ভাত

যখন আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তখন টাকা দিয়ে কি করবেন তার একটা ফর্দ তৈরী করা হয়। সেখানে ভ্রমণের একটা অংশ থাকে, গিফটের একটা অংশ থাকে, অংশ থাকে কিছু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার। কতশত ইচ্ছের সাথে যোগ হয় টাকা দিয়ে জলসাঘরে ভালোবাসা কেনা, সুস্থতা কেনার প্রয়োজনীয়তা আর কত যে ছালাম পাওয়ার দাম্ভিকতা তৈরী হয় তারও একটি ফর্দ মনে মনে ঠিক করে মানুষ !

কেউ কেউ রাতে ভাত খেতে পারে না। প্রবল অসুস্থ। বসে থেকে থেকে ডায়বেটিকস হয়েছে। টাকার অধিক ব্যাপ্তিতে ব্লাড প্রেশারও হাই থাকে। কোন রকম খেয়ে রাত কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন শান্তি। তাই কি আর হয় ? মধ্য রাত্রিতে উঠে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবতে হয় আপন মানুষগুলোর দূরে চলে যাওয়ার দুঃখ, নিজের মানুষের অবহেলার দুঃখ আরও কত কি ! সব কিছুর পরও তার কাছে যা আছে তা হল টাকা। বিশ্বাস করা যায় টাকা দিয়েই ভাত কিনতে হয় ! বিশ্বাস তো করতেই হবে আমাদের।

বিপরীতে খুব রোগাক্রান্ত একজন মানুষ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল হয় শুধু পরের দিনের ভোর দেখার প্রত্যাশায়। তার কাছে ভাতের আকাঙ্ক্ষা নেই। সে স্যালাইনে বাঁচে। তার বাঁচা, শরীরে রক্ত প্রবাহ আর চোখের দৃষ্টি সবকিছুই চলে অন্য মানুষের দেয়া সাহায্যে। কিন্তু এই মানুষটিরও পরিজন থাকে। এরও একটি শিশু থাকতে পারে, শিশুটির বাবার কাছে আকুতি থাকতে পারে, একটা খেলনা দেখে দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে এসে বলতে পারে “বাবা আমাকে খেলনাটা কিনে দাও”! বাবার উত্তর তখন কি এই সন্তানের কাছে ? সন্তান বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডের কাছে বসে থাকে। স্ত্রীও বসে থাকে। স্ত্রী বোঝে তার স্বামী রক্ত শূণ্য হয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তারপরও স্ত্রী পাশে থাকে।

কিন্তু স্ত্রী সন্তান কেউ ভাত খেতে পারে না ! যে টাকা মানুষ চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে সে টাকায় চিকিৎসাও হয়না ! ভাতের টাকা আসবে কোথা থেকে ? অন্যের ভাত খাওয়া দেখে শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, সে হিসেব কষতে শুরু করে ভাত খাওয়ার অধিকার হীনতার স্তর বিন্যাসের ! কলা আর বন রুটিতে তাদের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার পরও যে ভালো দিন না আসার চরম বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মত কঠিন সত্য মেনে নিয়ে ছেলেটির মা ছেলেটির মুখে বুকের দুধ ঠেলে দেয় ! ছেলেটি ভাতের তেষ্টায় অচেতন হয়ে যতক্ষণে ঘুমের ঘোরে চলে যায় তখন ততক্ষণে মায়ের নিজের ক্ষুধা নিবারণ শুধুই একজন মানুষের বাঁচার আকুতিতে নিঃশেষে বিভাজ্য।

একদিকে শহরের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল্ডিংয়ের কাচের চাকচিক্য অন্যদিকে টাকা গচ্ছিত না রেখে তা দিয়ে ভ্রমণ করে দেশ দেশান্তর ঘুরে জীবনের মানে খোঁজা মানুষগুলো আর ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই হা-ভাত ওয়ালা মানুষ বড় বেশী অপ্রয়োজনীয় একটা অংশ বলা যায় ….

16 thoughts on “ভাত

  1. সমাজকে এখন কয়েকটি শ্রেনীতে বিভক্ত করলে ভুল হবে। সোজা কথায় দুটি শ্রেণী। যত যা কিছুই আমাদের চারিপাশে; অহরহ ঘটছে বা চলছে এ আর কিছু নয়; আমাদের গড়া এঁকে দেয়া প্রেক্ষিত সীমানা প্রাচীর। জীবন যুদ্ধে পরাজিত লাখো মানুষের হাহাকার এক প্রান্তে, ভিন্নতে অভিন্ন সব সুখের জৌলুস।

    1. মাঝামাঝি ব্যপারটিও কম নয় প্রিয় ! ধন্যবাদ যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করার জন্য । 

    1. তাতো অবশ্যই । চিন্তার পার্থক্য থাকবেই । ধণ্যবাদ আপনাকে 

  2. মুদ্রা উচ্ছেদ করলে এর বিকল্প কি হতে পারে …… এ ভাবনা আমার বহুদিনের।

    আপনার লেখায় বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

    শুভকামনা মিঃ সাঈদ চৌধুরীhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. অনেক কষ্টের প্রতিচ্ছবি থাকে আমাদের পাশেই । ধন্যবাদ আপনাকে । 

  3. মধ্যবিত্ত হয়ে নদীর একূল আর ওকূল দুটোই দেখি। বিত্ত আর বিত্তহীনের মাঝে হেঁটে যাই।

    1. এই হেঁটে যাওয়ার শেষ কোথায় !ভেবে না পাই কুল । ধন্যবাদ 

    1. মানুষ খুব কষ্টে আছে ভাই । সেটাই উপলব্ধ । ভালো থাকবেন । 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।