সন্তানপ্রণাম
তিন
শুরুর পাঁচ ওভারের মধ্যেই থার্টিন ফর টু দেখে আমি হাতের অ্যাটাচি নামিয়ে রাখলাম, এভাবে অসুস্থ ভারতকে ফেলে অফিসে যেতে পারি না! ধড়াচুড়ো ছেড়ে খাটের কোনে বসেছি — এদিকে জলপটির ঝরানো ঘাম ভেদ ক’রে পারদ আটানব্বই থেকে তোল্লা শটে একশো দুই করছে; আর ওপাশটায় বমিতে বিছানা ভাসানো, বাথরুমে মুখ থুবড়ে প’ড়ে রক্তারক্তি ঠোঁটে… ধপাধপ এলিয়ে যাচ্ছে উইকেট। আমি সেই বাথরুমেই পেছছাপ করার ছলে ঢুকে হু-হু কেঁদে আসি, খাটের শিয়রে ফিরে অনুনয়ঃ আর একটাও স্ট্রোক নয়, শুধু মাঠে টিঁকে থাকো ইন্ডিয়া! কালো হয়ে আসা টিভি চোখের শাটার তোলে না, আগুনপোড়া কাঁপা স্বর শুনতে পাই — চেষ্টা চলছে।
শুনে টুপ ক’রে একফোঁটা জল খসল অ্যাম্বুলেন্সের চোখ থেকে — স্যালাইন, ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস স্প্রে করল ভিজে অক্সিজেনও। আমি তো অবাক, বুঝতেই পারিনি ভারতের সঙ্গে কবে ওর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কাজেই অ্যাম্বুলেন্সের পেটের মধ্যে পিতৃভূমিকে শুইয়ে আমরা ছুট লাগালাম সুপুরিগাছে বাঁধা লাল পতাকার পাশ দিয়ে মরা নার্সিংহোমের ধার ঘেঁষে রোহিণী নক্ষত্র পর্যন্ত। গোটা রাস্তায় তারাকুচির একটা ক’রে সিঙ্গলস জমা হচ্ছিল ব্যাটসম্যানের শার্টের পকেটে আর শান্ত হচ্ছিল রাত্রিশহর। দু’ব্যথার দূরত্ব সমান হয়ে যখন পারদ নেমে এসেছে মাত্র একটা রান বাকি-তে, আমি ডাকলাম, দেশ? সৌরজগত আমার!
শুনতে যে পেল তার নাম ঘুম, সাড়া যে দিল সে নিঃসাড়। তখন উপশমের ছাউনির নিচে সাদাপাপড়ি থেকে বোঁটাহলুদে জিতে যাওয়ার রান ফুটিয়ে তুলছে আমার ছেলেটা…
চমৎকার কথা কাব্য। অভিনন্দন প্রিয় চন্দন দা।
আবারও অসাধারণ একটি লেখা পড়লাম দাদা। শরতের শুভেচ্ছা জানবেন।