মৌখিক ভাষা বনাম প্রমিত ভাষা

ভাষা সবসময় সহজবোধ্যতা দাবী করেছে। ব্রাত্য রাইসুরা সরবে প্রমিত ভাষাকে অস্বীকার করে একদমই মুখের ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা / বই এর ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন এবং চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লিটল ম্যাগে অনেক প্রাবন্ধিকই এই মৌখিক ভাষার ব্যবহার করেছেন। ফেসবুকেও অনেকেই সেই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। অনলাইন সাহিত্য পত্রিকাগুলোও ধীরে একই পথের পথিক যেনোবা।

প্রথমে অভ্যস্ত হতে কষ্টই হয় পরে ধীরে ধীরে যেনবা সয়ে যায়।
পত্রিকা বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকার ভাষাকে, টেক্সট বই এর ভাষাকে যদি সেই আন্দোলনের শামিল করতে পারা যায় তখন সম্ভবত তারা পুরোই সফল হবেন। ভাবতে পারছিনা ইতিহাস পড়তে গেলে তখন কেমন লাগবে কিংবা বিজ্ঞান এর বইগুলোই বা কেমন লাগবে !!
শিশুদের জন্য লিখিত কবিতাগুলোর রূপই বা কেমন হবে !!
“অজগর ওই আইতাছে তাইড়া
আমটা আমি খামু পাইড়া” – ভাবলেই কেমন যেনো লাগে !!

প্রমথ চৌধুরীকেও চলিত ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ঠ কাঠখর পোড়াতে হয়েছে। তবে চলিত ভাষার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়েছিল ভাগীরথী তীরের মানুষের মুখের ভাষাকে।
এই যে মৌখিক ভাষা — এর স্ট্যান্ডার্ড কোনটা ধরা হয়েছে ?
সে কি শুধু ঢাকা বা তার আশেপাশে শহুরে লোকদের মুখের ভাষাকে ধরা হচ্ছে ?

22 thoughts on “মৌখিক ভাষা বনাম প্রমিত ভাষা

  1. ভাষা সবসময় সহজবোধ্যতা দাবী করলেই ভালো। তবে ব্রাত্য রাইসুরা প্রমিত ভাষাকে অস্বীকার করে একদম মুখের ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা করার সংগ্রাম নিয়ে মাঠে নেমেছেন তাকে আমি শতভাগ সমর্থন করি না।

    সাহিত্যের ভাষা সহজ হলে পাঠকপ্রিয় হবে এই সত্যকে কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু আঞ্চলিকতা অথবা মৌখিক ভাষার মিশ্রণ অনেক সুন্দরকেও অসুন্দর করবার জন্য যথেষ্ঠ এই সত্যকে মাথায় রাখতে হবে।

    1. কোনো উপন্যাসে বা গল্পে আঞ্চলিক ভাষা ডায়ালগ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে । মাঝে মাঝে কবিতার ভাষাও আঞ্চলিক হতে পারে । যেমন সৈয়দ শামসুল হক ব্যবহার করেছেন তাঁর কবিতায় 'আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,. ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,. ঘরের বিছান নিয়া ক্যান অন্য ধানখ্যাত রোয়?;

      তাই বলে সৈয়দ শামসুল হক কি সব কবিতাই আঞ্চলিক ভাষায় লিখেছেন ?

      ব্রাত্য রাইসুরা প্রমিত ভাষাকেই অস্বীকার করে তাদের ভাষাকে এস্টাব্লিশ করতে চাইছেন । সমস্যাটা এখানেই । 

  2. সাধু চলতি এক সময় গা সওয়া হয়ে যায়। মনে আছে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার কথা। করিয়াছে চলিয়াছে'র ব্যবহার। কিন্তু প্রমিত শব্দ বা বানানরীতি বনাম মৌখিক ভাষার যথেচ্ছার ব্যবহার একসময় অসহ্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। মৌখিক বলতে ওরা ঢাকা বা তার আশেপাশে শহুরে লোকদের মুখের ভাষাকে ধরা নিয়েছে। যা মাইনাস মনে করি।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_negative.gif

    1. সেটাই । সেটা তারা চাইলে হবে না , জনগন ও চাইতে হবে তো । চেষ্টা তারা করছেন । দেখা যাক —

  3. মৌখিক ভাষা বই এর ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগাটা দৃষ্টিকটু। 

  4. মৌখিক ভাষা'র স্ট্যান্ডার্ড কিভাবে নিরূপণ হবে। চাপিয়ে দেয়াটা শুভময় হবে না। 

    1. চাপিয়ে দেয়া কি যায় নাকি ? আমার মনে হয় না আপাময় জনসাধারণ এটা পছন্দ করবে । 

  5. প্রমথ চৌধুরী। কৌতুকরসে সমৃদ্ধ লঘু মেজাজের হাসিখুশি রচনায় তিনি জীবন্ত। ভাষার বুনন, শব্দ নির্বাচন, অলংকার সৃষ্টিতে এবং উপস্থাপন কৌশলে তাঁর মুনশিয়ানা সুস্পষ্ট। ঢিলেঢালা মেজাজে নানা প্রসঙ্গের অবতারণা, প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে ছুটে চলা, কথাকে ঘুরিয়ে শ্লেষের সৃষ্টি করা, ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য প্রভৃতিতে তাঁর প্রবন্ধ স্বতন্ত্র। তিনি ছিলেন ভাষাশিল্পী।

    "প্রমিত ভাষার ‘বুলি’ সকল অঞ্চলেই ‘বুলি’, এবং প্রমিত ভাষার ‘গালি’ সকল অঞ্চলেই ‘গালি’। সেই কারণেই কৃত্রিম হলেও জাতির চিন্তা-চেতনার ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রমিত ভাষার ভূমিকা অপরিসীম। তবে প্রমিত ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষার চাইতে উন্নত মনে করার কোনো কারণও নেই। ভাষাপণ্ডিতরা ‘উন্নত’ বা ‘অনুন্নত’ ভাষার ধারণাটিকে অস্বীকার করে থাকেন। কারণ প্রত্যেক ভাষাই- তা প্রমিত হোক আর আঞ্চলিক বা উপভাষা হোক, তার লিপি থাকুক বা না থাকুক- স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভাগীরথী-তীরের মিশ্র ভাষাকে যে প্রথমে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের সবাই শিষ্ট ভাষা বা মান ভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন, তার পেছনে ছিল প্রয়োজন। ছিল ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ।"

  6. “অজগর ওই আইতাছে তাইড়া
    আমটা আমি খামু পাইড়া” – ভাবলেই কেমন যেনো লাগে !! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_mail.gif

  7. ব্রাত্য রাইসুরা মূর্খ। ঢাকাইয়া-বিকৃত ভাষা ব্যবহার করে আরও মূর্খ হবে।

    শুদ্ধ-প্রমিত বাংলার জয় হোক।

     

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_mail.gif

  8. কথ্য ভাষা থাকবে থাকতে পারে। লেখা বা পড়ারও আউটফিট থাকতে হয়। থাকা চাই।

    1. সেটাই । পড়াশোনার একটা স্টান্ডার্ড ভাষা থাকাই চাই । 

      ভালো থাকিও রিয়া । 

  9. এই যে মৌখিক ভাষা — এর স্ট্যান্ডার্ড কোনটা ধরা হয়েছে ?
    সে কি শুধু ঢাকা বা তার আশেপাশে শহুরে লোকদের মুখের ভাষাকে ধরা হচ্ছে ?

     

    * বিষয়টি সত্যিই ভাবনার….. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_wacko.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_wacko.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_wacko.gif

  10. এই যে মৌখিক ভাষা — এর স্ট্যান্ডার্ড কোনটা ধরা হয়েছে ?
    সে কি শুধু ঢাকা বা তার আশেপাশে শহুরে লোকদের মুখের ভাষাকে ধরা হচ্ছে ?

    আমার মনে হয় ঢাকার আশপাশে থাকা মানুষের মুখের ভাষাকে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে হয়ে পারে প্রাচ্যের ডাণ্ডি নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা অন্যতম। যেমন: “অজগর ওই আইতাছে তাইড়া
    আমটা আমি খামু পাইড়া" এটা একশো-তে-একশো নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা।   

    তবে হ্যাঁ, লেখালেখির জগতে প্রমিত ভাষার জুড়ি মেলা ভার!     

     

    1. প্রমিত ভাষা যথেষ্ট সাধনা গবেষনার ফল । একই সাথে শ্রুতিমধুর । আমার ভাল লাগে। শুভেচ্ছা জানবেন । 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।