমার পছন্দ।
আপনি সব সময় ব্লগিং নিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই ব্লগিং মুক্ত চিন্তার এক অনন্য মাধ্যম।
মৌলিকের চাইতে বিশ্লেষণ পছন্দ করেন ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারিনি।
বিষয়টি সিম্পল। মৌলিক লিখা পাঠক পর্যন্ত পৌছুলে লেখকের আর নতুন করে বলার কিছু থাকে না। গুণী মানুষের কথায় আছে … একটি লিখা ততক্ষণ লেখকের নিজস্ব; যতক্ষণ না সেটা পাঠকের হাতে পৌঁছায়।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে দ্বিমত পোষণ করিনি।
মৌলিকের চাইতে বিশ্লেষণ আমার পছন্দ।
কেননা এখানে সু-পাঠকের সুচিন্তিত বিষয়টি থাকে।
আপনি সু শেয়ার করেছেন। কিন্তু নিজস্ব মন্তব্য-বর্ণ লিখেন নাই।
এখানে উত্তর হচ্ছে তর্ক না টেনে বরং সতর্কতায় সহমত জানিয়েছেন।
আপনি চমৎকার বলেছেন তর্ক না টেনে সতর্কতায় সহমত। সত্যি আপনারা ভাষায় পন্ডিত বটে।
জীবনদর্শন, জীবনবোধ, মনুষ্যত্ব, মানবমনের বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এসবের কোন আলোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। যতটুকু আছে তা কেবল বিভিন্ন মতাদর্শের উদ্ধৃতিনির্ভর এবং ধর্মীয় মোড়কে, গতানুগতিক। সেই ক্ষেত্রে আরজ আলী মাতুব্বরের লেখাগুলি তার একান্ত নিজের, একেবারে মৌলিক।
হয়ত আরজ আলীর ভাবনার সাথে অনেকেই একমত নন, তবু এ একান্ত তার নিজের ভাবনা, অন্যের কাছ থেকে ধার করা নয়।
ধন্যবাদ আপনাকে আলোচনায় অংশগ্রহন করার জন্য এবং চমৎকার ভাষায় সুন্দর মন্তব্য দেয়ার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টে দুটো কথা শেয়ারের সুযোগ দেয়ার জন্য।
চমৎকার বিষয় নিয়ে পোষ্টটি হৃদয়গ্রাহি।
বিলাস ব্যসনে যে অতিরিক্ত খরচ সে করিতেছে, তাহার হিসাব রাখে না, ভাবে ‘বরকত’ গেল কোথায়? এ কথা সে ভাবিয়া দেখে না যে, অমিতব্যয়িতা এবং বিলাসিতাই তাহার অভাব-অনটনের কারণ। অযথা ঈমানের অভাবকে কারণ বলিয়া দায়ী করে।
আপনি যে বিষয়ের অবতারনা করেছেন তা নিয়ে তর্ক করা হাস্যকর। এমনকি এইসব বিষয় বাংলাদেশে এখন কোথাও শোনা যায় বলে আমার মনে হয় না। বলা যায় আপনি বর্ষাকালের গীত শীতকালে গাইতেছেন। সুতরাং মুক্তচিন্তা হোক আর বন্ধ চিন্তা হোক এইসব পুরনো, তর্কও তাই বাসি।
তবু বিষয়টা যেহেতু নিয়ে এসেছেন, আমি যেহেতু পোস্টে ঢুকে পড়েছি, তাই দুকথা বলেই যাই। প্রথমত এই ধরনের কথা ধর্মশাস্ত্রের সাথে ঠিক সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ঈমান গ্রহন করলে দৌলতে-জৌলুসে জীবন ভরে যাবে এই ধরনের কথা কোন শাস্ত্রেই বলা নাই। বিশ্বাসে ও সৎকর্মে জীবন যাপন করলে তার পুরষ্কার পরকালে পাওয়া যাবে, শাস্ত্রের কথা এরকম। তাই বলে দুনিয়াতে কিছুই পাওয়া যাবে না? শাস্ত্রে যা বলা আছে তা হল, শান্তি পাওয়া যাবে। আমরা সবাই জানি শান্তির সাথে শূন্য, ক্ষেত্র বিশেষে ঋণাত্মক হতেও দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত, এই ধরনের কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। মানুষের মুখে মুখে এরকম কত কথায় ত প্রচলিত।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে সর্বাধিক অপন্যবহৃত শব্দ হলো মুক্তচিন্তা, সেইভাবে সর্বাধিক অপব্যবহৃত কন্সেপ্টও হল মুক্তি চিন্তা।
শুভেচ্ছা রইল মশায়।
আপনি বলছেন এ বিষয়ে তর্ক করা হাস্যকর। আমি কোন তর্ক করার বিষয় উপস্থসাপনও করিনি। আপনি বলেছেন দিন পাল্টেছে, আর আর ভুল সময়ে ভুল বিষয় বলে যাচ্ছি। আমি বলছি আপনার ধারনা ভুল, আমাদের সমাজে আজও এখানে উল্লেখিত ভাবনাগুলি উপস্থিত।
আপনি কাকে সমালোচনা করবেন? কেউ তো সমালোচনা গ্রহণে প্রস্তুত নয়। আর সমালোচনা করার পূর্বে সমালোচনা গ্রহণের জ্ঞান ও সচেতনতা সরবরাহ করবে কে? যে জ্ঞান ও সচেতনতার মাধ্যমে সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা তৈরি হয়? এটা তো আর আকাশ থেকে পড়বে না। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও সমাজে এ জ্ঞানের ন্যূনতম চর্চা নেই।
একজন ইমামের বয়ান শুনেনঃ-
জেলা শহরের আমার নিজ গ্রামে নিজ হাতে করা মসজিদের আমি ছিলাম ইমাম ও খতীব। বেতন নিতাম না। চলনে-বলনে স্বাধীনতা ভোগ করতাম। সেখানেও শুক্রবারের আলোচনায় সৃষ্টিদর্শন, মানবমন ও জীবনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে যখন দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতাম, মুসল্লিরা বলত হুজুর, এসব আমরা বুঝি না। আমাদেরকে কোরআন-হাদীস থেকে কিছু ঘটনা ও উদ্ধৃতি শুনান, যা শুনে আমরা অভ্যস্ত।
বিশ্বাস করুন আমি নিজে অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা ধর্মকে ওশিলা মনে করে অর্থ সম্পদপ্রাপ্তীর। ঐ যে আপনি বলেছেন,
ঈমান গ্রহন করলে দৌলতে-জৌলুসে জীবন ভরে যাবে এই ধরনের কথা কোন শাস্ত্রেই বলা নাই। বিশ্বাসে ও সৎকর্মে জীবন যাপন করলে তার পুরষ্কার পরকালে পাওয়া যাবে, শাস্ত্রের কথা এরকম।
এটা বুঝাতেই পারি না।
তছাড়া যখন কোন কথা হাদীছ কুরআন থেকে সহীহ সনদে উল্লেখ করা হয় তখনও লোকেরা ভুল বিশ্বাস বা আমল পরিত্যাগ করে না।
তর্কের অবতারনা করেননি এইটা ঠিক।
তবে আরজ আলীর প্রচারণায় নেমেছেন মনে হচ্ছে।
আপনার পোস্টের মত আপনার মন্তব্যও সেকেলে।
আপনি একেলে থাকু ন আমি সেকেলেই না হই, আপনি এ পোষ্টে মন্তব্য না করলেই পারেন।
“মানুষ সাধারণত অনুকরণপ্রিয়! তাই ধনীর বিলাসিতা বহুল পরিমাণে ঢুকিয়াছে গরীবের ঘরে।”
আমার মনে হয় লেখাটি বর্তমানে বাসি খাবার গরম করার মতো; মানুষের ধারণা অনেক পাল্টেছে। প্রতিটি সভ্য সচেতন মানুষই চায় জীবন যাত্রার মান উন্নত হোক— আর অভাব তো সীমাহীন… যদিও বাঙালী মোরা অলস জাতি এবং অদৃষ্টের দোহাই দিতে ভালবাসি!
খুব খুশি হতাম আপনারা যা বলছেন যে ধারনা পাল্টেছে। আপনি নিজেই বলছেন,
দিও বাঙালী মোরা অলস জাতি এবং অদৃষ্টের দোহাই দিতে ভালবাসি!
তাহলে পাল্টালো কোথায়। হ্যা আপনি আমি হয়ত কিছুটা পাল্টেছি।
ধন্যবাদ এই বাসি মার্কা।পোষ্টে মন্তব্য করার জন্য।
যতদূর জানি “সত্যের সন্ধান” বইটি প্রকাশ হয়েছিল আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে। বর্তমানে বাংলায় কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারীর প্রকোপ আগের মতো আর নেই বললেই চলে। এটি একটি পুরনো বিষয়।
মানুষের ধ্যান-ধারণা এবং জীবন যাপন এখন অনেক পাল্টে গেছে।
পাল্টে গিয়ে থাকলে অনেক ভাল। কিন্তু আমার একটা পর্যবেক্ষন বলি, গত বছর ২০১৬ এ ইরির ফলন হয়েছিল বেশ ভাল, ধান যখন একেবারে পেকে যাবে এমন সময় আমাাদের এলকায় হঠাৎ একদিন শিলাবৃষ্টি এলো, ফসলমাত্র১৫ মিনিটে অর্ধেক হয়ে গেল। ঈমাম সাহেব খুৎবায় বয়ান করলেন আমাদের পাপে আমাদের উপর গজব নেমে এসেছে।
আরজ আলী এ।বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মানুষের ধ্যান ধারনা বদলে গিয়ে থাকলে তো ভাল অবশ্যই। কিন্তু ৫০ বছর আগে যে প্রশ্ন তুলা হয়েছিল তা এখনও রয়ে গেছে।
ধন্যবাদ।
এছাড়া আপনি যে পয়েন্টটি উল্লেখ করেছেন তা ৫০ বছর আগে লেখা হলেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে কলেরা ইত্যাদি প্রায় নেই, এতেই তো আরও যথার্থভাবে প্রমান করে যে গজবের কারণে প্রাণহানি ঘটে নি।
তবে কি একমাত্র বাংলার অধিবাসীদেরই ঈমান নাই? আর একমাত্র ইহাদের উপরই কি খোদার গজব বর্ষিত হয়? এই প্রশ্নটি বর্তমান সময়ে আরো ব্যপকতা পেয়েছে।
আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি
বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়ঃ
আরজ আলী মাতুব্বর (১৭ ডিসেম্বর, ১৯০০ – ১৫ মার্চ ১৯৮৫), একজন বাংলাদেশী দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং লেখক ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন। গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেয়া হত। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন।[১] ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। তিনি বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্যপদ (১৯৮৫), বাংলাদেশ লেখক শিবিরের ‘হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭৮) ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (বরিশাল শাখা) সম্মাননা (১৯৮২) লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আরজ আলী মূলত বস্ত্তবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি অনেক অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন।[১] আরজ আলীর রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন। মাতুব্বর বরিশালের অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামসুল হক সহ অন্য অনেক সংখ্যক সাম্যবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিলো। তাঁর বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার কথা তিনি একাধিক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দী’ অন্যতম। আরজ আলীর রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল ৪টি। এই বইগুলো হলো- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩), ‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭), ‘অনুমান’ (১৯৮৩), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮)। [৪] আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকেন। বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে। বইটি তাঁকে এলাকায় ‘শিক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে সুনাম এনে দিয়েছিল। মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেনঃ “আমি অনেক কিছুই ভাবছি, আমার মন প্রশ্নে ভরপুর কিন্তু এলোমেলোভাবে। আমি তখন প্রশ্নের সংক্ষেপণ লিখতে থাকি, বই লেখার জন্য নয় শুধুমাত্র পরবর্তীকালে মনে করার জন্য। অসীম সমুদ্রের মতন সেই প্রশ্নগুলো আমার মনে গেঁথে আছে এবং আমি ধীরে ধীরে ধর্মীয় গণ্ডি হতে বের হতে থাকি।”