স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৫ম পর্ব

স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৫ম পর্ব

(আলো জ্বললেই দেখা যায় একটা ভাঙাচোরা বাড়ীর রোয়াকে বসে একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের বাটি হাতে সে গান গেয়ে চলেছে আর খাচ্ছে)

কথা বলতে ভার দিয়েছ
বোবা কালার এই ভুবনে।
আমিই নিছক গণ্ডমূর্খ
আর সকলে সবই জানে।।
আড্ডা দেওয়ার বেঞ্চি দিলে
তার দু পায়া নড়ন চড়ন।
ডাকলে তবু কেউ আসে না
এক এক জনের এক এক ধরন।।
সাপলুডো কি দাবার ছকে
ঘড়ির কাঁটা অবিশ্রান্ত।
সময় এখন চালচুলোহীন
আগেভাগে কে আর জানতো!
স্বপ্নহীনের বুকপকেটে
লাল নীল সব কলম থাকে।
স্বপ্ন ছাড়াই পদ্য লেখে
রাজা তাকেই বাঁচিয়ে রাখে।।
কথা বলতে দায় চাপালে
বাচাল আমি চিরটাকাল।
দাঁড়ের ময়না আমি তো নই
কোদাল কে তাই বলি কোদাল।।
ব্যাঘ্র আজও ব্যাঘ্র এবং
শকুন আজও শকুনই আছে।
মানুষ কেবল পালটে যাচ্ছে
নিত্য নতুন বাজার ধাঁচে।।
উলটে পালটে সব দেখেছি
তন্ত্র মন্ত্র গুরুর বিধান।
নানান পথে নানান মতে
কখনো বাম কখনো ডান।।
দিন কে যারা রাত্রি বানায়
রাত কে যারা দিন সাজালো
মহাপুরুষ তারাই নিজের
জয়ধ্বনির ঢাক বাজালো।।
কথা বলতে দিলেন যখন
কথার কথা বলব না আর।
কথায় আগুন জ্বালিয়ে তুলি
কথায় হবে ওস্তাদী মার।।
নটে গাছটি মুড়োয় তবু
কথা আমার ফুরোয় না।
মুখোশ ছিঁড়ে মুখ না দেখে
প্রাণ যে আমার জুড়োয় না।।

(ভেতর থেকে এক মহিলা চিৎকার করতে করতে আসেন। তিনি জগাইয়ের মা। চিৎকার শুনে জগাইয়ের গান থেমে যায়)

মা – এই যে নবাবের ব্যাটা নবাব! এখনো বসে বসে কালোয়াতির আসর চলছে? এদিকে বেলা কত হলো তা খেয়াল আছে? ডিমের গুমটি কি বেলা বারোটায় খুলবে? আর লোকে অতক্ষণ তোর জন্যে দাঁড়িয়ে থাকবে? বাজারে এখন ডিমের একশোটা দোকান হয়েছে। যার যেখানে খুশি সেখানে কিনবে।
জগাই – আঃ! মা! দিলে তো এই সাত সকালে মেজাজটা চটকে!
মা – মেজাজ! তোমাদের ওই জমিদারী মেজাজ নিয়ে লালকেল্লায় গিয়ে থাকলেই তো পারো। এখানে কেন? তিনবেলা গেলার সময়ে মা কে মনে পড়ে। কিন্তু গেলার জিনিসপত্র কোত্থেকে আসবে সে খেয়াল আছে?
জগাই – উফ মা মা মা গো মা! একবার কমার্শিয়াল ব্রেক দাও মা! রুকাওট কে লিয়ে একটুও খেদ নেহী হ্যায় মা?
মা – হ্যাঁ, মা তো তোমাদের শত্রু। বাপ চিরটাকাল হাড় জ্বালিয়ে গেছে, এখন ছেলেও তাই করছে। যত কুঁড়ের বাদশা সব আমার কপালেই জোটে!
জগাই – মা! এরপরে ওই ডায়লগটা! (মায়ের নকল করে) চিতায় ওঠা পর্যন্ত আমার কপালে এই আছে। হে ভগবান! বাবা জেনেশুনে আমার কোন ঘরে বিয়ে দিল!
মা – হ্যাঁ দিলই তো। এরচেয়ে গলায় কলসি বেঁধে জলে ভাসিয়ে দিলে ভালো হত।

(চলবে)

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক) ৫ম পর্ব

  1. দারুণ চলছে প্রিয় নাট্যকার কবি সৌমিত্র। শুভ সন্ধ্যা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।