ঋত্বিক ঘটক বলেছেন, ‘আমি সাম্প্রতিকালের এক কবির সম্পর্কে আশা রাখি, যিনি কবিতার জন্যে যথার্থ জন্মেছেন। আমার মনে হয় একালে এত বড় শক্তিশালী শুভবুদ্ধি-সম্পন্ন কবি আর জন্মান নি। তিনি হলেন বিনয় মজুমদার।’
বিনয় মজুমদার এবং দুঃখ একে অপরের পরিপূরক মনে হয়। বিনয় মজুমদারের দুঃখ কিংবা দুঃখের মধ্যে বিনয়। বিনয় মজুমদারের কবিতা পাঠ করতে করতে প্রশ্নও জাগে বিনয় মজুমদারের কবিতায় এত দুঃখ কেন? দুঃখগুলো কিন্তু এক নয়। অনেকগুলো বাঁক এইসব দুঃখের। সঙ্গ-অনুষঙ্গ মিলে কী ভীষণ প্রতাপ তাঁর দুঃখের। অর্ধেকেরও বেশি কবিতা মিলে বিপুল সমারোহে তার পূর্ণতা।
ভালোবাসা দিতে পারি
– বিনয় মজুমদার
“ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম ?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ’রে যায় –
হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।
এ আমার অভিজ্ঞতা। পারাবাতগুলি জ্যোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি আমি।
শাশ্বত, সহজতম এই দান —- শুধু অঙ্কুরের
উদগমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে
ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না ক’রে শ্যামল হতে দেওয়া
এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলি।
গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচূরা থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ’লে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।”
অসাধারণ প্রশ্ন রেখে কবিতাটি শুরু হয়েছে-
‘ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?’ কবি বিনয় মজুমদার তাঁর ভালোবাসার ভাণ্ডার থেকে আমাদের ভালোবাসা দিয়ে যেতে চান কিন্তু আমরা কী সেই ভালোবাসা গ্রহণ করতে সক্ষম? গণিত ছিলো তাঁর পছন্দের বিষয় তাই গাণিতিক হিসাবের মতোই চলে এসেছে ঝরে যাওয়া হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা বা স্মৃতি।
‘পারাবতগুলি জ্যোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না; তবু
ভালোবাসা দিতে পারি আমি।’
পঞ্চাশের দশকের এক কবির মুখে এরকম বাণী নিশ্চিতভাবেই ভাব-ভাষার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এখনও করে।কবিতাটি ‘তোমরা’ থেকে ‘তুমি’ তে নেমে আসে। বেদনাকে সহজ অনুরণন ভাবতে হয় এখানেও। বেদনা-ই বিনয় মজুমদারকে আক্রান্ত করে আর ওই বেদনার জোরেই ভালোবাসা প্রাণ পায় দ্বিগুণ। ‘তুমি’ তে নেমে এসে এখানে ফের বলা হয়েছে, ‘গ্রহণে সক্ষম নও।’ ভালোবাসা যাকে তিনি দিতে চান সে যে কেন তা গ্রহণে সক্ষম নয় ইঙ্গিতটি অল্প বোঝা যায় শেষে এসে।
“প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চলে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।”
কবির স্পষ্ট স্বীকারোক্তি। একসময় ‘তুমি’ নামের মানুষটি চলে যাবে। ‘বিচ্ছেদ’ বা ‘বেদনা’-র পর্বের শুরু এখানে অবশ্য শেষে এসে মূল শুরুটা হয়ে যাচ্ছে। ‘আমি’ বিষয়ক ব্যক্তি কবি বিনয় মজুমদার যন্ত্রনা সাথে নিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকেন।
তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, একাডেমি পুরস্কার, কৃত্তিবাস পুরস্কার, সুধীন্দ্রনাথ পুরস্কার, কবিতীর্থ পুরস্কার, অর্জন করেছেন তার কাব্যগ্রন্থ নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, ফিরে এসো, চাকা, আমার ঈশ্বরীকে, অঘ্রাণের অনুভূতিমালা-র জন্য। তিনি তাঁর কবিতা সম্পর্কে বলেন, “আমার সব কবিতাই আসলে দিনপঞ্জি।”
কবির জন্ম মায়ানমারের (তৎকালীন বার্মা ) তেডো শহরে ১৯৩৪এর ১৭ই সেপ্টেম্বর। বেশিদিন বসবাস করেননি সেখানে। কৈশোরেই চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। জন্মদিনে এই প্রিয় কবিকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
_______________
১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৯।
জন্মদিনে কবির প্রতি শ্রদ্ধা।
আপনাকেও ধন্যবাদ তুলে ধরার জন্য।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা প্রিয়কবি দিদি ভাই।
কবি বিনয় মজুমদার এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় কবিবন্ধু। কবি বেঁচে থাকুন অন্তরে। শুভ সকাল।
কবি বিনয় মজুমদার আমাদের কবিতার অহংকার বলতে পারেন বন্ধু।
বিনয় মজুমদার এর কবিতা আমি পড়েছি। আমার কাছে অসাধারণ লাগে। শুভেচ্ছা জানাই কবি'র জন্মদিনে।
শুভেচ্ছা কবি সুমন দা।
শ্রদ্ধেয় কবির জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি। সাথে আপনাকে জানাল শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ কবি নিতাই দা।
শুভ জন্মদিন কবি বিনয় মজুমদার। পাঠক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন সহস্র বছর।
ধন্যবাদ প্রিয় কবি দিদি ভাই।
হে, আলেখ্য, অপচয় চিরকাল পৃথিবিতে আছে;
'এই যে অমেয় জল – মেঘে মেঘে অনুভূত জল
এর বা কতটুকু আর ফসলের দেহে আসে বলো?
ফসলের ঋতুতেও অধিকাংশ শুষে নেয় মাটি।
তবু কি আশ্চর্য, দ্যাখো! উপবিষ্ট মশা উড়ে গেল
তার এই উড়ে যাওয়া ঈষৎ সংগীতময় হয়।'
কবি বিনয় মজুমদারকে নিয়ে লিখার জন্য ধন্যবাদ জানাই আপু ।
আপনাকে ধন্যবাদ আনু আনোয়ার দা।