উত্তর দেয়নি

উত্তর দেয়নি

“তার পর স্মরণে এলো”, আগের বছরের ঘটনা। কার্তিক মাস একটু একটু শীতের মরশুম, মাস প্রায় শেষের দিকে, চলছিল কালী পূজোর হই হুল্লড়। আগের দিন শেষ হয়ে গিয়েছিল পূজো, মেলারও ধর্মকর্ম। —–

“হইহুল্লড়, পটকা বাজি কালী মার বিসর্জন হবে;
তাইতো পরেরদিন সীমাহীন মাতওয়ারা সবে।”

“আশ্চর্য ব্যাপার!” ‘বাড়ির কাছে গাঁ, কিন্তু সেই গাঁয়ের আমি কেউ না।’ একথার অর্থ বুঝতে ঘাবড়ে গেলেও একথা একদিক হতে একেবারে খাঁটি। কেননা ওগাঁয়ে আমার বিপরীত সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। এতে মাথা খারাপ করার কিছু নেই। একথা বলে কি আমি শয়তান হাসাবো, আর হাসির ছলে ঈমান ধ্বসাবো? না…না আমি সেপথ অবলম্বন করিবো না। তার সাথে আমি একথাও ভুলে যাবো না যে ওগাঁয়ে যারা বসবাস করে তারা যদি হয় মানব, তাহলে আমার ও তাদের সম্পর্ক একেবারে ঘনিষ্ঠ। আমার ও তাদের সৃষ্টির উৎস এক।

সারাদিন হইচই, দিন শেষ, সন্ধের আগমন এমন সময় আযান পড়ছে মসজিদে মসজিদে বেরিয়েছি নামাজের উদ্দেশ্যে। সাইকেলে চড়ে চলেছি। একটু এগিয়ে গেলে রাস্তার ডানে বামে পড়ে ছোটো ছোটো কয়েকটা জলাশয়। সেখানে চোখে পড়লো বিপরীত সম্প্রদায়ের মা কালীর বিসর্জন মেলা।

তারা মাকে মাথায় করে ঘরে তুলেছিল খুব যত্নের সাথে। আর দিয়েছিল পশুবলি। রাখলোও দু’তিন দিন ধূপ ধূনো দিয়ে খুব আদরযত্নে। “কিন্তু আজ অবাক কান্ড!” দেবীর মান সম্মান ও স্থান একেবারে শোচনীয়! কোথায় যাচ্ছে চলে,ভাবাই যায়না। হাজির হয়েছে জলাশয়ে। খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে, নিরীহ রমণীর মতো, নেই কোন বাক্, পলকবিহীন চোখ তার ভক্তের দিকে চেয়ে রয়েছে। একটু পরেই তার সমাপ্তি। আছাড়ে ফেললো জলে, সঙ্গে সঙ্গে আট দশজন ছেলে তার ওপর ওঠে শুরু করেছে গুতোতে। মাথাটা তখনো ডুবেনি। সাইকেল রেখে একটু এগিয়ে গেলাম মাথাটার দিকে। তার চোখ গুলো যেন সাহায্য কামনা করে আমার দিকে চেয়ে আছে।
আমি তখন মা কালীকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম ——-

“মা কালী মা কালী
তুই আর চুলকানি পাড়া যাবি?
তুই কি আর ওই পাঠার মুন্ডু খাবি?
উত্তর দে উত্তর!
উত্তর না দিলে এমনই শাস্তি পাবি!”

আমি বলতেই আছি এমনি সময় তার মাথায় লাফিয়ে এসে একজন দিলো জোরে এক লাথি, তখনই সঙ্গে সঙ্গে গলে গেলো মাথাটা।

সেখানেই একজন সুর করে গেয়ে উঠলো ——-

“হাতে গড়া দেবী মোর,ছিলো কালী মা।
শুধুই গেলো সময় নষ্ট, কর্ম হলো না।
শুধুই হলাম পাপে ভস্ম, ধর্ম হলো না।।
এইতো তুমি মোদের দীপা কালী মা।।”

আমি বলে উঠলাম হ্যাঁ ভাই ঠিকই। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করিসনা কেন? কী করবো ভাই——-

“আদি হতে বহিয়াছে
বাপ দাদা সহিয়াছে
মোরা কেমনে ছাড়ি।
জানি আমি জানি
আমি যদি না মানি
তারা করিবে আড়ি।।”

ইতিমধ্যে একজন চেঁচিয়ে বললো তাকে এই তুই কি ফালতু বলছিস। আমি মাঝ থেকে বলে উঠি ও যা বলেছে তা থাক তুই আমার কথা শোন। সে আমাকে আজেবাজে বকতে লাগলো। তুই এখান থেকে গেলি। তোরা বাদিয়ারা এরকম কেন করিস? কিরে ভাই কি করি? আমাদের প্রতিমার সম্পর্কে আজেবাজে বলিস। না…..না তোদের প্রতিমার সম্পর্কে আজেবাজে কিছুই বলি না। কেননা তাতে আমার কোন অধিকার নেই আদেশও নেই। তোদের প্রতিমার সমন্ধে প্রশংসা করলে যতটুকু পাপ, নিন্দে করাতেও সমপরিমাণ পাপ। তাহলে বল তোদের প্রতিমার সমন্ধে প্রশংসায় কেন করতে যাবো আর নিন্দেই বা কেন করবো? আমার যে আদেশ ও অধিকার আছে সেটা হলো আমার ধর্ম ছাড়া আর কোন সঠিক ধর্ম নেই তা তোদের মতো লোকের কাছে তুলে ধরা।আমার ধর্ম সমন্ধে আমি যতটুকু জানবো ততটুকুই তোকে সচেতন করবো। এটা আমার রবের আদেশ ও আমার অধিকার। সে তখনো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, কোন উত্তর দেয়নি।

*(১৩/১১/১৮)

কালাম হাবিব সম্পর্কে

কবি কালাম হাবিব ১৯৯৯সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি মালদা জেলার অন্তর্গত সাহাবান চক গ্রামে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা লাল মহাম্মদ মিঞা ও মাতা রুকসেনা বিবি। মা বাবার তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান। শিক্ষা শুরু হয় সাহাবান চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ২০০৯সালে বেদরাবাদ হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং ২০১৬ ও ২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কলা বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ বেদরাবাদ হাই স্কুল থেকেই। তার পর ওই বছরই উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন 'কালিয়াচক সুলতানগঞ্জ কলেজ'-এ।বর্তমানে পার্শ্বীয় কালিয়াচক সুলতানগঞ্জ কলেজ'এর বি এ সাম্মানিক বাংলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পাঠরত। কবিতা লেখালেখির হাতেখড়ি দশম শ্রেণি পড়াকালীন , তবে আজও তার বেগ প্রবাহমান! কবির এই লেখালেখি বিশেষ কারও দ্বারা প্রভাবিত নয় বললেই চলে কবিতা পড়তে পড়তে ভাবনা আর সেই ভাবনা লিপিবদ্ধ করার অধীর আগ্রহই হাতে উঠে আসে কলম! কবিতার পাশা পাশি গল্প লেখাতেও কবির রয়েছে বিশেষ আগ্রহ ও মনোযোগ! কবির কবিতায় কথা বলে কলম, শরিয়তের মধ্যে থেকে সঠিক সত্য কল্যাণময় আদর্শের! কোন ভীরুতার ধার ধারেনা, সর্বাবস্থায় আওয়াজ তোলে সজীব তীক্ষ্ণ জীবন্ত দন্ড খান প্রতিবাদের শীর্ষক মাকামে! কবির প্রথম কবিতা "বেআইনি অস্ত্র ” এবং প্রথম গল্প " নৌকা যাত্রীরা"। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী কয়েটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সাথে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত রয়েছেন......

10 thoughts on “উত্তর দেয়নি

  1. লিখায় শিরোনামের সার্থকতা খুঁজে পেলাম মি. কালাম হাবিব। ধন্যবাদ।

    আজকের লিখাতেও ট্যাগ রয়েছে । আমরা কি বুঝে নেবো এটা মামুনের লিখা !! যদি 'না' সূচক হয় তাহলে এমন ট্যাগ না করাই ভালো। :)

    1. ধন্যবাদ আপনাকে!

      একটা উপযুক্ত শিরোনাম  বলে দেন! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!!!

      তাহলে আমি ধন্য হবো প্রিয় লেখক!

      আর ওই রকম ট্যাগ দেবোনা..

    2. পরামর্শ চাইবার জন্য কৃতজ্ঞতা। :)

      দেখুন মি. কালাম হাবিব। শিরোনাম এক জিনিস আর ট্যাগ ভিন্ন। আপনার শিরোনাম ঠিকই আছে। ট্যাগ বিষয়টি ক্লিয়ার নয়। লিখাটি আপনার হলে নিজের নামেই ট্যাগ করতে পারেন। যেমন, কালাম হাবিবের অণুগল্প, বা গল্প বা কবিতা। অন্যের লিখা হলে শিরোনোমেই ডিক্লেয়ার দেয়া যেতে পারে … অমুকের অণুগল্প বা কবিতা।

      1. আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করছি,

        গঠনমূলক পরামর্শ পাওয়ার জন্য!

  2. গল্পটি এমনিতে ঠিক আছে তবে আর কিছুটা গোছানো হলে বেশী ভালো লাগতো কালাম ভাই। শুভেচ্ছা রইলো। 

    1. ধন্যবাদ আপনাকে!

      আমি কোনো লেখক না কবিও না।

      কেবল শুরু করেছি দাদা। 60 টির মতো কবিতা ও 3 টি গল্প লিখেছি। মনে গল্প লিখবার  সার্থক ভাবনার উদয় হলেও সার্থক ভাবে কলমে লিখতে পারিনি।তবে চেস্টা করছি।তবে আশা করি আপনাদের মন্তব্যেই আমার এই চেস্টা সাফল্য লাভ করবে! ইনশাল্লাহ! 

      আপনার শুভকামনা করি!

  3. কিছু কিছু জায়গা ভাল এসেছে দাদা। আরও চেষ্টা নিন। বেশী বেশী করে অন্যের লেখা পড়ুন। শব্দনীড়ে অনেক ব্লগার আছেন খুব ভাল লেখেন তারা। :)

    1. ধন্যবাদ আপনাকে!

      আমি কোনো লেখক না কবিও না। আমি একজন ছাত্র, BA 1st year. Bengali (HON.)

      কবিতা ও গল্প কেবল শুরু করেছি, এখন পর্যন্ত প্রায় 70টির মতো কবিতা ও মাত্র 3টি গল্প  লিখেছি।

      আমি অন্যদের লেখা যথেষ্ট পড়ি। সেখান থেকে মনে গল্প লেখার সার্থক ভাবনার উদয়  হলেও কলমে ছাপতে পারিনি। তবে চেস্টা করছি। তবে আাশা করি  আপনাদের এই গঠনমূলক মন্তব্যে আমার চেস্টা সাফল্য লাভ করবে!

      আপনার শুভকামনা করি!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।