৫.
মনের মাঝে দারুণ এক বিষণ্ণতা খেলে যাচ্ছে। আমি হারিয়ে যাচ্ছি ভাবনার অতল গহ্বরে। আধোঘুম আধোজাগ্রত এক রজনী পার করে ক্যাম্পাসে এলাম প্রাত্যহিক নিয়মে। জানি, সিনিগ্ধা আসবে আমাদের ডিপার্টমেন্টে। তাই আজ অন্য কোথাও নয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, সিনিগ্ধার দেখা নেই তবে কি আজ আসেনি। না এসেছে, সকালের সূর্যোদয় একটু বিলম্বে হল আর তেমন কী?
– কী আদিত্য, কাল আসিস নি যে?
– কী করে বলি, আমি কী না এসে পারি! হ্যাঁ, এসেছিলাম, কিন্তু কিছু কাজ থাকায় এদিকে আসা হয়নি।
– না কি আমাকে এডিয়ে চলার চেষ্টা করছিস?
– এসব কী বলছিস? আর মনে মনে বললাম, তোর জন্যই তো ক্যাম্পাসে বিরামহীন আসা যাওয়া। চল, কোথাও গিয়ে বসি।
– কেন, আর কোন ক্লাস নেই?
– আছে, তবে সেটি না করলেও চলবে। চল।
– ঠিক আছে, চল। আজ মেরিন সাইন্সের ওইদিকে বসবো। জানিস ওইদিকে একটা সুন্দর লেক আছে। গিয়েছিস কখনো?
– না। ওইদিকে আমার যাওয়া হইনি কখনো। মনে মনে ভাবলাম, যাইনি ঠিক আছে, তবে এইটুকু জানি যারা নিরিবিলি বসতে পছন্দ করে তারাই শুধু ওইদিকে গিয়ে বসে। তার নিরিবিলি বসার আহ্বান আমাকে বেশি উৎসাহিত করে তুলল। নিঃসঙ্কোচে তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলাম। মনের গহিনে ভেজে উঠলো সেই সুর, ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো, তোমার মনেরও মন্দিরে। গর্ববোধ হল, পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ হয়ে গেলাম ‘বি’ ক্লাস থেকে ‘এ’ ক্লাসে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমরা চলে এলাম ক্যাম্পাসের সেই নির্জনতম স্থানটিতে। কেন মানুষ এস্থানটির নাম নির্জন স্থান নাম দিয়েছে সে রহস্য আমার জানা নেই। এটি মোটেও নির্জন নয়। প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে আসা-যাওয়ায় থাকে বলে বিশেষ কিছু মানুষের দ্বারা সবসময় সরগরম থাকে। অবশ্য যাদের জুটি নেই, তারা তেমন একটা আসেনা বলে অনেকে এটি প্রেম নগর বলে চেনে।
আমরা বসার জন্য সুন্দর একটা জায়গা বেঁচে নিলাম। মানুষের হাঁটা- চলাচল থেকে বেশি দূরে নয় তবে রাস্তা থেকে ভালভাবে দেখা যায়না।
সিনিগ্ধা ভূমিকা ছাড়াই বলল, আজ আমি তোকে যে কথাটি বলতে চাচ্ছি সেটি শুনতে তুই প্রস্তুত আছিস কীনা আমি জানি না। ইদানিং তোকে আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলাবলি হচ্ছে আমাদের বন্ধুদের মাঝে। তুই কিছু শুনেছিস?
– হ্যাঁ, শুনেছি। তো কি হয়েছে?
– কিছুই হয়নি। আমি সেগুলো মাথায়ই নিই নি। কিন্তু সমস্যা এখানে নয়।
– তবে কোথায়?
– আমাদের পাড়ার একছেলে আমাকে সেই স্কুল জীবন থেকে জ্বালিয়ে আসছে। সে মনে করছে, আমরা দুইজন প্রেম করছি তাই তোকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। গতকালও আমার যাওয়ার পথ আগলে একথাগুলো বলে গেলো। সে আমার কিছুই করতে পারবেনা কিন্তু তোকে নিয়ে আমি ভয় পাচ্ছি। আমাকে সময় দিতে গিয়ে তুই বিপদে পড়ে যাচ্ছিস!
– তুই জানিস না, আদিত্য এসবে ভয় পায়না। কী করতে সেটি আমার জানা আছে।
– ওই তো, সেই ছেলেটি। নাবিল ওর নাম। মনে হচ্ছে এইদিকেই আসছে।
নাবিলঃ সিনিগ্ধা, আমি তোমার বন্ধুটির সাথে একটু পরিচিত হতে চাই। ভাই, একটু আসবেন এইদিকে।
– কেন? ওর সাথে কী কথা? যা বলার আমাকে বল।
– তোমার বন্ধু কি ভয় পাচ্ছে? ভয়ের কিছু নেই। সিনিগ্ধার বন্ধু বলে কথা।
– আমি চাই, তুই এখান থেকে চলে যা।
নাবিল সেই সময় সুবোধ বালকের মত চলে গেলেও ঠিকই সন্ধ্যায় এ আআমার বাসায় এসে উপস্থিত। সাথে আরও দুইজন। সেই দুইজন আমার পরিচিত। আমাদের ব্যাচম্যাট তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ে। ক্যাম্পাসেই তাদের বাসা। তাদের দুইজনের কথা হল, নাবিল সেই ছোটকাল থেকেই সিনিগ্ধাকে পছন্দ করে কিন্তু সিনিগ্ধা তাকে বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারেনা। তারা আমাকে সরে যাবার অনুরোধ করে তারা বিদায় হল। যাওয়ার সময় নাবিল বলে গেল, আজ শুধু অনুরোধ করলাম। আমি আশা করব, আপনি আমার পথ থেকে সরে যাবেন। তা না হলে কী হতে পারে কল্পনাও করতে পারবেন না।
(চলবে)
এ তো দেখছি ত্রিভূজ প্রেমের কাহিনী। নাবিলের আগমনে আতঙ্কিত হলাম।
* প্রিয় প্রেরণাদাতা মুরুব্বী, আমিও আতঙ্কিত। পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ…
মিলন পরিণতি আমার কাছে ভাল লাগে। আবার ক্লাইমেক্স থাকলেও ভাল লাগে। দেখা যাক পাঠকদের আপনি কোথায় নিয়ে যান। শুভেচ্ছা।
* প্রিয় কবি দি, মিলন পরিণতি আমিও কামনা করি কিন্তু বাস্তবতা কোথায় নিয়ে যায়, তা দেখার অপেক্ষায় আছি। পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ…
চলুক ত্রিকাণমিতি। শুভেচ্ছা কবি হুসাইন ভাই।
* প্রিয় কবি দাদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন নিরন্তর…
আগের গল্পের মন্তব্যে বেশি সময় গেলো। আক্ষেপ রয়ে গেলো যথেষ্ট মন্তব্য করতে না পারায়।
এগিয়ে যান। মুগ্ধতা রেখে গেলাম!
* ধন্যবাদ সুপ্রিয়।
আপনাদের অনুপ্রেরণায় ধন্য…
আগের পর্বগুলো মিস করেছি। সত্যি অসাধারণ। ভালো লাগলো শ্রদ্ধেয় কবি মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন :দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
* জী কবি দাদা, মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। ধন্যবাদ অশেষ…