মুক্তি_শেষ_তৈলচিত্র

দিন যেতে যেতে বহু দিন চলে গেছে
কখন অলখে বিকাল নেমে এসেছে!
শীতের নরম রোদের আলোয় দৃষ্টি ফেলে রাখি
একটা মানুষ – আজীবন একাকী!
.

অফিস ফেরত লোকের মিছিলে পথে
মধ্যবয়সী লোক একজন
পথ পার হতে হতে
ভাবছেন এলোমেলো।
পাশ থেকে তার খাঁচায় দোলানো পাখি নিয়ে
এক পাখিওয়ালা চলে গেলো।
.

খাঁচায় পাখিটা অস্থির দোলে, এত ঝাপটায় পাখা
তবু দুই পায়ে লাঠিটার ‘পর
যায়না কিছুতে ভারসাম্য রাখা।
জীবন যেন জীবনের আয়না!
প্রৌঢ় লোকটা খাঁচা থেকে ওই
পাখির দু’চোখে পৃথিবীকে দেখে
মাতাল টাল মাটাল
ভাবেন, ‘পাখিটা মানুষ জাতকে কি দিচ্ছে না গালাগাল?’
.

বনের পাখিকে খাঁচাটাতে ভরে
সারাদিন তার পথে হেঁটে হেঁটে
পাখিটাকে নিয়ে পথেই গিয়েছে কেটে
পাখিওয়ালা তবু দেখেনি কভু
সরু লাঠিটার জন্য
পাখিটার দুটি পায়ের নখেরা হয়েছে
কতটা বেপরোয়া বন্য
একটু কেবল সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায়।
‘পাখিকে মানুষ ভালোবেসেইতো খাঁচাটাতে পেতে চায়
কেন তবে তার কষ্ট বোঝে না – স্বস্তি বোঝে না? ‘
পাখি শুধু ভেবে যায়।
.

খাঁচা হাতে যেতে পাখিওয়ালা ভাবে
কত দানাপানি এই পাখিটা খাবে
পাখি বেঁচে শেষে সে নিজে কত টাকা পাবে?
মাঝবয়সের মানুষটা শুধু দেখে পাখিওয়ালাটাকে
দেখে এ ব্যস্ত শহুরে জীবন নিষ্ঠুর করেছে যাকে।
.

আরো দেখে জাল – জোচ্চুরি, জীবিকার তাড়া
প্রয়োজন আর লোভের লোহার শিকে
মানুষেরই হাতে বানানো শহর
খাঁচা হয়ে শেষে বন্দী করেছে
স্বাধীন মানুষটিকে!
যতই সে পাখা ঝাপ্টায় তবু কিছুতে দাঁড়াতে পারে না
জীবন হয়তো ছাড়ে পাখিটিকে, খাঁচা তবু ছাড়ে না!

#মুক্তি_শেষ_তৈলচিত্র

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “মুক্তি_শেষ_তৈলচিত্র

  1. অসাধারণ কবিতা প্রিয় গল্প দা মামুন। শুভ সন্ধ্যা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. যতই সে পাখা ঝাপ্টায় তবু কিছুতে দাঁড়াতে পারে না
    জীবন হয়তো ছাড়ে পাখিটিকে, খাঁচা তবু ছাড়ে না!

    কবিতাটি আমার সুপরিচিত মি. মামুন। শেয়ার করায় নতুন পাঠকদের পড়ার সুযোগ হবে। :)

    1. ধন্যবাদ ভাইয়া। 

      শেয়ার করার বিষয়ে আপনার সাথে সহমত।

      শুভ সকাল।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।