“প্রিয় ছোটমামা,
ফাগুন মাস আসতে আরো দুদিন বাকী। আমার মেসের পাশে মাঠ। সেই মাঠে এক ঝাঁকড়া বটগাছ। গাঢ় ভোরে কোকিল ডাকতে শুরু করেছে।
আজ সকালের নাশতায় পরোটা ও মাংসের ঝাল ঝোল হলে বেশ হত। কিন্তু কপালে আছে এক কাপ চা আর একটা দুই টাকা দামের বিস্কুট। শক্ত বিস্কুট চায়ে ডুবাতেই নরম, আহ্লাদে গদগদ।
শীতে ছুটির দুপুরে মা টমেটু-ধনেপাতা কুচি দিয়ে সরষা তেলে গরম ভাত মাখিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে ঘি চিনি দিয়ে। মেসের টানাটানির জীবনে সরষা তেল ও ঘি চিনিরা হারিয়ে গেছে। বেকারের কপালে মায়ের দোয়া থাকে, সাধ্যের অক্ষমতায় আদর পালায়। মা আদরকে ধরার চেষ্টা করে যান। ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেংগে গেলে আজও আব্বার কোরান পাঠের সুর শুনতে পাই। সেই কবে সকল পাঠের দায় চুকিয়ে আব্বা ঘুমিয়ে গেছেন। তবু তিনি এই মেসে ফজরের ওয়াক্তে আসেন। মা-বাবারা এতো ভালো হন কেন!
আজ বহুদূর যেতে হবে। বহুদূর। শেভ করতে হবে। তমা একটা শেভিং কিট দিয়েছিল। দামী ব্রান্ড। সম্পর্ক ভেংগে গেছে, শেভিং কিট ভাংগে নাই। তমার ব্রান্ডটা জানার আগেই তাকে হারিয়ে ফেলেছি, হারিয়ে গেছে। খুব লক্ষী মেয়ে ছিল, মায়াবতী। আজ যাত্রার আগে লম্বা সময় ধরে গোছল করে নিবো।
কাল নতুন সকাল আসবে। চায়ে ভিজানো বিস্কুটের মত নরম, আহ্লাদী। কিন্তু আমি আজই যাবো। বহুদূরের পথ। অবশ্য তেমন তাড়া নেই। কাল গেলও হয়। কিন্তু যেতে যখন হবে, তারাতারি যাওয়াই ভালো।
-সজল হাওলাদার”
মডেল থানার ওসি ক্রসফায়ারে নিহত যুবকের পকেটে চিঠিটা পেয়েছেন। এটাকে দিব্যি সুসাইড নোট হিসাবে চালিয়ে দেয়া যায়। ছেলেটা দোষী কি নির্দোষ তা প্রমাণের ঝক্কি নাই। কিন্তু তিনি বারবার চিঠিটা পড়ে গভীর কষ্টে নিমজ্জিত হচ্ছেন। বহুদিন পরে একটা আকুল কান্না দলা পাকিয়ে তার গলার কাছে এসে আটকে যাচ্ছে। অজ্ঞাত লাশের বিবর্ণ চেহারার দিকে তাকালেই ভেসে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিজের ছেলের অভিমানমিশ্রিত আত্নভোলা আদুরে মুখ।
এক একটা এমন ছন্নছাড়া দিনে ওসির ইউনিফর্মের ভিতরে সবকিছু তুচ্ছ করে জেগে উঠেন সার্বজনীন পিতা।
২৫.০২.২০১৫
আপনার লিখাটি পড়ে মন আর্দ্র হলো। কী শুষ্কময় আমাদের জীবন !!
দারুণ…………
অসাধারণ।