কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে, রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে
রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

পাঠান সাহেব ছিলেন এরশাদ আমলের একজন প্রতিমন্ত্রী। খণ্ডকালীন বললে ভুল বলা হবেনা। কারণ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি উনার মন্ত্রীত্ব। ভদ্রলোককে চিনি তারও আগে। পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশে সদ্য ইন্ট্রিডিওস করা হয়েছে কেবল। খুব বেসিক পর্যায়ে হলেও একসময় আমিও যোগ দেই সে প্রকল্পে। কর্মস্থল ঢাকার কালিয়াকৈর, সাভার ও ধামরাই। পাঠান সাহেব বিদ্যুতের সাব-স্টেশন বসানোর ঠিকাদার। গায়ে গতরে ফিটফাট মধ্যবয়সী একজন মানুষ। চলাফেরায় কেতাদুরস্ত ভাব। আমাদের অফিসে আসেন এক হাতে গাড়ির চাবি আর অন্যহাতে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে। সব বিবেচনায় একজন সফল ও সুখী মানুষ। মাঝখানে দেশে না থাকায় পাঠান সাহেবের ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জীবন কোন পথে প্রবাহিত হয়েছে জানার সুযোগ হয়নি। বিদেশ পর্ব চুকিয়ে দেশে ফিরতে নতুন করে পরিচয় হয় পাঠান সাহেবের সাথে। এ যাত্রায় তিনি আর ঠিকাদার নন, সরকারের একজন মন্ত্রী।

ফারাক্কা বাধের অভিশাপের মত এরশাদের ক্ষমতায়ও একসময় অভিশাপ লাগে। দিনের বেলার মন্ত্রী রাতে ফেরারী হতে বাধ্য হন। পাঠান সাহেবের মন্ত্রীত্ব অবশ্য এর আগেই দফারফা হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান ময়মনসিংয়ের আপন ডেরায়।

কালের চক্রে নতুনকরে পরিচয় হয় প্রাক্তন ঠিকাদার ও মন্ত্রীর সাথে। এ যাত্রায় ওনার মতিঝিলের শ্রীহীন অফিসে। এরশাদের বেশকজন পরিত্যাক্ত মন্ত্রীকে নিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি আমরা। ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হওয়ার পর পাঠান সাহেব টেনে আনলেন নিজের মন্ত্রীত্ব অভিজ্ঞতার সোনালী সময়। রোমন্থন করলেন এবং আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।

‘আহ! সে-কি সময়! চাইলেই কি ভুলা যায়! রাস্তার ট্রাফিক লাইটে গাড়ি থামলে ট্রাফিক পুলিশের লম্বা সালাম…এসপি ডিসিদের পোংগায় বাঁশ দেয়ার অঢেল স্বাধীনতা…বাড়ি গেলে রেলষ্টেশনে পুলিশের অপেক্ষা! – আরও অনেক কিছু রোমন্থন করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অভিযোগ করলেন, ট্রাফিক পুলিশ এখন তাকে শালা বলে গালি দিতেও কার্পণ্য করেনা।

ছবিরজন এ সময়ের একজন মন্ত্রী। সোনালী সময় পার করছেন তিনি। কিন্তু হায়, যখন এ সময় চলে যাবে তিনিও হয়ে যাবেন একজন পাঠান সাহেব। যাদের কাঁধে চড়ে মোবাইল মসনদের ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তারাই হয় শুয়রের বাচ্চা গালি দিতে দ্বিধা করবেনা।

সময় বড় কঠিন চীজ!

4 thoughts on “কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে, রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

  1. আহ! সে-কি সময়! চাইলেই কি ভুলা যায়! রাস্তার ট্রাফিক লাইটে গাড়ি থামলে ট্রাফিক পুলিশের লম্বা সালাম… সময় বড় কঠিন চীজ হে মান্যবর !! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cool.gif

  2. … ফুলে পাইলা ভ্রমরা ময়ূর বেশেতে সাজন রাধিকা। 

  3. এর চেয়ে কঠিন চীজ আমাদের ভারতে বেশী। ডিগবাজি আর ডিগবাজি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yes.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।