লোভ-৩

লোভ-২

গল্পের দ্বিতীয় পর্বের শেষাংশ:
ভগবানের মা-বাবাও তাঁদের বাড়ি থেকে ভগবান পাগল বিদায় করলো। বামনা ভগবান ভগবান বলতে বলতে নিজের বাড়ির পথে চললো।

বামনা নাচনভঙ্গিতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, আর মনে মনে বলছে, ‘হায়রে ভগবান! বামনী আমারে কতায় কতায় কয়, ভগবানগো বাইত যাওগা! আজগাত আমি ঠিকই ভগবানের বাইত গেছি! আইজগা বামনীরে ভগবানের খেইল দেখামু! বামনীরে কমু, ক তুই কী চাচ? তহনে দেখমু আমার বামনী কী চায়!
এভাবে বামনা মনে মনে অনেককিছু বিরবির করে বলতে বলতে যখন হেঁটে আসছিল। পথিমধ্যেই এক লোকের সাথে বামনার দেখা হয়ে গেল। লোকটি হলো বামনার গ্রামে থাকা জমিদারের কেরানি রমেশ। বামনাকে দেখে রমেশ কেরানি জিজ্ঞেস করলো, কিরে বামনা, তুই কইতুন আইলি?’
বামনা বললো, ‘আজ্ঞে কর্তা আমি ভগবানগো বাইত তুনে আইলাম।’
রমেশ কেরানি হাসতে হাসতে আবারও জিজ্ঞেস করলো, ‘ও-ই বেডা, হাছা কইরা ক কইতুন আইছস? খালি ভগবান ভগবান কইরা মরতাছত!’
বামনা বললো, কেরানি ময়শই, ‘ভগবানের দুইন্নাত থাইকা ভগবান ভগবান করুম না, তয় কি রমেশ রমেশ করুম?’
রমেশ কেরানি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিজের পথ ধরে চলে গেলো। বামনা আবার নাচতে নাচতে নিজের বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বামনা নিজের বাড়ি উঠোনে পৌঁছে গেল। রাতও হয়ে গেল অনেক! বামনী তখন ঘরের ভেতরে ঘুমে বিভোর। বাড়ির উঠোনে পা রেখেই বামনা বামনীকে ডেকে বলছে, ‘ও-ই বামনী, দরজা খুল! এক ঘটি জল দে!’
কিন্তু না, বামনীর কোনও সাড়াশব্দ নেই! সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজার খুব সামনে গিয়ে বামনীকে আবার জোরে জোরে ডাকতে লাগলো, ‘ও-ই বামনী হুনছস! দরজা খুল! আমি ভগবানের বাইততে আইছি।’
বামনার এমন চিল্লা-চিল্লিতে সারাদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পর খেয়ে-না-খেয়ে ঘুমানো ঘুমটা বামনীর মুহূর্তেই ভেঙে গেল। শুনতে পেল বামনার গলার তুই তাই শব্দ। রাগে গোস্বায় জেগে উঠে দরজা খুলে বলছে, ‘তুমি না-বলে আর আইতা না? ভগবানগো বাড়ি বিছরাইয়া পাও নাই? ভগবানের বাড়ি না পাইছ দেইখা কী অইছে? অন্য গেরামের একটা মন্দিরেও তো থাইকা যাইতে পারতা! আবার কিল্লাইগা আমারে জ্বালাইতে আইছ? এই মরার যন্তনা আমার কপাল তুনে আর যাইত না!’
এই বলেই বামনী আবার ঘরের ভেতরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বামনা হাসতে হাসতে বললো, ‘আরে বামনী, আমিত আইজগা ঠিকই ভগবানের বাইত গেছিলাম! আমি আইজগা হারাদিন ভগবানগো বাইত আছিলাম। ভগবানগো বাইততে স্নানধূতি কইরা, খাইয়া দাইয়া আস্তে-ধীরে এই আইলাম। তুই আমারে কষ্ট কইরা কদ্দুর জল দে, আমি আতমুখ ধুইয়া আহি।’

বামনার কথা বামনী যেন শোনেও শুনছিল না! কারণ এর আগেও বামনা অনেকবার হরির বাড়ির উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণকে খুঁজতেও গিয়েছিল। দুইতিন দিন বাড়ির বাইরে থেকে শেষমেশ আবার যে-খানকার মরা সে-খানেই এসে মরলো। তাই বামনী একটু রাগের ভাব ধরে আস্তে-ধীরে উঠে ঘর থেকে এক ঘটি জল বামনাকে দিয়ে বললো, ‘হায়রে আমার হোয়াদের বামনা রে! কতবার যে হে ভগবানরে বিছরাইতে গেছে! শেষমেশ এই মরা আবার আমার অভাইব্বা কপালে আইয়া জুটছে। ভগবান আমারে নেয়ও না! ভগবান যদি আমারে নিতো, তয়লে মইরা যাইয়াও একটু বাঁইচা থাকতে পারতাম।’
বামনা ঘরের বারান্দার কিনারে হাতমুখ ধুয়ে বামনীকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘লেঙটা ভগবান কি তোর কথা বুঝবো আর কি হুনবো। ভগবান থায়ে হের নিজের খেলা লইয়া। হের কি তোর কথা হুননের সময়-গময় আছে? দেইখা আইছি ভগবানরে! হেয় খুব কামে থায়ে।’
এই কথা বলেই, বামনা তাঁর থলি থেকে নতুন গামছা বের করে বললো, ‘দেখ বামনী, ভগবান আমারে আদর কইরা নতুন গামছা দিছে। জামা দিছে। খাওয়াইছে। আবার আহনের সুম একখান জিনিসও দিয়া দিছে।’
বামনার এসব বকবকানি বামনীর আর সহ্য হচ্ছিল না। বামনী রাগের মাথায় বললো, ‘ও-ই বামনা তুমি অহনে রাইত কইরা চুপ থাকবা? আমারে এট্টু ঘুমাইতে দিবা? হারাদিন বড়কত্তাগো বাইত কাম কইরা আইছি। অহনে খাইয়া-না-খাইয়া ঘুমাইয়া রইছি। অহনে আর ভাল্লাগে না। আমারে এট্টু ঘুমাইতে দেও!’
বামনা তারপরও বললো, ‘আরে বামনী, তুই এট্ট চাইয়া ও-ই দেখ! আমি কি হাছা কইতাছি, না মিছা কইতাছি! দেখ দেখ, ভগবান যে আমারে কি সুন্দর একখান জামা দিছে।’

বামনী এবার চোখ মেলে বামনার দিকে চেয়ে দেখে বামনার হাতে নতুন একখান গামছা, পরনে নতুন জামা। বামনী এর কিছুক্ষণ আগে বামনার পরনে নতুন জামা আমাবস্যা রাতের অন্ধকারের জন্য খেয়াল করতে করেনি। এখন ঘরে তেলের বাতির আলোতে দেখতে পাচ্ছে। বামনী এখন শোয়া থেকে উঠে বামনাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘হাছা কইরা কও দেহি, তুমি কই গেছিলা?’
বামনা বললো, ‘আরে বামনী, আমি কি তোর লগে মিছা কইতাছি! আমি আইজগা হাছা হাছাই ভগবানগো বাইত গেছিলাম। ভগবানের মারে পাইছি, বাবারেও পাইছি। ভগবানরে জাবরাইয়া ধইরা মনের কতা হুনাইয়া দিছি।’
এই বলেই বামনা তাঁর থলি থেকে ভগবানের দেওয়া শঙ্খটা বের করে বামনীর সামনে নিয়ে বললো, ‘দেখ বামনী, এইডা ভগবান আমারে দিছে। শঙ্খডা সুন্দর না, বামনী?’
বামনী এবার মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, ‘এ-এ-এ, জব্বর একখান হবরের মাথা লইয়া আইছে রে! এই হবর তোমারে কেডা দিছে? পাগল জানি কোনানখার! কইতুন জানি পুরান একখান শঙ্খ টোগাইয়া আইন্না কইতাছে, হেরে এইডা ভগবান দিছে! আমার লগে ইয়ার্কি মারাইতাছ?’
বামনা হি হি করে হেসে বললো, ‘আরে বামনী, ইয়ার্কি নারে বামনী, ইয়ার্কি না। হাছাই এইডা ভগবান আমারে দিছে। এইডা আমার আতে দিয়া কইছে, এইডা ফুঁ দিয়া যা কমু, হেইডাই অইবো।’
বামনী কপালে থাপ্পড় মেরে বললো, ‘আরে ভগবান! কই যে যাইতাম, ভাইবা পাইতাছি না। শঙ্খ ফুঁয়াইয়া যা কইবো, হেইডাই বলে অইয়া যাইবোগা। আমারে তুমি বলদ পাইছ?’
বামনা এবার বামনীর উপর খুবই রাগ হয়ে বললো, ‘তুই কি ভগবানরে বিশ্বাস করছ না? ক, শঙ্খ ফুঁ দিয়া কি কইতাম! ক ক, তাত্তাড়ি ক!’
বামনীও খুব জেদ দেখিয়ে বললো, ‘খাওন আন, খাওন! যেইডা খাইয়া গুষ্টি বাঁচে, হেইডাই আন। দেহি, তোমার ভগবানের হোয়াদের শঙ্খের কেমন গুন। আমারে হিগাইতাছে। কইতুন জানি একটা শঙ্খ টোগাইয়া আইনা, কইতাছে, এইডা আমারে ভগবান দিছে। কও দেহি, খাওন দেও!’

বামনীর কথায় বামনারও জেদ উঠে গেল! শরীরে জেদ রেখেই রাগের মাথায় শঙ্খটা হাতে নিয়ে পূর্বদিকে ফিরে জোরে একটা ফুঁ দিলো। ফুঁয়ের শব্দে বামনার পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো। বামনী আচমকা ভয় পেয়ে বামনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে শুরু করলো। বামনীর কাছে মনে হলো পৃথিবীতে বুঝি ভূকম্পন শুরু হয়ে যাচ্ছে।
বামনা শঙ্খে ফুঁ দিয়েই বললো, ‘বুম-ম-ম-ম ভগবান, আমগো দুইজনের লাইগা খাওন পাডাইয়া দেও!’
বামনা শঙ্খে ফুঁ দিয়ে বলতে দেরি আর দুইজনের দুইভাগে নানারকম খাবার সামনে আসতে দেরি হলো না। বামনী তখনও বামনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে ছিল। এমন সময় আবার বামনা বামনী দুইজনের সামনে রাতের অন্ধকারে ফটাফট নানারকমের খাবার চলে আসলো। তা দেখে বামনী বামার পায়ে ধরে বসে রইল। বামনা বামনীকে শান্তনা দিয়ে বললো, ‘ডরাইছস? ডরানের কিছু নাইক্কা। তুই অহনে পেট ভইরা খাইয়া হুইয়া থাক। আমি এট্টু ভগবান ভগবান কইরা লই। আজগা দুইডা ফিন ধইরা আমার ভগবানরে মন দিয়া ডাকতে পারি না। ভগবানরে যদি না ডাহি, তয়লে আবার ভগবান রাগ করবো। তুই খাইতে থাক!’
ভগবানের ইচ্ছায় স্বর্গ থেকে আসা খাবারের ঘ্রাণে পুরো ঘর মুহূর্তেই সুঘ্রাণে ভরে গেল। বামনী এখন কী রেখে কী করবে দিশা হারিয়ে ফেলেছে। বামনী কাঁপা কাঁপা স্বরে বামনাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি খাইবা না? তুমি আগে না খাইলে আমি খাইতাম না।’
বামনা বুঝতে পেরেছে, বামনী এই খাবার দেখে ভয় পেয়েছে। আবার এগুলো আসলেও সত্যিকারের খাবার কিনা, তাও হয়তো মনে মনে বামনী ভাবছে! তাই বামনা বামনীকে বললো, ‘আইচ্ছা, তয়লে এট্টু দেরি কর, আমি ভগবানের নামখান এট্টু লইয়া লই।’
এই বলেই বামনা কয়েকবার ভগবান ভগবান জপে ভগবানের ধ্যান শেষ করে বললো, ‘আয় খাইয়া লই।’
দুজনে হাত ধুইয়ে স্বর্গের খাবার হাতে নিয়ে ভগবান ভগবান বলে মুখে দিলো। আহা স্বাদ! কী স্বাদ! এই খাবার কি কারোর ভাগ্যে জুটে? বামনী মুখে দিয়েই গবর গবর করে গিলে ফেলছে। মুহূর্তেই বামনীর খাবার সাবাড় করে ফেলে, বামনার খাবারেও হাক মারলো। খাওয়া-দাওয়া শেষে সবকিছু গুজগাজ করে রেখে মনের আনন্দে শুয়ে রইল।

রাত পোহাতে-না-প্যহাতে বামনী ঘুম থেকে উঠে ভগবানের দেওয়া শঙ্খটা সামনে রেখে ভক্তি করলো। তারপর অনেকক্ষণ ভগবান ভগবান জপে, ঘরে থাকা ঠাকুরের আসনে শঙ্খটা রেখে, ঘরদোর লেপালেপি করতে লাগলো। বামনা তখনো রাজা জমিদারদের মতো ঘুমাচ্ছিল। বামনী ঘরদোর লেপে মুছে স্নান করে বামনাকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠানোর চেষ্টা করছে। বামনা ঘুম থেকে উঠছে না দেখে বামনার হাত পা মালিশ করতে করতে বললো, ‘কি গো! এট্টু তাত্তাড়ি উঠো না। আমার জব্বর ক্ষুদা পাইছে। তুমি ঘুম থেইকা উইডা, আতমুখ ধুইয়া ভগবানের তুনে খাওয়ন চাইয়া আনো।’
বামনীর কাছে বামনা এখন খুবই আদরের। যেন রূপকথার রাজকুমার, আর স্বয়ং ভগবানের চেয়েও বেশি। বামনার সাথে বামনী দীর্ঘদিনের বৈবাহিক সম্পর্কের মাঝে এই প্রথম বামনার জন্য বামনীর এতো দরদ উথলে পড়লো। বামনী বামনার হাত-পা টিপে দিচ্ছে, বামনা আরামসে ঘুমচ্ছে। তারপরও বামনা যখন ঘুম থেকে উঠছিল না, বামনী ভগবানের দেওয়া শঙ্খটা নিয়ে অনেকক্ষণ ফুঁ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু বামনী কিছুতেই শঙ্খ ফুঁ দিয়ে আওয়াজ তুলতে পারছে না। অথচ প্রতিদিন লক্ষ্মীপূজা দেওয়ার সময় ঘরে থাকা আগের শঙ্খ ফুঁ দেয়, শঙ্খ বাজায়। কিন্তু ভগবানের দেওয়া শঙ্খটা থেকে একটু শব্দও বের করতে পারছে না। বামনী একের পর এক ফুঁ দিতেই থাকলো। দিতেই থাকলো। এভাবে একপর্যায়ে যখন বামনীর মুখ ব্যথা হয়ে গেল, তখন শঙ্খটাকে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে আবার ঠাকুরের আসনে রেখে দিল।

অনেকক্ষণ পর বামনা মোড়ামুড়ি দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখে বামনী তাঁর পা ধরে বসে আছে। বামনীর এই অবস্থা দেখে বামনা বললো, ‘কি-রে বামনী, হারা রাইত ঘুমাস নাই? এই বেয়াইন্নাবেলা তুই আমার পা ধইরা বইয়া রইলি ক্যা? কি অইছে ক দেহি!’
বামনী মুচকি হেসে বললো, ‘আমার মেলা খিদা লাগছে। শঙ্খ ফুঁয়াইয়া খাওন চাইয়া আনো।’
বামনীর কথা শুনে বামনা বুঝতে পেরেছে বামনী শঙ্খ নিয়ে অনেকক্ষণ পারাপারি করেছে। শেষতক পারেনি বলেই, আমার হাতপা টেপতে বসেছে। বামনা মনে মনে বলছে, ‘হালার এইডা আইনাও মুশকিলে পড়লাম। অহনে দিনে রাইতে হগল সময় বামনী আমারে জ্বালাইয়া খাইবো। কদ্দুর পরপর কইবে, আমার এইডা লাগবো, ওইডা লাগবো। এইডা কইরা দেও, ওইডা কইরা দেও!’
মনে মনে এই বলেই বামনা বামনীকে বললো, ‘আইচ্ছা খার! আগে আমি আতমুখ ধুইয়া লই।’
এই বলেই বামনা বাড়ির উঠান থেকে একচিমটি মাটি তুলে দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর ঘাটে গেল। বামনী ঘরের বারান্দায় সুন্দর করে বিছানা পেতে শঙ্খটা সামনে রেখে বসে রইলো। বামনা হাতমুখ ধুইয়ে এসে দেখে বামনী শঙ্খ সামনে নিয়ে বসে আছে। বামনা হেসে বললো, ‘রাইতে এতো খাওন খাইলি, হের পরও বেয়াইন্নাবেলা তর ক্ষুধা লাইগগা গেছেগা? দে দে, শঙ্খডা দে! আগে তর পেট ভরাইয়া লই!’
এই বলেই শঙ্খটাকে নমস্কার দিয়ে একটা ফুঁ দিয়ে বললো, ‘বুম-ম-ম-ম ভগবান, খাওন পাডাও!’
ওমনি ফটাফট ফটাফট বামনা বামনীর সামনে দুইজনের আন্দাজ খাবার চলে আসলো! তা দেখে বামনী বামনার পা টেপা শুরু করে দিলো। মাঝেমাঝে বামনার পায়ে নিজের দামী কপাল ঠেকিয়ে নমস্কারও করতে লাগলো। বামনা বামনীর এমন ভাব দেখে বললো, ‘থাকরে বামনীরে, তর আর কষ্ট কইরায়া আমার পা টিপন গালত না। তুই অহনে যেত পারছ খাইয়া ল।’

বামনী খাচ্ছে আর আক্ষেপ করে বলছে, ‘আমার মনে যে কত স্বাদ আছিল। থাকলে কী অইবো? আমারে আর কেডা দিবো! বিয়া অইছে ধইরা পরের বাইত কাম কইরা খাইতে খাইতে এই পইযন্ত আইছি। গেরামের বেডিগো দেহি কানে সোনাদানা দিয়া ঘুইরা বেড়ায়। আর আমার কান দুইডা হগল সুমকা খাইল্লা পইড়া থায়। আমার অত মন চায় কানের মাধ্যে বড়বড় দুল লাগাইয়া ঘুরতে। মন চাইলে আর কী অইবো? কেডা দিবো?’
বামনীর পেঁনপেঁনানিতে বামনার আর ভালো লাগছিল না। বামনা রেগেমেগে বললো, ‘ও-ই বামনী, তুই শঙ্খ দেইখা অহনে লোভে পড়ছত? এই সোনাদানা দিয়া কী অইবো? আর ক’দিন বাঁচবি? পোলাপাইন নাই! এডি খাইবো কেডা? সোনাদানা ছাড়া কি মাইনষের জীবন থাইমা থায়?’
বামনার এমন ধমকের পরও বামনি হু হু করে কেঁদে কেঁদে খাচ্ছে আর বলছে, ‘থাক থাক আমার কিচ্ছু লাগত না। হারা জীবন যেমনে আছিলাম, হেমনেই থাকুম!’
বামনা বিরক্ত হয়ে বললো, ‘আইচ্ছা, তর কী লাগবো ক? তুই অহনকা যেইডা চাস হেইডাই দিমু। ক কী লাগবো?’
বামনী বামনাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আমার অনেককিছু লাগবো। বাড়িডারে জমিদার বাড়ির লাহান কইরা দিতে অইবো। আমার কানে গলায় হিরা মুক্তা থাওন লাগবো।’
বামনা বললো, ‘আইচ্ছা ঠিক আছে হেইডাই অইবো। তয় হুইনা রাখ, তর কইলাম এই পইযন্তই চাওয়া। আর কইলাম কিচ্ছু চাইতি পারতি না। বেশি লোভ করিছ না বামনী! লোভে পাপ অয় জানস না?’

লোভ-৪ এখানে:

চলবে…

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

18 thoughts on “লোভ-৩

  1. লোভে পাপ অয় জানস না? >>> কথাটা বামনী মনে রাখলেই হয়। দারুণ চলছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. তা কি আর মনে রাখতে পারে, দাদা! মেয়েছেলার জাত যাকে বলে! আবার এঁরাই আমার মায়ের জাতি, বুদ্ধিমতী। বামনীও তা-ই। 

      যাইহোক, আশা করি গল্পের শেষ পর্ব পর্যন্ত সাথে থাকবেন।          

  2. হুম। তাহলে বামনীর মনে লোভ জেগে উঠছে? বিপদজনক।

    1. শ্রদ্ধেয় দিদি, কেবল শুরু হতে যাচ্ছে লোভের খেলা। দেখা যাক, কার লোভে কতটুকু লাঞ্চিত বঞ্চিত হয়! আশা করি গল্পের শেষ পর্ব পর্যন্ত সাথে থাকবেন।             

  3. লোভ আর অভাব পরস্পরের স্বভাব একই রকম। একটার পর একটা তৈরী হয়। খাবার অভাব মিটতে না মিটতেই স্বর্ণদানার অভাব শুরু হলো। শুভেচ্ছা মি. নিতাই বাবু। :)

    1. অভাবে স্বভাব নষ্ট! আবার কারোর অনেক থাকতেও স্বভাব নষ্ট হয়, লোভে পড়ে যায়। মূল গল্পে এমনই একটা হতে চলছে মনে হয়। যাইহোক, সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে, গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করছি।         

    1. ভালো লেগেছে শুনে আমারও ভালো লাগছে, শ্রদ্ধেয় কবি সুমন দাদা। আশা করি গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন।                 

    1. আশা করি গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।             

  4. চলুক। অনেক অনেক শুভকামনা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif​​​​​​​

    1. আশা করি গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন, শ্রদ্ধেয় কবি রিয়া দিদি।             

    1. দেখা যাক, পরিপূর্ণভাবে গল্পটা শেষ করতে পারি কিনা। তাই আশা করি গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থেকে উৎসাহ দিবেন, শ্রদ্ধেয় কবি শাকিলা দিদি।                 

  5. লোভের গুড়ে বালি পড়ে শুনেছি গল্প এগোচ্ছে দেখা যাক শঙ্খের জারিজুরি। শুভকামনা রইল https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. আশা করি গল্পের শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন, শ্রদ্ধেয় কবি দিদি। আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো।    

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।