[অনেক আগে লেখা আমার একটি অসমাপ্ত গল্প। গল্প না বলে একে গল্পের মুখবন্ধ বলা যায়। একে টেনে একটা চমৎকার উপন্যাসে রুপ দেবো ভেবেছিলাম..]
মধ্য আষাঢ়। ঝুম বৃষ্টি। বাইরে আঁধার। যদিও শিহাব যেখানে এখন শুয়ে আছে, সেটার দুই প্রান্ত ছালার চট দিয়ে ঘেরা, তাই ভেতরে সবসময়েই অন্ধকার থাকে। তারপরও ভেতরের অন্ধকার ছাপিয়েও কিছুটা আলো থেকেই যায়। আজ বাইরে আকাশের মন খারাপ। তাই আঁধারের মাঝে আরো কিছুটা আঁধারে ঢেকে আছে এক অন্ধকারের মানুষ, যার ভেতরটা আলোয় ভরা।
এখন দিন-রাত্রির কোনো প্রভেদ নাই। সবকিছু-ই একইরকম। কালো। রেললাইন সংলগ্ন এই পাইপজীবন তেমন খারাপ লাগছে না ওর কাছে। এখানে কোনো কাজ নেই। অখন্ড অবসর। সময়টা কাটে তাই চিন্তায় চিন্তায়। তবে এই চিন্তা কিছুদিন আগের চিন্তার মত না। তখন চিন্তার সাথে সাথে থাকত কিছু দীর্ঘশ্বাস, হতাশা, একটু আনন্দ। এখন চিন্তার সাথে শ্রেফ প্রশান্তি বিরাজ করে। আসলে কাছের সম্পর্কগুলো থেকে সরে আসায়, কাউকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করতে হয় না শিহাবকে। যখন একজন মানুষ ছিল, তখন সবাইকে নিয়ে চিন্তা ছিল।
‘এখন কি তবে তুমি মানুষ নও?’
নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবে। ইদানিং নিজেকে নিয়েই চিন্তা-ভাবনায় মশগুল শিহাব। মানুষ কে? এর কি কোনো সর্বজন স্বীকৃত নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা আছে? না থাকারই কথা।
যখন মানুষ ছিল তখন সবাইকে নিয়ে চিন্তা করত। এই সবাই কি মানুষ ছিল?
প্রশ্নের উত্তর আরো প্রশ্ন নিয়ে আসে.. সেগুলো আরো। এভাবে মুহুর্তগুলি কেটে যায় দুপুরের খাবার নিয়ে যখন পাশের ‘পাইপে বাস করা’ ঝর্ণা, ছালার ওপারে গলাখাকারি দিয়ে বলে,
‘মামু, জাইগা আছ? তোমার লাগি খানা লিয়ে আইছি।’
ঝর্ণা শিহাবের দখল করা পাইপটির পাশের পাইপ-পরিবারের সব চেয়ে ছোট সদস্য। পঙ্গু ভিক্ষুক আজমত আলীর দুই মেয়ে। লিলি আর ঝর্ণা। লিলি-ঝর্ণার মা বছর পাঁচেক আগে মারা গেছে। সেই থেকে ওরা এই পাইপে পাইপে জীবন কাটাচ্ছে। তবে ওদের জীবনের শুরুটা ঠিক এমন ছিল না। গ্রামের বাড়িতে সবাই মোটামুটি নিশ্চিন্ত ছিল। আজমত আলী তখন সুস্থ। নিজের জমিজমা চাষ করে দিনগুলি ভাল-ই কেটে যেত। নদী-ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই পরিবারটি আরো কিছু পরিবারের মত পথে বসে গেল। উপায় না দেখে আজমত আলী ঢাকা এলো। শুরু হল রিক্সাওয়ালা আজমত আলীর বস্তিজীবন। ঝর্ণার মা ছালেহা ঠিকা ঝি’র কাজ নেয় মানুষের বাসায়। নতুন স্বপ্ন চোখে নিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে এই পরিবারটি।
একদিন এক সড়ক দুর্ঘটনায় আজমত আলীর রিক্সাটি দুমরে মুচরে গেল। শরীরের নিচের অঙ্গ থেতলে যায়। একটা পা কেটে বাদ দিলে উপহার স্বরূপ ‘ক্রাচ’ লাভ করে আজমত আলী। বিধাতার উপহার?
তখন পুরো পরিবারটির দায়িত্ব ছালেহা বেগমের ওপর পড়ে। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সে। শ্রেফ স্বামী ও দুই মেয়ের জন্য দু’বেলা খাবার জোগাড়ের জন্য। বড় মেয়ে লিলি মায়ের সাথে কাজে যায়। কিন্তু মানুষের অমানুষ সুলভ আচরণে সে বাসায় কাজ করতে পারে না। নারী লোভী বেশ কিছু জানোয়ার আমাদের সমাজে মানুষের বেশে ঘুরে বেড়ায়। এরাই লিলিদেরকে খেয়ে-পরে বাঁচার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
একদিন সকালবেলা ছালেহা বেগম আর কাজে যায় না। আজমত আলী ডাকতে গিয়ে দেখে, আর কখনো সে কাজে যাবে না। বিধাতার থেকে দ্বিতীয় পুরষ্কার লাভ করে আজমত আলী। ভিক্ষুক জীবনের শুরুটা সেদিন থেকেই। এবার বাপের সাথে ভিক্ষুকের সহকারী হিসেবে লিলি কাজে নামে। ঝর্ণা বাসায় থাকে। কিছুদিন বস্তিতে থাকলেও পরে এই পরিবারটি পাইপে শিফট হয়ে আসে। বাপ আর বড় বোন সারাদিন ভিক্ষা করে যা নিয়ে আসে, ঝর্ণা সেগুলো রান্না করে। এ ছাড়াও সে টুকটাক কাজ করে। কাজের তো আর শেষ নেই কোনো পরিবারে। হোক না সেটা পাইপ-পরিবার।
…
এই হল এক নজরে ভিক্ষুক আজমত আলীর পরিবারের গল্প। এরকম অনেকগুলি পরিবার এই রেললাইন সংলগ্ন পাইপে বাস করছে। এদের সবার-ই যার যার মত করে আলাদা আলাদা গল্প রয়েছে। একজন উর্ধতন কর্মকর্তা শিহাব, এদের মত না হয়েও এদের সাথে থাকছে। পঙ্গু ভিক্ষুক আজমত আলী তার একটা পাইপ ওর জন্য ছেড়ে দিয়েছে। কেন দিলো কিংবা শিহাব এখানে কেন?.. সে আরেক গল্প। ওটাও আমরা জানবো, তবে যে শিহাবকে আশ্রয় দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করছে, সেই আজমত আলীর অনুভবেই একজন উর্ধতন কর্মকর্তার পাইপজীবনের গল্পটিও আমরা শুনবো। তবে অন্য কোনো এক সময়…হয়তোবা।।
___________________________________________
#একজন_উর্ধতন_কর্মকর্তার_পাইপজীবন_মামুনের_অসমাপ্ত_গল্প।
পাইপজীবনের গল্পটিও আমরা শুনবো। যে অণুকথায় শিহাব চরিত্রটি থাকে বা বিধৌত হয়, আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেই লিখাকে বিশেষ স্থান দিই। শুভকামনা মি. মামুন।
শিহাবের গল্পের জন্য আপনার অপেক্ষা এবং ভালো লাগা শিহাব এবং গল্পকার- উভয়ের জন্য আনন্দদায়ক জানবেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর…
শিহাব চরিত্রের মধ্যে আমিও আমার নিজেকে খুঁজে পাই মামুন ভাই।
জেনে ভালো লাগলো প্রিয় সুমন। সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ।

অসমাপ্ত লেখাটি সমাপ্ত হবে, কলেবরও বেড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা গল্প দা।
জি রিয়া দিদি, হয়তো আগামি বইমেলায় উপন্যাস আকারে বের করতে পারবো। গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।

সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ মহ. আল মামুন ভাই। ভালোবাসা।
আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় কবি দাদা। সাথে থাকার শুভেচ্ছা রইলো। ভালোবাসা নিরন্তর…

ভালো অণুগল্প হয়েছে ভাই।
গল্পটি পড়ে আপনার সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবসময়।

পড়লাম।
গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
