পৌরাণিক পালার পটভূমিকায় সামাজিক নাটক করোনা-ঘাতিনী দেবী দুর্গা
করোনা আবহে সাড়া জাগানো এবছরের প্রথম
পৌরাণিক পালার পটভূমিকায় সামাজিক নাটক
করোনা-ঘাতিনী দেবী দুর্গা
চরিত্রলিপি:
দেবী দুর্গা- ডাক্তার (চিকিত্সক)
লক্ষ্মী- নার্স (সেবিকা)
গণেশ- পুলিশ অফিসার
সরস্বতী- অধ্যাপিকা
কার্তিক- সাফাইকর্মী
মহিষাসুর- করোনাসুর
প্রস্তাবনা
নেপথ্যে ঘোষিত হবে
মহিষাসুর ভগবান ব্রহ্মের একনিষ্ঠ উপাসক ছিলেন। বহু বছর তপস্যার পর ব্রহ্মা তাঁকে একটি বর প্রদান করেছিলেন। মহিষাসুর নিজের শক্তি নিয়ে গর্বিত ছিলেন। তিনি ভগবান ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্বের বর চেয়েছিলেন, এবং তাঁর ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর কোনও মানুষ বা প্রাণী তাঁকে যেন হত্যা করতে না পারে। ব্রহ্মা তাঁকে এই বর প্রদান করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি একজন মহিলার কাছে পরাস্ত এবং নিহত হবেন।
মহিষাসুর তাঁর শক্তির ওপর এতটাই আস্থা করতেন যে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, এই পৃথিবীতে কোনও মহিলাই তাঁকে হত্যা করতে পারবে না। মহিষাসুর তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল) আক্রমণ করেন এবং ইন্দ্রলোকও (ভগবান ইন্দ্রের রাজ্য) জয় করার চেষ্টা করেন। তাঁর অত্যাচারে সারা জগৎ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
দেবতারা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করলেও ভগবান ব্রহ্মার আশির্বাদের ফলে কেউ তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি। এরপর, দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্য প্রার্থী হন। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সমস্ত দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব তাঁদের সমস্ত শক্তি একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গার।
যা দেবী! সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী! সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী! সর্বভূতেষু শান্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
সুত্রধর মাইকে ঘোষনা করবেন:
বিশ্বত্রাস করোনা পৃথিবী জেলখানা। দিকে দিকে লক ডাউন। সারা পৃথিবী জুড়ে হানা দিল বিশ্বত্রাস করোনা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে চলা লকডাউনে পুলিশের ভূমিকা একজন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা হিসেবে।
চিকিৎসক রূপে দেবী দুর্গা করোনারূপী অসুরকে ইঞ্জেকশন দিয়ে বধ করছেন। মা লক্ষীকে নার্সের রূপে ও দেবতা গণেশ পুলিশের ভূমিকায়। দেবী সরস্বতীকে দেখানো হয়েছে অধ্যাপিকার ভূমিকায় আর দেব কার্তিক সাফাইকর্মী রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।
রোগীর সেবায় নিয়োজিত দেবী লক্ষ্মী সেবিকা রূপে বিরাজমানা। সাফাইকর্মী হিসেবে যাঁরা নিরলস পরিষেবা দিয়ে চলেছেন কার্তিকেয় সাফাইকর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
প্রায় সাত মাস ধরে করোনাসুরের সাথে দেবী দুর্গার লড়াই চলে। করোনাসুর একের পর এক আলাদা আলাদা রূপে সকলকে গ্রাস করতে থাকে। অবশেষে, চিকিৎসক রূপে দেবী দুর্গা করোনারূপী অসুরকে ইঞ্জেকশন দিয়ে বধ করছেন। করোনাসুরমর্দিনী অর্থাৎ করোনা-ঘাতিনী দেবী দুর্গা।
যাত্রার মঞ্চ হসপিটালের মতোই চিত্রিত করা হবে। একাংশে আলোর বিচছুরণে আইসোলেশন রুমের মতই মনে হবে। আলোর বিচ্ছুরণে দেখা যাবে এক একটি কক্ষ। অপারেশন থিয়েটার নার্স ডাক্তার স্টেথোস্কোপ, মেডিসিন সবকিছুই মঞ্চের একাংশে দৃশ্যমান হবে। আলো নিভে যায়।
প্রথম অঙ্ক- প্রথম দৃশ্য
(মঞ্চের আলো জ্বলে উঠে। মিউজিক বাজতে থাকবে)
[চিকিত্সকের বেশে দেবী দুর্গার প্রবেশ]
দেবী দুর্গা:
স্বর্গ হতে আগমন মম মর্ত্যধামে।
করোনা অসুরে করিব সংহার।
[মিউজিকের তালে তালে করোনা অসুর প্রবেশ করে]
করোনা অসুর:
হাঃ হাঃ হাঃ (বিকট অট্টহাসি)
দেবী দুর্গা:
চিকিত্সক আমি। হাতে মম ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ
তাই দিয়ে করিব অসুর সংহার।
করোনা অসুর:
হাঃ হাঃ হাঃ (বিকট অট্টহাসি)
অসম্ভব! করোনা অসুর অজর অমর।
কার সাধ্য রোধে মোর গতি।
সকলেরে করিব আমি গ্রাস। (পুনরায় অট্টহাসি) প্রস্থান
দেবী দুর্গা:
সকলের অবধ্য হলেও আমার হস্তে
হবে তোর বিনাশ।
শোন ওরে মদ-দর্পী করোনা অসুর,
যেমতি তুই একে একে সর্ব ভুখণ্ডে
করিলি অবাধ গতি। সেই হেতু তোরে
আজি অকালে তোরে করিব নিধন।
আজি হতে হব আমি…. করোনা-ঘাতিনী দেবী দুর্গা
নাশিতে করোনা অসুরে সিরিঞ্জ লয়ে হাতে
বধিব অবোধ তেমতি তোরে।
সংহার- সংহার- সংহার।
দৃশ্যন্তর
নাটিকার সিকোয়েন্স বা অধ্যায় পড়তে পড়তে কল্পনা করতে অসাধারণ লাগে।
ধন্যবাদ কবি। শুভ সকাল।