গালি নিয়ে গলাগলি

গান এবং গালির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকলেও দুটোর মধ্যে এক চমৎকার মিল আছে। গান সবাই যেমন গাইতে পারে না তেমনি গালিও সবাই দিতে পারে না। গানে যেমন সুর তাল লয় আছে তেমন গালিতেও আছে।

আমার স্কুল জীবনের এক বন্ধু সুন্দর গালি দিতে পারতো আমরা তাঁর গালি শুনে খুব মজা পেতাম। গালিতে সে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করতো যা এখনো অন্য কারো মুখে শুনিনি। কাউকে গালি দিতে গিয়ে সে শুধু বাবা মায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো না। তা বিস্তৃত হতো পুর্ব পুরুষ পর্যন্ত এমন কি জন্মের পর যিনি আজান দিয়েছিলেন উনার বাবা মাকেও নিয়ে আসতেন। এ তো গেল তাঁর গালির দিক তাঁর আরেকটি ভাল গুন ছিলো সে ভালো গানও করতে পারতো। সেই কতো কাল আগের কথা খুব মনে পড়ে।

গালির মধ্যে খুব কমন হচ্ছে “শালা”, “শালার পুত”, সম্বন্ধীর পুত”। আপাত দৃষ্টিতে গালি মনে হলেও আসলে তা গালি নয় এগুলো আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক। সমস্যা হয় তখনি যখন অনাত্মীয় কাউকে এসবে সম্বোধন করা হয়।

কুকুর, বিড়াল, গাধা র বাচ্চাকে কুকুরের বাচ্চা, বিড়ালের বাচ্চা বা গাধার বাচ্চাই তো বলা হয়। মানুষের বাচ্চাকে কুকুরের বাচ্চা বা গাধার বাচ্চা বলা হলেই তা গালি হয়ে যায়।

যে সব পশুপাখিকে গালি দিতে ব্যবহার করি তাঁর মধ্যেও শ্রেণী ভেদ আছে। কাউকে “গাধার বাচ্চা” বললে খুব মন খারাপ করবেন সেই একই ব্যক্তিকে “বাঘের বাচ্চা” বলুন খুব খুশি হবে।

গালি দিতে আমরা পশু পাখি ছাড়াও দেশের নামও ব্যবহার করি। আমাদের ছোট বেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর এক পক্ষ শ্লোগান দিতো “রুশ ভারতের দালালেরা সাবধান”। আবার অন্য পক্ষ বলতো “আমেরিকার দালালেরা সাবধান”। মনে হতো আমরা সবাই দালালের জাতি কেউ রুশের কেউ বা আমেরিকার !

আর যাই হোক পশুর নাম নিয়ে গালি দেওয়া ঠিক নয়। ওরা আমাদের মতো পরিবেশ বিপন্ন করে না। আমরাই ওদের নিরাপদ ভূমিতে প্রমোদ ভবন গড়ি। আমাদের মতো বৈধ অবৈধ পথে আগামীকালের জন্য সঞ্চয় করে না। ওরা দিনে আনে দিনে খায়। ওদের ইন্টারনেট মোবাইল বা পত্রিকা নেই তবু ওরা বিপদের আঁচ করতে পারে।

হুমায়ুন আহমেদের নাটকে পাখিকে গালি দিতে দেখেছিলাম “তুই রাজাকার”, একদিন পশু পাখিরা আমাদের গালি দেবে “মানুষের বাচ্চা” বলে। হতে পারে এখনো দিচ্ছে। আমরা তো ওদের ভাষা বুঝি না।

মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক কিছু না বোঝাই ভালো। সব কিছু বুঝতে গেলে বা পাড়লে কষ্ট পেতে হয়। মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য হচ্ছে ওরা আদর্শের জন্য মরতে পারে না আমরা পারি।

অমিত রায় সম্পর্কে

আমি আগন্তুক, আমি জনগণেশের প্রচণ্ড কৌতুক। খোলো দ্বার, বার্তা আনিয়াছি বিধাতার। মহাকালেশ্বর পাঠায়েছে দুর্লক্ষ্য অক্ষর, বল্‌ দুঃসাহসী কে কে মৃত্যু পণ রেখে দিবি তার দুরূহ উত্তর।

4 thoughts on “গালি নিয়ে গলাগলি

  1. ‘মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য হচ্ছে ওরা আদর্শের জন্য মরতে পারে না; আমরা পারি।’

    ___ ধ্রুব সত্য। যদি দেখার চোখ থাকে নিশ্চয়ই তিনি দেখবেন।
    নতুন এসেই মি. অমিত রায় মন জয় করার মতো হয়ে উঠছেন। :)

  2. জয় তো কত কিছুই করতে চাই । হয় না

  3. হুমায়ুন আহমেদের নাটকে পাখিকে গালি দিতে দেখেছিলাম “তুই রাজাকার”, একদিন পশু পাখিরা আমাদের গালি দেবে “মানুষের বাচ্চা” বলে। হতে পারে এখনো দিচ্ছে। আমরা তো ওদের ভাষা বুঝি না।
    *সত্যি মৃনুষের বাচ্চা শব্দটাও কখনো কখনো গালি !

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।