মন খারাপের আদ্যোপান্ত

সাধারণত মন খারাপ হলে কবিতা লিখি-
কবিতায় একটা সম্যক্‌ ধারনা লিখে রাখি,
দশ বছর পরেও যেন পড়লে বুঝতে পারি-
ঠিক কেন এবং কি কি কারণে মন খারাপ হয়েছিল।
আর কেউ বুঝবে না, অনেকটা শর্ট হ্যান্ড নোটের মত।

আজও আমার মন খারাপ- ভীষণ খারাপ।
অথচ আজ কবিতায় টুকে রাখবার মত কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না
এই ধরনের অনাহূত মন খারাপকে যদিও পাত্তা দিতে নেই-
তবুও আমি দিব, কারণ আজ আমার মন খারাপ।

আমার অন্যান্য মন খারাপগুলো শুনতে মন খারাপ হলেও,
ওরা আসলে খারাপ না অতটা।
আজকের মন খারাপটা প্রচণ্ড খারাপ,
এতটাই সে হিংসুটে ও বিশ্রী যে আমাকে বলবেও না।
আমিও বেশ শুনব না ওসব। –
যেচে কারও মন খারাপের গল্প শুনতে নেই-
নিজেরটা তো নয়ই।

গতবার যখন মন খারাপ হল, সেটার স্থায়িত্ব ছিল দুই দশমিক আট সেকেন্ড-
উৎপত্তিস্থল ছিল বুকের ঠিক মাঝখানে- একদম সিধা মন বরাবর।
মনো-মিটারে তার মাত্রা ছিল ছয় দশমিক দুই-
জিওমেট্রি ত্রিকোণমিতি – অক্ষাংশ দ্রাঘিমা; এসব আমি বুঝি-
অথচ আজকের মন খারাপের উৎপত্তিস্থল ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না-
কখনো মনে হয় মন থেকেই মন খারাপ,
কখনোও বা মনে হয় – নাহ !
মন খারাপ কি কেবল মনের থেকেই হয়?
হাতের, বুকের পেটের এবং ঠোঁটের জন্যও হতে পারে।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এই মন খারাপের কোণ কারণ নেই-
অকারণ এই বিলাসিতায় ভেসে যেতে চাইলে অবশ্য যাওয়া যায়-
যাওয়ার আগে কবিতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হবে-
মন খারাপের বিস্তারিত কারণ- উপসর্গ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা।
ফিরে এসে একলা এক সদস্যের তদন্ত কমিটি বসাতে হবে-
সুরতহাল রিপোর্ট দাখিল করতে হবে মন খারাপের কবির কাছে-
কবি হয়ত হতে পারে কারও ঘরের সাঁজবাতি-
কিন্তু কখনো সখনো সে তো সাইকিয়াট্রিস্ট –
পারবে অন্য কোন কবি- ভালো করে দিতে আমার অকারণ মন খারাপ?

———————————–
@জাহিদ অনিক
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮

12 thoughts on “মন খারাপের আদ্যোপান্ত

  1. দশ বছর পরেও যেন পড়লে বুঝতে পারি-
    ঠিক কেন এবং কি কি কারণে মন খারাপ হয়েছিল।
    আর কেউ বুঝবে না, অনেকটা শর্ট হ্যান্ড নোটের মত।

     

    * অন্তর ছুঁয়ে গেলো…

    শুভ কামনা নিরন্তর।

  2. প্রথম দুই প্যারায় বর্ণিত অনুভূতি এক সময় আমারও ছিলো মি. জাহিদ। জীবনের এই প্রান্তে এসে ক্ষণিক সময়ের জন্য দুঃখবোধ আর জাগে না; জাগে সারা জীবনের জন্য। :)

    1. সময়ের সাথে সাথে মন খারাপের ধরন বদলায়– কিন্তু মন তো খারাপ হতেই হয়। 

      ধন্যবাদ মুরুব্বী 

  3. আজকের মন খারাপটা প্রচণ্ড খারাপ,
    এতটাই সে হিংসুটে ও বিশ্রী যে আমাকে বলবেও না।——–

  4. কবিতার জন্য মুড লাগে। পরিবেশ থাকতে হয়। কোলাহলে এমন পরিবেশ পাওয়া যাবে না কবি ভাই।

  5. "গতবার যখন মন খারাপ হল, সেটার স্থায়িত্ব ছিল দুই দশমিক আট সেকেন্ড-
    উৎপত্তিস্থল ছিল বুকের ঠিক মাঝখানে- একদম সিধা মন বরাবর।
    মনো-মিটারে তার মাত্রা ছিল ছয় দশমিক দুই-
    জিওমেট্রি ত্রিকোণমিতি – অক্ষাংশ দ্রাঘিমা; এসব আমি বুঝি-
    অথচ আজকের মন খারাপের উৎপত্তিস্থল ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না-
    কখনো মনে হয় মন থেকেই মন খারাপ,
    কখনোও বা মনে হয় – নাহ" !

    —কতোটুকু ভালো লেগেছে সেটা মাপতে নিত্তিটা হাতে নিলাম। এক পাল্লায় ওপরের লাইনগুলি অন্যপাশে হিমালয়।

    আজ প্রথম জানলাম, হিমালয়ের কোন ওজন নাই। আজ আমারও তাই মন খারাপ!

  6.  আমি এক বিজ্ঞ জনের শুনেছি, যাদের অকারণে মন খারাপ থাকে তারা আপাত আধাঁরে থাকলেও তারা আসলে নক্ষত্র।  এই মন খারাপের  বিস্ফোরণ যে কোনও দিক থেকে হবে। হতে পারে, জবে সাকসেস, হতে পারে সফল ব্যাবসায়ী, হতে পারে শিল্প-সাহিত্যের আইকন কিংবা হতে পারে কোনও আধ্যাত্বিক গুরু। তবে এই অহেতুক মন খারাপের বিস্ফোরণ  একদিন ঘটবেই!!!!

  7. মন খারাপের বিস্তারিত কারণ- উপসর্গ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পড়লাম।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।