শিহাব একজন গণমাধ্যমকর্মী। একজন মফস্বল সাংবাদিক। একদিন কোনো কারণ ছাড়াই ভাবনাবিলাসের উদভ্রান্তিতে আপ্লুত হয়। একার সাথে একা কথা বলে এবং ভাবলাবিলাসের শেষ প্রান্তে গিয়ে ভাবতে থাকে…
একজন সাংবাদিক তাঁর দৃষ্টি দিয়ে সব কিছুকে দেখেন। শুধু দেখেই ক্ষান্ত হন না, দেখার বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তবে সেগুলোও পর্যবেক্ষকের চোখ দিয়ে নিরীক্ষা করেন। সর্বশেষে সমাজের ভিতরে তাঁর পরীক্ষালব্ধ উপাত্তগুলির ফলাফল প্রকাশ পায় তার প্রতিবেদনে। এদিক থেকে, সাংবাদিকও বুদ্ধিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত।
এখন এই কাজটি করতে গিয়ে তাঁর কয়েকটি জিনিস অবশ্যই নিজের ভিতরে থাকতে হয়। কারণ একটি সমাজ তাঁর লেখনীর ভিতর দিয়ে উঠে আসবে। অতএব, সাংবাদিককে একটি আদর্শ মেইনটেইন করতেই হবে। তাঁর দেখার স্বচ্ছতা থাকতে হবে এবং তাঁকে সত্যবাদী হতে হবে। এই দু’টো থাকলেই তাঁর দ্বারা অন্যরা উপকৃত হবে।
কিন্তু আজ শিহাব নিজের চারপাশে এ কি দেখতে পাচ্ছে? ঐতিহাসিক বিকৃতিতে অংশ নেয়া এবং ভ্রষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের পদলেহনমূলক মনোভাবাপন্ন হয়ে সত্যকে গোপন করে অনেককেই হলুদ সাংবাদিকতায় নিজেদের নিয়োজিত করা! শুধু সাংবাদিকগণ কেনো, অন্যসব জ্ঞানী-গুণি ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণির অনেকেরই একই মনোবৃত্তি। নিজ নিজ জায়গায় নিজ পেশার দায়িত্বশীলতার দিকটি ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাহ্য করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সবাই!
বাম-ডান কিংবা সাদা-গোলাপী প্যানেলে বিভক্ত হবার ট্রাডিশন তো শিহাব সেই তার কলেজ জীবন থেকেই দেখে আসছে। দুই পরিবার কেন্দ্রিক আমাদের দেশীয় রাজনীতির প্ল্যাটফর্মে আমাদের জ্ঞানী-গুণীরা ভাগ হয়ে তাঁদের কলম ধরছেন। কিন্তু সব বিভেদ ভুলে গিয়ে দেশের পক্ষে এক হয়ে তাঁদের কলম ধরা হয় না। এজন্যই সুন্দরবন রক্ষা করার আন্দোলনে পক্ষে-বিপক্ষে বুদ্ধিজীবিদেরকে দেখা গেছে। দেখা গেছে তেল-গ্যাস রক্ষা করার ক্ষেত্রেও! অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার আন্দোলনের যৌক্তিকতা খুঁজতে গিয়েও পক্ষে-বিপক্ষের দল ভারী হয়। মোট কথা দলীয় লেজুড়বৃত্তি যেন আমাদের এইসকল বুদ্ধিজীবিদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে।
এ থেকে উত্তরণের পথ কোথায়??
ভেবে কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে স্বভাবগত ভাবেই শিহাব ক্রুদ্ধ হয়।
ক্রোধ নিজের প্রতি। নিজের পেশাগত দায়বদ্ধতা সঠিকভাবে পালন করতে না পারায় নিজের প্রতি ক্ষোভ এই ক্রোধের কারণ। ক্রোধ অন্যদের প্রতিও। সিস্টেমের প্রতি। নিজের পেশারসাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ‘ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অক্ষমতার’ প্রতিও।
ক্রোধান্বিত হয়ে শিহাব ভাবে, ‘আমার চারপাশে গ্রুপিং, নষ্ট রাজনীতি আর মানুষের সীমাহীন ইর্ষায় দমবন্ধ করা এক অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয়ে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। চেনা মানুষগুলোর অচেনা মুখ মানুষের আকৃতি থেকে সরে গিয়ে কেবলি শয়তানের রূপ লাভ করেছে। শয়তানের রূপ কিরকম? শয়তান শুকরের আকৃতির, গলায় একটা লানতের ঘন্টা বাঁধা থাকে।’
অবাক বিস্ময়ে চমকে উঠে শিহাব!
একটা শুকরই যথেষ্ট তাঁর ভয়াবহতা নিয়ে আশেপাশে থাকা। শিহাবের চারপাশে তো অগুনতি। সেগুলোর ভিতরে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা অবস্থায় রয়েছে সে!
ভাবনাবিলাসের ভ্রান্তিজালে থেকে শিহাব আশা করে, এই দুঃস্বপ্ন খুব দ্রুত কেটে যাবে…
.
#মামুনের_অণুগল্প_একটা_শুকরই_যথেষ্ট
উত্তরণের পথ না থাকলেও কায়মনোশব্দে শিহাব এর জন্য শুভ কামনা রাখি সব সময়। অণুগল্পটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. মামুন। ঈদ মোবারক।
শিহাবকে আপনার শুভ কামনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ঈদের শুভেচ্ছা আপনার জন্য ভাইয়া।

ঈদের খুশি ছড়িয়ে যাক প্রতিটি প্রাণে।
জি, সকল প্রাণে ঈদের খুশি ছড়িয়ে যাক।
ঈদ মোবারক, মিতা।