চারদিকে রঙিন আলো। অনবরত জ্বলছে নিভছে। গাড়িগুলো ছুটে চলছে দূর থেকে দূরন্তে। মাঝে-মাঝে ট্রাফিকের বাসিতে থেমে যাচ্ছে হঠাৎ করে। সেসময়ে গাড়ির ভিতরের যান্ত্রিক মানুষেরা ল্যাপটপ নামক যন্ত্রে হাত চালাচ্ছে, কেউবা কান রাখছে রেডিওতে। এভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে ব্যস্ত শহরের প্রতিটি দিন।
এমনি করেই একদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এলো। গাড়ির চলা-ফেরা একই রকম। ট্রাফিকের বাসিতে থেমে আছে গাড়িগুলো। লাল রঙের একটি গাড়িতে বসে আছে ড্রাইভারসহ চারজন। বাবা-মা আর ছোট্ট ফুটফুটে একটি মিষ্টি মেয়ে। বয়স হবে প্রায় তিন বছর। চোখে-মুখে চঞ্চলতা। বেশ পরিপাটি করে মা গুছিয়ে দিয়েছে। গায়ে সুবাসিত লোশন, চুলে লাল-নীল ক্লিপ, পোশাকটিতেও আভিজাত্য ফুটে উঠেছে। নাম তার আরশি। গাড়ির ভিতর একদম থাকতে মন চাচ্ছে না আরশির। মনে হচ্ছে আর একটু হলেই কেঁদে দেবে। মাকে বিরক্ত করে তুলেছে বাইরে বের হওয়ার জন্য।
হঠাৎ এমন সময় জানালার ওপাশে এসে দাঁড়ালো মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা। কোলে বসা আছে আরশির বয়সেই একটি শিশু। শিশুটি গাড়ির বাইরে দাঁড়ানো মহিলার মেয়ে, দেখে বোঝা যাচ্ছে। নাম শান্তা। বয়স সাড়ে তিন হবে। মা তাকে কোলে নিয়ে দিনভর হেঁটে চলেছে রাস্তায় রাস্তায়। উদ্দেশ্য একটাই চকলেট বেঁচে টাকা রোজগার। শান্তার শরীরটা একেবারেই রোগাটে। মাথার চুলগুলো পাতলা ফ্যাকাশে। তেল সাবান মনে হয় কোনদিন গায়ে ওঠেনি। আর পরনের ওটা পোশাক বলা যায় না, জীর্ণ একটি জামা। চোখে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তার অবোধ মন হয়ত ভাবছে, এটাই তার স্বাভাবিক জীবন। সারাজীবন হয়ত মায়ের কোলে বসে কাটিয়ে দিতে হবে সারা পথ। আরশির সাথে তার চাওয়া-পাওয়া, পরিবেশের অনেক অমিল।
দূরন্ত আরশি হঠাৎ শান্তাকে দেখতে পেল। মুহূর্তের মধ্যে তার মন ভালো হয়ে গেল। মুখে ফুটল রাজ্যের হাসি। শান্তা যেন তার কতদিনের চেনা। আধো কথায় সে তার মনের অনুভূতি শান্তাকে বোঝাল। মলিন শান্তাও যেন তাকে পেয়ে অনেক খুশি। একপর্যায় আরশি হাতের ইশারায় শান্তাকে আসতে বলল গাড়ির ভিতর কিন্তু শ্রেণী বৈষম্যের কারণে সেটা আর সম্ভব হলো না। বাইরের শান্তা বাইরেই রয়ে গেল। আরশির অপরিণত বোধ যদি পরিনত হত তাহলে কি ফিরে চাইতো শান্তার দিকে ? মেনে কি নিতে পারত এতো আপন করে ? হঠাৎ গাড়ি ছেড়ে দিল শান্তার অপলক দৃষ্টি পড়ে রইল আরশির লাল গাড়ির দিকে। কি ভাবছে শান্তা আর কখনো কি দেখা হবে তার সঙ্গে …..।
বোধ-ক্ষমতার বিকাশ মানেই তো শ্রেণী ভেদাভেদ।
এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। কিন্তু স্বার্থে টানে ব্যস্ততার মাঝে কেউ কারোর দিকেই ফিরে তাকাচ্ছে না। আমরা যেন এক আজব প্রাণী ।
জীবনকে বড্ডো সুক্ষ্ন ভাবে কাছে থেকে দেখেছেন ভাই।
দ্বিমত নেই যে … বোধ-ক্ষমতার বিকাশ মানেই তো শ্রেণী ভেদাভেদ। একমত।
সুরাইয়া নাজনীন আপনাকে ধন্যবাদ।
পড়লাম বোন।
বোধ-ক্ষমতার বিকাশ মানেই তো শ্রেণী ভেদাভেদ।
* সুন্দর এবং যৌক্তিক…
শুভরাত্রি।