রবিঠাকুর হে – চার

একটানা মনখারাপী কাজলি বর্ষণ
জমিয়ে জড়িয়ে রেখেছে মাটিগন্ধা ঘাসবিকেল,
ঝিরিঝিরি কুসুমফলার মৃদু শব্দ
আনমনে কখন যেন নেশা ধরায়
বহির্টানে সাড়া দেওয়া যাযাবরমনে,
আঁকড়ে থাকা ঘরের কোনছায়া
গুনগুন বিলাসী বর্ণমালায়
“তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও…”
রহিত সুকুমারী সুখের সন্ধান
কবেই বা পেয়েছে কেউ
এ রক্তঅঝোর বিষণ্নতার সন্ধিমায়ায়!

কতদিন হলো, সেই ছোট্ট নরপুরুষ
মন্দিরের শ্বেতপাথরের সিঁড়িগুলো
পেরোতে গিয়ে থমকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল
আসমুদ্র চর্মরোগগ্রস্ত পৃথিবীর দিকে –
“এতো রক্ত কেন?”
মেঘের ঋণাত্মক ঘর্ষণে চমকানো
লক্ষ ভোল্টের আলোর ফাঁকে ফাঁকে
আজও সেই প্রশ্ন আছড়ে পড়ে-
পড়ে-পড়তেই থাকে লোভ পিচ্ছিল
কালো কালো গহ্বর আঁকা
উন্মত্ত মননের তাথৈ নৃত্যমঞ্চে।

বৃষ্টি পড়ে শ্রাবণের সন্ধ্যায় ব্যাকুল অবসরে,
বৃষ্টি পড়ে একক যাযাবরের একলা বিকেলে,
বৃষ্টি পড়ে কোলশূন্য মায়ের দৃষ্টিশূন্য চোখে।
দুগাল বেয়ে গড়িয়ে নামা লবণাক্ত জল
ঝিরঝিরে শ্রাবণজল
দাঁড় করায় প্রজন্মকে অতল খাদের কিনারায়-
রবিঠাকুর হে, আমরা আর কবে মানুষ হব!

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

10 thoughts on “রবিঠাকুর হে – চার

  1. … তুমি সুখ যদি নাহি পাও
    যাও সুখের সন্ধানে যাও…”
    রহিত সুকুমারী সুখের সন্ধান
    কবেই বা পেয়েছে কেউ
    এ রক্তঅঝোর বিষণ্নতার সন্ধিমায়ায়!

    অসাধারণ গুরু গম্ভীর কবিতা প্রিয় সৌমিত্র চক্রবর্তী। অভিনন্দন জেনো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. কিভাবে কেমন হয়ে গেলো নিজেও তো বুঝলাম না প্রিয় ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. মানুষ হবার সম্ভাবনা কতটুকু সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে কবি সৌমিত্র দা। :)

    1. সত্য বলেছেন কবিবোন সাজিয়া আফরিন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. কতদিন হলো, সেই ছোট্ট নরপুরুষ
    মন্দিরের শ্বেতপাথরের সিঁড়িগুলো
    পেরোতে গিয়ে থমকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল
    আসমুদ্র চর্মরোগগ্রস্ত পৃথিবীর দিকে –
    “এতো রক্ত কেন?”

    দারুণ।

  4. আমরা আজও মানুষের মতো মানুষ হতে পারিনি শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।

    আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো।        

    1. শুভেচ্ছা প্রিয় কবি নিতাই দা। ভালোবাসায় থাকুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।