মনিষার বয়স এখন তিন বছর। সে এখন কথা বলতে পারে। খেলতে পারে। রাগ করতে পারে। বায়না ধরতে পারে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ানোর সময় অনেক বায়না ধরে। কোন কিছুতেই ভুলিয়ে তাকে খাওয়ানো যায় না। তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য রীতিমত তার সাথে যুদ্ধ করতে হয়। তাকে খাবার খাওয়ানো যে কত কঠিন তা মনিষার মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। কত রূপকথার গল্প ও মিথ্যার ভা-ার সাজিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাকে খাওয়াতে হয় তা বলা মুশকিল। কখনো এক লোকমা মুখে দিলে এ রুম ছেড়ে অন্য রুমে চলে যায়। এ নিয়ে তার মাকে সারাক্ষণ তার পিছনে দৌঁড়াতে হয়।
সেদিন অফিস থেকে এসেই দেখি মনিষার মা ফরিদা তাকে সারা ঘর দৌঁড়িয়ে খাবার খাওয়াচ্ছে। আমাকে দেখেই মনিষা দৌঁড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে বললো, আব্বু আমি আম্মুর হাতে ভাত খাব না। আম্মু আমাকে বকা দেয়! আমাকে মারে!
– কি বললে! তোমার আম্মু তোমাকে মারে?
– হ্যাঁ আব্বু।
এতটুকুন মেয়ে বাবার কাছে মায়ের নামে নালিশ করায় ফরিদা বললো, কি আমার নামে বাবার কাছে নালিশ! বলি কে খাওয়াবে তুকে? আমি আর পারব না। তোর আব্বুকে বল অফিস থেকে এসে তুকে যেন খায়য়ে দিয়ে যায়।
আমি তখন বললাম, ঠিক আছে আমিই আমার মেয়েকে খাওয়াবো। তোমাকে খাওয়াতে হবে না।
– তুমি বুঝবে কি কত কষ্ট করে এই মেয়েকে ভাত খাওয়াতে হয়। দেখ একদিন খাওয়ায়ে কেমন মজা লাগে।
– আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নিই তারপর খাওয়াচ্ছি।
মনিষাকে নিয়ে ড্রাইনিং টেবিলে বসলাম। তারপর ফরিদাকে বললাম ভাত দেয়ার জন্য। ফরিদা ভাত বেড়ে দেয়ায় আমি মনিষাকে খাওয়ানোর জন্য প্লেট হাতে নিলাম। ভাত মেখে এক লোকমা হাতে নিয়ে বললাম, হা কর আম্মু।
– আব্বু আমি এখন খাব না। পরে খাব। তুমি খাও।
– আমিতো খাবই তুমিও খাবে আমার সাথে।
– খাও আম্মু ডিম দিয়ে খাও।
– আমি ডিম দিয়ে খাব না, মাছ দিয়ে খাব।
– ঠিক আছে মাছ দিয়ে খাও।
– মাছ দিয়ে খাব না, মুরগি দিয়ে খাব।
মনিষার এসব বায়না দেখে আমি তাকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম, আম্মুু! ভাত না খেলে কিন্তু কাক আসবে! কাকে ভাত নিয়ে যাবে!! কিন্তু না কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তাই এবার নতুন পন্থা অবলম্বন করলাম।
– শোনো আম্মু! ভাত না খেলে শিয়াল আসবে! শিয়াল তোমাকে নিয়ে যাবে।
শিয়ালের কথা শুনে মনিষা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আব্বু শিয়াল কী?
– আগে ভাত খাও। তারপর বলব।
– না এক্ষুনি বল।
– বলছি তার আগে ভাত খাও।
শিয়াল সর্ম্পকে জানার জন্য এবার মনিষা হা করল। আর অমনি আমি তার মুখে পুড়ে দিলাম এক লোকমা ভাত।
কোনরকম এক লোকমা ভাত মুখে দিয়েই বললো, আব্বু বল না শিয়াল কী?
– শিয়াল মানে এটা দেখতে কুকুরের মতো। দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে।
– লুকিয়ে থাকে কেন?
– মানুষের ভয়ে।
– মানুষকে ভয় পায় কেন?
– মানুষ শিয়াল দেখলে মেরে ফেলে তাই।
– মানুষ শিয়াল মারে কেন?
– শিয়াল মানুষকে খেয়ে ফেলে তাই।
– শিয়াল মানুষকে খেয়ে ফেলে! বলেই আমাকে ঝাপটে ধরে আবার বললো, আব্বু আমি শিয়াল দেখব।
– হ্যাঁ আম্মু তোমাকে দেখাবো। আগে খাবার শেষ করে নাও।
– না! আগে শিয়াল দেখাও।
– দেখো! বেশি কথা বলো না! ভাত না খেলে সত্যি সত্যি শিয়াল এসে কামড় দিবে!
– তুমি মিথ্যে বলছো আব্বু! শিয়ালতো দিনের বেলা আসে না। বলেই দিল এক দৌঁড়। এক দৌঁড়ে দাদুর কাছে চলে গেল।
– দাদু! দাদু! আব্বু আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।
নাতনীর কথা শুনে আম্মা আমাকে তলব করল।
– কিরে ফয়সাল তুই আমার নাতনীকে ভয় দেখাচ্ছিস কেন?
– কি করব আম্মা? ভয় দেখিয়েতো ভাত খাওয়াতে পারছি না।
– ছোট বাচ্চাকে ভয় দেখাছনে।
– ওতো ভয়ও পায় না। বলে কি সে শিয়াল দেখবে।
মনিষা আবার আমার কাছে এসে বললো, আব্বু আমি শিয়াল দেখে তারপর ভাত খাব।
– ঠিক আছে বলছিতো আমি তোমাকে শিয়াল দেখাব। রাত হলে তারপর দেখাব। এখন তুমি ভাত খাও লক্ষ্মীটি।
– না! না!! না!!! খাব না। বলেই দিল দৌঁড়। আর আমনি আমার সাথে ধাক্কা লেগে হাতের প্লেটটি পড়ে ভেঙ্গে গেল।
রচনাকাল: ১০/০৯/২০১৫খ্রি:
শিশুতোষ লিখা পড়লে মন ঝরঝরে হয়ে যায়। ধন্যবাদ প্রিয় গল্পকার।
শুভ সন্ধ্যা।
ধন্যবাদ প্রিয়।
সাবলীল ভাষায় চমতকার লিখন।।
ধন্যবাদ কবি জসিম ভাই।