মেমসাহেবা ৩৮

মেমসাহেবা ৩৮

আজ কেন জানিনা তোমাকে বারবার মনে পড়ছে
বারবার …

মাথার ডানদিকে দুর্গোৎসব ঝনঝন করে বেজেই
চলেছে সেই ব্রাহ্মমূহুর্ত থেকেই
ঢাক বাজছে, দ্রিমি দ্রিমি ধামসা মাদল
লাউডস্পিকারে অকারণ সানাই
অকারণ …

তোমার থেকে অনেক দূরে রয়েছি কি মেমসাহেবা?
অনেক দূরে …
অথচ তোমাকে ছুঁতে পারছি, দেখ
ছুঁয়েই আছি …

মাঠের মাঝখান দিয়ে সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক আসছে
জলপাই সবুজ
মার্চ করছে কর্পোরেট যন্ত্র রোবটের দল,
মাঠের ঠিক মাঝখানে …

এত আদরের রং বিস্ফোরণের ইচ্ছেগুলো এতদিন
কোথায় ঘুম পাড়ানো ছিল!
তোমার নখ এখনো সেরকমই আশ্চর্য রঙে ডোবানো?

এই দূর রাঢ়প্রান্তে মোরামের রাস্তায় একমনা
তক্ষক আর খরিশের শীত প্রারম্ভিক খাবার
সংগ্রহের আনাগোনা,
এখানে হিম পড়ছে ঝুরঝুর
ঝুরঝুর …

আমার চারপাশ গোল করে ঘিরে সটান
উঠে গেছে ইঁটরঙা মস্ত কুয়ো চারদিকে শানবাঁধানো
ভয়ঙ্কর শব্দাঙ্কের ঝড় তুলে,
অথচ আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছি
জানো মেমসাহেবা, আকাশ …

আর আকাশে স্পষ্ট দেখছি দাউদাউ আগুন
গোলোকের চাদর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে
তোমার সেই ঠোঁট, সেই মুখ, সেই আদিম চোখ
তোমার চোখ …

আজ রাতটুকু তোমার আশ্চর্য চোখের পাতায়
মাথা রেখেই কাটিয়ে দেব।
চোখের পাতায় …

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

14 thoughts on “মেমসাহেবা ৩৮

  1. " আজ রাতটুকু তোমার আশ্চর্য চোখের পাতায়
    মাথা রেখেই কাটিয়ে দেব।
    চোখের পাতায় …"  

    – কবিতাটার শেষে এসে একেবারে ছক্কা মেরে পুরোটাতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

    1. হাহাহা ছক্কা। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যে ডেজারট ভাই। :)

  2. বাউণ্ডারী তো বটেই লং লেন্থের ছক্কাও হাঁকিয়েছো প্রিয় কবি সৌমিত্র। গ্রেট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. তুমি বেশী হাসালে প্রিয় ভাই। তুমি জানো মনে যা আসে লিখে দেই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Shy.gif.gif

  3. বাহ্, অনেক ভালো হয়েছে দাদা। সিরিজ কবিতা লিখছেন নাকি?

    1. আগে থেকেই কিছু কিছু লিখে রেখেছিলাম। যার বেশীর ভাগ শব্দনীড়েই প্রকাশিত হয়েছে। :)

    1. হাহাহা। খালিদ ভাই। বুঝে নেন। একটা পর্বই না; আরও আছে। ছক্কা একবার কবি একবার মেমসাহেব। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

  4. আজ রাতটুকু তোমার আশ্চর্য চোখের পাতায়
    মাথা রেখেই কাটিয়ে দেব।
    চোখের পাতায় …

     

    * অসাধারণ শৈল্পিক প্রকাশ প্রিয় কবি দাদা… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  5. আপনার লেখা কবিতা পড়ে আমার মনে পড়ে গেল সেই ১৯৮৫সালের কথা। এক বিকেলে ক্ষণিকের দেখা ছিল সারা জীবনের স্মৃতি । সেই দেখা আজও স্মৃতি হয়েই আছে শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র দাদা। ভুলতে পারি না।

  6. আমি কিন্তু এমন কবিতাই বেশি পছন্দ করি।যেন সহজ সাবলীল, পড়লেই চোখের সামনে ভাসে স্থিরচিত্র।  

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।