কয়েকমাস আগের কথা। ইরার সঙ্গে তখনো জয়ের বিয়ে হয়নি। ইরা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই কোনো না কোনো কাজের অজুহাতে জয়পুরহাট আসতো। দু’জনে সারাদিন ঘুরে বেড়াতো, সাথী নার্সারি, উর্বী নার্সারী, শিশু উদ্যান, বারো শিবালয় মন্দির, ছোট যমুনার পাড়। কেনাকাটা করতো নিউ মার্কেট, মৌসুমী মার্কেট, মাড়োয়ারী পট্টি, ক্যাটস পো। ক্যাটস পোতে ইরা জয়ের জন্য শার্ট পছন্দ করে তার গায়ে এলিয়ে দিয়ে জয়কে আয়নার কাছে নিয়ে যেতো, তার পাশে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলতো, তোমাকে সুন্দর মানিয়েছে না?
জয় বলতো, শার্টটা সুন্দর মানিয়েছে, তবে তারচেয়ে সুন্দর সুন্দর মানিয়েছে আমাদের দু’জনকে।
ইরা লজ্জায় সংকুচিত হতো।
জয় বলতো যেমন ঝলমলে শার্ট তেমনি রাঙ্গা তরুণী।
ইরা মুখ বিকৃত করে বলতো, তরুণী? ছত্রিশ বছর বয়সেও তরুণী, তাহলে বুড়ি হবো কবে?
যারা প্রেম করে তারা নব্বই বছর বয়সেও তরুণী।
জয় কয়েকমিনিট আগেই গণ্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি মুছলো। আবার তাদের আনন্দময় স্মৃতির কথা মনে করে হাসছে তাকে কেউ পাগল বলছে না তো? ডানে-বাঁয়ে একবার তাকালো, না কেউ তার দিকে তাকায়নি। পৃথিবীতে কারো দিকে তাকানোর মতো সময় কারো নেই। যে যার সে তার।
সেদিন জয় দিনাজপুর যাবে এদিকে ট্রেনের সময়ও হয়ে গেছে আবার ইরাকেও বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেয়ার সময় হয়েছে। ইরা জয়কে বললো, প্রতিদিন তো তুমি আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসো আজ আমি তোমাকে ট্রেনে তুলে দিবো।
তোমার দেরি হয়ে যাবে যে।
হোক, প্রতিদিন তুমি আমাকে হ্যাজবেন্ডের কাছে যাবার জন্য তুলে দিয়ে আসো হাসিমুখে। আমি বুঝতে পারি কষ্টে তোমার বুক ফেটে যায় কিন’ হাসিটা মুখে লেগেই থাকে। তুমি আমার জন্য খুব চিন্তা করে করে এমন সিচুয়েশন তৈরি করো যেনো আমি কোনোভাবে কষ্ট না পাই। আজ আমি তোমাকে ট্রেনে তুলে দিবো। দেখি তোমাকে তোমার বউয়ের কাছে পাঠাতে আমার কষ্ট লাগে কী না।
ইরার কথাটা যেনো জয়ের বুকে একটা ধাক্কা দিলো, ইরা তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিবে? অনেক কষ্ট পাবে ইরা। ওর বুক ফেটে যাবে। জয় নিজেকে সংবরণ করে নিয়ে বললো, না ইরা, ট্রেনের এখনো দেরি আছে, চলো তোমাকে আমি রেখে আসি।
না। ট্রেন যত দেরিই হোক আজ আমি তোমাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে তারপর যাবো।
জয়ের দু’চোখ পানিতে ছলছল করে উঠলো। কারণ ইরা সত্যি বলেছে ওকে ওর স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য যখন সে বাসে তুলে দিতে যায় তখন তার বুকটা ফেটে যায়। তার সবসময় মনে হয় ইরা আমার, শুধুই আমার। আমার ইরা কেনো আরেকজনের কাছে যাবে। ইরা এই কষ্ট সইতে পারবে না বলে জয় আবার ইরাকে বললো, না তোমাকে দেরি করতে হবে না। আমি তোমাকে রিক্সায় তুলে দিই, তুমি যাও।
জয়ের চোখে পানি দেখে ইরার দু’চোখ ছলছল করে উঠলো, তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো? আমি কষ্ট পাবো বলে তুমি… বলতে বলতে ইরার কণ্ঠস্বর বুজে এলো।
জয় ইরাকে একটা রিক্সায় তুলে দিলো। ইরা চলে গেলো।
চলবে…
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল।
(বন্ধুগণ, জয়-ইরার জীবনের আনন্দ-বেদনা নিয়ে ৫৩ টি ছোটগল্প নিয়ে লেখা আমার একটি বই প্রকাশিত হবে আমার ৫৩ বছর বয়সে অর্থাৎ অমর একুশে বইমেলা-২০২১/২০২২ এ। সেই ৫৩ টি ছোটগল্পের মধ্যে এটি ৩য়, অর্থাৎ ০৩/৫৩। আশা করি সঙ্গে থাকবেন)
আমার সব লেখা এক সাথে পড়তে ভিজিট করুন: www.writerzillur.com
ফেসবুকে আমার সাথে সার্বক্ষণিক থাকতে আমাকে এ্যাড করুন: https://www.facebook.com/profile.php?id=100000449437795
যাত্রার একঘেঁয়েমি কাটাতে আমার বই পড়ুন: https://sheiboi.com/Pages/BookDetails.html?/Dag/285
জয়-ইরার জীবনের আনন্দ-বেদনার বিদায় বেলা শিরোনামে ২য় পর্ব পড়লাম।
ধন্যবাদ প্রিয় জিল্লুর রহমান ভাই। প্রতিদিনই দেখা হোক।
ধন্যবাদ মুরুব্বী আশা করি সঙ্গে থাকবেন।
পড়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ নিয়মিতভাবে পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন বলে পড়তে পারছি আপনার লেখা।
ধন্যবাদ। নিয়মিত পোস্ট দেয়া আমার জন্য খুব কঠিন। তবু চেষ্টা করবো ভাই। দোয়া করবেন।
দারুন লেখা






আপনার লেখার একজন ভক্ত আমি..
সব সময় শব্দনীড় এ আপনাকে ও আপনার লেখা পেতে চাই
ভালো কথা ..আমার মেয়ের নামও ইরা
আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। উপরে লিঙ্ক দিলাম আশা করি আমার সব লেখা পড়বেন। জয়-ইরার আনন্দ বেদনা কাহিনী লিখতে গিয়ে যদি কখনো আপনার খারাপ লাগে তবে জানাবেন।