প্রাণী প্রেমিক এই আমি ও আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা

Hos

ছোটবেলা, মানে আমার কলেজ জীবন পর্যন্ত কেটেছিলো উত্তরের এক অবহেলিত জেলা শহরে। কিছুটা গ্রামীন আবহে। সে কারণে আজকের এই মানুষটি আমি গর্বিত এবং ভীষণ অহংকারীও বটে কারণ আমি মাটির গন্ধ চিনি। নদী নালা খাল বিল, ফসলের মাঠ, ধান ফুলের গন্ধ, তাজা মাছের স্বাদ, জোনাকির আলো, এ সব আমার মুখস্থ। নদী থেকে স্নান সেরে ভেজা মহিষের পিঠে করে বাড়ি ফেরা ছিলো স্বর্গ সুখ।

সে সময় বাড়িতে এক দেশী কুকুর ছিলো। আমি তার নাম দিয়েছিলাম “বাঘা”। তাকে তিন বেলা খাবার দেয়া হতো নিজেদের স্বার্থেই, কারণ সে ছিলো বাড়ির খুব ভালো পাহারাদার। বাঘার উপস্থিতিতে বাড়িতে চোর ডাকাতের উপস্থিতি ছিলো প্রায় অসম্ভব। একদিন সকালে বাঘার মৃত দেহ পাওয়া গেলো। চোরের বা ডাকাত দলের কেউ তাকে বিষ পানে হত্যা করেছিলো কারণ সে সময় চোর এবং ডাকাতের বেশ উপদ্রব ছিলো এলাকায়।
পরের জীবন বিভাগীয় শহরে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। আমার স্বর্গীয় জীবন। আমার ভালো মন্দ, রাজনীতি অ রাজনীতি, প্রেম অপ্রেম, সব কিছুর সূতিকাগার এই মতিহার চত্বর। এখানেও আমার এক নেড়ী কুত্তা ছিলো সর্বক্ষণের সাথী। সে সময় অনেকেই আমাকেই পাগল বলে এড়িয়ে চলতো, আবার কেউ কেউ এই পাগলামীর কারণেই উন্মাদের মতো ভালবাসতো।

এর পরের জীবন ইউরোপ। এ এক অন্য জগৎ। প্রতি সেকেন্ডে অবাক হই আর শিখি। পুরো ইউরোপ তখন আমার চারণ ভূমি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। ছবি তুলি কবিতা লিখি। মাঝে মাঝে প্রেমে পড়ি। আসলে don’t fall in Love, I only make Love আমি প্রেমে পড়ি না, আমি শুধু প্রেম করি। দীর্ঘ সময় আমি তখন যাযাবর। এক সময় উপলব্ধি হয় এ জীবন আমার নয়, অন্য কারো কারণ ততদিনে আমি বুঝে গেছি, জেনে গেছি স্বরসতী আর লক্ষী হচ্ছে দুই সতীন। এরা এক সাথে বসবাস করবে না। আমাকে বেছে নিতে হয় একজনকে। আমি লক্ষী কে পূজা দিয়ে ঘরে ফিরি। সেটি ১৯৯৮। তখন আমি ইতালির এক ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথে কাজ করি। সে ডিজাইন করে পাঠাতো আর আমি তা ডেভোলপ্ট করতাম।

আমার এখনো মনে আছে সে সময় সাইফুদ্দীন হাসান চন্দনকে দুইদিনের মডেল শ্যুটের জন্য সন্মানী দিয়েছিলাম দুই লক্ষ টাকা। তখন চন্দন ভাই এর সহযোগী হিসেবে ছিলেন বশীর আহমেদ সুজন। আমরা শ্যুট করেছিলাম, একদিন শফিপুর আনসার ক্যাম্পে আর একদিন লালবাগ কেল্লায়। তখন আমি একা থাকতাম রামপুরা মহানগর আবাসিক এলাকার একটা ফ্ল্যাটে। আমার ফ্ল্যাটে তখন নিজস্ব একটা মিনি বার ছিলো সংগত কারণেই। কারণ তখন আমার অধিকাংশ মেহমান ছিলো বিদেশি। তবে দেশের অনেকেই আসতো তখন আমার বাসায় ফ্রি মদ খেতে। তাদের মধ্যে ছিলো বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ছিলো সব নামকরা শিল্পী, সাহিত্যিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিমান বালা, রাজনীতিবীদ।

সে সময় আমার সখ জাগলো বানর পোষার। বানর ছিলো তখন আমার সর্বক্ষণের সাথী। নাম দিয়েছিলাম তার রাধা। সারা ঢাকা শহর সে আমার সাথেই থাকতো। কখনো গাড়িতে, কখনো আমার কাঁধে। একদিন বাসায় ফিরে দেখি রাধা আমার বারান্দার গ্রিলে ঝুলে মরে আছে। জানি না সে আমার অন্য প্রেমের অভিমানে আত্মহত্যা করেছিলো নাকি পড়ে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মরেছিলো।

এরপর আসি ইস্কাটন গার্ডেনের বাসাতে ভাড়াটিয়া হিসেবে। আমার বাসার মালিক তখন অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, নিহত সার্জেন্ট আহাদের স্ত্রী। তখন আমি কাটাবন পশু পাখি মার্কেটে একজন তার ছেড়া ক্রেতা হিসেবে ব্যপক পরিচিতি। তখন কাঁটাবন মার্কেটের এমন কোন পাখি নাই যা আমার ছিলো না। তখন আমার গ্রামের বাড়িতে মায়ের সখ পূরনে গড়ে তুলি মিনি চিড়িয়াখানা। আর সে সময় ঢাকার পাখি স্মাগলার গোষ্ঠীর সাথে আমার পরিচয় হয়। জানতে পারি কাঁটাবন মার্কেটের আড়ালে চলে আন্তর্জাতিক পাখি চোরাকারবারী চক্রের কার্যক্রম।

দামী পাখিদের তখন দারুণ চাহিদা বলিউড তারকাদের এবং ঢাকা তখন সেই স্মাগলারদের ট্রানজিট রুট মাত্র। ম্যাকাও, গ্রে প্যারোট, কাকাতুয়া থেকে শুরু করে সব নামি দামী পাখি ঢাকা হয়ে চলে যেতো দিল্লি, বোম্বে এবং পাখি গুলো আসতো মূলত পাকিস্তান থেকে। আমি তখন পাখি কিনতাম সেন্ট্রাল রোডের এক স্মাগলারের কাছ থেকে স্বল্প দামে। তখন আমার হরিণ পালন এবং জবাই করে খাবার লাইসেন্স ছিলো।

যাই হউক রোকেয়া প্রাচীর বাসায় থাকার সময় সখ হলো কুকুর পোষার। সাদা ধবধবে লোমশ ছোট্ট একটা কিউট কুকুর কিনলাম। নাম রাখলাম তার “গুণ্ডা”। বিড়াল ছিলো অনেক গুলো। কিন্তু পড়ে রিয়ালাইজ করলাম, এ সবের পেছনে আমার যতোটা না ভালোবাসা তার চেয়ে অনেক বেশী বিলাসিতা, ট্রেন্ড বাজি, লোক দেখানো ফুটানি। রাস্তার ভিক্ষা করা, ফুল বিক্রেতা কোন মানব শিশু আমার কাছে তখন পশু প্রেমের চেয়ে অনেক বেশী আপন মনে হলো।

আজকাল অনেক পশু প্রেমিক দেখি। কুকুরের মুখে চুমু দিতে দেখি, বিড়ালের মা বাপ হতে দেখি। আর কি কি দেখবো তার সব কিছুই আমার জানা দেখা। জানিনা বাংলাদেশে এর পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। আজ থেকে আরো ৩০ বছর আগে রোমে এক ইতালিয়ান বান্ধবী তার মেয়ের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়েছিলো। গিফট সহ গিয়ে দেখি তার বিড়ালের জন্মদিন। নিজে সন্তান নেয় না চাকুরী করে বলে, তাই বিড়ালকে সন্তান বানিয়েছে। অবাক পৃথিবী,অবাক সব মানুষের রীতিনীতি, রুচি।

দেশে আমার অনেক প্রিয় মানুষ কুকুর বিড়ালকে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেন এবং তাতে গর্ব বোধ করেন। সেই সব প্রিয় জনের কাছে অনুরোধ, আপনার কুকুর বা বিড়াল সন্তানের জন্মদিনে আমাকে দাওয়াত দেবেন না প্লিজ।

এখানে সাধারণত বয়স্করা কুকুর বেড়াল পালন করেন তাদের নিঃসঙ্গতা থেকে। আবার কিছু কিছু নারী কুকুরের সাথে সেক্স করার জন্যে তা পালন করে থাকে। এ আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ২০ বছর আগে রোমে আমার পাশের ফ্ল্যাটের এক নারীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ এবং তদন্তে জানা যায় রাতে কুকুরের সাথে সেক্স করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও এখন যে কেউ সোস্যাল মিডিয়াতে সার্চ দিয়ে কুকুরের সাথে মেয়েদের হরদম সেক্স দেখে নিতে পারেন।

তাই ভয় হয় বাংলাদেশের পশু প্রেম কোন দিকে এগুচ্ছে। আমরা তো সব কিছুই শিখি হয় বোম্বে থেকে নয় ইউরোপ থেকে। আল্লাহ,তুমি আমাদের সঠিক পথে রেখো প্লিজ।

আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে অনেক পশু প্রেমিক আছেন। প্লিজ আমার এ লিখায় কেউ আহত হবেন না। ভুল বুঝবেন না আমাকে। আমি শুধু আমার জানা এবং দেখার কথা, আমার নিজের কথা শেয়ার করেছি মাত্র। সবার জীবন মঙ্গলময় হউক। সুন্দর হউক।

2 thoughts on “প্রাণী প্রেমিক এই আমি ও আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা

  1. যাপিত জীবনে এটা হচ্ছে অনন্য এক অভিজ্ঞতা। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ বন্ধু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. এই লেখা শত ভাগ সত্য ও বাস্তব । তবে এই যুগের গুটি কিছু লোক এই লেখায় নারাজ হবে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।