আমাদের ছোটবেলায় কুদালিছড়া মোটামুটি জীবন্ত ছিল, ক্ষীণ একটা স্রোত ধারা প্রবাহিত হতে দেখা যেতো… শৈশবে কুদালিছড়াকে কম অত্যাচার করি নি, লাফানো, ঝাঁপানো কাদা ছুড়াছুঁড়ি শৈশবে যত প্রকার বাঁদরামি করা যায় কুদালিছড়া বুকে প্রায় সবই করা হয়েছে… বাসা থেকে এক মিনিটের দূরত্বে থাকার কারণে আমাদের দিনের প্রায় অর্ধেক সময় কুদালিছড়ায় কাটাতাম…
ক্ষীণ স্রোত ধারায় ডুবে মরার ভয় ছিল না বলে আমাদের অভিভাবক তেমন দুশ্চিন্তা করতেন না… আমরা কুদালিছড়া শাষণ করতাম… আমাদের অত্যাচার কিংবা শাষণের জন্যই কি না, ক্ষীণ স্রোত ধারা একদিন আড়ালে চলে গেল… যে প্রাণ কিছু পরিমান হলে কুদালিছড়া ধারণ করছিল তাও একদিন নিঃশেষ হয়ে গেল… কুদালিছড়া মরে গেল…
আমাদের শৈশবেও প্রচুর বৃষ্টি হতো, এক টানা বর্ষণ, মাঠ-ঘাট ছাপিয়ে পানি বাসা বাড়িতে উঠে পড়ার উপক্রম হত… শেষপর্যন্ত বাসাবাড়ি রক্ষা পেত, কুদালিছড়া নিজের বুকে পানিকে ধারণ করে বাসাবাড়ি রক্ষা করত… গেরস্তের অমঙ্গল মানে নিজের অমঙ্গল এই ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কুদালিছড়া মানুষের জানমাল রক্ষা করত…
শুধুমাত্র বৃষ্টি বাদলার কারণে বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি, মৌলভীবাজারে বন্যা হয়েছে কিন্তু সেটা অতি বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ি ঢলের কারণে… স্থানিক বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে সেটা আগে ঘটেনি…
এই কিছুদিন আগেও দু এক ঘন্টা বৃষ্টি হলে শহরের রাস্তাঘাট সবকিছু ডুবে যেত, কারণ কুদালিছড়া মৃত ছিল, তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল… অযত্ন-অবহেলায় তাকে অযোগ্য করে রাখা হয়েছিল, গেরস্থ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাকে ভুলে গিয়েছিল… অন্যায্য অবহেলা কেউই সহ্য করে না কুদালিছড়াও সহ্য করেনি… তার প্রতি অবহেলার প্রতিশোধ সে নিয়েছে… গেরস্তের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সে দেখিয়ে দিয়েছে আমি ক্ষুদ্র কিংবা তুচ্ছ নই, আমাকে অবহেলা করলে শান্তি স্বস্তি কিছুই পাবে না… স্বস্তিতে থাকতে হলে আমার যত্ন নিতে হবে, আমার পরিচর্যা করতে হবে…
কুদালিছড়া অনেক দিন থেকেই তার আকুতি জানিয়ে আসছে, কেউ কানে নিচ্ছে না বলেই সে ফুঁসছে… আশার কথা একজন ব্যক্তি কুদালিছড়ার দুঃখ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি কুদালিছড়ার প্রতি কৃত অবহেলা মুছতে উদ্যোগী হয়েছেন…
কুদালিছড়া তার পুরনো রূপে ফিরে এসেছে, আমাদের গেরস্থ প্রধান মেয়র ফজলুর রহমান কুদালিছড়ার আকুতি অনুভব করতে পেরেছেন… তিনি পুনরায় কুদালিছড়ার শুশ্রূষায় মনোযোগী হয়েছেন, তার শুশ্রূষায় কুদালিছড়া নিজের যৌবন, ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে… এখন সে আর আগের মত রাগান্বিত হয় না, গেরস্তের দুর্ভোগের কারণ হয় না… অযত্ন অবহেলা সে মাফ করে দিয়েছে…
ফজলুর রহমানের মতো গেরস্ত আমাদের প্রয়োজন, এমন সহৃদয় গেরস্ত থাকলে শুধু কুদালিছড়া কেন… কোন ছড়া খাল নালা নদী আমাদের দুর্ভোগের কারণ হবে না…
মৌলভীবাজার শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুদালিছড়া খাল নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতাটি পড়লাম কবি আবু মকসুদ ভাই। পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান এর জন্য আমাদের শুভকামনা।
পড়ে বুঝলাম কুদালিছড়ার দুঃখ নিরসন হয়েছে। সাথে সাথে নিজ জীবনের অতীতটাও অতীত হয়েছে। শুভেচ্ছা কবি দা।
কুদালিছড়া। নামটি বেশ সুন্দর।
স্বস্তিতে থাকতে হলে কুদালিছড়ার যত্ন নিতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে…
আজকাল সুসংবাদ পাওয়া যায় কম। কুদালিছড়া পুনরুদ্ধারে কর্তৃপক্ষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তাতে সুসংবাদই বলা যায়। শুভেচ্ছা কবি।
খুব সুন্দর নাম 'কদালিছড়া'।