গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান
নবম পর্ব- ঝুমুর গান-৯
গীত রচনা -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ঝুমুর গান: সাঁওতাল আদিবাসিদের গানগুলো ঝুমুর গান নামে পরিচিত। নৃত্য, গীত ও বাদ্য সহযোগে ঝুমুর গাওয়া হলেও এতে গীতের প্রাধান্য থাকে। গানের সুর উচ্চগ্রাম থেক নিম্নগ্রামে অবরোহণ করা হয়, যা ঝুমুরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তালকে অগ্রাহ্য করে মাত্রা অনুসরণ করে সুর দেওয়া হয়। সম থেকে শুরু না করে ফাঁক থেকে গান শুরু করা হয়।
সাধারণতঃ সমঝদারের আসর ও নাচের আসর এই দুই জায়গায় ঝুমুর গাওয়া হয়। সমঝদারের আসরে বৈঠকী, ছুট ও পালাবদ্ধ ঝুমুর গাওয়া হয়। বৈঠকী ঝুমুরে গায়ক একজন, কোন নাচ থাকে না এবং বাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় হারমোনিয়াম ও পাখোয়াজ। ছুট ঝুমুর নাচ, গান, বাজনা সহযোগে একটি পূর্ণাঙ্গ ঝুমুর। পালা ঝুমুর একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গাওয়া হয়। নাচের আসরে নাচ, গান, বাজনা সহযোগে একটি পূর্ণাঙ্গ ঝুমুর গাওয়া হয়। এই আসরে রসক্যা বা রসিক সহযোগে নাচনী নাচ হয়ে থাকে।
ঝুমুরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সুর ও তালের প্রচলন হয়েছিল, যার মধ্যে অধিকাংশের অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। তবে ডহরওয়া, পতরতুলা, বেঁগাড়ি, পাটিয়ামেধা, রিঁঝামাঠা, ঝুমরা, ঝুমটা, একডাঁড়িয়া, গোলোয়ারি, নাগপুরিয়া, তামাড়িয়া, শিখারিয়া, পাঁচপরগণিয়া, মুদিআরি প্রভৃতি সুরের অস্তিত্ব বর্তমানে রয়েছে।
ঝুমুর এই ভাদরিয়া। দাঁড় নাচ সমবেত নৃত্য। যা অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে হাতে হাত ধরাধরি করে নাচতে হয়। পরস্পর হাত ধরাধরি করে নাচে তাই এখানে কোন মুদ্রা প্রদর্শনের সুযোগ থাকে না। দাঁড় নাচ বা ভাদরিয়া ঝুমুর রাঢ় বাংলার প্রাণস্বরূপ। আদিকালে নাচটিতে মেয়েরা নাচত আর পুরুষরা বাজাতো। এই চলন বা প্রথা ৪০/৫০ বছর আগে পর্যন্ত বর্তমান ছিল।…………সারা রাত্রি পুরুষদের বাজনায় অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে ঝুমুর দেখে রাতশেষে ভোরবেলায় বাড়ি ফিরত।
নাচনী নাচ ঝুমুর গানের সাথে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই নৃত্যে সুস্পষ্ট মুদ্রার ব্যবহার না থাকলেও হস্তক, চারী, ভ্রমরী প্রভৃতি ঠাটের লক্ষণ রয়েছে। আসরে উপস্থিত রাধা ও কৃষ্ণ যুগল মূর্তিকে প্রণাম করে আসর বন্দনার মাধ্যমে নাচ শুরু হয়। নাচনী নাচের গানগুলির প্রধান রস শৃঙ্গার এবং রাধা ও কৃষ্ণ লীলা মূল বিষয়বস্তু। এই নৃত্যে ঢোল, মাদল, সানাই, শিঙ্গা, কারহা, কেড়কেড়ি প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নাচের দল সাহারণতঃ পাঁচ থেকে কুড়ি জন নিয়ে গঠিত হয়। দলের প্রধান পুরুষকে বলা হয় রসিক বা রসক্যা এবং নর্তকীদের বলা হয় নাচনী।
লোকসমাজে খেমটা নাচের সঙ্গে খেমটা ঝুমুর এবং ভাদ্র মাসে বর্ষা প্রকৃতি বন্দনা করে ভাদুরিয়া ঝুমুর গান করা হয়।
গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি লোকগান হিসেবে লোকসমাজে প্রচলিত একটি ঝুমুর গানের দৃষ্টান্ত:
(১) শ্যামের বাঁশী দিবানিশি,/ ওগো ডাকে নাম ধরি।
আকুল হইল প্রাণ,/ গৃহে রইতে নারি\
জ্বালা দিত বড় ভারী রে,/ বাঁশী কাল হইল। ধুয়া…
হায় আমার কি হইল,/ কি করি বল,
তিলেক না ছাড়ে দ্বার, ননন্দী প্রহরী রে,/বাঁশী কাল হইল\
সখীত্ব বা বন্ধুত্ব পাতানো উপলক্ষে নারী ও পুরুষের মধ্যে পাতা নাচের ঝুমুর প্রচলিত আছে। ঝুমুর সারি গানের অনুরূপ দ্রুত লয়ের গান। ঝুমুর গানের সাথে নাচ ও বাদ্যযন্তের সুরালাপ।
(২) গাঁথিব ফুলেরই মালা, যতনে সাজাব কালা,
আমি ঘুচাইব মনের জ্বালা, দুঃখ যাবে দূরে।
বন্ধু, হৃদয় মাজারে শ্যামকে রাখিব আদরে\ ধুয়া
না আইলে নন্দলাল কেমনে মিটাব জ্বালা।
থাক থাক প্রাণবল্লভ বাঁধা প্রেম-ডোরে।
হৃদয়-মন্দিরে শ্যামকে রাখিব আদরে\
গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান
ঝুমুর গান-৯
গীতরচনা -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
সুর – ঝুমরা ও ঝুমটা (প্রচলিত)
পূবের আলো রং ছড়ালো
সুরের আকাশে।
গানের তালে অঙ্গ দোলে
নাগর না আসে।
তার আশার পথ চেয়ে
জাগি নিশি ঝুমুর গেয়ে
তানপুরাতে সুর বাঁধি
সে আসে না পাশে।
পূবের আলো রং ছড়ালো
সুরের আকাশে।
বঁধুয়া এলো না আমার
জ্বলে যে আগুন হিয়ার
কেমনে বোঝাব তারে
আমায় ভাল না বাসে।
পূবের আলো রং ছড়ালো
সুরের আকাশে।
সুরের আকাশে সখি গো
সুরের আকাশে……….
তুম না তানা তানা তুম না না না……
সা- সারে সা মাধা পা নি পা………
সুরের আকাশে…….
[নৃত্য ও গীত ]
{হারমোনিয়ামের সুরের সাথে তবলার দ্রুত লয়]
প্রাকঃকথন এবং আপনার স্বয়ং সংযোজন পোস্টকে সুন্দর করেছে মি. ভাণ্ডারী।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। শারদীয়া অভিনন্দন রইল।
জয়গুরু!
সাঁওতাল আদিবাসিদের গান, ঝুমুর গান এর গীতিকাব্য আমার কাছে অসাধারণ লাগে কবি। তন্ময় হয়ে আপনার পরিবেশনা পড়লাম। সুন্দর।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
শারদীয়া অভিনন্দন।
জয়গুরু!
সাঁওতাল আদিবাসিদের অনেক গান আমার কাছে দারুণ লাগে। ওদের কথ্য ভাষা শুধু শুনতেই মন চায়। আপনার গীতিকাব্যের অংশটিও সুন্দর কবি।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
শারদীয়া অভিনন্দন রইল কবিপ্রতীম।
জয়গুরু!
মুগ্ধ পাঠ কবি।
সুন্দর মন্তব্য পাঠে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
শারদীয়া অভিনন্দন।
জয়গুরু!
কেমনে বোঝাব তারে
আমায় ভাল না বাসে।
পূবের আলো রং ছড়ালো
সুরের আকাশে।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
শারদীয়া অভিনন্দন জানাই।
জয়গুরু!
সুন্দর পোস্ট।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
শারদীয়া অভিনন্দন রইল।
জয়গুরু!