একটা সময় ছিলো, যখন একদময়ই সময় পেতাম না
তখন ইচ্ছেমত ঘুরতাম, ফিরতাম, খেলতাম, বেড়াতাম
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে এক টেবিলে খেতাম
হাসি গল্পে সবাই মিলে বাসায় একসাথে আড্ডা জমাতাম
বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলায় বা আড্ডায় মেতে উঠতাম
কখনো মন খারাপে একাকী আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম;
তারপর একটা সময় মোবাইল নামক এক যন্ত্রদানব এলো
তারও পরে ভার্চুয়াল নামে এক নতুন জগত তৈরি হলো
ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের বদল শুরু হলো
ধীরে ধীরে জীবনে সময়ের সংকোচন শুরু হলো
বাস্তব সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে মোবাইলে বন্দী হতে লাগলো
তারপর একসময় জীবনটাই আমাদের ভার্চুয়ালময় হলো;
এখন প্রচুর অবসর, তবুও সময়ের বড্ড অভাব
আজকাল প্রকৃতির মাঝে ঘোরাফেরা হয় না বললেই চলে
– কিন্তু প্রচুর ঘুরি, ভার্চুয়ালে;
আজকাল ঘাম ঝরিয়ে খেলাধুলা প্রায় বন্ধ হয়েই গিয়েছে
– তবুও প্রচুর খেলি, মোবাইলে;
আজকাল সপ্তাহান্তে পরিবারের সাথে এক টেবিলে বসা হয়
– চুপচাপ খাবার টেবিলে, যে যার মোবাইলে;
ইদানীং বন্ধুদের সাথে আগের থেকেও আড্ডা অনেক বেড়ে গেছে
– তবে সামনাসামনি নয়, ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে;
আজকাল মন খারাপের বিশাল আকাশটা সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে ঠেকেছে
– মোবাইল স্ক্রিনে, ভার্চুয়াল জগতের সীমাবদ্ধতায়;
আজকাল যখন খাবার টেবিলে সন্তানদের ডেকে পাই না!
কিংবা তাদের ডেকে নিয়ে আসলেও ওদের চোখ থাকে মোবাইলে!
আজকাল যখন নির্ভেজাল আড্ডা মারার জন্য বন্ধুদের খুঁজে পাই না
কিংবা কখনো দাওয়াত করে নিয়ে এলেও আড্ডার বদলে ব্যস্ততা সেলফিতে!
আজকাল ভাই-বোনদের সময়ের অভাব ভার্চুয়াল মিটিং এর ব্যস্ততায়
তখন, ঠিক তখনই পুরনো দিনের কথাগুলো বড্ড বেশি মনে পড়ে যায়;
মোবাইল সভ্যতা আমাদের কি দিয়েছে?
কি দিয়েছে আমাদের ভার্চুয়াল?
কিছু ভাঙন, একরাশ একাকীত্ব
আর কিছু নষ্ট সম্পর্কের আড়াল?
উন্নতির শিখরে উঠতে গিয়ে আমরা অবনতির চরমে নেমে যাই নি তো?
এক একবার ভাবি, পুরনো সম্পর্কগুলো ফিরে পেলে কি ভালোই না হতো!
২৬ মার্চ, ২০২২
#কবিতা
মোবাইলদানব
– যাযাবর জীবন
আমাদের জীবন বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতারই ছায়াচিত্র তৈরী হয়েছে লিখাটিতে। আমি আমার ব্যক্তিজীবনেও এই লিখাটির প্রতিটি শব্দানুভূতির সাথে বলতে দ্বিধা নেই যে, সম্পূর্ণ একমত।
উন্নতির শিখরে উঠতে গিয়ে আমরা অবনতির চরমে নেমে যাই নি তো?