মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন এর সকল পোস্ট

ধূসর পৃথিবীতে-

পাইনি কথাটি ডাহা একটা মিথ্যা হবে
মায়ের কাছে পেয়েছি, পেয়েছি বোনের কাছে,
পেয়েছি বন্ধুদের সাথে; জানা অজানা মানুষের মাঝে
ফিরিয়েও দিয়েছি শতশত এ জনমে!

আকাশ ছোঁয়ার সাধ মিটেছে
কাশফুলের নরম বিছানায় বিনিদ্র রজনীতে
কোলাহল করেছি নীলিমার সাথে বিমুগ্ধ বাক্যালাপে
আঁধার পেরিয়ে অরুণ আলোয় রাঙা পৃথিবীতে!

ঘুরেছি দেশে-বিদেশে; ছুটেছি অজানা পথে
তেপান্তরের মাঠে গল্পে মেতেছি কতো না বিচিত্র্য বিষয়ে!
তাজমহলের পদ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না রাতে স্বপ্নের খেলা খেলেছি বর্ণিল সমাহারে
সাগরের নোলাজলে স্নান করেছি বিষাদের ছায়া মুছে দিতে।

বিস্তীর্ণ মরুর বুকে ক্যাকটাসের স্বপ্নযাত্রায় বিমোহিত হয়ে
স্বপ্ন বুনেছি সজীবতার, সঙ্কল্প করেছি দুর্গম পথে বিজয়ী হতে
হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু রেখেছি; হয়নি পদানত অপঘাতে
সপ্নের সাথে মিতালি করেছি অধরাকে কাছে পেতে।

কোথাও তবু যেন এক ভীষন্নতা, ধূসর এই পৃথিবীর রুক্ষতায়
সকল অর্জন যেন ম্লান হয়ে যায় ক্ষুদ্র এক বালিকার অবহেলায়,
সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়
এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়।।

জালস্বপ্ন

বড্ড স্মৃতিভ্রম হচ্ছে ইদানিং আমার
যান্ত্রিক শহরে এসে সব ভুলে যেতে বসেছি আমি
এখন আর ঘুম ভাঙ্গেনা দোয়েল কয়েল শালিক আর ময়নার গান শুনে!
ভুলতে বসেছি মধ্যরাতে ঝিঝির মিষ্টি-মধুর ঘুম পাড়ানি সুর।
আমি এখন হয়তো আর পরখ করতে পারবো না; কোনটি শালিক কোনটি ময়না!
কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে ডাহুকের ছানা হয়তো আজো ভেসে বেড়ায়
ঝুরিঝুরি হয়তে আজো বিরহ বেদনায় নিস্তব্ধ রাত কাটায় কোন গাছের ডালে
চোখে এখন আর ভাসেনা সারি সারি শ্বেতবলাকার সান্ধ্য-আয়োজন
‘নিম’ বলে হুতুম ডাক দিয়ে যায় হয়তো আজো মহাযাত্রীর অন্তিম শয়ানের পাশে!
কুসংস্কার বলে হয়তো উড়িয়ে দেই অতি-আধুনিক সভ্যসমাজে-
তবে কি মরেনি সেইদিন যেইদিন হুতুম ডাক দিয়েছিল তোমার চালের ওপর দিয়ে।
জোড়া শালিক দেখে তুমিও কি স্বপ্ন দেখ নি ভালোবাসা পাওয়ার
হয়তো মিথ্যে হয়তো ছিল অলীক; ছিল মিথ্যে স্বপ্ন, তবুও দোলা লেগেছিল জলে!
টুনটুনি হয়তো এখনো বাসা বুনে নিচু কোন গাছের ডালে
ছোট্ট পাখিটি স্বপ্ন অশেষ; শুন্য নীড়ে হাহাকারে মাতে ঝড়ের শেষে
বাবুই পাখির শক্তগাথুনি বাসা বাঁধে তাল তমালের পাতায় পাতায়
ঝড়ের তালে দোলে; দুলছে যেন মহাকাল, ভাঙে গড়ে অনন্তকাল।
সাজের বাহারে ময়না টিয়া, বাঙালি ললনার প্রতিমূর্তিরূপে
জন্মান্তর বাঙালি মিত্রতা গড়েছে বিনে সুতার মালায় প্রকৃতির সাথে
তবুও মানুষ আজ ছুটে চলেছে যন্ত্রের নগরে মিথ্যে সুখের আবাহনে।

প্রবাসেও খুঁজি শ্যামলিমা তোমায়

অন্ধকার ঘোর ঘোর অমানিশা
তবু জ্বালাচ্ছে আলো জোনাকি মেয়েরা
হিজল তমালের ডাল বেয়ে ঝরছে শিশিরের মুক্তো ফোটা
ধূসর প্রবাসেও আমি স্বপ্নে হারিয়ে যাই প্রিয়তমা শ্যামলিমা।

পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনি না বিচিত্র সুরের তানে
মাঝে মাঝে দেখি শালিক জোড়া কোনো এক মরুদ্যানে
অভিমানে তারা দেখিছে এদিক ওদিক ভিন্ন দিকে মুখ করে
হোক অভিমান তবুও করি স্মৃতি রোমন্থন, তোমাকে পেতে আপন করে।

জলাশয় কখন দেখেছি ভুলে গেছি, দেয় না সে হাজিরা স্মৃতির মাঝারে
সারি সারি শ্বেত বলাকা ওড়েনা আর সন্ধ্যার আকাশে ঘরে ফেরার তরে
চাতক চাতকী রচেনা মায়ার বন্ধন, রুক্ষ মরুর মাঝে উদাসী হতে-
দখিনা বাতাসে এখানেও ওঠে ঝড়, হিমশীতল নয়! প্রিয় মুখ জ্বালাতে।

ভ্রান্তির ছলনে আমি ভুলে মাঝ রাতে পথ চলি বেহুলার সন্ধানে
কোথাও পাই না খুঁজে তারে, যারে দেখেছি শ্যামল বাংলার মননে
জোনাকি মেয়েরা জ্বালায় না আলো এখানে, ছুটে চলে শুধু যন্ত্রদানবের দল
শ্যামলিমা তোমার মত এমন শ্যামল নাই আর পৃথিবীর বুকে, আছে শুধু ছল!

দেশদ্রোহী

মা, ওরা এখনো টিকে আছে যত্রতত্র, ভালো মানুষের বেশে-
সুযোগ পেলে তোমার সর্বনাশ করার স্বপ্ন দেখে নীরবে নিভৃতে
এখনো বেহায়ার মতো সুযোগ বুঝে তোমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে
‘‘এমন দেশে তো এমনই ঘটনা ঘটবে! জানে, সর্বজনেই জানে।’’

তোমার আলো-বাতাস কি তারা ভোগ করছেনা কভু!
তোমার বুকের দুগ্ধ স্রোতরূপী জলে কি তার তৃষ্ণা মিটেনি মৃদু!
তোমার বুকের রাশি রাশি সোনালি ধানে কি তার জুটেনি আহার!
তোমার শ্যামলিমার অপরূপে কি তার চোখে জাগেনি বিস্ময় অপার!

ওরা ছিলো ভিনদেশি শত্রু, অঙ্গার করেছিলো তোমার বুক
বাংলার বুক শ্মশান করতে উদ্যত ছিলো সদা উন্মুখ!
বারুদে বন্দুকে যত্রতত্র খই ফুটিয়েছিলো হায়েনার দল
এরাও তো খই ফোটাচ্ছে কথার ধুম্রজালে, রচেছে মিথ্যে ছল।

মা, তোমার কোনো সন্তান যদি হয় পথের বিবাগী; চলে ভুল পথে
সে দোষ তো মায়ের নয়! পার যদি লড়ে যাও তার সাথে
ঝোপের আড়াল হতে হুক্কাহুয়া রবে বোল বলোনা শেয়াল শয়তান
রুখে দিতে আছে এখনো বেঁচে দেশপ্রেমিক লড়াকু মন।

মায়ের বদনে কালিমা মেখে, পরিচিত হইও না জাতীয় কুলাঙ্গারে
বাংলার জল, বাংলার ফল আর শ্যামলিমা পেয়েছি বিধাতার আশির্বাদের তরে।

পৈশাচিক ভালোবাসা

বহুদিন থেকে ইচ্ছে হচ্ছে একটা পৈশাচিকরূপী প্রেমিক হতে
না! তোমরা যেমনিটি ভাবছো, ঠিক তেমনটি নয়-
তোমাদের কাছে তো পিশাচ মানেই হিংস্র,
সর্বস্ব কেঁড়ে নেওয়া এক নুপুংসুক হায়েনা!

আমি ঠিক তেমনটি ভাবছিনা, ভাবছি অনাবিল সুখের সায়র
দক্ষিণা সমীরণে ভেসে আসা কাঠপোলাপের স্নিগ্ধঘ্রাণ
কাশফুলের সুকোমল বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুজন
নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার গল্প অবিরাম।

আমি চাচ্ছি এক সুবোধ বালিকার অমলিন ভালোবাসা
যেখানে নেই কোনো দ্বেষ, হিংসা আর কামণার হলিখেলা
অদেখার বিরতিতে আকাশ-পাতালেও জাগবে বিরহ ব্যাথা
যেমন জীবনী শক্তি ছাড়া প্রাণ টেকেনা; তেমনই শুভ্র ভালোবাসা।

তার চেখে আমি হবো এক অনাবিল সুখস্বপ্ন
হৃদয় গহীনে লুকিয়ে থাকা এক হৃদকম্প
থেমে যাওয়া মানেই তার মৃত্যু অবধারিত
শ্যামল পৃথিবী ধূসর হবে, চোখের চাহনি হবে স্থির।

এই বিশ্বাস যেদিন পেয়ে যাবো
ভালোবাসা প্রাপ্তির শতভাগ আশ যবে মিটে যাবে
সেদিন আমার অন্তর্ধান হবে, এই লোকালয় থেকে দূরে বহুদূরে-
সীমানার ওপারে, যেথায় জীবন নিয়ে কেউ যেতে পরেনি আজো।

দ্বিচারিণী

যতটা অনুসন্ধানী হওয়া গেলে তোমার অন্তরাত্মার খবর জানা যেতো
ততটা অনুসন্ধানী হতে পারেনি সেই যাযাবর; সুদূর অতীতে-
তোমার ভেতরে বহুমাত্রিক রূপ বিরাজমান
কতকটা অত্যুজ্জ্বল, কতকটা বেশ কদাকার!
অত্যুজ্জ্বল রঙের ছটায় মানুষ বিমোহিত
পাড়ার সদ্যপ্রসূত জীবন মিয়া থেকে
জীবন সন্ধিক্ষণের কদম আলীও-
ওরা তোমার বাইরের রুপটা দেখে শুধু
বহুমাত্রিক অন্তরাত্মার খবর পায়নি কোনোদিন!
তোমারও বেশ ভালো লাগে তাদের বিমোহিত হতে দেখে
রঙের তালে তালে ওরা বেশ নাচতেও জানে বটে;
তুমিও নাচাতে বেশ পটু হয়েছো ইদানিং!
অথচ যে তোমার ভেতরের খবর পেয়ে গেছে
সে আজ অন্ধকার গলিতে ধুকে ধুকে পা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর দিকে-
হয়তো সে অচিরেই মুক্তির স্বাদ পেয়ে যাবে!
তোমারও বাইরের রঙের-ছটা ম্লান হবে একদিন
অবশিষ্ট রবে শুধুই কদাকার প্রতিচ্ছবি
তখন অত্যুজ্জ্বল রবি কিরণের মাঝেও তুমি-
শুধুই কদাকার আর কদাকারের প্রতিমূর্তি!

স্মৃতিদগ্ধ সুখিমানুষ

আমি আজ সেই ঝড়ের কথা বলছি –
যে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল স্বপ্ন বাসর
পরস্পর স্থান বদল করেছিলো আকাশ পাতাল ;
আদ্রতাহীন স্বপ্নের ঘর্ষণে যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঘটেছিল—
তাতে সব স্মৃতি পুড়ে সেদিনই হয়েছিল ছাই।

আজ আমি সুখি মানুষের উপমা দিতে দূরে যেতে হয়না
আমি পুড়ে যাওয়া স্মৃতিহীন এক সুখি মানুষ।
পুরনো স্মৃতি আজ ভেসে বেড়ায় না মানস পটে
ছায়াপাত ভেসে নিয়ে গেছে ছাই ভস্মগুলো
কোন এক নর্দমার উর্বরতা বাড়াচ্ছে হয়তো !

যে স্মৃতি মানুষের কান্নার অনুষঙ্গ
সে স্মৃতিতো আমার পুড়েছে অনেক আগে।
হাত বাড়ালেই এখন দেখি অসীম আকাশ ; অবারিত সবুজ মাঠ
ধূসর মরুভূমি খুঁজে পাইনা ত্রিসীমানায়।
বিরহ গীতি লিখতে বসে পাইনা খুঁজে
লুকোচুরি খেলা কোন এক কিশোরীর
শুধু দেখি স্বর্ণলতার ডালে খেলছে রঙিন প্রজাপতি।

নারী তোমার পরিচয় প্রেমে নয় ভালোবাসায়

নারী তোমার প্রেম নয়, ভালোবাসা চাই প্রতিনিয়তে
তোমার যৌবন তো সূর্যোদয়ে শুরু; শেষ সূর্যাস্তে
সারাটা জীবন পাড়ি দাও অভিনয়ে মত্ত হয়ে
প্রেম পিপাসু হারামী নর যে কামের তাড়নায় তোমায় অধীর করে তোলে!

প্রতিটি প্রাণীর ডিম্বানু জাগে হয়তো মাসের শেষে
শুক্রানু ক্ষণেক্ষণে খোঁচা দেয় হারামী নরের দেহে
অসহায় ডিম্বানু জেগে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে শুক্রানুর সাক্ষাতে
বছর কেটে যায় ফেরেনা স্বরূপে; নারীর প্রেম অসার হয় পুরুষের কামনাতে।

নারী, তোমার ভ্রু-যুগল আমায় আকুল করে
তোমার ওষ্ঠাধরে যেন পদ্ম ফোটে প্রতিরাতে
আনত মুখ চন্দ্র-মল্লিকার মতো ব্যাকুল করে তোলে আমায়
তোমার অবয়ব দেখে বিভোর হই, প্রেমে নয় ভালোবাসায়।

নারী, তুমি শান্ত হও। ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও বিশ্বময়
পতিসেবা, প্রেম কিংবা শুধু কামে নয় তোমার পরিচয়
তুমি ভালোবাসার বটবৃক্ষ, সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল
কামের অভিনয় থেকে বেরিয়ে এসো নারী, ভালোবাসাময় জীবন করো সচল।

শ্বেতস্বপ্ন

শ্বেতস্বপ্নের ধূসর রাজ্যে কাশফুল হাওয়ায় ওড়ে
শিশিরস্নাত নরম আলোয় পদ্মবনে নীল পতঙ্গ বাসর রচে
জোনাকিরা যায় হারিয়ে হাঁড় কাপানো শীতের আগে
মাঠে থাকে শেয়াল কুকুর কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে।

শ্বেতস্বপ্ন মলিন হলে অসূর নৃত্য সুযোগ পাবে
জাগো তবে নীলকমলেরা মাতৃভূমি পাহারা দিতে
ফুলের মাঝে কীট থাকে তাই, ফুলের চাষ কি বন্ধ হবে!
নীলকমলেরা হারিয়ে গেলে অসূর নৃত্যে তোমার আমার মৃত্যু হবে।

শ্বেতস্বপ্নের ক্যানভাসেতে ছবি আঁকবো দেশ প্রেমের
শ্বেতস্বপ্ন ধূসর করতে দেবনা আর হায়েনাদের
পদ্মবনে থাকে যদি কীট, মুক্ত করবো সদলবলে
নীলকমলেরা ওঠ জেগে; মানব মুক্তির দীক্ষা দিতে।

সম্প্রীতির এই স্বাধীন দেশে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা হবে
স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে দীক্ষা নিতে রইবোনা আর পিছু হটে
রফিক সফিক সালামেরা ডাক দিয়ে যায় মুক্তির মিছিল রাজপথে
আজও যেন ডাক দিয়ে যায়, সাম্যের গানের মূর্তপ্রতীক স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ মুজিব কন্ঠে।

একটি রূঢ় বাস্তবতার গল্প

নাম তার সুদীপ্ত চৌধুরি। তিনি একজন শিক্ষক। তাও আবার প্রবাসী বিদ্যায়তনে চাকরি করেন। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্যারের আত্মসম্মান বোধটা একটু বেশি। কোন অভাব অভিযোগ কারো সঙ্গে সহজে শেয়ার করতে পারেন না। তাই সবাই ভাবে, স্যারের অনেক কিছু আছে। প্রবাসের মাটিতে কোন কিছুর অভাব হয় নাকি?
কিন্তু করোনা যে, সব গ্রাস করে নিয়েছে! সে গল্প সবার অজানা! গত মার্চ থেকে তিনি পঁয়ত্রিশ শতাংশ বেতন পেয়ে বেশ আরামেই আছেন। বিষয়টিকে তিনি বেশ উপভোগ করছেন। আত্মসম্মানবোধের কারণে কারোর সঙ্গে শেয়ার করতে না পারার কারণে যারা জানে না, তারা স্যারের শম্বুকগতির পথ চলা কিংবা মুখোশের আড়ালে আত্মগোপন করার কারণে বন্ধু-সজ্জন তার থেকে ধীরে ধীরে মুখ সরিয়ে নেওয়াকেও তিনি বেশ উপভোগ করছে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন সুদিন আসতে বাধ্য।
সে সুদিনে তার কোন দেনা থাকবে না। থাকবে না কোন দায়বদ্ধতা। সে সোনালি ভোরে নিঃসঙ্গ হলেও মুক্তির আনন্দে ভাগ বসানোর কেউ থাকবে না। সে মুক্তি হবে একান্তভাবে তার নিজের।

আমার বাংলাদেশে

চোখ মুদে দেখি যে অবয়ব সুন্দর বর্ণিল আকাশে
তুমিও কি খুঁজেছ তারে; কোন এক অন্ধকার সাগরের তলদেশে!
লক্ষ্মীপেঁচার ডাকে ঘুম ভেঙে, এখনো কি হাতড়ে বেড়াও আঁধারের আলো
শিশিরের পতন শব্দে জলতরঙ্গের সুরে, উন্মাতাল দিন কাটে কি আজো!

সবুজ ক্যানভাসে বর্ণিল রঙের ছটায়, উন্মিলিত চোখে আজো কি স্বপ্ন ভাসে
এখনো কি খেলা কর জোনাকির আলোয়; আলো-আঁধারি কচি কিশলয়ে-
নাকি রম্ভার কাদির হলুদ রঙের বিবর্তনে, সবুজের হলুদ ব্যাধি নিয়েছ মেনে
নাগরিক মননের যান্ত্রিক সভ্যতায়, ভাসিয়েছো গড্ডালিকা প্রবাহে!

চলো বন্ধু ফিরে যাই; বঙ্গোপসাগরের পলি দিয়ে গড়া সবুজ অরণ্যে
যেথায় আকাশ সদা নীল, অবারিত জলরাশি খেলা করে; আহ্নিক গতির মিতালিতে
সন্ধ্যার আকাশে শ্বেত বলাকা ফিরে চলে আপন নীড়ে, স্বাধীন চিত্তে-
অবোধ বন্ধু! বুঝনি এখনো তুমি? সবই পাবে আমার বাংলাদেশে।

একটু সতর্ক হই!

পেইজে একসাথে পনেরটি লেখা প্রদর্শিত হয়। এই পনেরটি লেখার মধ্যে একজনের চার পাঁটটি লেখা কম সময়ের মধ্যে পোস্ট করলে অন্যের লেখা দ্রুত আড়ালে চলে যায়। আসুন লেখা পোস্ট করার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হই।

যতো সুখ বঙ্গমায়ের উত্তরী তলে

আমার অনাদি অস্থি জুড়ে বিস্তার লাল-সবুজের
এমন বিমোহিত করা রঙ কোথাও দেখিনাকো আর
হাজার নদী পাড়ি দিয়েছি; অকূল পাথার
বিত্তের মাঝেও নেই উল্লাস; শ্যামলিমার মত তোমার।

চোখে ভাসে আজো উত্তরী উড়িছে দখিনা বাতাসে
যেমন ভেসে বেড়ায় শঙ্খচিল; বাধাহীন মুক্ত আকাশে,
ঘাসফড়িং রচিছে বাসর সবুজ ঘাসে স্বাধীন ভূমে
বারণ নেই তার হারিয়ে যেতে, অসীমের মাঝে।

পাখ-পাখালি করিছে কোলাহল; আনন্দ অফুরাণ
বৌ কথা কও ডাকিছে পাখি, ভুলে যেতে অভিমান;
পেখম খুলে নাচিছে ময়ূর, রুধিবার সাধ্য কার
বঙ্গ ললনা বসেছে দুয়ারে, খুলেছে সকল দ্বার।

তুমি দাও সাত-সমুদ্দুর; আমি তো দিয়েছি পাড়ি হাজার নদী;
কোথাও পাবে না খুঁজে; অমন রূপসী জন্মভূমি, মায়াবি হরিণী
স্বার্থ বলিছে অহরহ তোমায় উঁচু করিতে শির; গিরি সদৃশ মুখ
আমি বলি বন্ধু তোমায়; বঙ্গ মায়ের উত্তরী তলেই রয়েছে অনাবিল সুখ।

তবে কি প্রেম!

যে বৃক্ষের ছায়ার বিকল্প আছে অহরহ
হন্যে হয়ে তবু কেন খুঁজি তারে অহর্নিশ, করে নিথর দেহ
মনের জানালায় এঁকে যাই সেই কচি কিশলয়
দুর্বাঘাসের তো অভাব নেই সবুজ বাংলায়।

অক্টোপাসের অষ্টপদ অদৃশ্য চাপ রেখেছে হৃদয় গহীনে
মনের চোখের দৃষ্টি কেঁড়ে নিয়েছে অতি সংগোপনে,
দেখি না তাই নীল আকাশের ওপারের নীল আকাশ
প্রান্তের ওপারের সেই ঘন সবুজ মাঠের চারপাশ।

শুনেছি দখিনা সমীরণে বয়ে আনে নতুন দিনের বারতা
বাজেনি সেই সুর আজো মর্ম কুহরে, কেন এই নীরবতা!
তবে কি আমি আজ অন্ধ! বন্ধ হয়ে গেছে সব জানালা-
সুরের বৈচিত্র্যের পাইনি সন্ধান আজো; কেটে যায় অবেলা।

মুধু মাসের মধুর বরণ, শোভাময় চারিদিক
ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়; হয়ে যেন নির্ভীক
আষাঢ় শ্রাবণে ঝরে দিবানিশি অঝোর ধারায়
শরতে সাজাও প্রকৃতি শ্বেত শোভাময়।

শীতের প্রকৃতি সাজে কুয়াশার উত্তরীতে ঘোমটা মাথায় নববধূর সাজে
বসন্তে বাসর রচে কোকিলের কুহুকুহু তানে; ফুলের মালায় বাসন্তী সাজে,
রঙ বদলাও তুমি; রঙ বদলায় প্রকৃতি, খোলস ছাড়ে মনসা
আমি তবে কেন বর্ণহীন! আদর্শহীন হতে পারি না সহসা।

তবে কি নিঃসঙ্গ আমি! শুধুই করি অভিন্ন দেবীর আরাধনা
বর্ণিল রঙের মাজারে কেন হয়ে যাই এমন বিমনা!
খুলিব আঁখি; লভিব চিত্রের বৈচিত্র্য রূপ, পেখম খুলে নীল আকাশে
দখিনা সমীরণে তুলেছি পাল; যেদিকে নিয়ে যাক! রহিব না তোমার আশে।

তরী মোর ঘুরেফিরে আবার নোঙ্গর ফেলে তোমারি বন্দরে
সবই আজ তবে কি অচেনা! বন্দি হয়ে গেছি তোমার সংকীর্ণ কোরিডোরে।

ধূসর প্রবাসে-

দিনের বেলায় ডুবে থাকি কর্মযজ্ঞে
ভুলে যাই কর্ম কোলাহলে অতৃপ্ত বাসনাকে
দিবাবসানে সন্ধ্যার আলো আঁধারে হারিয়ে যায় খেই
চোখে হলুদ স্বপ্ন হয় আরো ধূসরবর্ণ যেন মুক্তি নেই।

আধপেটে তোমার কোলে মাথা রেখে যখন দেখি নীলাকাশ
কেমন মায়া আছে বোঝাবার নেই অবকাশ
বিদেশ-বিভূঁইয়ে হয়তো রাশি-রাশি ধনরাশি
কোথাও দেখি না তবু তুমি আমি আর ভালোবাসা পাশাপশি।

অবারিত সবুজের কোমলতা; স্নিগ্ধ নীলাভ জলরাশি
উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের পাদদেশে সেই মেঠোপথের যাত্রি
আজ আমি নির্বাসিত মরুর রুক্ষ গিরিপথে
ক্লান্ত প্রাণ; ওষ্ঠাগত রক্ততরল, ছুটে চলি দিক্বিদিকে।

দেখি না কোথাও স্বর্ণলতা; ভেসে আছে লতাগুল্মের ডালে
ডাকে না কোকিল কুহুকুহু তানে; সখিরে কাছে পাবার ছলে!
কতদিন দেখি না জোয়ার-ভাটা; আহ্নিকগতির তালে
পাই না শীতল আবেশ শীতলক্ষ্যা নদীর জলে।

আছে শুধু বন্ধুর মরুপ্রান্তর মরীচিকার খেলা
ছুটেছে উদ্ভ্রান্ত পথিক; ফেরে শূন্যহাতে, কাটিয়ে অবেলা
তখন তার চোখে ভাসে হলুদ রাঙা স্বপ্ন ধূসর
বিবর্ণ বিকেলের কাছাকাছি আলো আঁধার।