সাঈদ চৌধুরী এর সকল পোস্ট

পৃথিবীতে প্রেম ছাড়া কিছু থাকার দরকার নেইতো

তোমার সাথে চা খেলেই
এক কাপ গল্প বনে যায় মনের কথাগুলো
তোমার হাতে কড়ই ফুল
আমার চিন্তায় তা বেনী এঁটেছে তোমার চুলে..
একবার এসেছিলে যে বেলায় পুকুর পাড়ে
তোমার জন্য সাজিয়ে রাখা মেহেদী রং
সূর্য কেড়ে নিয়ে বেলাজা গোধুলী বেলা হল…
আমি বললাম-
চল কৃষাণীর মত করে বাড়ি ফিরি কাস্তে হাতে!
তোমার বেজায় রাগ
কোথায় তুমি রানী হবে আর আমি হব রাজা
সেখানে পুরোটাই আমি বলে দিলাম
হব মোরা
একটি দেশের অভাগা বীজতলার প্রজা !

যুক্তি আছে তাতেও
এক জীবনে কত আর চাওয়া
কাস্তে হাতে, গামছা মাথায়
ধনিয়া পাতার ঘ্রাণ, ধানের এলিট সুবাস
গেট ফুল, সান বাঁধানো পুকুর পাড়ে শাপলার বিলাসিতা
কুয়াশা পড়লে
ঘাসফুলগুলোর আদর মাখা ডাকাডাকি
আর বাঁশ পাতায় চাঁদের কাজলা দিদির মায়া ভরা কায়া,
ছোট্ট একটি বাগান থাকবে
সেখানে গোলাপ কাটায় তোমার আঙ্গুলে রক্ত বিন্দুর আঘাতে
আমার কত উদ্বিগ্নতা !
এটুকুই যা…
তবুওতো রাস্তায় গেলে বখাটের শীষ শুনতে হবে না
শহরের বৈভবের প্রাসাদের পাশে ভাগারে পড়ে থাকা
শিশুর দেহে বৈধ আর অবৈধের হিসেব কষতে হবেনা,
হবেনা দেখতে
স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর রক্তাক্ত শরীরে মনের স্খলন !
বরং মাটির পেয়ালায়
তোমার সাথে চা খেলেই
এক কাপ গল্প বনে যাবে মনের কথাগুলো
পৃথিবীতে প্রেম ছাড়া কিছু থাকার দরকার নেইতো…

সাহিত্য অপার মিলনের সমার্থক

মানুষের শরীরের প্রতি অঙ্গ, আত্নিক বিষয়, আধ্যাতিক ভাবনা, মন্স্তাত্বিক চিন্তা ও চেতনার প্রয়াশ, সাংসারিক ও সামাজিক পটভূমিগুলোই হচ্ছে আমাদের বর্তমানে পঠিত বিষয়গুলো । আমরা স্কুল কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ি তা সবই আসলে এমন বিষয় যা আমাদের শরীরের সম্পদ, ভাবনা অথবা পারিপার্শিক কোন কারণ বা কারণের নিমিত্তে কোন ঘটনা ।
এখন যখন কোন সাহিত্য হয় তখন আমরা শেষে গিয়ে দেখি কোন না কোন নিজস্ব উপাদান সেখানে থেকেই যায় । যে সাহিত্যে অনেক মানুষের চেনা জানা উপাদান বেশী থাকে সে সাহিত্যগুলো পৌছে যায় মানুষের কাছে দ্রুত ।
একজন একটি বই লিখেছেন । সেখানে অনেক কবিতা ও রস দিয়েছেন তিনি । বইটি আশানুরুপের চেয়ে বেশী বিক্রি হয়েছে কিন্তু যেটা হয়নি তা হল সে বইটিতে মনে রাখার মত কোন কথা বা কোন লাইন লেখক লিখতে পারেনি । তাই বলে কি বইটি ফেলনা হয়ে যাবে ?
এখানেই মূল বিষয় । আমরা যেমন আমাদের শরীরের একটি অঙ্গ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আলাদা রেখে চলতে পারিনা তেমনি সাহিত্যও পৃথিবীর সব কাগজ এবং মনের ভাবনার মূল্য দিয়ে ধারণ করে রাখে সব লেখকের লেখা ।
লেখা ধারণ মানেই লেখক বড় মাপের লেখক হয়ে যাবেন তা নয় তবে যেটা সত্য সেটা হল কেউ কেউ নিজের কথাগুলো বলে যেতে চেয়েছে । পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বার উচ্চারিত নামের বইটি কি আমরা পড়েছি ? হয়ত পড়েছি নতুবা পড়িনি কিন্তু তা লিপিবদ্ধ তেমনি লিপিবদ্ধ অবিখ্যাত কোন বইও !
আমাদের প্রতিদিনের হাজারো কাজগুলোই একদিন সাহিত্য হয়ে ওঠে, একসময় আমরা একটা সভ্যতা নামে পরিচিত হবো আগামী প্রজন্মে কিন্তু যেটা দেয়ার বাকী তা হল আমাদেরকে আরও শক্তভাবে ধারণ করার মত কিছু উপাদান সংগ্রহ করে দিয়ে যাওয়া ।
সাহিত্যে এখন সাহিত্যিকদের বড় বেশী হানাহানি চলে !অন্যকে পেছনে ফেলার মানসিকতা নিয়ে সাহিত্য রচনা হয়না তার প্রমাণও আমাদের শরীরে আছে । আমি যদি ডান হাতের চেয়ে বা হাতকে বেশী সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করে তবেই দেখা যাবে শরীর বেঁকে বসেছে, আমি যদি প্রকৃতিতে জলাশয় রেখে সব গাছ কেটে ফেলি তবে আমরাই শেষ হয়ে যাবো । ঠিক এভাবেই সাহিত্য, সাহিত্যিক একে অপরের খুব প্রয়োজনীয় উপাদান ।
সাহিত্য ঘরে আটকে থাকার বিষয় নয় । যে যাই লিখছে তাই আমাদের উপাদান হয়ে উঠছে । এই উপাদানগুলো একসময় আমাদেরকে অন্য প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবে ।
তাই সাহিত্যকে আলোচনার সময় সাহিত্য নিয়ে কথা বলার সময় ও সাহিত্যিক হয়ে ওঠার সময় যত পারুন মানুষকে, মানুষদেরকে একত্রিত করুন । মানুষ যখন খুব বেশী রুঢ় হয়ে যায় তখন মানুষগুলো ভুলে যায় তার পেছনের সব কথা ।
একটি ফুল শোভিত মিলনের মত সাহিত্য দিয়ে যাদের জন্ম তারা হয়ে ওঠে অকবিতার নগরের বাসিন্দা । তারা ভুলে যায় বীর্য্য স্থলনের আনন্দে যেভাবে ফুলেল সংবর্ধনা তারা ভূমিতে আসার জন্য পেয়েছিলো সেখানে শুধু মমতা থাকা প্রয়োজন ।
সাহিত্য অঙ্গে থেকে জীবনের রং পর্য ন্ত ঘেরা থাকে । অথচ আমরা আমাদের ভ্রুকুটি শিখি সামাজিক বৈপরিত্ব থেকে দোষারোপ করি প্রতিদিনের কাজগুলোকে ।
মানুষকে পড়ার মধ্যে ফেরাতে হবে । পাঠশালায় পড়ে কখনও এই আন্তরিক ভালোবাসা শেখানো সম্ভব নয় । প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসার জয়গান শেখানোর জন্য হলেও আপনাকে ফিরতে হবে সাহিত্যে । ছড়িয়ে পড়ুক সাহিত্য, ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসার গান, প্রজন্ম প্রজন্ম চিনুক আমাদের আন্তরিক সভ্যতার মানুষ হিসেবে ।

বই, এনড্রয়েড ও মিথ্যে কামে মিথ্যের বসত

এখন আর বইয়ের পাতা উল্টে না
বইয়ের পাতার নীচে জমে থাকা পুরোণো গোলাপের পাঁপড়ির ঘ্রাণও নেই
আঙ্গুলে আঙ্গুলে যেভাবে উল্টে যায় খবর, প্রেম, উপাখ্যান
সেখানেও যেন দৃষ্টিগুলো অগোছালো !
ফেইসবুক, টুইটার অথবা লিংকড ইনে খুঁজে বেড়ানো কি যেন স্বপ্ন
কি যেন বিভোর করে রাখে দিনগুলো,
কি যেন এক অস্থির হৃদয়ের তাড়নগুলো চলতে থাকে নিরবধি !
ধর্ষণ, খুন, রাহাজানির ছবিগুলোতে চোখ আটকে থাকে
কারও কারও চোখ আটকে থাকে
অর্ধ নগ্ন দেহের ভাঁজে চোখের আকৃতি মেটানোর মধ্যাকর্ষে!
একা পড়ে রয় কথিত অভদ্র পল্লী. নিঃসঙ্গ হয় মানবতা, মানবতাবাদী
থেমে যায় শহরে ঘামের বিপণন করা মানুষগুলো জীবন কথার আহাজারি…
চলতে থাকে এনড্রয়েডের উপর আঙ্গুলের অত্যাচার,
চোখ গুলো বহমান হয় দ্রুতগতি ট্রেনে বসে থেকে
জানালার দিকে ধ্যান মগ্ন হয়ে তাকানোর মত,
অস্থির হয়ে ওঠে মগজ
অথচ সবটুকু সমাধানহীন, অথচ সবটুকু ভাবলেশহীন অথর্ব …
বইয়ের পাতায় পুরোণো গন্ধ বাড়ে, ইঁদুরের খাদ্য হয় পাতাগুলো,
মানুষগুলো হারায় তাদের অস্তিত্ব-
ইচ্ছে করে, মনে সুখ নেয়ার ভান করে, মিথ্যে কামের অযথা আর্তি নিয়ে…

যেখানে শুধু জল আর মায়া হারানোর হাহাকার

এক কাল এক কাল করে
যতবার মহাকাল গিয়েছে চলে
ততবারই স্পষ্ট পদচিহ্ন এঁকেছে এ পথে
বাঁশের সাঁকোর সোপানের অভাবে হয়ত একদা এ পথে
ছিন্ন হয়েছে কোন বধুয়ার ভালোবাসার আচল
হয়ত চর দখলের বিভেদে গিয়েছে প্রাণ,
অথবা বিশাল জলরাশির মাঝ বরাবর এসে হাসিতে লুটিয়ে পড়েছে মাঝি
পেয়ে জীবিকার উপাদান…
শাপলা কুড়োনো মেয়েটি লুটোপুটি খেয়ে
শাপলা কুড়িয়ে পেটের দায়ে মালাকে দিয়েছে বিসর্জন
নতুবা ঘাটের প্রেমে পড়েছে নাগর
ভিন্ন মায়ার তাত্বিক কোন তালে…
মহাকাল যতই স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে
ততই আমরা হয়েছি সুক্ষ সুক্ষ শোকের অভিধান
এখন শুকনো কাঠের সোপানে মিলেছে দুতীর
অথচ নেই সেই ঐকতান
আড্ডায় মাতে যুবকেরা, নাওরীর দুঃখ নেই
প্রেমের জন্য পাড়ি দিতে হয়না ডিঙ্গি নৌকায় জল ঘূর্ণন
পথ শেষ হয় বিকেলের কার্নিসে
অথচ প্রেম এখন খুব বেশী দূরে,
ভালোবাসা এখন মিলিয়ে গিয়েছে ধুসর দিগন্তে
মহাকাল স্বাক্ষী হয়ে দেখাচ্ছে মরুর তেপান্তর
অসহ্য কোন তাপের আগ্রাসন….

ছবিটি শ্রীপুরের প্রলাদপুর গ্রাম থেকে তোলা
ছবিঃ সাঈদ চৌধুরী

প্রাচীনের অসমাপ্ত কবিতা

প্রাচীনের অসমাপ্ত কবিতা

যতক্ষণে আমি লেখক সত্তা থেকে অবসর নিয়েছি
ততক্ষণে আমি টেবিলের কোণায় দাঁড়ানো ল্যাম্প পোষ্টের অভিমুখে
নিঝুম রাতে মানুষের হৃদয় আছর করা আমিতে পরিনত
তখন যে বাস করে তা অতি প্রাচীনে হারিয়ে যাওয়া কোন শব্দ
অথবা কোন ইশারা…

বাইরে তুমুল বৃষ্টির সময় একপাশে টেবিল ল্যাম্প
আর অন্য পাশে আয়নার ছায়া
এরমধ্যে পেণ্ডুলামের অযাচিত গমনে চলছে
হৃদয়ে প্রাচীনে ডোবার আন্দোলন!

বীরত্ব চেনাবে বিন্দুসার হয়ে অশোকের শাসনামলে
মৌর্য্যদের বীরত্বের ইতিহাসের…
আমি ততক্ষণে ঘোর লাগা রাজপ্রাসাদে ….
বাইশ বছর বয়সের বিন্দুসার যখন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত
তখনকার রংমহলের মদ্যপ গন্ধ, অশরীরির রূপবতী বাহুর ছন্দ
আর বাজুবন্ধের টান
শাসনের অসহ্যতাকে যেমন দূর করে দিত
ঠিক তেমনি আমিও সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে একদা ফিরেছি
নাভিমূলের ঠিক প্রান্তে,
যেখানে অলক্ষে বিস্মৃতি বিকিয়ে দিয়ে একটা সাম্রাজ্য জয় করা যায়
উত্তরাধিকারের যুদ্ধে না নেমে
বিন্দুসার হয়ে অশোক পর্যন্ত সাম্রাজ্যকে
নিজের হাতের তালুর মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা যায়….

পাহাড়ের রহস্য

পাহাড়ের রহস্য আর নারীর রহস্য একেবারেই এক রকম মনে হয়। প্রতিজন নারী একই মাটির তৈরী কিন্তু প্রতি জনকেই নতুন রকম রহস্যময় মনে হয়। দশ মিনিট নিঝুমভাবে উঁচু পাহাড়ের এক কোণায় গিয়ে বসে সমীকরণ মেলাবার চেষ্টা করেছি ! মহান আল্লাহর অপার সৃষ্টি এক এই প্রকৃতি !

উপর থেকে দাড়িয়ে নীচের দিকে তাকালে সব গাছ, ফুল, লতা, প্রেম কাঁটা, পাখি, বাতাসের বিচরণ, মেঘ সব একই রকম দেখাবে কিন্তু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ সারাদিন তীব্র রোদেও একই স্বরে বাজার সময় যেমন শব্দে তারতম্য হয় তেমনি পাহাড়ের রহস্যেও ঢেউটি লাগে খুব প্রগাঢ়ভাবে। নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে কুমারী মেয়েদের মত শারিরীক কার্ভ দেখানো প্রতিটি বৃক্ষই আমাকে বলেছে মাটির মায়া লাগানো গন্ধের কথা। খেয়াল করলাম ওদের বন্ধনে যাতে ভাগ না বসাতে পারে সেজন্য ওরা খাড়া হয়ে নীচে নেমে ভেতরের দিকে খাঁজ করে নিতেই বেশী পছন্দ করে আর এ কারণেই পাহাড় আরও খাড়া হতে থাকে। বিস্ময়কর এক ভয় কাজ করে আমার মধ্যে নীচের দিকে নামার সময়। পাহাড়ের নাভীমূলের কম্পনের সাথে নারীর নাভীমূলের কম্পনের কোন দূরুত্ব নেই। সরল রৈখিক প্রতিটি সম্পর্ক যেমন একে অপরকে আবৃত করে রাখে তেমনি পাহাড়ও তার পুরো শরীর জুরে জড়িয়ে রেখেছে নানান জাতের বৃক্ষ আর বৃক্ষের বন্দনা।

এখানে বৃক্ষের বন্দনা হল কচি ফুল আর লতানো গাছ। পাহাড়ে যারা গিয়েছেন তারা দেখে থাকবেন পাহাড়ের খুব উঁচুতে তা।

কি সরল ! আমরা যত উপরে উঠি তত গরল হই কিন্তু এখানে মানুষের সাথে পাহাড়ের বড় পার্থক্য। একেবারে মাথায় পাহাড়গুলো কখনই সমতল হয়না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা চায় প্রতিটি বিন্দুই উপরে উঠে যাক, প্রতিটি বিন্দুই আকাশ ছুঁয়ে দেখুক, মেঘ ছুঁয়ে দেখুক ! এই নমনীয়তাই পাহাড়কে জলের ঝিড়ি দেয়, এই সার‌ল্যতাই পাহাড়কে জলপ্রপাত দিয়ে নারীর মত মমতার আশ্রয় হিসেবে প্রদর্শিত করে !

দশ মিনিটের পাহাড় দেখায় আরেকটি বড় উপলব্ধি ছিলো পাহাড়ে সবসময়ই জীবন্ত জল বিচরণ করে। মেঘ আর কুয়াশার পাশাপাশি এ জীবন্ত জলগুলো যে বাতাস সৃষ্টি করে তাতে আপনার মন নিশ্চিত নরম হয়ে উঠবে কারণ এ বাতাসটুকুই হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে উড়ে আসা সেই প্রেমিকের কান্নার বাতাস যে প্রেমিক চাতক পাখির মত বসে আছে তীব্র খড়ার পর বৃষ্টির মত হয়ে তার ভালোবাসার মানুষ তার কাছে ফিরবে এই অপেক্ষায়…

পাহাড় আর নারীর রহস্য কোনদিন উন্মোচিত হবে না তাই নদী ও নারীর যে সম্পর্ক ছিলো সে সম্পর্কে ভাগ বসানোর জন্য এখন পাহাড়কে আমন্ত্রন জানাতেই হবে আপনার !
বান্দরবানের নীলগিরি থেকে ফিরে…

বসন্তে বৈপরিত্ব

বসন্ত দিনের অপেক্ষায় ভালোবাসাবাসি মানুষগুলো,
মনুষ্য শরীর মনের আগুনের বিপরীত পাশে
একটা প্রজাতি বিদায় বেলার কান্নায় ভেজা…
ঝরাপাতা বৃক্ষের রাজ্যে ঢুকেছিলাম আজ
কান্নার শব্দে কানের অন্তপর্দা আর হৃদয় চরমভাবে ভঙ্গুর
শাল গজারির প্রতিটি পাতা ছিড়ে যাবার সময়ে অবতীর্ণ প্রায়
খুব করে চাইছে তারা তার মায়ের সারা শরীর জুড়ে আবৃত হয়ে থাকবে
শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে, বৃক্ষের পানি উত্তোলনের প্রতিটি শিরা দিয়ে
আর শেকরের থেকে পাতার নাভীমূল পর্যন্ত মায়া দিয়ে তারা চাইছে
মায়ের শরীরকে জাপটে ধরে রাখতে…
প্রকৃতি যে বড়ই নির্মম
সময় হয়ে গেছে বন্ধন ছিন্ন করে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার
ওদিকে মায়েরও আর্তচিতকার কম নয়
সেও চাইছে পুরোনো পাতাগুলোকেই নিজের করে রাখতে
একেকটি পাতা একেকটি নাভীমূলের টান কোন বৃক্ষের
যখন বনের ভিতর রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম
তখন মনে বসন্ত আগমনের চরম আকুতি…
আমরা যখন বাতাসের উল্লাস দেখে ভাবি
বাতাসে পাতারা হয়ত আলাদা স্বাদ পাচ্ছে
অথবা কেউ কেউ মিলনের সময় গুনছে
তখন কি বিপরীত দুঃখ, ক্লান্তি, কান্না আর নুয়ে পড়া…!
থমকে দাঁড়িয়ে যখন চিন্তায় মগ্ন হলাম
তখনই অনুভব হাহাকারের !
একে একে কান্নার শব্দে ভারী হতে শুরু করলো মন
প্রস্তুতি মূলক দুঃখভরা একেকটি পাতা পড়ছে
আর যেন কান্নায় ভারী হচ্ছে বনের আকাশ…
কে বুঝিবে অদৃশ্য কান্না, কেইবা এই দুঃখের ভার নিতে চাইবে
নিজের সুখ আর বসন্তের আগমনীতে যখন সঙ্গীত আর এক কাপ চা সঙ্গী
তখন বৃক্ষগুলো সন্তানসম পাতা হারানোর কষ্টে বিভোর !
বৈপরিত্ব এমন সুখ দুঃখ দেখার মানুষই বা কজন
বৈপরিত্ব এমন আচরণ ক্ষয়ে যাওয়া হৃদয়েরই ক্ষরণ ….

স্বপ্ন শুক্রাণু

সকালের বিছানায় হাজার শুক্রাণুর বিচরণ
স্বপ্ন আর সত্যের বিভিদের কারণেই
তবুও তাতে পাপের ভাগ শূণ্য বলেই ধরা যায়,
গভীর রাতে দূরুত্ব বিঘত বিঘত মেপে
গোলাপী কোন ব্রা’র হুক স্পর্শ করা পর্যন্ত অপেক্ষার দরকার নেই
এমনিতেই পৃথিবী ভরে গেছে মনুষ্যহীন
অকাল পক্ক হিংশ্র অমানবিকতায়…
শুধু স্বপ্ন -অপ্সরীকে স্পর্শ করুক
তাতে শুক্রানুর চুইয়ে নির্গত হওয়ায়
নিশ্চই আর কোন পাপী জন্মাবেনা
কন্ট্রাক আর নির্ভরতার নামে শহুরে জনপদে
যেভাবে খোলা মিলন বাড়ছে
তাতে যদি শিশু নামক পবিত্র কিছু গর্ভে আসে
তা ধ্বংস করতেও এক শ্রেণী মনে করে
“এ তো শুধু পেশা অথবা দায় মুক্তি”
অথচ নগন্য পাপ থেকেই পৃথিবীটাকে অস্থির করে তোলার জন্য
এই শ্রেণীর অসভ্য জীবনবোধকেই
দায়ীর শীর্ষে রাখবো আমি….

যৌবনের কবিতা

অন্তহীন আধারে চোরা গলি বলে কিছু নেই
অস্পষ্ট আর নির্জনতা বিষন্নতাকে দূরে ঠেলে দেয়,
বাঁচার ইচ্ছে যখন ভেতরে ভর করে
তখন সামান্য ফরিংয়ের আহত ওড়ার স্বপ্নকেও
মনে হতে পারে ডাইনোসরের বৃহৎ থাবার শব্দের মত
জীবন তীব্রতর গতির প্রতিশব্দ,
আধার আর আলো সেই প্রতিশব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ,
যারা চোরাবালি আর চোরাগলির ভয়ে বার বার স্তুম্ভিত হয়
তারা বহুবার আধারে নিমজ্জিত হয়….হতেই থাকে,
ফড়িং সুযোগ নিয়ে তার ক্ষমতাকে ডাইনোসরের থাবা সমান্তরাল করে
আর আধারে নিমজ্জিত মানুষগুলো তখন
বিস্ময়কর সত্যের সমান্তরালে ছোট্ট হৃদ স্পন্দনের অধিকারি !
সত্যিকারার্থে একে বাঁচা বলে না
বলা যেতে পারে ইটের মত অথর্ব জড় পদর্থের
অন্যের ইচ্ছেয় প্রস্থানের মত…
বাঁচা হল তাই- যা শেখায় নিজেকে নিজের মত চালানোর
আধারকে সজ্ঞায়িত করে উদ্যোমের
আর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা
যা ভাবতে শেখায় তা প্রতিধ্বণি যৌবনের…

1 Comment

রকেট ও জীবনের গল্প

খুব নীল হতো আকাশ সে শিশু বেলায়
বিকেলের কড়া সে মাঝ নীল আকাশে রকেট উড়ে যেতো
কি যেন সাদা সাদা রকেট থেকে বের হয়ে
আকাশটাকে শুভ্র করে দিয়ে যেতো…
পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যের দিকে রকেটের ছুটে চলা
আমি বিস্মিত হয়ে দেখতাম,
সূর্যকে ভেদ করার অদম্য ইচ্ছার পরিসমাপ্তি কি
মনে প্রশ্ন জাগতো
বাবা বোঝাতেন সাদা শুভ্র দাগগুলো ধোঁয়া
আমি ভাবতাম ওগুলো রকেটের জীবন
যত উপরে ও উঠে যাচ্ছে
পরতে পরতে জীবন হারিয়ে নিঃস্ব এক খোলস নিয়ে
সে অভিলাষ করছে সূর্যকে ভেদ করার !
হিসেব মিলতো না
ব্যয় বহুল সে হিসেব আজও মেলেনি
শূণ্য আকাশে সূর্য অস্তের সময় রকেটের গমন
এখনও আমি পরিকল্পনা করে উদযাপন করি …
শূণ্যের হিসেব শূণ্যে মিলায়
আমি নীল আকাশে ডুব দিয়ে হেমন্ত, শরৎ, শীত
আর বর্ষার গল্প বুণে
বাংলার ছোট্ট কোন পাড়া গায়ে বসে সরল জীবনের ব্যপ্তি খুঁজি…

সেই সে দিনগুলো

একদা যখন রাস্তায় হাঁটতাম
তখন নিচু জমি থেকে রাস্তাগুলোকে পাহাড়ের সমান উঁচু মনে হত
মায়ের হাত ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে
দৌড়ে মায়ের বুকে ফিরতাম..!
ছোট ছোট পথের দূরত্বও মনে হত ক্রোশ ক্রোশ দূর বুঝি
বাবার আঙ্গুল ধরে ধরে হাঁটার সেই দুরুত্বগুলো
পায়ে ব্যথার কারণ হত, হাপিয়ে উঠতাম
কিন্তু কখনই মনে হত না
পথটুকু শেষ হোক…!
মনে পড়ে চকে খেলার সময়গুলোর কথা
আকাশটাকে মনে হত শুণ্যের বাড়ি বুঝি
ওখানে শুধু চাঁদ থাকে, তারারা চাঁদের জন্য ওঠে
এবং প্রতিরাতে মা ঘুম পাড়ানোর সময়
চাঁদ তারারা আমার কাছে আসে..!
যখন “একদার” কথাগুলো বলছি
তখন আমি বর্তমানে, অনেক বড় হয়েছি
এখন অনেক নিচু জমি দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তাগুলোকেও
পাহারের মত উঁচু মনে হয় না
মনে হয় না কোন পথ অসীম দূরুত্বের,
চাঁদ, পৃথিবী, তারা সূর্যের সব সঠিক ব্যাখ্যা শিখে গিয়েছি
যা হারিয়েছি তা হল-
একটু ভয় পেলেই মায়ের বুকে ফেরার দিন
একটু একাকী লাগলেই বাবার আঙ্গুলে ধরে হারিয়ে যাওয়ার সময়,
আর ঘুমের সময়
মায়ের ঘুম ধরা অমনোযোগী মধুর সুরে ভাঙ্গা গলায় গাওয়া
কাজলা দিদি কবিতা শোনার ক্ষন…

নদী বাড়ি

মেঠোপথের ধারে যেথা
জলরাশির বাঁক থাকে
ঐ বাড়িটায় শান্তি আছে
নদীর পাড়ে বলে

সান্ধ্যবেলা নৌকাগুলো
ঢেউয়ের তালে তালে
এলেবেলে চলে চলে
জীবনের কথা বলে

চাঁদের আলোর প্রতিফলন
নদীর হাওয়া নিয়ে
ঐ বাড়িটার জানালায়
সুখ দিয়ে আসে

নদীর তীরে পথগুলোর
পাড় ঘেঁষা বাড়ি
সুখের হাট এখানে
সুখ সারি সারি

বাংলার বুকের নদীমাতা
সুখ ফেরি করে
এমন সুখ নিয়ে যেয়ো
নদীর তরে এসে…

ভাঙ্গা কাচ ও প্রেম

দক্ষিণের জানালার কাচ ভেঙ্গে আছে
শীত সকালের কুয়াশা ভেজা রোদ এসে উঁকি দেয়
একটি মেয়ে প্রতিদিন জানালার পাশ দিয়েই হেঁটে যায়
ভাঙ্গা কাচের ফাঁক গলে
সাদা, লাল, নীল ওড়নার যৌবন নাচনে মন হারায়,
ভাঙ্গা কাচ ভেঙ্গেই থাক
এক জীবনে একটি জানালার কাচ ভাঙ্গনে
যদি কোন মনের অংশীদার হতে পারি
তবে ভাঙ্গা কাচই হবে ভালোবাসার মহা সোপান…

শুভ সকাল

হারিয়েছি যবে মনের তারুণ্য, দেহের যৌবন আর তীব্র ক্ষুধা
তখনও বাঁচতে হত অভ্যাস বসতই প্রতিনিয়ত
প্রাণ খুঁজেছি পাইনি, আত্না খুঁজে দেখেছি তা স্পর্শহীন
চলেছি একা পথে- তা ছিলো গন্তব্য বধির
একদা যখন এসেছি কোন বন্য উজার সবুজায়নে,
নিস্তব্ধ জগতে যখন দেখেছি তীক্ষ্ন আলোতে ভোর হতে
যখন দেখেছি বুনো শহরেও বাঁচে কোটি প্রাণ অনাহারে
তখন ভেবেছি দেহে প্রাণ আছে মানেই সুখী আমি,
একটা শুভ সকাল প্রাপ্তি -জীবনের সবটুকু আনন্দের তৃপ্তি…

ক্লান্তি ও ভোরের কাব্য

দৃষ্টির সিমানা যতদূর যায়
তত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত কোন ভোরের দ্যুতি …
কাল্পনিক ভোরগুলো প্রতিটি শিশির বিন্দুর মধ্যে আবৃত
তটস্থ রাত আর বিষন্ন সময় যখন
একটি কুপির আলোর স্বাক্ষী হয়ে থাকে
তখন ভোরের সবটুকু প্রাপ্তি হল
সে “ভোর” হওয়ার পর ক্লান্তি মুক্ত হল
এখন অপার ধান খেত, রাশি রাশি শিউলি ফুলের
মাটিতে বিছিয়ে পড়ে থেকে
সারা রাতের মিলন ক্লান্তির নেতিয়ে পড়া
আর কুলহীন নদীর জল
সবকিছু মিলেই আবার জীবনে বাঁচার আকুতি…!
এদিক থেকে কাকতাড়ুয়া ভিন্ন বলা যায়
একটি বাঁশের উপর দাঁড়িয়ে
কালো অবয়বে সে যেভাবে পক্ষীকুলের ভীতির কারণ হয়
তা তার জড় জীবনের স্বার্থকতাই বলা যায়
অসম প্রেম, তীব্র রোগ আর গতিবেগের ঘূর্ণিঝড়ের
পরের রাত্রিগুলোতেও যেভাবে কারো বাঁচার আকুতি দেখি
তা যেন একেকটি ভোরেরই রুপান্তর…