যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

মোবাইলদানব

একটা সময় ছিলো, যখন একদময়ই সময় পেতাম না
তখন ইচ্ছেমত ঘুরতাম, ফিরতাম, খেলতাম, বেড়াতাম
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে এক টেবিলে খেতাম
হাসি গল্পে সবাই মিলে বাসায় একসাথে আড্ডা জমাতাম
বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলায় বা আড্ডায় মেতে উঠতাম
কখনো মন খারাপে একাকী আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম;

তারপর একটা সময় মোবাইল নামক এক যন্ত্রদানব এলো
তারও পরে ভার্চুয়াল নামে এক নতুন জগত তৈরি হলো
ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের বদল শুরু হলো
ধীরে ধীরে জীবনে সময়ের সংকোচন শুরু হলো
বাস্তব সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে মোবাইলে বন্দী হতে লাগলো
তারপর একসময় জীবনটাই আমাদের ভার্চুয়ালময় হলো;

এখন প্রচুর অবসর, তবুও সময়ের বড্ড অভাব
আজকাল প্রকৃতির মাঝে ঘোরাফেরা হয় না বললেই চলে
– কিন্তু প্রচুর ঘুরি, ভার্চুয়ালে;
আজকাল ঘাম ঝরিয়ে খেলাধুলা প্রায় বন্ধ হয়েই গিয়েছে
– তবুও প্রচুর খেলি, মোবাইলে;
আজকাল সপ্তাহান্তে পরিবারের সাথে এক টেবিলে বসা হয়
– চুপচাপ খাবার টেবিলে, যে যার মোবাইলে;
ইদানীং বন্ধুদের সাথে আগের থেকেও আড্ডা অনেক বেড়ে গেছে
– তবে সামনাসামনি নয়, ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে;
আজকাল মন খারাপের বিশাল আকাশটা সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে ঠেকেছে
– মোবাইল স্ক্রিনে, ভার্চুয়াল জগতের সীমাবদ্ধতায়;

আজকাল যখন খাবার টেবিলে সন্তানদের ডেকে পাই না!
কিংবা তাদের ডেকে নিয়ে আসলেও ওদের চোখ থাকে মোবাইলে!
আজকাল যখন নির্ভেজাল আড্ডা মারার জন্য বন্ধুদের খুঁজে পাই না
কিংবা কখনো দাওয়াত করে নিয়ে এলেও আড্ডার বদলে ব্যস্ততা সেলফিতে!
আজকাল ভাই-বোনদের সময়ের অভাব ভার্চুয়াল মিটিং এর ব্যস্ততায়
তখন, ঠিক তখনই পুরনো দিনের কথাগুলো বড্ড বেশি মনে পড়ে যায়;

মোবাইল সভ্যতা আমাদের কি দিয়েছে?
কি দিয়েছে আমাদের ভার্চুয়াল?

কিছু ভাঙন, একরাশ একাকীত্ব
আর কিছু নষ্ট সম্পর্কের আড়াল?

উন্নতির শিখরে উঠতে গিয়ে আমরা অবনতির চরমে নেমে যাই নি তো?
এক একবার ভাবি, পুরনো সম্পর্কগুলো ফিরে পেলে কি ভালোই না হতো!

২৬ মার্চ, ২০২২

#কবিতা

মোবাইলদানব
যাযাবর জীবন

জল ধোয়া জল

জল ধোয়া জল

যতবার উড়াল ডানা
ততবার মন অজানা
আকাশে সাদাকালো মেঘ
তুই কোথায়?

যতবার ভেসেছি জলে
ততবার ভিজেছি তোতে
জল ধুয়ে নেয় ভেজা চোখ
তুই কোথায়?

যতবার ভালোবাসা মন
ততবার রাতজাগা শিহরণ
চোখ জড়িয়েছে নির্ঘুম রাত
তুই কোথায়?

যতবার ভেবেছি তোকে
হারিয়েছি নিজেতে নিজে
কোথায় রে তুই? তুই কোথায়?
একবার তো আয়! ভালোবাসায়।

থাকুক না কিছু কথা অজানা

সেইসব পুরনো স্মৃতি
সেইসব পুরনো দিনের গল্প
আমাদের মাঝে ভালোবাসা ছিলো তো শতভাগ;
প্রেম ছিল কি?
অল্প!

আজো যখনই তোর বাড়ির সামনে দিয়ে যাই
মনের অজান্তেই হাত চলে যায় মুঠোফোনে
সেই পুরনো নাম্বারটা টিপে যাই,
বেশির ভাগ সময় তোর মোবাইলটা বাজতে বাজতে দম ফুরিয়ে থেমে যায়
আমি বুঝে যাই খুব ঝামেলায় আছিস তুই,
কখনো সখনো তোর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে মুঠোফোনের ওপাশ থেকে,
সব ভুলে আমরা আবার পুরনো দিনে ফিরে যাই
সেই পুরনোর সাথে নতুন কিছু গল্প,
প্রেম ছিলো কি আমাদের?
অল্প!

জানিস!
আজকাল প্রেম ভালোবাসা নিয়ে মাথা ঘামাই না,
কি হবে আর ভালোবাসাবাসি ভেবে?
গোপন অনুভূতিগুলো থাকুক না কিছু মনে;
যখন ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি হবে
যখন কাঠফাটা রোদ উঠবে
যখন উথালপাথাল জ্যোৎস্না হবে
কিংবা যখন খুব কষ্টে তোর কান্না পাবে
মুঠোফোনে পুরনো নাম্বারটায় ডায়াল করিস,
কিছুক্ষণ না হয় হারিয়ে যাব আমরা নতুনের সাথে পুরনো দিনের গল্পে
দেখিস, কষ্টগুলো ঠিক উড়ে যাবে পুরনো অনুভবে অল্পে;

তোর কথা মনে হলেই
আজো মনে পড়ে যায় পুরনো দিনের গল্প,
আমাদের মাঝে ভালোবাসা এখনো তো শতভাগ;
প্রেম আছে কি?
অল্প!

থাকুক না কিছু কথা অজানা।

সম্পর্কের বৈপরীত্য

gyuio

চরিত্রের বৈপরীত্য দেখেছ?
ব্যবহারের?
সম্পর্কের?
সংসারের?
মানুষের?

বৈপরীত্যগুলো খুব প্রকট
বিশেষ করে একান্নবর্তী পরিবারে
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে
কার কার চরিত্রের বৈপরীত্যের কথা বলব?

চরিত্রের বৈপরীত্য কখন থেকে শুরু হয় জানো?
যখন স্বার্থ নখদন্ত বিকশিত করে ফেলে
যখন সম্পত্তির ভাগাভাগি সম্পর্ক ভাগ করে
যখন বাবা-মায়ের ভাগাভাগি সন্তানদের মাঝে;

শাশুড়ি বৌ এর কীর্তন শুনেছ!
সে তো ঘরে ঘরে,
আমি সর্বংসহা শাশুড়ি দেখেছি এক ঘরে
সর্বংসহা বৌ দেখেছি ঠিক পাশের ঘরে,
আমি অত্যাচারী ভাবী দেখেছি এই ঘরে
ননদদের অত্যাচার দেখেছি ঐ ঘরে,
শাশুড়ি-বৌ আর ননদ-ভাবীর রামায়ণ ঘরে ঘরে
রামায়ণই মহাভারত হয়ে যায় দেবর ভাসুর যোগ হলে
ওরা তো যার যার সংসারে নীরব হয়েই রয়!
ভাইটা নরম হয়েছে তো ভাই বৌ এর সাথে যত ঘেউ ঘেউ কয়,
বৈপরীত্য সম্পর্কে সম্পর্কে
বৈপরীত্য একান্নবর্তী পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে;

বাবা-স্বামী আর ছেলেরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দর্শক মাত্র
অথবা বার্গারের অসহায় চীজ
কিংবা স্যান্ডউইচ এর মেয়নিজ,
বাবা! উনিও তো ছিলেন একসময় স্বামী!
শাশুড়ি বৌ এর কীর্তন! মনে মনে হেসে বলেন খুব ভালো জানি
কীর্তন শুরু হলেই জায়নামাজ বিছিয়ে রয়
আর নয় তো কোথাও থেকে ঘুরে আসে যতক্ষণ ঝড় বয়
জানে থেমে যাবে যথা সময়,
স্বামী! ও তো মা বোনের কাছে স্ত্রৈণ খেতাব পাওয়া প্রাণী
বৌ এর কাছে? মা বোনই তো তোমার সব, খুব জানি!
ছেলে সন্তানগুলো! কুরুক্ষেত্র দেখতে দেখতে অভ্যস্ত
আর নয়তো চরম হতাশাগ্রস্ত হতে হতে নেশাগ্রস্ত,
মেয়েগুলোই মায়ের পক্ষ নেয়
খুব বেশি কুলোতে পারে না দাদী ফুপুদের তোড়ে
তবু প্রায়শই ওদের সাথে গলা চড়া করে চেঁচায় সমস্বরে,
বৈপরীত্য সম্পর্কে সম্পর্কে
বৈপরীত্য একান্নবর্তী পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে।

.
২০ এপ্রিল, ২০২১

নৈঃশব্দ্যতায় শব্দের হাহাকার

ttyyuu

আজকাল রাতগুলো বড্ড সুনসান, একদম নিশ্চুপ
দূর থেকেও ভেসে আসে না পিচঢালা রাস্তায় কোন ট্রাকের টায়ার ঘষার শব্দ
অনেক অনেকক্ষণ পরে পরে একটা দুটো সাইরেনের শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা চিঁড়ে দিচ্ছে
এম্বুলেন্স এর সাইরেন
আর নয়তো আজকাল ঢাকার রাস্তাগুলো প্রায় মৃত;

আমরা একটা খারাপ সময়ের মাঝে যাচ্ছি
একটা খুব খারাপ সময় পাড়ি দিচ্ছি
করোনা নামক এক ভয়াবহ মহামারী আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে আমাদের
পৌঁছে গেছে প্রতিটা ঘরের দরজায়
ঢুকে পড়ছে প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরে
আমরা নিজেদের গুটিয়ে ফেলেছি
আমরা নিজেদের লুকিয়ে ফেলেছি নিজেদের কাছ থেকে
নিজেদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী থেকে
এমন কি নিজ ঘরে নিজ সন্তানদের কাছ থেকেও
ওদের বাঁচাতেই নিজের থেকে আলাদা করে দিয়েছি ওদের’কে
হ্যাঁ!
আমি নিজেই বাঁচতে পারি নি করোনার ভয়াল থাবা থেকে
আজ একঘরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি বাকি সবার মঙ্গলের জন্য;

জানো! আজকাল খুব একাকী লাগে
অন্যরকম একাকী এক জীবন
আগে তাও আশেপাশের শব্দ শোনা যেত
কেউ তো আছে চারিপাশে, অন্তত মনে হতো
ইদানীং ঘরে ঘরে মহামারীর ছোবল, ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত
তাই লক-ডাউনে বাধ্য ঘর-বন্দী জীবন, মন ভারাক্রান্ত;

রাতগুলো জেগে উঠলেই জেগে উঠে নিস্তব্ধতা
রাতের প্রহরের সাথে সাথে কানে তালা লাগানো নৈঃশব্দ্যতা এক ভয়াবহ রূপ নেয়
একটু শব্দের জন্য কান কতটা ব্যাকুল হতে পারে তা তোমরা বুঝবে না
ঐ তোমরা যারা নৈঃশব্দ্যতার চিৎকার শোনো নি,
তারপর অসীম নৈঃশব্দ্যতা ভেঙে অনেক দূর থেকে কোন এক অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বেজে ওঠে
কানের নিস্তব্ধতা ভাঙে;

সাথে সাথেই ডুবে যাই মনের অস্থিরতায়,
আহা! আবার কার জানি লাইফ সাপোর্টের দরকার হয়ে পড়েছে!
কে জানি অক্সিজেনের অভাবে হাঁসফাঁস করছে
আই সি ইউ’র বেড খালি পাবে তো!
ভাবতে ভাবতে আরও একটি দুটি অ্যাম্বুলেন্সের প্যাঁ পোঁ সারারাত ধরে
আজ ক’জন চলে গেলো না ফেরার দেশে?

এমনই কোন এক নিস্তব্ধ রাতে একটা এম্বুলেন্স এসে থামবে আমার বাড়ির সামনে
কানে তালা লাগানো প্যাঁ পোঁ শব্দে
ঘোলা হয়ে আসা প্রায় অবচেতন একজোড়া চোখ প্রিয়জনদের দৌড়াদৌড়ি দেখবে
এম্বুলেন্স ছুটে চলবে হসপিটাল থেকে হসপিটালে কোন এক আই সি ইউ বেড এর সন্ধানে,
সে রাতে কোন হসপিটালে কোন আই সি ইউ বেড ফাঁকা থাকবে তো!
নাকি ভোরের সূর্যের সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্সটা আবার আমার বাসাতেই ফিরে আসবে?
সাদা চাদরে মোড়া একটা ঠাণ্ডা শরীর নিয়ে।

.
১৮ মার্চ, ২০২১

গীবত

মাংস তো প্রতিনিয়তই খাচ্ছ,
নরমাংস খেয়েছ কি?
ভাই এর মাংস খেয়েছে?
আপন ভাই এর মাংস!

খেতে কেমন?
মিষ্টি মিষ্টি! টক টক! নাকি লবণ লবণ!
কি কি মশলা মিশিয়ে খেয়েছ?
টমেটো সস নাকি বার-বি-কিউ সস?
ঝাল ঝাল করে রান্না করা? নাকি পানসে?
লবণ বেশী দিয়ে ফেলো নি তো!
কিংবা চিনি?
আচ্ছা ওটা খেতে কি গরুর মাংসের মত?
নাকি হরিণের
নাকি সেই সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখির মত
খেলে বল হয়? শক্তি পাও?
ওটা খেতে নিশ্চয়ই অন্যরকম, একদম নেশা নেশা
না হলে কেন প্রায় প্রতিদিনই খাও
জান না প্রতিদিন মাংস খাওয়া ঠিক না!
তাও আবার নরমাংস!
শুধু নরমাংস নয়, আপন ভাই এর মাংস;

শুধু তোমাকেই বলছি না!
আমি নিজেও খেয়ে ফেলি মাঝে মাঝে
বেশিরভাগ সময় ভুল করে আর কখনো কখনো তোমাদের পাল্লায় পরে
কখনো খেয়ে থাকি তোমাদের হোটেল থেকে রান্না করা মাংস
কখনো সখনো বা তোমাদেরই দাওয়াত দিয়ে বসি, নিজেই রান্না করে;

গীবত! ওটা তো ভাইয়ের মাংস খাওয়াই
তাই না?
আমরা অহরহ খাচ্ছি
জেনে কিংবা না জেনে
বুঝে কিংবা না বুঝে
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়
প্রতিদিনই খাচ্ছি, হয় তোমার রান্না করা কিংবা আমার
গীবত থেকে সংযত হতে পেরেছি কে কবে?

এই যে শুধুশুধুই মানুষের পেছনে সমালোচনা!
মানুষের পেছনে কথা বলা!
তাতে কি মেলে?

আরেহ্! ও তোমরা বুঝবে না!
আত্মতৃপ্তি, আত্মতুষ্টি
ও যে আমার থেকে অনেক অনেক এগিয়ে!
পেছন থেকে টেনে না ধরতে পারি!
একটু কুট সমালোচনায় কিছু বদনাম তো ঢেলে দিতে পারি!
ওটুকুই বা কম কিসে?

তাই বলে গীবত করে?
আরে ধ্যুর! তুমি পড়ে আছে সেই আরব্য রজনীর দেশে
আজকাল কে আর এগুলো মানে?
হয় পেছন থেকে টেনে ধর!
কিংবা বদনামের দুর্গন্ধ ঢেলে দাও সারা গায়ে
ব্যাটার বড্ড বাড় বেড়েছে
সাহসের বলিহারি দেখেছ?
ইশশ! আমার থেকে কতটা এগিয়ে গিয়েছে!

আমিও মানুষ! ভুলত্রুটি আমারও আছে
তুমিও বন্ধু, যদি সামনে থেকে ভুল ধরিয়ে দাও
হয়তো একটু মন খারাপ হবে! তবে নিজের শোধরানো হবে
পেছন থেকে যদি গীবত কর! বলো তো আমার কি উপকার হবে?
কি উপকারই বা হবে তোমার নিজের?

ঐ দেখ ভাইয়ের মাংস খাচ্ছে কারা যেন
আপন ভাইয়ের, কাঁচা চিবিয়ে
ওরা গীবত করছে;

তুমি খাবে?

.
১৬ মার্চ, ২০২১

geebot

মানবতার বিনিময়

ertyui

একদিন আমি ঘাড়ে সংসারের বোঝা চাপিয়ে বলদের পিঠে করে রওনা দিলাম
দেখলাম এক রাখাল ছাগলের পিঠে চড়ে ঘাসের সন্ধানে মাঠে ঘুরতে বের হলো
এক ব্যবসায়ী গাধার পিঠে বসে নিজে তার পিঠে বিশাল এক লবণের বোঝা চাপালো
আরেকটু সামনে দেখলাম এক দৌড়বিদ ঘোড়ার পিঠে, ছুটছে টগবগ টগবগ বাতাসের আগে
তারও একটু সামনে ক্ষেতের মাঝে এক মোষের পিঠে দেখলাম দুইজন কৃষক, জোয়ালটা কৃষকদের ঘাড়ে
তাদের ঠিক পেছন থেকেই খরগোসের পিঠে চেপে তীর-বেগে ছুটে গেলো এক সবজি বিক্রেতা গাজর খেতে খেতে
এক অকর্মণ্য অলসকে দেখলাম কচ্ছপের পিঠে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে হেলে-দুলে ঘুমোচ্ছে
হঠাৎই কোথা থেকে একটা রাজনৈতিক দলের নেতা কুকুরের পিঠে চেপে খামখাই তারস্বরে ঘেউ ঘেউ ডাকাডাকি করতে লাগলো
আমি ধমক দিয়ে বললাম, কিরে? কুকুরের পিঠে বসেছিস বলেই কি ঘেউ ঘেউ করতে হবে?
আমাকে দেখ তো! আমি কি মুখে একবারও হাম্বা শব্দ করেছি?
ঐ যে ছাগলের পিঠে চড়া রাখালকে দেখ তো! সে কি ম্যা ম্যা করেছে একবার?
নাকি ঘোড়ার পিঠে বসে দৌড়বিদ হ্রেষা ধ্বনি দিচ্ছে বারবার?
এবার নেতা কুকুরের লেজটা হাতে ধরে আমার হাতে দিয়ে বলল, দেখ তো, এটা সোজা করতে পারিস কি না!
– আরে বোকা! আমি কুকুরের পিঠে, ঘেউ ঘেউ ছাড়া আমাকে মানায় না;

ঠিক আমাদের বিপরীত দিক থেকে এক কষাই হায়েনার পিঠে চেপে নরমাংসের একটা টুকরো মুখে নিয়ে পাশ দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো
একজন ট্যানারি মালিক তাই দেখে নেকড়ের পিঠে চেপে ছুটে গেলো মৃত মানুষটার চামড়া খুলতে
অন্যদিকে এক চামড়া ব্যবসায়ী চিতার পিঠে চেপে বের হয়েছে হরিণ ধরতে
ওদিকে বাঘের পিঠে চেপে এক শিকারি বেশ হেলে-দুলে বনে ঘুরছে শিকারের সন্ধানে
তাই দেখে বানরের পিঠে চড়ে এক চাটুকার বাঘকে মুখ ভেংচাচ্ছে কাঁধে আরেক বানর নিয়ে
সিংহের পিঠে চেপে এক ধড়িবাজ ফকির আয়েশি ঘুম দিয়েছে নরম কেশরগুলো বালিশ বানিয়ে
বিশাল এক হাতীর পিঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার্ত এক বনরক্ষক ইতিউতি তাকাচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট গাছের সন্ধানে
এত প্রাণীদের ভিড়ে এক ভূমিদস্যু মনুষ্য সন্তান এক মনুষ্য ক্রীতদাসের ঘাড়ে চড়ে হেলে দুলে এসে বলল,
ও হে! তোরা সব পশুতেই সন্তুষ্ট! তোরা বড্ড বোকা
আমাকে দেখ! আমি জমি কিনতে কিনতে জমির মানুষগুলোকেই কিনে নিয়েছি
দলে দলে মানুষকে দিয়ে ধোঁকা;

আমি খুব আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের বিনিময়ে?
সে হেসে উত্তর দিলো মানবতার।
.
০৬ এপ্রিল, ২০২১
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।

চুপকথা

সব সময় কি কিছু লিখতেই হবে?
আমি চুপ কলমটার দিকে তাকিয়ে আছি
তাকিয়ে আছি চুপ হাতের দিকে,
চুপ কলমটা তাকিয়ে আছে মস্তিষ্কের দিকে
মস্তিষ্ক কি আর চুপ থাকে?
ওখানে অনুভব অনুভূতির খেলা
ওখানে রক্ত সঞ্চালন,
মস্তিষ্ক তাকিয়ে থাকে হৃদপিণ্ডের দিকে
ওটা ক্রমাগত ধুকপুক ধুকপুক করছে
ওখান থেকে মস্তিষ্কে রক্ত আসছে
মস্তিষ্ক বেঁচে আছে অনুভব আর অনুভূতিতে;

কোন একদিন হৃদপিণ্ডের ধুকপুক থেমে যাবে
রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে
মস্তিষ্ক চুপ হয়ে যাবে
হাতে কোন সিগন্যাল পাঠাবে না
নিথর আঙুল কলম ধরবে না
কলম লিখবে না অনুভবের চুপকথা;

এই যে হঠাৎ হঠাৎ হৃদপিণ্ডের ধুকপুক থেমে যাওয়া!
শুধুই কি থেমে যাওয়া?

একবার ভাবো তো!
মাথার ওপরে বটগাছের ছায়া
তুমি শান্তির ঘুম ঘুমচ্ছ নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায়
ঝড় ঝঞ্ঝা সওয়ার জন্য বটগাছ তো আছেই!
হঠাৎ একদিন চোখ মেলে দেখলে মাথার ওপরের বটগাছ হাওয়া
তুমি দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের নীচে
বড্ড অসহায় মনে হবে না?
আচ্ছা! এই যে বাবাগুলো হুট হাট কিছু না বলেই চলে যায়!
আর কিছু বোঝার আগেই মাথার ওপর থেকে ছাদটা সরে যায়!
সন্তানদের বুঝি কষ্ট হয় না?
কেন না বলে কয়ে বাবাগুলো চলে যায়?

এই যে সারাদিন আমি বাইরে কাজের উছিলায়!
মা বলে একজন তো আছেই, সংসারের মাথায়
সেই জন্মের পর থেকে সামলে নিচ্ছে সকল ঝুট ঝামেলা,
মা! ওটা শুধু ডাক নয়
ওটা একটা অভ্যাস
জীবনের পরতে পরতে
আর নির্ভরতার চালক সংসার গাড়িতে
আমি নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায়;
কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই মা ঘুমিয়ে যায়
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক অন্ধকার
আর থমকে যাওয়া সংসার।
আচ্ছা! মা কেন চলে যায়?
আমার বুঝি কষ্ট হয় না?

একদিন বাবা চুপ হয়ে যায়
বটগাছটা মাথার ওপর নেই হয়ে যায়
– আমি খোলা ছাদের নীচে অসহায়,

একদিন মা চুপ হয়ে যায়
সংসারটা চালক হীন থমকে যায়
– আমি সংসার জোয়াল কাঁধে অসহায়,

কেন তারা চুপ হয়ে যায়?

কষ্টটা শুধুমাত্র তারাই জানে যারা বাবা মা’কে হারায়;

মনটা আজ খুব বেশী চুপ হয়ে রয়েছে
রাতের খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছি
ওখানে একসময় একটা বটগাছ ছিলো
আজ শুধুই রাশি রাশি তারা,
মন পড়ছে, মুখ জপছে
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।

০৫ জানুয়ারি, ২০২০

#কবিতা

চুপকথা
– যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।

ttyyu

বিষপিঁপড়া

শান্তার যখন থেকে জ্ঞান বুদ্ধি হয় তখন থেকেই শুনে এসেছে – বাহ! কি মিষ্টি মেয়ে।

মিষ্টি মেয়েদের কি জ্বালা তা শান্তাই ভালো জানে। সময়ের সাথে সাথে শান্তা বড় হচ্ছিলো আর মিষ্টি মিষ্টি শুনতে শুনতে কেমন যেন মিষ্টির প্রতি বিতৃষ্ণা জেগে উঠছিলো। যখন বয়স ছ সাত হলো তখন থেকেই মনে আছে চাচাতো খালাতো ফুফাতো মামাতো ভাইয়েরা মিষ্টি মেয়ে মিষ্টি মেয়ে বলে ছুতোনাতায় শান্তাকে ছুঁয়ে দিতো; এই ছোঁয়াটা শান্তার মনে যেন কেমন অস্বস্তির জন্ম দিতো। তখন শান্ত ঠিক বুঝতো না তবুও এটুকু বুঝতে পারতো ছোঁয়াগুলোতে কেমন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি, শরীর গুলানো অনুভূতি। কই বাবা মা আদর করলে, ছুঁয়ে দিলে, কোলে নিলে তো এমন অনুভূতি হয় না! অন্যরকম এক অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়ে শান্তা বেড়ে উঠতে থাকে।

শান্তার বয়স যখন দশ এগারো তখন এই সব ভাইদের সাথে সাথে যেন বাসায় বেড়াতে আসা বাবার কিছু কিছু বন্ধুরাও বাহ! আমাদের মিষ্টি মেয়ে বলে আদরের ছুঁতোয় শান্তার শরীর ছুঁয়ে দিতো। শান্তা কিছু বলতে পারতো না, কেমন এক ঘিন্না মেশানো অনুভূতিতে তার শরীর গুলিয়ে উঠতো। সে পারতপক্ষে এর পর থেকে আর বাবার বন্ধুদের সামনে যেতে চাইতো না।

একদিন শান্তার চাচ্চু বাসায় এলো, সেদিন বাবা-মা নেই; শান্তা একা। চাচ্চু বললেন শান্তা মা একটু পানি দে তো! শান্তা পানির গ্লাস হাতে ড্রইংরুমে এলো। চাচ্চুকে পানি দিয়ে অন্যদিকের সোফায় বসলো। চাচ্চু পানি খেয়ে শান্তার সাথে টুকটাক গল্প করতে করতে উঠে এসে শান্তার পাশে বসলো। শান্তা কিছু মনে করে নি, আপন চাচ্চুই তো! আস্তে আস্তে মামনি মামনি বলে এটা ওটা গল্প করতে করতে চাচ্চুর হাত শান্তার মাথা বেয়ে পিঠে হাত বুলাতে লাগলো, শান্তা চমকে উঠলো; তার গা ঘিনঘিনে অনুভূতিটা প্রবল হয়ে উঠলো। সে চাচ্চুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে কেমন যেন এক গা ঘিনঘিনে চকচকে অপরিচিত দৃষ্টি। কোথায় জানি! কোথায় জানি! এ দৃষ্টি দেখেছে সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না। তারপর চট করেই মনে পড়লো ‘দি ডেভিল’ সিনেমায় হায়েনার চোখের সাথে যেন চাচ্চুর এ দৃষ্টি পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতেই একবার যখন মাথা থেকে হাত পিঠে না গিয়ে সামনে থেকে বুক বেয়ে পেটে নেমে এলো তখনই শান্তার প্রবল বমির বেগ পেয়ে গেলো, সে দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে ওয়াক ওয়াক করতে লাগলো। শান্তার চাচ্চু কি হয়েছে! কি হয়েছে! বলে তার সাথে সাথে বাথরুমের দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো। আরেকবার কি হয়েছে মামনি বলতেই শান্তা তীব্র চোখে তার চাচ্চুর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। চাচ্চু চোখ নামিয়ে নিলেন, ধীর পায়ে হেঁটে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। শান্তা এ কথা কোনদিন কাওকে বলতে পারে নি, তবে সে তার চাচ্চুর সামনে একা আর কখনোই যায় নি।

শান্তার ফুপু থাকেন লন্ডনে, ফুপা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে প্রচুর টাকার মালিক। ওনারা দুই এক বছর পর পর দেশে আসেন। প্রত্যেকবারই ফুপু শান্তাদের জন্য অনেক অনেক গিফট নিয়ে আসেন, আসল শান্তাদের বাড়িতেই ওঠেন। এবার ফুপুরা এলেন প্রায় দুই বছর পর। এই ফুপুকে শান্তা অনেক পছন্দ করে, ফুপুও শান্তাকে মেয়ের মতই দেখেন। ফুপাও খুবই ভালো আচরণ করেন। ওনারা আসার প্রথম দুইদিন হৈ চৈ করে খুব ভালোভাবেই কেটেছে। শান্তা লক্ষ্য করেছে এবার ফুপার আচরণে কেমন যেন একটু পরিবর্তন এসেছে, আড়ে আড়ে কেমন চোখে যেন শান্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সবার সামনে মা মা করে অথচ ওনার চোখে শান্তা যেন চাচ্চুর ছায়া দেখতে পায়। তৃতীয়দিন বিকেলে শান্তা ড্রইংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছিলো, ফুপা ফুপু দুপুরে লাঞ্চের পর বেডরুমে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন। হঠাত করেই শান্তা লক্ষ্য করলো ফুপা এসে তার পাশে বসেছেন। কি দেখছিস রে মা, বলে একদম কাছ ঘেঁষে বসলেন। শান্তার মনে হঠাত করেই পুরনো অস্বস্তিকর অনুভূতিটা ফিরে আসলো, খালুর রান শান্তার রানে ঘষা খাচ্ছে, খালু কথা বলতে বলতেই শান্তার মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে করতে পিঠে নামাতে লাগলো; তারপর খুব হঠাৎই মাথা থেকে শান্তার বুকে হাত চলে আসলো। ঝট করে শান্তা খালুর চোখে তাকাতেই হায়েনার চোখ দেখতে পারলেন, মুখে নেকড়ের হাসি। হতভম্ব শান্তার বুঝতে দেরি হয়ে গেলো মা মা ডাকতে ডাকতে কিভাবে একটা লোক অবলীলায় তার বুক ছানছে। শান্তা লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে লাগলো। সারা শরীর ঘৃণায় রি রি করছে, শান্তা বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারের নীচে ভিজতে লাগলো, যেন ফুপার নোংরা হাতের স্পর্শ ধুয়ে ফেলতে চাচ্ছে।

এবার শান্তা আর চুপ থাকতে পারলো না, রাতের ডিনারের শেষে শান্তা তার ফুপুকে তার রুমে ডেকে নিয়ে আসলো। ফুপু এসে বললো কিছু বলবি? শান্তা অনেকক্ষণ আমতা আমতা করে কাঁদতে কাঁদতে দুপুরের ঘটনা ফুপুকে খুলে বললো। ফুপু কতক্ষণ হতভম্ব চোখে শান্তার দিকে চেয়ে থেকে তার গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বসলেন। ছিঃ শান্তা ছিঃ! এই বয়সেই তোর মনে এইগুলো! তোর ফুপার মত এমন সুফি মানুষের নামে তুই এই কথা বলতে পারলি? তার থেকে বেশি হতভম্ব হয়ে গেলো শান্তা, যেন বলে বিশাল এক অন্যায় করে ফেলেছে। পরদিনই ফুপুরা বোঁচকা বুঁচকি নিয়ে ফুপাদের বাড়ি চলে গেলো। সেই শেষ, ফুপুরা আর কখনো শান্তাদের বাড়ি আসে নি।

শান্তা এখন বড় হয়েছে, কলেজে পড়ে। সে ছেলেদের দৃষ্টি কোনটা কি, ছেলেদের ছোঁয়া কোনটা কি খুব ভালোই বুঝতে পারে। বন্ধুদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধুই আছে যাদের সামনে সে কোন অস্বস্তি অনুভব করে না, আবার কিছু বন্ধু আছে যারা সামনে এলে যেন চোখ দিয়ে চাটে। খালাতো, চাচাতো, মামাতো, ফুপাতো ভাইদের মধ্যেও কয়েকজন খুবই আন্তরিক যাদের দৃষ্টির মাঝেই বোন সুলভ এক মায়া অনুভব করে, তাদের সাথে শান্তা খুব স্বাচ্ছন্দ্য; আর কয়েকটা আছে যারা থাকলে পারতপক্ষে শান্তা ভাইবোনদের আড্ডাতেও বসে না, ঐ গা গুলানো বিবমিষা। আর এখন শান্তার চেহারা যতই মধু হোক না কেন, সময় আর পরিস্থিতি তাকে আমূলে বদলে দিয়েছে; ছোঁয়াছুঁয়ি তো অনেক দূরে তার কথাতেই অনেকে এখন বিষ অনুভব করে। এই বয়সেই শান্তা খুব ভালো বুঝে গেছে কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে। শান্তার চাচ্চু আজকাল খুব কমই বাসায় আসে, আসলেও শান্তা এমনভাবে তীব্র এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে! যেন উনি পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচেন।

ইদানীং মহল্লার ছেলেপেলেগুলি শান্তাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করে, মিষ্টির গন্ধ দূর দূর বোধহয় ছড়িয়ে পড়েছে। শান্তা বাড়ি থেকে বের হলেই পেছনে অনেকগুলো দৃষ্টি অনুভব করে। শান্তার এগুলো সয়ে গেছে, পুরুষমানুষ মাত্রই সুন্দর দেখবে এ আর এমন নতুন কি! তবে আজকাল ছেলেগুলো যেন একটু বেশীই ডেয়ারিং হয়ে গেছে, প্রায়ই এটা ওটা মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় শান্তার আসা যাওয়ার পথে, শান্তা না শোনার ভান করে রিক্সায় উঠে যায়। বাড়ি থেকে কলেজ আরা কলেজ থেকে বাড়ি, এর বাইরে সাধারণত শান্তা একা আর কোথাও যায় না। এর মধ্যে একদিন দুজন খুব সাহস দেখিয়ে রাস্তায় শান্তার রিক্সা থামিয়েছিলো, সেই পুরনো কথা – বাহ! কি মিষ্টি! কি মিষ্টি! মনে হয় খেয়ে ফেলি! শান্তা তীব্র দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে থাকে, কিন্তু ওদের মধ্যে এ দৃষ্টির কোন আছর পড়ে না। একজন রিক্সায় উঠতে গেলে শান্তা ধাক্কা মেরে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। আশেপাশে থেকে মানুষজন জড়ো হয়ে যায়, ছেলেগুলো দেখে নেব বলে শাসিয়ে চলে যায়। বাসায় এসে এ কথা বলতেই এরপর থেকে মা শান্তাকে সাথে করে কলেজে দিয়ে আসে, কলেজ থেকে নিয়ে আসে; মহল্লার বখে যাওয়া ছেলেপেলেগুলো দূরে সরে থাকে। এভাবেই কাটছিলো শান্তার দিন।

একদিন মা অসুস্থ, শান্তা গায়ে হাত দিয়ে দেখে বেশ জ্বর; তাই কলেজে যাওয়ার সময় সাথে যেতে পারেন নি। কেও কি লক্ষ্য করেছে? শান্তা কলেজে গেলো ভয়ে ভয়ে, নাহ! কেও বোধহয় লক্ষ্য করে নি; কেও সামনেও আসে নি। বিকেলে কলেজ থেকে বের হয়ে দেখে মা আসেন নি; শান্তা ভাবছিলো – তবে কি মায়ের জ্বর বেড়ে গেলো? শান্তা তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার তাগিদ অনুভব করে। রিক্সাওয়ালাকে বলে, মামা একটু জোরে টানো, তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে। কলেজ থেকে মহল্লায় ঢোকার মুখে কয়েকটা খালি প্লট, এখনো এখানে বিল্ডিং ওঠে নি; জায়গাটা খানিকটা নির্জন। হঠাত করেই যেন প্লটের ভেতর থেকে ছজন একসাথে বের হয়ে আসলো, সামনে থেকে এসে রিক্সার পথরোধ করে দাঁড়ালো। ওদের মধ্যেই একজনকে শান্তা ঐদিন রিক্সা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো; শান্তা ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। আজ আর রিক্সায় ওঠার চেষ্টা না করে শান্তাকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে রিক্সা থেকে নামিয়ে নিলো, একা শান্তা এতজন ছেলের সাথে জোড়ে পেরে উঠবে কি করে? রিক্সাওয়ালাকে দুইটা ঘুষি মেরে তাকে রাস্তায় ফেলে ওরা রিক্সার মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়লো শান্তার ওপর। চার পাঁচ জনার একসাথে বুকে পেটে পাছায় থাবা চালাচ্ছে। শান্তার মনে হলো বিষপিঁপড়া কামড়াচ্ছে। কেও কাপড় খোলার চেষ্টা করছে কেও বা কাপড়ের ওপর দিয়ে শরীর ছানছে। রিক্সাওয়ালাটা সেদিন খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছিলো, সে মাটি থেকে উঠেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে, একজনকে এর মধ্যে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলেছে। আশেপাশের কিছু মানুষেরও ততক্ষণে এইদিকে নজর পরেছে তারা দলবেঁধে ছুটে আসতে শুরু করতেই বখাটেরা চম্পট দিলো। তারপর এ নিয়ে থানা পুলিশ অনেক কিছু হয়েছিলো, দুজনকে পুলিশ ধরে আনতে পেরেছিলো আর বাঁকি চারজনকে খুঁজে পেতে প্রায় মাস খানেক লেগেছিলো। শেষ পর্যন্ত ধরা তারা পড়েছিলো সকলেই। মেয়েদের বোধহয় এটাও এক জীবন, রাস্তাঘাটে সাবধানে চলতে হয় কুকুর দেখে, কে জানে! কখন যে কুকুরগুলো কামড়ে দেবে পেছন থেকে। মহল্লায় এ ঘটনার রেশ থেকেছে অনেকদিন ধরে।

শান্তা এতদিনে বুঝে গেছে – আসলে মিষ্টি তার চেহারা না, মিষ্টি তার শরীরটা; আর তার চারপাশে ঘুরঘুর করছে হাজারে হাজারে বিষপিঁপড়া।

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

#গল্প
বিষপিঁপড়া
– যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত ।

পৃথিবী ভ্রমণ

সোহাগী বাস কাউন্টার, ফকিরাপুল। ‘সোহাগী’ – কক্সবাজার রুটের নতুন বাস। মাত্র দুই সপ্তাহ হলো ঢাকা কক্সবাজার রুটে তাদের নতুন সার্ভিস শুরু করেছে। একদম ঝকঝকে তকতকে সব নতুন ছত্রিশ সিটের ভলবো বাস। রেহানরা আজ দলবেঁধে কক্সবাজার যাবে। আটটা ফ্যামিলির মেম্বাররা মিলিয়ে তেত্রিশ জন, তাই ছত্রিশ সিটের বাস পুরোটাই রেহানরা রিজার্ভ করে নিয়েছে।

রেহান টিম লিডার, তাই সে তার ফ্যামিলি নিয়ে বাস কাউন্টারে চলে এসেছে রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে। বাকিরা আসা শুরু করেছে পৌনে দশটা থেকে, শেষ ফ্যামিলি এসে পৌঁছিয়েছে রাত প্রায় সাড়ে দশটায়। রিজার্ভ বাস হওয়ায় কাউন্টারে সময় নিয়ে একটু গাইগুই করলেও শেষ পর্যন্ত সব ম্যানেজ করে বাস ছাড়তে ছাড়তে রাত প্রায় পৌনে এগারোটা। এই সময় অনেকগুলো বাস চিটাগাং অভিমুখে রওয়ানা করে তাই যাত্রাবাড়ী থেকে নিয়ে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত জ্যাম ঠেলতে হয়েছে ভালোই। কাঁচপুর ব্রিজ পার হতে হতে প্রায় রাত একটা। ড্রাইভার সাহেব রাগে গজগজ করছিলো, বার বার বলছিলো রাত দশটার মধ্যে বের হয়ে যেতে পারলে এই ঝামেলা হতো না।

কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে রাস্তা একটু খালি পেতেই ড্রাইভার সাহেব যেন তার দেরি পুষিয়ে নিতে চাইছিলো, বাস চলছিলো ঝড়ের গতিতে, একের পর এক বাস লড়ি ট্রাক ওভারটেক করে যাচ্ছিলো। বাচ্চারা আনন্দে হৈ চৈ করে গান গাইছিলো, ভাবিরাও তাদের সাথে সাথে তাল দিচ্ছিলো। রেহান ও তার বন্ধু রতন সামনের সিটে। শফিকের মন যেন কেমন কু ডাক দিচ্ছিলো, বার বার ড্রাইভার সাহেবকে অনুরোধ করছিলো একটু আস্তে চালাতে। ড্রাইভার কান দিচ্ছিলো না, সে ঝড়ের বেগে চালিয়েই রাত তিনটায় চৌদ্দগ্রাম হাইওয়ে ইন এ পৌঁছে গেলো। এ পর্যন্ত বাসের কেও ঘুমায় নি, হৈ চৈ, গান কৌতুকে বাসের বাকি সবার সময় কোনদিক দিয়ে কেটে গেছে কেও বলতেই পারবে না। হাইওয়ে ইন এ চল্লিশ মিনিট বিরতি, বাস থেকে নামার সময় ড্রাইভার পই পই করে বলে দিলো যেন চল্লিশ মিনিটের বেশী এক মিনিট দেরি না হয়। সবাই হৈ চৈ করে নেমে গেলো বাস থেকে, প্রথমেই ছুটলো বাথরুমে। যার যার কাজ শেষ করে খাবার টেবিলে বসে এক একজন এক এক মেন্যু অর্ডার দিলো, তারা আছে ছুটির আমেজে, তাই সময় জ্ঞান হারিয়েছে সবাই। এদিকে চল্লিশ মিনিট এক ঘণ্টা হয়ে গেছে খেয়াল নাই। বাসের গাইড আমাদের খুঁজতে চলে এসেছে রেস্টুরেন্টে, তাড়া দিয়ে সবাইকে ওঠাতে আরো মিনিট দশেক, এর মধ্যে আরেক গ্রুপের বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়ে গেলো; চলে গেলো আরো মিনিট পনেরো। চল্লিশ মিনিটের ব্রেক প্রায় দেড় ঘণ্টায় শেষ করে আমরা সবাই বাসে। ড্রাইভার সাহেব রেগে আগুন। বলতে লাগলেন এইজন্যই রিজার্ভ ট্রিপে আসতে চাই না; এদের সময়ের কোন মা বাপ থাকে না।

যাই হোক ভোর সাড়ে চারটার দিকে রেহানরা আবার যাত্রা শুরু করলো কক্সবাজার অভিমুখে। এবার বাসের সবাই ঝিমিয়ে পড়েছে, সারারাত হৈ হুল্লোড়ের পর পেটে খাবার পড়তেই যেন সবার চোখে ঘুম এসে বাসা বেঁধেছে। পুরো বাসে রেহান একা জেগে, ড্রাইভার সাহেব যেন তার সমস্ত রাগ বাসের এক্সিলেটরের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, সাঁ সাঁ করে একের পর এক বাস, ট্রাক, গাড়ি ওভারটেক করে যাচ্ছে। রেহান বারবার অনুরোধেও কান দেয় নি। কিছুক্ষণ বাস চলার পর রেহানেরও চোখ লেগে এসেছে। তারপর খুব হঠাৎ ধারাম করে যেন বোমা ফাটলো। রেহান ছিটকে গিয়ে উইন্ডশিল্ডের ওপরে পড়তেই ওর চোখের ভেতর যেন সূর্যটা ঢুকে গেলো, তারপর সব অন্ধকার।

জ্ঞান ফিরতেই রেহান নিজেকে এক অচেনা জায়গায় আবিষ্কার করলো। কোথায় যেন টানা হর্ন বাজছে, কোথায় যেন এম্বুল্যান্সের প্যাঁ পু শব্দ, কোথায় যেন হাজারো মানুষের কোলাহল, কোথা থেকে জানি কান্না ভেসে আসছে, কে কে জানি চিৎকার করে কাকে ডাকছে। অচেনা সে জায়গায় রেহান যেন আধো আলো আধো অন্ধকারে উঠে বসেছে। তার মাথা কাজ করছিলো না, কোথায় জানি যাওয়ার কথা ছিলো? ভুলে গেছে। শত কোলাহলের শব্দ তো শুনছে কিন্তু কোথাও কাওকেও দেখছে না। অগত্য দিক হারা হয়ে সে একা একাই মাথা নিচু করে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। তার কি খিধে পেয়েছে, তৃষ্ণা হচ্ছে কি একটু? ঐ দূরে অনেক দূরে যেন টিমটিম করে কিছু আলো জ্বলছে; ওটা কি বাজার? ওখানে কি পানি পাওয়া যাবে? খাবার? অতীত বর্তমান কিছুই তার মাথায় নেই, আছে শুধু ঐ দূরের টিমটিমে কিছু আলো, রেহান সম্মোহিতের মত মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে বাজারের দিকে।

বাজারে পৌঁছে দেখে ওখানে কোন মানুষ নেই অথচ সব দোকান খোলা। দোকান গুলোয় কোন বাতি নেই, তবে প্রতিটা দোকানেই একটা করে কাঁচের আলমারি আর আলমারির ভেতর থেকেই কেমন যেন একটা অন্যরকম অদ্ভুত আলোতে দোকানগুলোর ভেতরটা আলোকিত, অথচ বাইরে গাঢ় অন্ধকার। তৃষ্ণার্ত রেহান পানির খোঁজ করে, প্রতিটি দোকানেই পানির একটা করে সাদা কাঁচের বোতল সাজানো আছে কিন্তু বোতলে পানির বদলে রক্ত। দোকানে কোন খাবার নেই অথচ একটা বিশাল প্লেটে সাজানো একটা করে মানুষের কাটা মাথা, কলিজা আর হৃদপিণ্ড। দোকানের ভেতরে এক অদ্ভুত কোলাহল কিন্তু কোথাও কেও নেই, আর দোকানের বাইরে সুনসান নিস্তব্ধতার হাহাকার শফিকের পুরো স্বত্বাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো। সে ভেবে পাচ্ছিলো না, এ কোন অদ্ভুত নগরীতে চলে এসেছে। এই প্রথমবার তাকে এক আতংক গ্রাস করছে, স্বত্বাকে নাড়িয়ে দেয়া এক অবর্ণনীয় আতংক। দোকানগুলোর থেকে সে ছুটে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে, কিন্তু দোকানগুলো যেন তাকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে আছে।

হঠাৎ করেই সে দেখলো অন্ধকারে ভোজবাজির মত তার সামনে এক নতুন দোকানের ঝাঁপ খুলে গেলো। নতুন দোকানের ঝাঁপ’টা খুলতেই পুরনো দোকানগুলোর থেকে গায়ে কাঁটা দেয়া অন্যরকম এক হো হো হাসির শব্দ ভেসে আসতে লাগলো, রেহান নিজের অজান্তেই নতুন দোকানটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। দোকানের ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পায় বিশাল প্লেটে সাজানো রেহানের মাথা, তার কলিজা, তার হৃদপিণ্ড; আর সাদা কাঁচের বোতলে তারই রক্ত। ভয়ে রেহানের হাতপা পেটের ভেতর ঢুকে যেতে থাকে, ঢুকতে ঢুকতে একসময় পুরো শরীরটা কুঁকড়ে ঢুকে যায় দোকানের ভেতরের কাঁচের আলমিরাতে। পাশের দোকানগুলো থেকে একসাথে করতালি ভেসে আসে। একে একে বাকি দোকানগুলোর ঝাঁপ বন্ধ হতে থাকে, তারপর আবার সুনসান নীরবতা চারিদিকে। সব শেষে কোথা থেকে জানি কোদালে কোদালে মাটি পড়ে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় রেহানের দোকানের। কবরের নিস্তব্ধতায় রেহান শুয়ে থাকে কবরে। সমাপ্ত হয় রেহানের পৃথিবী ভ্রমণ।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
#গল্প
পৃথিবী ভ্রমণ
যাযাবর জীবন

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।

মজাই মজা

মজাই মজা

এক একজন এক এক কাজে মজা পায়
এক এক জনের কাছে মজার ধরণ এক এক রকম;

কেও খেয়ে মজা পায় কেও খাইয়ে
কেও কাজ করে মজা পায় কেও অকাজ
কেও প্রেম করে মজা পায় কেও অভিনয় করে মজা নেয়
কেও মজা পায় মন খেলায় কেও শরীর খেলায়
কেও দুঃখে কাঁদে আমি হাসি
কারো প্রেমে ক্ষরণ আমার কবিতার চরণ;

আমি সব কিছুতেই মজা পাই
আমি সব কিছুতেই হাসি;

আজকাল কি কেও আর ভালো কথা বলে?
তবুও যদি কেও ভুলে দু একবার বলে বসে
আমি মুচকি হাসি, আর মনে মনে বলি গাধা’টা বলে কি!
সবাই যখন আমায় মন্দ বলে, আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি
কখনো সামনে, কখনো আড়ালে;
আমি ভালো কথায় হাসি
খারাপ কথায় হাসি
বকলে হাসি
মারলে হাসি
কেও যখন প্রেম করতে চায় আমার পুরো শরীর দুলিয়ে হাসি পায়,
এই হাসিই মাঝে মাঝে তোর জন্য হয়ে যায় বড্ড বৈরি
তুই তো জানিস না! আমার মন পাথরে তৈরি;

মৃত্যুর কথা মনে হলে সবাই দেখি ভয়ে শিওরে ওঠে
আমি আমার কবরের জায়গা খুঁজি হাসিমুখে
আচ্ছা! মৃত্যু কি খুব মজার কিছু?
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে;

আমি বোধহয় পুরোপুরি মানুষ নই
মাটি দিয়ে বানানোর সময় ওপরওয়ালা কিছু পাথর মিশিয়ে দিয়েছিলো কি আমার মাঝে?
বুক ধুকপুক থেমে গেলে একবার কেটে দেখিস তো ওখানে হৃদয় না পাথর আছে?
তারপর শুইয়ে দিস মাটির কবরে;
কে জানে? ওখানেও হয়তো অট্টহাসি হাসবো তোরা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলে;

আমি কিছু লিখলেই তোর মন কবিতা
এত ভালোবাসিস কেন রে বোকা?

টিক টিক টিক টিক

কাঁটা ঘুরছে টিক টিক টিক টিক
সময় এগোচ্ছে, সময় ফুরোচ্ছে,
আনমনা নিদ্রাহীন রাতে টিকটিকিও জানিয়ে দিচ্ছে
সময় ফুরোচ্ছে ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক;

ঘড়ির ছোট ছোট কালো হাতগুলো এগোয় ধীরে ধীরে
আমিও হারিয়ে যাচ্ছি সময়ের ভীরে;

ঘড়ির কাঁটাগুলো ক্রমাগত ঘুরতে থাকবে টিক টিক টিক টিক
অনন্তকাল ধরে
থেমে যাব আমি তুমি তুই আর সে, আমরা সবাই
একটা সময়ের পরে;
আজ, কাল বা পরশু
যে কোন একদিন, ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক;

ভাগ্যিস জীবনের বালু-ঘড়ি আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে;
শেষ যাত্রার সময় আগে থেকেই জানা থাকলে
শুধু শুধুই মন খারাপ হতো আমাদের;
সদা প্রস্তুত থাকে বিজ্ঞজন
কাঁদে আপনজন,
আর বাকিরা হাসি খেলায় অভাজন।

কিছু সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়

চোখের দেখাতেই ভালো লাগা
চোখ থেকে শুরু
কথা বলার জন্য মন আনচান
মুখ ফুটে ভালোবাসা,

তারপর?

স্পর্শ ছাড়া কি ভালোবাসা হয়?
হাতে হাতে প্রেমের যাত্রা শুরু
তারপর ঠোঁটে ঠোঁট
হাত থেকে শরীর
শরীর ভাঙে বিছানায়
প্রেমের সাতকাহন;

কিছুদিন খুব চলে,
চলতেই থাকে
মান
অভিমান
শরীর কচলে শরীর,
কিছু সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়,
তারপর তো
ডাল
ভাত
আলুর দম
কচলে কচলে নিরামিষ জীবন;

আর বাকি সম্পর্কগুলোর বেশীরভাগ ছাড়াছাড়ি
খুব তাড়াতাড়ি,
কিছুদিন মনখারাপ ওড়ে ছাদে
ভালোবাসা পোড়ে চাঁদে
তারপর শরীর ধুয়ে শুদ্ধ হতে না হতেই
মন আবার নতুন প্রেমের ফাঁদে;

আবার চোখের দেখা নতুন অন্য একজন
চোখের দেখাতেই ভালো লাগা
চোখ থেকে শুরু



চক্রাকারে প্রেম ভাঙে বিছানায়
শরীরের সাতকাহন,
আজকালকার প্রেম! বড্ড অন্যরকম;

বিছানার ডাক উপেক্ষা করতে পেরেছে কজন?
ভালোবাসা?
বছরে ডজন।

বৃষ্টি

বৃষ্টি হচ্ছে রে ধুম
চল ভিজি ঝুম

আজকাল আর সেই অনুভব কোথায় ভালোবাসার?
সেই টান কোথায় কাছে আসার?
অথচ আকাশের কাছাকাছি মেঘ
মেঘের ভেতর বৃষ্টি
আমি শুধু বজ্রপাতের শব্দ শুনি
শব্দ শুনি পাড় ভাঙার
ঘর ভাঙার
আর মন ভাঙার;

আমি তো গড়তেই চেয়েছিলাম তোর সাথে;

গড়তে গড়তে সম্পর্ক ভাঙে, মন ভাঙে, অনুভূতি ভাঙে কি?
আমি প্রেম গড়তে গিয়ে তোর চোখে লবণ গড়েছি
জীবন গড়া কি এতই সহজ?

আজকাল মেঘ করলেই মন বৃষ্টি,
ইদানীং খুব ইচ্ছে করে একবার ঝুম ভিজতে
ধুম বৃষ্টিতে,
তোর সাথে,
চোখে চোখে এক হয়ে;
তারপর না হয় সকল কান্না চুষে নেব ঠোঁট থেকে;

একটি চুমু অনেক কথা বলে,
একটি চুমু কখনো একটি ভালোবাসা গড়ে।

আরাম আয়েশের কত কত রকমফের!

আরাম আয়েশের কত কত রকমফের!

আরে বাবা! মানুষই তো আরামপ্রিয়,
আয়েশের কোথায় শেষ?
সবাই তো করে
আমি করলেই দোষ!

থাকার জায়গাটা একটু বড় না হলে জানি কেমন কেমন লাগে,
কি? চার হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট?
ধ্যাত! ফ্ল্যাট বাসা কি আর আজকাল চলে?
আমার পছন্দ বাড়ি
সামনে বিঘা দু এক এর লন
ট্রিপলেক্স বাড়িটা সব মিলে ষোল হাজার স্কয়ার ফিট হবে হয়তো!
আরে না বাবা!
এর পর দেখে নিও
ঠিক একটা প্রাসাদ বানাবো,
মার্বেল দিয়ে;

আচ্ছা!
শুনেছি ঐ ঘরটা নাকি মাটি দিয়ে বানানো?
খুব বেশী ছোট কি?
কি বললে?
মাত্র সাড়ে তিন হাত!
ধ্যাত!

আমার বাড়ির মেঝেটা দেখেছ?
টাইলসে কি আর মন ভরে?
মোজাইকের সময় তো শেষ হয়ে গিয়েছে সেই কবে?
এখন মার্বেলের যুগ
প্রেস্টিজ হলো ইটালিয়ান,
একটু সাবধান
পা হড়কাতে পারে যখন তখন;

আচ্ছা!
ছোট্ট ঐ ঘরটায় মার্বেল বসানো আছে তো?

বাইরে কি অসম্ভব গরম পড়েছে দেখেছ?
আমি বাপু এসি ছাড়া থাকতেই পারি না
ঐ যে দেখ, আমার শোওয়ার ঘরে ৫ টন এসি লাগানো
বরফ বরফ অনুভূতি না হলে কি আর ঘুম আসে?
মাঝে মাঝে তো লেপ গায় দেই শীত শীত অনুভূতিতে;

আচ্ছা!
ছোট্ট সে ঘরটায় এসি আছে তো?

আমি কোথায় শুই জানো?
তোমাদের ঘরে জাজিম
কারো হয় তো বা সাধারণ ম্যাট্রেস,
আমার ম্যাট্রেসটায় একবার শুয়েই দেখ
যেনতেন ম্যাট্রেস না কিন্তু
ওয়াটার ম্যাট্রেস দেখেছ কখনো?
আমার বালিশটায় হাত দিয়ে দেখ! পাখির পালক দিয়ে বানানো;

আচ্ছা!
ছোট্ট ঐ ঘরের বিছানায় ম্যাট্রেস আছে তো?
তুলার বালিশ তো দেবে নিশ্চয়ই;

হে বান্দা,
বড় ঘরে থাকতে চাও?
সত্তর হাত ঘরে;
শান্তির ঘুম ঘুমাতে চাও?
পুনরুত্থান দিনের তরে;

তবে মুমিন হও।