আমার চাকরিজীবনের কান্নাকাটি শোনানোর দ্বারা আপনাদের সময় নষ্ট করছি ভেবে মন খারাপ করবেন না। শুরুটা এই বিষয় নিয়ে হলেও, আরো অনেক কিছু বলার আছে আমার।
আপনারা হয়তো আমার আগের কথাগুলি ভালোভাবে শুনে বুঝে ফেলেছেন এতোক্ষণে। এখন কেউ কেউ আমাকে বলতে পারেন,
– এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি অনেকের সাথেই হয়। তাই বলে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে? আপনার চেয়েও অনেক কষ্ট করে মানুষ চাকরি করছে।
হ্যা! একমত আমি আপনাদের সাথে। তবে আমি অন্য সবাই নই। ‘৭১ এ যুদ্ধের মাঝে এক ভরদুপুরে আমার জন্ম। সেই থেকে আজন্ম জ্বলছি আমি। আমার চিন্তা-চেতনা ও একজন গোলামের মতো নয়।
তবে আরো কিছু কথা বলছি শুনুন। এটুকু বলেই গোলাম জীবনের প্রসঙ্গের ইতি টানবো।
আমি কমপ্লায়েন্স, এইচ আর এবং এডমিন ডিপার্টমেন্টের আন্ডারে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। শেষ ও করেছি একই পোষ্টে। তোম, আমার এক ধাপ জুনিয়রকে আমার বস নিজের ইচ্ছেতে সহকারি ব্যবস্থাপক পদে তেনে আনলেন। আমাকে আরো হেয় করার জন্য। অথচ যোগ্যতায় আমি-ই ছিলাম এই পদে যাবার। তা না করে, এক ধাপ ডিঙ্গিয়ে সেই অফিসারকে আমার সিনিয়র করা হলো। তাতেও আমি মন খারাপ করলাম না। আমার ঈশ্বর চেয়েছেন বলেই সে হয়েছে। আমি ঈশ্বরের উপর ভরসা করে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যেতে লাগলাম।
একদিন আমাকে আমার বস ফোন করে বললেন,
– মাহতাব সাহেবকে আপনি ভাই ডাকেন কেনো? আজ থেকে স্যার ডাকবেন।
অফিস্পাড়ার এক অলিখিত নিয়ম ছিলো, জুনিয়রদেরকে সিনিয়রেরা সাহেব সম্বোধন করেন নামের শেষে। আর জুনিয়রেরা স্যার। তবে কেউ কেউ আন্তরিকতার কারণে সিনিয়রদেরকে ভাই ডাকেন। আমাকে সরাসরি আমার জুনিয়র যে সম্প্রতি সিনিয়র হয়েছে আমার, তাকে স্যার দাকতে নির্দেশ দেয়া হলো।
আপনারা বলবেন,
– হ্যা, তাতে ক্ষতিটা কি হয়েছে?
– নাহ! ক্ষতি হইয়েছে কিনা এবার বলছি তবে শুনুন…
এই ডিপার্টমেন্টের সহকারি কর্মকর্তা পদের কিছু জুনিয়র নেয়া হলো। আমার জয়েনের সময়েও ওরা ছিলো। তারা নিয়মানুযায়ী আমাকে ভাই বা স্যার না ডেকে, আমাকে সাহেব সম্বোধন করতে লাগলো। আমার সেকশনের আমার অধঃস্তনেরা এই ব্যবহারে কষ্ট পেতে লাগলো। আমাকে একজন বললো ও যে, ওরা কতো জুনিয়র, কেনো আপনাকে সাহেব ডাকবে?
আসলে আমার বস মানুষটির প্রচ্ছন্ন ইশারায় ওরা এই কাজটি করছিলো। একদিন একজনকে লজ্জার মাথা খেয়ে জিজ্ঞেস করাতে সে সত্যটা বলেছিলো।
কি হলো? এখন মুখ লুকোচ্ছেন কেনো? একটু আগেই তো লাভ-ক্ষতির হিসাব করছিলেন বড়ো, এখন উত্তর দিবেন কি আমাকে?
এসব-ই আমি দীর্ঘ পাঁচটি বছর নিরবে একা একা সয়েছিলাম।
আমি একা একা নিজের ভিতরে ক্ষয়ে যেতে লাগলাম। আমার বউ-বাচ্চাদেরকে ছেড়ে সপ্তাহের ছ’টি দিন নিজের ভিতরে প্রতি মুহুর্তে মরছিলাম। আমার দীর্ঘশ্বাসগুলি ও মানুষ দেখে বের হবার পথ খুঁজে ফিরতো।
আমার বউ আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতো। আমি যখন আসতাম, তখন ওর ছোট্ট দুই রুমের বাসাটিতে যেনো ঈদের আমেজ বিরাজ করতো। আমার সন্তানেরা আমার সব জীর্ণতা-মলিনতা কষ্টকর ক্লেদাক্ততা ঘুচিয়ে দিতো ওদের ভালোবাসার দ্বারা- ওদের অগোচরে!
আমি আমার ছোট বাবুটাকে বুকের ভিতরে জড়িয়ে রেখে বিগত সপ্তাহের জীর্ণতা ভুলতে চাইতাম। আমি প্রতি সপ্তাহে একদিন বেঁচে থাকতাম- বাকি ছ’দিনের আসন্ন মৃত্যুর কথা মাথায় রেখে।
এভাবেই আমার দিনগুলি কাটছিলো।
এক বিষণ্ণ বেলাশেষের অণুক্ষণ বিরাজ করতো আমার ২৪টি ঘন্টা।
( ক্রমশ: )
ছবিঃ Nobi Hossain
ভালো লাগছে । চালিয়ে যান ভাই । শুভকামনা রইলো
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ রাত্রি।
জানিনা এখন কেমন আছেন তবে বিতে হুয়া কাল যে আপনার ভালো যায়নি …
দ্য লস্ট আইডেন্টিটি পড়ে অনুমান করতে পারছি। ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
রেখে যায় স্মৃতি। আমি সেই কালকে এইসময়ের সাথে মিশিয়ে আনে ওয়ালা কালের জন্য কিছু রোমন্থন্যযোগ্য সুখ-স্মৃতি রেখে যেতে চাই।
প্রতিটি দিনই বিতে হুয়া কালে পরিণত হয়
হ্যা
অনেক ভালো এবং আনন্দে থাকা প্রয়োজন।
আপনিও আনন্দে এবং ভালো থাকুন।

প্রিয় লেখক মামুন ভাই, ভালো থাকুন সবসময়। শুভ কামনা…
ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় ভাই।
অনেক ভালো থাকুন আপনিও।
“আমি আমার ছোট বাবুটাকে বুকের ভিতরে জড়িয়ে রেখে বিগত সপ্তাহের জীর্ণতা ভুলতে চাইতাম। আমি প্রতি সপ্তাহে একদিন বেঁচে থাকতাম- বাকি ছ`দিনের আসন্ন মৃত্যুর কথা মাথায় রেখে।”
‘জীবন সহজ নয়’ এ কথাই যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় আপনার গল্প।
ভালো থাকুন সতত।
অনেক বুদ্ধি আপনার মিতা
ভালো থাকুন সবসময়।