স্বর্গ বিলাস (ধারাবাহিক উপন্যাস)

০১
তখনো পাখি ডাকা শুরু করেনি। ভাঙেনি রাতের গোঙানি। তবুও প্রতিদিনের অভ্যাস মতো আজকেও ঘুম ছুটে যায় ছায়ার। দিনের আগে দিন শুরু হওয়ার আনন্দটা একেবারেই আলাদা।যে রোজ ভোরের পাখি হয়, সে ছাড়া অন্যকারো পক্ষে এর স্বাদ বুঝতে পারা শুধু কঠিনই নয়; একেবারে দুঃসাধ্য। এই আমেজের কেবল একটি উপমা দেওয়া যায়, যেমনঃ লবণ, কাঁচামরিচ,আদা,খাঁটি সরিষার তেল পরিমাণ মতো চিড়ামুড়ির সাথে মাখিয়ে মচমচে করে খাওয়া। ছায়া জানলার ছিটকিনি খুলে বাইরে একবার চোখ ঘুরিয়ে নেয়। এখনও ঘুটঘুটে আঁধার। বাসি,পঁচা জলের মতো আসক্তিহীন। তবুও এর একটা ভিন্ন ঘরানার জৌলুশ আছে। আদিমকালের মতো আটকোরা রুপ-যৌবন আছে। এখানেই মানুষের সাথে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর সবকিছুই এমনি নিখুঁত, এমনি অকৃত্রিম।
ব্রাশ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে চলে ছায়া। বারান্দা তো নয়, যেনো ইনডোর ক্রিকেট খেলার পিচ। যেমন ইচ্ছে ব্যাটিং, বোলিং করার মতো জায়গা আছে। বল কুঁড়ানোর জন্য ৩/৪ জন ফিল্ডারও দাঁড় করিয়ে দেয়া যাবে অনায়াসেই। যদিও বল বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। গ্রিলের বাঁধা ডিঙিয়ে বাইরে যাবে এমন সাহস কার? ছায়া বারকয়েক পায়চারি দিয়ে মর্নিংওয়াক সেরে নিলো। শরীরটা এখন আগের চেয়ে বেশ হালকা লাগছে। বারান্দার ঠিক মাঝ বরাবর চমতকার ফ্রেমে বাঁধানো একটি আয়না ঝুলছে৷ ছায়ার অনেককিছু না হলেও চলে কিন্তু আয়না ছাড়া চলেনা। এজন্য মেয়েবেলায় তাকে মজা করে আয়নামতি বলে খেপানো হতো।
ছায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে আর দেখছে৷ এ দেখা যেনো কিছুতেই শেষ হচ্ছেনা৷ নিজেই বুঝতে পারছেনা সে কি যুবতী না কিশোরী৷ দুই তৃতীয়াংশ একটা ফুটন্ত গোলাপ যেনো ছায়ার রুপের কাছে কিছুই না৷ নাক, মুখ, চোখ সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর ছায়া নিচের দিকে নামতে লাগলো। অবশেষে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, তার মতো সুডৌল বক্ষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোনো মেয়ের নেই। জান্নাতের হুরদের থাকলেও থাকতে পারে। ছায়া বেশ কিছুক্ষণ নিজের চোখে, মুখে, গালে, থুতনিতে, বাঁশির মতো খাড়া নাকে হাত বুলিয়ে আদর করে। আয়নার সামনে নিজেকে আদর করতে ছায়ার বেশ লাগে। একটা সময় ছায়ার অবাধ্য হাত দুটি নিচে নামতে চায়। ছায়া সাথে সাথে হাত দুটিকে শাসন করে। সরিয়ে নেয়। এসব করতে করতে হঠাৎ ছায়া খেয়াল করে আজও তার অবাধ্য চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। ছায়া ওড়নার একপ্রান্ত দিয়ে জল মুছে নেয়। বুঝতে পারে তার মনটা এখন মোটেই ভালো নেই। একে যে করেই হোক ভালো করে তুলতেই হবে।
ছায়া আবার বাইরের দিকে তাকায়। কয়েকটা শেয়াল আর কুকুর একসাথে খেলা করছে। একটা আরেকটার মুখে মুখ ঘষে দিচ্ছে। নাকে নাক ঘাষ দিচ্ছে। লেজের দিকে আলতো কামড় দিচ্ছে। প্রকৃতির এই বিরুপ দৃশ্য দেখে ছায়া রোজকার মতো আজ আবারও আশা বেঁধে রাখে। ছায়া নিজেকে খুব ভালোবাসে। প্রত্যেক মানুষই তাই করে। ছায়া জানে মানুষের স্বভাবের, আচার আচরণের পরিবর্তন হয়। শিয়াল কুকুরের হয়না। ছায়া বিশ্বাস করে যে মানুষটিকে একদিন সে সুতীব্র ঘৃণা করতো, সেই মানুষটিকে সে এখন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এমনকি তার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।

8 thoughts on “স্বর্গ বিলাস (ধারাবাহিক উপন্যাস)

  1. ধারাবাহিক উপন্যাস এ আজকের পর্বে ছায়া'র সাথে পরিচয় হলো। চলুক।

     

  2. শব্দনীড়ে আরও একটি ধারাবাহিক পাওয়া গেলো। লিখুন কবি জসীম ভাই। পড়বো।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।