বিশেষ দরকারে নাইরোবি থেকে জেলা পর্যায়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে কাজের ফাঁকে একটা ডিভিশনে; এক নৃ-গোষ্ঠির বিদায়-বাসরের প্রস্তুতি দেখার জন্য। ওখানে ডিভিশন হলো জেলার ইমিডিয়েট নিচের এডমিনিস্ট্রেটিভ ইউনিট। জেলাকে ওরা এখন কাউণ্টি নাম দিয়েছে।
ওখানের কেউ আমাকে “কারিবু” বললো; কেউ “আবারিয়াকো” ।
জবাবে আমি “আসান্তে” এবং “মুজুরি সানা” বললাম।
এসবই গ্রিটিংস।
আমার জবাবে ওদের অনুভূতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় দেখে মনে হলো, মৃত্যু ওদেরকে একটু ভিন্নভাবে ভাবায়। কেনিয়ান এই নৃ-গোষ্ঠিটির নাম মনে নেই। স্বামী-স্ত্রীর একজন মারা গেলে ওদেরকে বিদায়-বাসর করতে হয়।
মৃত্যুর পর মৃতের সাথে ওরা অবিকল আরেকটা একটিভ বাসর করে কেন?
উত্তরটা খোঁজা হয়নি!
“মৃত্যু”কে বিদায়-বাসরের মাধ্যমে স্পেশাল করার পক্ষে বিপক্ষে নানান কথা বলা যাবে। ভাবতেই পারি, ওভাবে কেন? মৃত্যুকে স্পেশাল করার জন্য কতো কিছুই তো করা যেতে পারে! রঙে ঢঙ্গে বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে চির বিদায় দেয়ার সংস্কৃতির কথাও তো জানি।
কোনটা শুদ্ধ? কোনটা অশুদ্ধ?
আমার দুটো জগত আছে; বোধ করি অনেকেরই। সবার সাথে যে জগতে থাকি, সেখানে “শুদ্ধ” এবং “অশুদ্ধ” জোরালোভাবে বসত করে! তবে ওসবকিছুই ইম্পোজড!
একেবারেই নিজস্ব যে জগত আছে সেখানে “শুদ্ধ” এবং “অশুদ্ধ” বলে কিছু নেই। ওখানে “গ্রহণ করা” বা “না করা”র বিষয় কেবল!
কারো প্রস্থানে কি ব্যক্তির প্রতি সকল অনুভবের ক্রমান্বয়-মৃত্যু ঘটে? এটাই যদি নিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটাও মনোজগতে সেঁটে দেয়া অনুভব; যা আমরা বুঝতে পারিনা! চিরবিদায় অনুষ্ঠানকেও যে আগমন অনুষ্ঠানের মতোন আনন্দময় করা যায় সেটা যেমন জানিনা!
বেধে দেয়া নিয়মটুকু আমার নয়; সবার সাথে আমার! ব্যাতিক্রমটুকুই শুধু আমার আপন জগতের! রঙে ঢঙ্গে বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে প্রফুল্ল চিত্তে বিদায় দেয়ার ব্যাতিক্রমের মতোন।
আছেই তো দুইখানা ঘটনাঃ জন্ম এবং মৃত্যু!
মাঝখানে কিছু ইম্পোজড নিয়ম, বিয়ে, বিশ্বাস এবং সন্ধ্যায় কারো কারো পথ হারানোর স্বপ্ন;
পাখির মতো!
লজিক আছে আপনার জীবন অণুলিখনে। বারবার পড়ে মনে হয় এ যেন আমারই হৃদয়ের কথা। চলুক জীবন পাখির মতো। অভিনন্দন মিড দা।
এমন মন্তব্যে যেকোন লেখক নিজেকে পিজিটিভ্লি মূল্যায়ন করবে। কৃতজ্ঞতা রইলো।
সন্ধ্যায় পথ হারানোর স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে হাজারো মানুষ । ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য ।
মন্তব্যে মুগ্ধ।
কমপ্লিমেন্টের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ!
মাঝখানে কিছু ইম্পোজড নিয়ম, বিয়ে, বিশ্বাস এবং সন্ধ্যায় কারো কারো পথ হারানোর স্বপ্ন;
পাখির মতো!
* আপনার ভাব ভাষা দু-ই চমৎকার, মুগ্ধ না হয়ে পারেনা পাঠক…
শুভ কামনা নিরন্তর।
অসাধারণ কমপ্লিমেন্ট; ভীষণ আনন্দিত হয়েছি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ কবি!
যথারীতি পড়লাম মি. মিড। আপনার লিখায় কিছু একটা খুঁজি, কিন্তু কী খুঁজি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। ধন্যবাদ আপনাকে।
“কিছু একটা খুঁজি, কিন্তু কী খুঁজি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি”। মন্তব্যও যে কী ব্যঞ্জনাময় হতে পারে আপনারটা তার সাক্ষী।
আপনার মন্তব্যে আমিও কিছু খুঁজলাম। অনেক কিছু পেয়েছিঃ এইটে নয় ঐটে; না ঐটেও নয় ভিন্ন কোন কিছু—-
মৃত্যুর পর মৃতের সাথে ওরা অবিকল আরেকটা একটিভ বাসর করে ………বিষয়টা কতোটুকু বাস্তব সম্মত ভাবনার বিষয় বৈকি!
অনেক বছর অবস্থান করার কারণে ইস্ট আফ্রিকান কান্ট্রিগুলিতে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীগুলিকে যতোটা সম্ভব কাছ থেকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। ওসব দেশের মধ্যে কেনিয়ার রিফটভ্যালি প্রভিন্সের মানুষের ডাইভারসড কালচার আমাকে খুব আকৃষ্ট করত। ওদেরকে আগ্রহ নিয়ে গভীরভাবে অব্জারভ করেছি, সহকর্মী বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি এবং আপনার মতোই অবাক হয়েছি। সাউথ টুরকানায় পারাকাটি নামক একটা জায়গা আছে যেখানে একটানা দুইযুগ সরকারের কেউ যায়নি/যেতে পারেনি শুনে এবং ওদের সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা পেয়ে আমি যেতে চেষ্টা করেছি (এবং ব্যার্থ হয়েছি)। ওখানকার বাসিন্দারা নুন মরিচ এসব কিছু চিনেনা। পশু একমাত্র খাবার, পানির স্বল্পতার কারণে তাজা রক্তও খায়। প্রায় এরকম একটা নৃ-গোষ্ঠীর বিয়েতে গিয়েছিলাম। এই ব্লগে আমার লিখা আদিম মানুষের দেশে (দুই) দেখতে পারেন।
কেনিয়ার পর উগান্ডা এবং সাউথ সুদানে মুরলে নৃ-গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অফিসিয়ালি জেনেছি। কিন্তু দেখার সাহস করিনি। কারণ ওরা খুবই ভয়ংকর বিশেষ করে কেনিয়াতে।
যে নৃ-গোষ্ঠীর কথা এই লেখায় উল্লেখ করেছি তারা নাইরোবি থেকে বেশি দূরে থাকেনা। লেখাটাতে একটা কথা উল্লেখ করা হয়নি, মৃতের সাথে বাসর করার জন্য এখন ওদের মধ্যে কিছু লোক প্রস্তুত থাকে যারা টাকার বিনিময়ে রাজি হয়। তাই ওদের এই আদি সংস্কৃতি আর আগের মতো করে পালিত হয়না। কিন্তু বাসর করেই মৃতকে বিদায় দেয়া হয়।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।